somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টগর এর কথা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টগর এর কথা

আসলে এই টগর কোন কোমল কিশোরীর নাম না, একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীর নাম, যার কথা আজকের পত্রিকায় আসছে, আজকে সকালবেলা সেই নিউজটা দেইখা আবারও তার কাহিনিটা মনে পড়লো; ওর কাহিনি আমার যদ্দুর মনে হয়, একটা নিয়তি-নির্দিষ্ট ব্যাপার . . . যেমন আমার নিজের ক্ষেত্রেও অনেক সময় মনে হয়. . . সারাদিন নিজের সময় বলতে শুধু সকালবেলা নাস্তার টেবিল এর সময়টা . . . তাও আধ-খেঁচড়া, মেয়েকে যদি বউ স্কুল নিয়া যায়, সেই ফাঁকে ১০ মিনিট। ছোট মেয়েটা ঘুমায় আর আমি দিনের পত্রিকাটা দেখি। তারপর সারাদিন ঘোড়ার দৌড়, কোন গন্তব্য নাই, উদ্দেশ্য নাই, খালি দৌড় . . . এই ফাঁকে দেখলাম নিউজটা . . .

তো টগর এর এই নিউজটা আগেও আরো আসছে পত্রিকায়, আর প্রতিবারই দেখার পরপর নিউজ এর যে উদ্দেশ্য সেইটার দিকে আমার মন না গিয়া যায় অন্যদিকে . . . বুয়েটে সনি হত্যাকান্ড এর রিপোর্টটাতে সবসময় টগর এর নামটা থাকে . . . টগরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, সে এইভাবে কুখ্যাত হওয়ার আগে থিকাই . . . এইরম দৈনিক পত্রিকায় নাম আসা লোকদের আমি তো চিনি না . . . তাই একটু অন্যরকমই লাগে . . . কারণ নিউজটার তো একটা উদ্দেশ্য থাকে, কিন্তু এর পিছনে যে কাহিনিটা, তার যে একটা উদ্দেশ্যহীনতা আছে, সেইটার কথা চিন্তা করে অন্যরকম লাগে . . .

টগর এর সাথে আমার পরিচয় ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারেই, এক হল থাকি; যদিও হল এর থিকা ক্যাম্পাসেই আমি বেশি সময় কাটাইতাম . . . কিন্তু টগর হলেই থাকতো বেশিরভাগ সময়, বিকালবেলা আসতো টিএসসি'র দিকে আরো অনেকের সাথে, প্রথমদিকে তো ২০/২৫ জনের একটা দল হয়া যাইতো, ধীরে ধীরে ছোট গ্রুপ হইতে থাকলো, এর মধ্যে কেউ প্রেম, কেউ টিউশনি, কেউ পলিটিকস এ ব্যস্ততা বাড়াইলো . . . তো তখন বসতাম ডাঃ মিলনের ভাস্কর্যের নিচে . . . একদিন কথা হইতেছিল যে, কে কি হইতে চায় বা ইউনিভার্সিটিতে আমাদের ৫/৭ বছর টাইম আমরা কিভাবে পার করবো, এক একজনের এক একরকমের চিন্তা . . . সেইখানে টগর এর কথা শুনে আমরা সবাই একটু অবাক হইলাম, কারণ আমাদের মধ্যে কেউ-ই 'ক্যাডার' হইবার টার্গেট নিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় নাই . . . ওর সাইজ দেইখাও সবার হাসি, কাটা রাইফেল এর সমান ওর সাইজ . . . বেটে-খাটো, হালকা-পাতলা শরীর . . . ও কেন ক্যাডার হইতে চায়? . . . সে বললো যে, সে যেই সাবজেক্ট এ ভর্তি হইছে সেইখান থিকা পাশ কইরা ভালো কোন চাকরি পাবে না আর তাছাড়া এমন আহামরি কোন ছাত্র সে না, তাই একমাত্র ছাত্র-রাজনীতি করলে এবং 'ক্যাডার পলিটিক্স' করলে এই পথ দিয়াই সে তাড়াতাড়ি বড়লোক হইতে পারবে, একসময় টাকা-পয়সা হয়া গেলে ব্যবসা করবে . . . তখন সাজ্জাদ ওর কথা শুইনা বললো যে, ব্যাটা বেক্কল, ক্যাডার হইতে গিয়া তো আরো বড় বিপদে পড়বি . . . একদিন গুলি খাইয়া মারা পড়বি, বাপ-মা'র জন্য ঝামেলা আরো বাড়াইবি . . . টগর এর বাপ-মা'র কথা জানি না, ওরে টাকা পাঠাইতো ওর বড় ভাই . . . আর আসলে ও বোকা কিসিমেরও ছিল বলে আমার মনে হইতো, একটা কথা বললে, শূণ্য চোখে তাকাইতো, বুঝতে সময় লাগতো . . .

