somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন ডাঙ্গা (সায়েন্স ফিকশন)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে অনেক আগের দিন আগের কথা। আমি তখন মানুষ ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই আমি অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখতাম ঘুমের ঘোরে রাত-বিরাতে। তবে স্পেস সিটিতে ন্যাচারাল দিন রাত বলে কিছু ছিল না। চোদ্দ ঘণ্টা সিটির সমস্ত জানলা স্বচ্ছ রাখা হত; ফলে সূর্য কিরণ সহজে ভেতরে প্রবেশ করত। আর দশ ঘণ্টা জানালাগুলা থাকত অস্বচ্ছ; ফলে রাতের আবহ বজায় থাকত। সব নিয়ে প্রচীন পৃথিবীর সাথে মিল রেখে চব্বিশ ঘন্টা। এই চব্বিশ ঘণ্টার সাইকেল যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল। স্পেস সিটি থেকে নিউক্লিয়ার আগুনে পোড়া পৃথিবী দেখে আমাদের খুব মায়া লাগত।

আমি ছোটবেলায় তেলাপোকা দেখে খুব ভয় পেতাম। আশ-পাশে কোন তেলাপোকা দেখলে চিৎকার করে কেঁদে কিউবিকল(স্পেস সিটির বাসা-বাড়ি) মাথায় তুলতাম। একসময় এমন অবস্থা হল যে ঘুমের ঘোরে তেলাপোকা স্বপ্নে দেখতে লাগলাম। একটা তেলাপোকা আমার পিছনে তাড়া করত ,আর আমি কাঁদতে কাঁদতে ভোঁ দৌড় দিতে থাকতাম। এরকম অবস্থা স্বপ্নের ঘোরে বেশ মাঝে মাঝেই চলতে থাকত।

এভাবে স্পেস সিটির চব্বিশ ঘণ্টার সাইকেলের খপ্পরে পড়ে আমি প্রাকৃতিক নিয়মের বশবর্তী হয়ে কৌশরে উপনীত হলাম। তবে স্বপ্নের ধাক্কা থেকে রেহাই পেলাম না। অবশ্য এবার স্বপ্নের ধরন পাল্টাল। তেলাপোকার বদলে আমার পেছনে রাগী সৎ মা বেত হাতে দৌড়াতে থাকল। আর আমি স্বপ্নের ঘোরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ভাসাতাম। শিশু বয়সেই আমার মার দুনিয়াবী শরীরের সমাপ্তি ঘটে।আমার বাবা পরবর্তীতে আরেকটা বিয়ে করে। আমার সৎ মা আমাকে দুচোখে দেখতে পারত। আমার কৌশরের বড় একটা অংশ কেটেছিল এই জ্বালাতনে ।

এরপর আমি একসময় যৌবনে পদার্পন করলাম। কিন্তু এক্স-গার্ল ফ্রেন্ড আমাকে কিন্তু ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে তাড়া করে বেড়াত না। কারণ আমি গার্লফ্রেন্ড তত্ত্বে মোটেও বিশ্বাসী ছিলাম না। যেই মেয়েকে আদৌ জীবনসঙ্গী হিসেবে পাব কিনা নিশ্চয়তা নাই; তার পেছনে কাড়ি কাড়ি বাজে অর্থ খরচের যৌক্তিকতা নেই।

এভাবে একসময় বিয়ে থা করে সাংসারিক হলাম। তবে এক বছরের মাথায় ঘুমের ঘোড়ে স্বপ্নে ঘাড়-ত্যাড়া শশ্বুড়কে পিছে পিছে তাড়া করতে দেখলাম।



এভাবে একসময় বউকে দেখলাম তাড়া করতে। সেটা দীর্ঘ সময় ব্যাধানে ছেলের বউয়ে পরিণত হল। এভাবে অফিসের বস,কিউবিকলের মালিক,এলাকার দারোয়ান, ম্যাগ্লেভ সুপারকন্ডাক্টিং ট্রেনের ড্রাইভারসহ অনেককেই দেখতে লাগলাম ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন ডাঙ্গার অলিতে গলিতে।

রুক্ষ সময়ের নিষ্ঠুর দাবড়ানিতে একদা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলাম। হঠাৎ স্বপ্ন ডাঙ্গায় যমদূতের দেখা পেলাম। সে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা। স্বপ্নের ঘোরে সে আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। প্রতিবার ঘুম ভাঙলে ভাবতাম,`` যাহঃ বাবা বড় বাঁচা গেছে।`` একদিন দেখলাম স্বপ্ন ডঙ্গার ঘুমের রাজ্য থেকে আর উঠে আসতে পারছি না। স্বপ্ন ডাঙ্গার প্রতিটি অস্তিত্ব আমাকে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখছে। বুঝলাম আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। এবার বিদায়ের পালা।

কিন্তু স্বপ্ন ডাঙ্গা আমাকে মোটেও ছাড়ল না। সেখানে আটকা পড়ে গেলাম। দেহটার যে কি হল, সেটার আর মালুম করতে পারলাম না।
মনের দুঃখে স্বপ্ন ডাঙ্গার নদীর ঘাটে বসে থাকলাম। এভাবে যেন যুগ যুগ চলে গেল। হঠাত একদিন নদীতে সোনার তরীর দেখে পেলাম।
কেউ এক জন আমাকে নিতে এসেছে। ধব ধবে সাদা আলখাল্লায় জড়ানো সোনার তরীর মাঝি। বাহির থেকে খালি মানুষ্য দেহ কাঠামোটাই দৃশ্যমান। মাথা, নাক , মুখ সব কাপড়ে ঢাকা। আমি বেজায় ভয় পেলাম।মাঝি আমাকে খুব কর্কশ গলায় বলল,`` উঠে পড়!``

এরপর আমার ঘুম ভাঙল। কিন্তু সেই আগের মত ঘুম ভাঙ্গা নয়, একটু অন্য রকম ঘুম ভাঙ্গা। নিজের দেহ দেখতে পেলাম না। চারপাশে কাঁচের গ্লাসের ভেতরের তরলের মৃদু ঠান্ডা শির শির অনুভূতি টের পালাম। কিন্তু এই পানির মাঝে কিভাবে বেঁচে আছি, সেটা ভেবে যার পরনাই বিস্মিত হলাম। কথা বলার আকুল চেষ্টা করলাম , কিন্তু পারলাম না। জারের কাঁচ গলে দৃষ্টিকে বাইরে ছুঁড়ে দিলাম। যেটা দেখলাম , সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সারি সারি কাঁচ জারে সাজানো শত শত মানব মস্তিষ্ক।প্রতিটার সাথে রয়েছে একজোড়া শীতল ভূতুড়ে চোখ। আতঙ্কে চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করলাম; কিন্তু পারলাম না। বুঝতে পারলাম ল্যাব-র‍্যাটে পরিণত হয়েছি। খুব প্রার্থনা করলাম স্বপ্ন ডাঙ্গায় ফিরে যেতে। সেটা হল না। এভাবে দিন গেল, মাস গেল, বছর গেল, যুগ গেল। কিন্তু স্বপ্ন ডাঙ্গায় আর ফিরে যেতে পারলাম না।


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৮
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×