
আরবের লোকদের স্ত্রী জাতির প্রতি যে মনোভাব তা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। দুইদিন আগে একটা খবরে পড়লাম সৌদিতে মেয়েদেরকে লাইব্রেরিতেও যেতে দেওয়া হবে না। মেয়েরা যে বই কিনবে সেটা তাদের স্বামীকে বলবে, স্বামীরা সেটা তার জন্য নিয়ে আসবে। উদ্ভট!
লিবিয়ায় গাদ্দাফি চলে যাওয়ার পর পর একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে কোন নারী প্রার্থী দাড়ায়নি নির্বাচনে। তবে পুরুষ প্রার্থীদের সাথে তাদের বউয়ের হিজাব পড়া ছবি শোভা পাচ্ছিল। তা একটা নিউজে দেখলাম লিবিয়ানরা সেসব পোস্টারে হিজাব পড়া নারীদের ছবিতে কালো দাগ দিয়ে সেটা প্রায়ই মুছে ফেলেছে। কেউ কেউ আবার নারীর ছবি ছিড়ে ফেলেছে।
খুব সম্ভবত বাংলাদেশেরও ভবিষ্যতে সেই অবস্থা হতে যাচ্ছে। জানতে পারলাম সিলেটে রমজান মাসে নারীর অবয়ব দেখা হারাম তাই জয়া সেনেটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে নারীদের চেহারা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই বিলবোর্ডটা মহাখালিতেও আছে যা আমার অফিস যাবার পথেই পড়ে। সেখানে যে দুইটি মেয়েকে দেখা যায়, তাদের অবয়ব, পোষাক ইত্যাদিতে আমি কোন নোংরামি দেখিনাই।
আরবীয় বর্বর সমাজের মত আমরাও নারীদেরকে এখন বোরখার তলে ঘরে বন্দী করে রাখতে উদ্ধত হয়েছি।
আমার পাশের বাসার আমারই পরিচিত এক লোক বিয়ে করেছেন। কিন্তু সে তার বউয়ের মুখদর্শন করায়নি কাউকে। শুনেছি সে বোরখার আড়ালে আড়ালেই জীবনের ছাব্বিশটি বছর পার করেছে। পুরুষ দেখে ফেলবে ভেবে সেই নারীর স্কুলে বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক মডেলে পড়াশোনার সৌভাগ্য হয়নি। তিনি পড়েছেন ঘরের ভেতরেই।
ভাবতেও অবাক লাগে, কিভাবে মানুষ চারটি দেয়ালের ভেতরে ডুকরে মরছে, দুনিয়াটাকে না দেখে। একটি মানুষের চোখ থাকতে তাঁকে অন্ধ করে ফেলার কোন অধিকার আরেকজন মানুষের নেই।
ডিস্কোভারিতে দেখছিলাম, এক নারী এস্ট্রোনট পৃথিবীর বাইরে অন্তত ত্রিশ কিলোমিটার দূরের একটি স্পেস স্টেশনে কাজ করতে যায়। তাদের থেকে আমাদের নারীদেরকে আমরা মানসিকভাবে কতটাই না পিছিয়ে দিচ্ছি।
মহামান্য টিভি ব্যাক্তিত্ব জাকির নায়েক একদিন একটি বি-এম-ডাব্লিউ এর বিজ্ঞাপনে নারীর উপস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বলছেন, গাড়ি বিজ্ঞাপনে নারীকে রাখা হয়েছে, আর তার নিচে লেখা চালিয়ে দেখুন। কাকে চালিয়ে দেখব? নারীটিকে নাকি গাড়িটিকে?
আরবী পুরুষদের মত পার্ভার্ট, আর তাদের আদর্শে আদর্শিত আরেক পার্ভার্ট জাকির নায়েকের পক্ষেই এমন উদ্ভট প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। যেকোন সাধারণ মানুষই তার বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারবে কাকে চালাতে হবে! গাড়ির বিজ্ঞাপনে দেওয়া গাড়িটিই, নারীটি নয়।
অনেকেই বলেন বিজ্ঞাপনে নারীকে ব্যবহারই নারীকে পণ্য করে তোলে। আমি সেটা একদমই বিশ্বাস করি না। বিজ্ঞাপন নারীকে পণ্য করে না, নারীকে পণ্য করে আমাদের মন।
যে সমাজে নারীর স্বাধীনতা যত বেশি, সে সমাজের উন্নতিও ততধিক। এটি সাধারণ সত্য। আমাদের দেশের যে কেউই সুযোগ পেলে আমেরিকা যেতে চাইবে, ইরাক, ইরান অথবা সৌদি নয়। এ সহজ উপলব্ধিটা এদের মধ্যে কেন আসেনা সেটা আমার বোধগম্য নয়।
পরিশেষে একটি উদ্ভট সারাংশ টেনে লেখাটি শেষ করি। শাহবাগ আন্দোলনের সময়ে সাচ্চা মুসলমানরা বলেছিল, সেখানে নারী পুরুষে জেনা হয়। আর ছাত্রী সংস্থা যখন হোটেলে হোটেলে প্রস্টিটিউশন করতে গিয়ে ধরা পড়ে তখন সাচ্চা মুসলমানদের মুখ বন্ধ থাকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


