somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিটেনে বাঙ্গালীদের কীর্তি, অক্সফোর্ডে বাংলাদেশী নৌকাবাইচের প্রচলন করলেন বাংলাদেশের সিলেটের আজিজুর রহমান

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিমানে চেপে বাংলাদেশ থেকে নৌকা গেল বিলেতে। সেই নৌকা নিয়ে হলো নৌকাবাইচ। বাংলাদেশের সেই নৌকাবাইচ এখন অক্সফোর্ড নগরের জনপ্রিয় এক বার্ষিক অনুষ্ঠান! এই নৌকাবাইচের তারিফ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বয়ং!
৮ ডিসেম্বর, ২০১২। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া থেকে বাসে চেপে গেলাম অক্সফোর্ড। কারণ, ওখানেই থাকেন ঘটনার নায়ক আজিজ উর রহমান। বিখ্যাত আজিজ রেস্টুরেন্টে বসে আজিজ উর রহমান নিজেই শোনালেন এই বাইচবৃত্তান্ত, ‘২০০৭ সালের ঘটনা। অক্সফোর্ড নগরের হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎসব হবে। পরিকল্পনাসভায় আমাকে বলা হলো নতুন কী করা যায় আইডিয়া দিতে। আমি বললাম, নৌকাবাইচের আয়োজন করব। কিন্তু সেটি হবে পুরোপুরি বাংলাদেশি ধাঁচে।’
অক্সফোর্ডের নৌকাবাইচ সব সময়ই জনপ্রিয়। অভিজাত মহলে এর কদরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশি নৌকাবাইচ, সেটা আবার কেমন? জানতে আগ্রহী হলেন নগরকর্তারা। চ্যালেঞ্জটা লুফে নিলেন আজিজ উর রহমান।
দ্রুত যোগাযোগ করলেন নারায়ণগঞ্জে। বাংলাদেশের কারিগরদের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, সময়মতো তৈরি হয়ে যাবে নৌকা। জাহাজে চেপে সেই নৌকা যাবে অক্সফোর্ড। কিন্তু বিধি বাম। নির্ধারিত সময়ে শেষ হলো না নৌকা তৈরির কাজ। উৎসবের আর মাত্র কটা দিন বাকি। জাহাজে নেওয়ার সময় নেই। এখন উপায়?
শেষ চেষ্টা হিসেবে আছে উড়োজাহাজ। সেখানেও রাজ্যের বিপত্তি। কোনো এয়ারলাইনস এত বিশাল নৌকা পরিবহনে রাজি নয়। অনেক পীড়াপীড়ির পর শেষে রাজি হলো থাই এয়ারওয়েজ। কিন্তু প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটো নৌকা বিমানে তোলার উপায় কী?
শেষমেশ তিন ভাগে ভাগ করে বিমানে ওঠানো হলো দুটি নৌকা। মে মাসের এক সন্ধ্যায় হিথরো বিমানবন্দরে গিয়ে নামল বোয়িং ৭৪৭। হিথরো থেকে নৌকা উঠল আবার লরিতে। লরি অক্সফোর্ড গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন উৎসবের মাত্র ৩৬ ঘণ্টা বাকি। নৌকার তিনটি অংশ জোড়া দেওয়া বাকি। আজিজ উর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়। মাঝি আর বাইচের দরকারি অনুষঙ্গ ঢোল বাদনের লোকও জোগাড় হয়ে গেল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে।
উৎসবের দিন। লোকে লোকারণ্য টেমস নদীর দুই পাড়। বিপুল করতালি আর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পানিতে ভাসল বাংলার নৌকা। দুটো নৌকাই লাল, সবুজ আর হলুদ রঙে রঙিন। মাঝিদের গায়ে ঝলমলে রঙিন পোশাক। কণ্ঠে গান। নৌকা এগোচ্ছে ঢোলের তালে তালে।
সব মিলিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ টেমসপাড়ের দর্শক। সেই মুগ্ধতার সুবাদেই বাংলাদেশের নৌকাবাইচ জায়গা করে নিল অক্সফোর্ড নগরের ইতিহাসের পাতায়। তৈরি হলো অক্সফোর্ড বাংলাদেশি বোট ক্লাব। ফারমুর রিজারভোয়া অক্সফোর্ডের কাছেই দারুণ সুন্দর এক জলাধারের নাম। যেখানে পুরোটা বছর ধরে চলে নৌকাবাইচ অনুশীলন আর প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর এই ফারমুর রিজারভোয়ায় আয়োজিত হয় বার্ষিক নৌকাবাইচ। সেই নৌকাবাইচ হয়ে ওঠে যুক্তরাজ্য তো বটেই গোটা ইউরোপের বাংলাদেশিদের মিলনমেলা।
মা-বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় বিলেতে পাড়ি জমিয়েছিলেন আজিজ উর রহমান। সেটা ১৯৬৯ সাল। সিলেটে ১৯৫৮ সালে জন্ম আজিজ উর রহমানের। বাংলাদেশের সেই আজিজ উর রহমান এখন অক্সফোর্ডের এক খ্যাতিমান ব্যক্তির নাম। ব্রিটেনের বাংলাদেশি খানাপিনা জনপ্রিয় করার পেছনে আছে তাঁর বিশাল ভূমিকা। ২০০৮ সালে পেয়েছেন অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ইন বিজনেস ডিগ্রি। তিনি অক্সফোর্ডশায়ার বিজনেস এন্টারপ্রাইজের পরিচালক ও বাংলাদেশ-ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের মহাপরিচালক। এ ছাড়া জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের নানা দাতব্য আর সেবামূলক কাজে।
আজিজ উর রহমানের নৌকাবাইচের পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে তাঁকে সাধুবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই প্রশংসাবার্তার কিছু অংশ, ‘আমি নৌকাবাইচের ইতিহাস জানতে ভীষণ আগ্রহী। সেবামূলক কাজে আপনার ব্যাপক অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো। আপনার অনুষ্ঠানের জন্য শুভকামনা।
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×