somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা নামকরনের ইতিহাস (প্রথম পর্ব)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনার ধাপ দুটি। ধাপ দুটির প্রথমে বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। পরবর্তিতে বঙ্গ হতে কিভাবে বাংলা নামের জন্ম তা ব্যাখ্যা করা হয়।


বঙ্গ

বঙ্গ নামের পরিচয় বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ যেসব তথ্য ও তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, এগুলো প্রধানত দুটি ধারায় তুলে ধরা যেতে পারে। বলতে গেলে দুটি ধারাই ধর্মীয় সূত্র থেকে উপস্থাপিত হয়েছে। এত দূর অতীতকে জানার জন্য সম্ভবত ধর্মগ্রন্থ ছাড়া আর কোন লিখিত দলিল নেই, যেখান থেকে এ ধরনের তথ্য উদ্ধার সম্ভব।


তথ্য-তত্ত্ব ধারা-১


বঙ্গ নামকরণের প্রথম ধারা পাওয়া যায় মহাভারত, হরিবংশ, ঋগ্বেদ, পুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থে। গ্রন্থ গুলোতে বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি বিচিত্র কাহীনির অবতারণা করা হয়েছে। কাহিনীটি এমন-

“দীর্ঘতমা নামে এক অন্ধ ঋষী ছিলেন, তার চরিত্রে দোষ ছিলো। শ্রেণী এবং মর্যাদা নির্বিশেষে এই ঋষী প্রায় সব রমণীর সাথেই মিলিত হতেন। এক পর্যায়ে তিনি সমাজের সকলের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাড়ান। তিনি ঋষী তাই তাকে হত্যা করতেও সমাজের সবাই কুণ্ঠিত। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে, ঋষীকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হোক। সেই মতে, তাকে বেধে গঙ্গায় ভাসিয়ে দয়া হল। গঙ্গায় ভাসতে ভাসতে দীর্ঘতমা অনার্য বলিরাজের রাজ্যে এসে ঠেকেন। ঋষী দীর্ঘতমার করুণ দশা দেখে বলিরাজ তাকে উদ্ধার করেন। বার্ধক্যে উপনীত বলিরাজ তখনো নিঃসন্তান। রাজ্যের উত্তরাধিকার প্রয়োজনে রাজা তার দুঃখের কাহিনী ঋষীকে শোনান। রাজা ঋষীকে এই সমস্যা থেকে উদ্ধারের অনুরোধ করেন। ঋষী খুশি হলেন, যে দোষে তাকে গঙ্গায় ভাসানো হল, এখন বলীরাজ তাকে সেই কাজে আহ্বান করছেন। বলীরাজ ঋষীকে আপন স্ত্রী সুদেষ্ণার গর্ভে সন্তান উৎপাদনে ব্যবহার করলেন। দীর্ঘতমা ঋষী সুদেষ্ণার গর্ভে পাঁচটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। এরা ক্ষেত্রজ সন্তান নামে পরিচিত। বলিরাজ এই ক্ষেত্রজ পাঁচ পুত্রের নাম দিলেন অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্রু ও সুহ্ম। এই পাঁচ সন্তানকে রাজা একটি করে রাজ্য দেন এবং তাদের নামেই রাজ্যের নামকরণ করা হয়। এভাবেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয় বঙ্গ।”

অর্থাৎ, এই অঞ্চলের আধিবাসিদের আর্যদের ক্ষেত্রজ সন্তান বলা হয়েছে। বঙ্গ নামকরনের যে তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে, অনেক পণ্ডিতই একে অত্যন্ত অসন্মানজনক ও র্ঘৃণ্য প্রয়াস বলে অভিহিত করেছে। আর্যরা এ অঞ্চলের মানুষদের ছোট করার জন্য এই কাহিনী সৃষ্টি করেছে। পন্ডিতদের মতে আর্যরা পাঞ্জাবে প্রবেশের পূর্বেই বঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় সুসভ্য মানব গোষ্ঠী বাস করত।


এ অঞ্চলের অধিবাসীদের এমনভাবে দেখার প্রবণতা আর্যদের কেন হল-

*আর্যরা পাঞ্জাবে প্রবেশের পর বারবার বঙ্গ দখলের জন্য আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হওয়ায় এসব অসন্মানজনক কথা মহাভারত, হরিবংশ, ঋগ্বেদ, পুরাণ ও অন্যান্য গ্রন্থে স্থান পায়।

*উপরে উল্লেখিত ধর্ম গ্রন্থ গুলো(মহাভারত, হরিবংশ, ঋগ্বেদ, পুরাণ) আর্যদের সৃষ্টি।

*আর্যদের পরিচয়


তথ্য-তত্ত্ব ধারা-২

পরিচয়ের ধারা ক্রমের দ্বিতীয় তথ্য-তত্ত্বটি বহুল পরিচিত নয়। কিন্তু রামায়ন-মহাভারত-বেদের দীর্ঘতমা ঋষির ‘ক্ষেত্রজ সন্তান’ কেন্দ্রীক তত্ত্বের বিপরীত ধারায় এই তত্ত্বটিকে অধিকতর যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নেয়ার সুযোগ আছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিজ্ঞজণের মতে ‘রামায়ন-মহাভারত-বেদের’ বিপরীতে ‘বাইবেল-কুরআন কেন্দ্রীক’ এই তত্ত্বটি অধিকতর প্রমানযোগ্যও বটে।
ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অনুযায়ী সৃষ্টির আদিতে মানবকূল ছিল একই গোষ্ঠীভূক্ত (আল-কুরআন-২ঃ২১৩)। সময়ের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা বেড়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৌরাত ও আল-কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত নূহ (আঃ) মহাপ্লাবনের পূর্বে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের নিয়ে বজরায় আরোহণ করেন। এর বাইরে থাকা পৃথিবীর সকল স্থলজ প্রাণী মৃত্যুবরণ করে। প্লাবনের পর হযরত নূহ (আঃ)-এর নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। যে সব অঞ্চলে তাঁরা বসতি স্থাপন করেন, তাদের নামানুসারেই সেসব অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। এভাবেই পৃথিবীতে দ্বিতীয় দফায় মানব জাতির বিস্তার ঘটে এবং অনুমান করা হয় যে, আধুনিক বিশ্বের মানব গোষ্টী তাদেরই বংশধর। সে অনুসারে হযরত নূহ (আঃ)-কে দ্বিতীয় আদম বলা হয়। হযরত নূহ (আঃ)-এর এক পুত্রের নাম ছিল হাম এবং হামের পুত্রের নাম হিন্দ। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম বং। ঐতিহাসিকরা দবী করেন- ‘বং’ এবং তাঁর সন্তানেরা এই অঞ্চলে (বর্তমান দুই বাংলা) বসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চল ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।




[বি.দ্র.- লেখাটির অধিকাংশই আব্দুল বাকী রচিত-"গ্রামীণ বসতি" বইটি থেকে নেয়া হয়েছে। যে কেউ বইটির সপ্তম অধ্যায়ে লেখাটির অধিকাংশ পাবেন। এছাড়া "আর্যদের পরিচয়" অংশটুকু লিংকে দেয়া কে এম আমিনুল হক রচিত বইটির প্রথম অধ্যায়ে আছে। বঙ্গ হতে কিভাবে বাংলা নামের জন্ম তা পরবর্তী পর্বে দেয়া হবে। ]

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×