যা-ই হোক, সময় যাইতে থাকলো, তথাকথিত বোকা টগররে অনেক চালাক বলেই মনে হইলো . . . হল এর টপ ক্যাডারদের একজন হয়া গেল . . . আমরা পাশ করে বাইর হয়া যাইবার সময় শুনি সে নিজেই একটা হল এর লিড দিতেছে . . .

তারপর একদিন শুনি বুয়েট এ সনি হত্যাকান্ডের খবর . . . টগর এর নাম . . . একদিন শুনি ধরা পড়ছে সে . . . মৃত্যুদন্ড থিকা যাবজ্জীবন . . . সম্ভবত জুয়েল বা বাবলু কেউ গেছিল জেলে ওর সাথে দেখা করতে . . . কইলো, যখন পত্রিকায় নাম আসলো তখন অনেকের কাছেই গেছে, কেউ হেল্প করে নাই, ইন্ডিয়াতেও পালানোর চেষ্টা করছে, পারে নাই . . . মিডিয়া অনেক সমস্যা করতেছিলো . . . সম্ভবত শেরাটন এ গেছিল কোন বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে, যদি কোন উপায় হয় . . . ওইখানেই ধরা পড়ে বা ধরাইয়া দেয়া হয় . . . আসলে ও যখন 'ক্যাডার' হওয়ার কথা বলছিলো, তখনই মনে হইছিলো যে, সে একটা গর্তে পড়তে যাইতেছে . . . সে নিজেও জানতো যে সে রিস্ক নিতেছে . . . হয়তো সে যথেষ্ঠ কেয়ারফুল ছিল না, হয়তো ওভার অ্যাম্বিশাস ছিল . . . যা-ই হোক, যেমনটা সে বলছে বা আমি শুনছি যে, সে চাইতেছিলো ফাঁকা গুলি করতে উপরের দিকে . . . শেষমেশ একটা মেয়েকে সে মাইরা ফেললো, যেইটা সে চায় নাই . . . কিন্তু সে যেইটা চাইতেছিলো, সেইটাও সে করতে পারে নাই . . . সে হয়তো একদিন সে হয়তো বাইর হয়া আসতে পারবে, যদি তার কানেকশনগুলির কাছে নিজেকে আবার সক্ষম প্রমাণ করতে পারে . . . কিন্তু মনে হয় সে হয়তো আর পারবেই না, তার একটা ভুল, যেইটা প্রত্যাশিতই ছিল, সেই ঘোরটোপে ভিতর এখন সে . . .

বান্নার একটা গল্প ছিল, যেইখানে সে নেশায় আসক্ত হয়া যাওয়া দুই বন্ধুর গল্প বলছিলো, সেই সময়ের আরো অনেক গল্প আছে, আছে বর্তমান সময়েরও . . . টগরের সময়টা ছিল '৯০ এর গোড়ার দিকে, যখন তার ভিতর তার গল্পগুলি তৈরী হইতেছিল, ব্যাপারগুলি তখনও মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্তের নাগালের মধ্যে ছিল . . . টগরের মতো কেউ কেউ 'ক্যাডার' হওয়ার লক্ষ্য নিয়াও ভর্তি হইছিল ঢাকা ইউনির্ভাসিটিতে, কেউ কেউ 'ক্যাডার' হইতে পারছে, কেউ মাঝপথে বিরতি দিছে, কেউ নেশায় পড়ছে, কতরকম মানুষ, কতকিছু করছে, করতেছে . . . আজকে শুধু টগর এর কথাটাই মনে পড়লো . . . তার গল্পটা যখন নিউজ এর ভিতর থিকা বাইর হয়া আইসা একটা খচখচানি তৈরী কইরা দিলো . . . যেন সে একটা মৃত-মানুষ, তার গল্পটা হঠাৎ কইরাই থাইমা গেছে বা এমনই ভচকাইয়া গেছে যে আর চেনাই যায় না . . . যদিও আমরা জানতাম যে, এমন একটা কিছুই হয়তো ঘটবে . . .

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৫৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×