somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কোনও কষ্ট নেই

১০ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“তুই একবার গিয়ে বর্ষাকে দেখে আয়”
“না”
“ও অসুস্থ”
“ও”
“ভয়ানক অসুস্থ”
“ও”
“কিরে, খালি ও ও করছিস কেন?”
“হুম”
“কেন যাবি না? তুই মেয়েটাকে আর কতো কষ্ট দিবি ?”
“আমি ওকে কষ্ট দেই নি। ও নিজেই কষ্ট পেয়েছে।যারা কষ্ট পায় নিজের দোষেই পায়।”
“আল্লাহর দোহাই, ওর অবস্থা খুব খারাপ।মরেও যেতে পারে।”
“আচ্ছা।”
“তোর সাথে কথা বলে লাভ নেই। মনে রাখিস তুই জীবনে এর জন্য পস্তাবি।”
“কিভাবে??”
“তুইও একদিন প্রচণ্ড কষ্ট পাবি।”

উৎসাহ সহকারে হাসলাম । প্রচণ্ড কি কষ্ট পাব সেটা দেখতে ইচ্ছা করছে। মানুষ কিভাবে প্রচণ্ড কষ্ট পায় সে ব্যাপারটা অনেক বছর যাবত দেখিনা। যারা কষ্ট পায় তাদের কাছ থেকে দূরে থাকি। মানুষ যখন কষ্ট পায় তখন সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুলভাবে প্রার্থনা করে। কিন্তু কষ্ট কেটে গেলে আবার সব ভুলে যায়। জীবন নতুন করে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। আমি জানি বর্ষাও কোনও একদিন সব ভুলে যাবে। বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। তখন মনেই পড়বেনা যে সে আমাকে ভালোবাসতো। তখন যদি আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করি,
“এই বর্ষা।”
“আমাকে বলছেন?”
“হ্যা, তুমি কেমন আছো?”
“আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।”
ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। একটা অচেনা লোক তাকে চিনল কিন্তু সে চিনতে পারছে না। অথবা ও আমাকে চিনবে কিন্তু না চেনার ভান করবে। মানুষের জীবনে এটাই বেশি হয়। সবাই ভান করে। কেউ না চেনার, কেউ সুখী থাকার।আমি ভান করি না। আমি আসলেই সুখী। কেউ আমাকে না চিনলেও আমি সুখী থাকবো।

বর্ষার সাথে আমার কিছু নেই। না প্রেম , না মোহ। তবে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে। হয়তো ভালবাসে সত্যিই। আমি অবশ্য বিশ্বাস করিনা। ভালোবাসা এমনই। তীব্র আবেগ আর মোহের ঝড়ো হাওয়া দিয়ে শুরু হয়ে ঝড় আর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। আমি তাই মেয়েটার থেকে দূরে থাকি। কি ভেবে মেয়েটা আমাকে ভালবেসেছে তা অবশ্য আমি নিশ্চিত নই। তবে একটা কারন হতে পারে সে আমাকে অসহায় ভেবেছে। মেয়েরা অসহায় পথচ্যুত ছেলেকে ভালবাসতে ভালবাসে। তারপর তার বান্ধবীদের কাছে গর্ব করে বলে,
“জানিস আমি না, ওকে একদম ভালো করে দিয়েছি। ইসস, আমি না থাকলে যে ওর কি হতো !!!”
বর্ষা হয়তো এমন ভেবেছে। আমি তাই ওর কাছ থেকে দূরে থাকি। কিন্তু মেয়েদের আরেক অভ্যাস হচ্ছে যা পাচ্ছে না, তাকে পাবার চেষ্টা করা। মনে মনে ভাবে যে,
“আমার পেছনে কতো সুন্দর সুন্দর ছেলে ঘুরে, আর তুই আমাকে পাত্তা দিস না ! দাঁড়া, তোকে একবার প্রেমে ফেলে নেই, তারপর দেখাব মজা”
বেসিরভাব সময় সেই মজা দেখান শেষ হয় কান্না দিয়ে। ছেলেও কাঁদে, আর মেয়েও কান্নার অভিনয় করে।আর বলে,
“ইস, তুমি যদি আমার জীবনে ওর আগে আসতে তাহলে আমি তোমাকেই ভালবাসতাম” তারপর নাকিকান্না জুড়ে দেয়। ছেলেরা আর জিজ্ঞাসা করেনা “আরেকটা ছেলে থাকতে তুমি আমার সাথে প্রেম করলে কেন ???”
তাদের মাথা তখন ঠিক থাকেনা। হন্যে হয়ে তারা বটগাছ খুঁজতে থাকে। বটগাছ পেলে সেখানে গিয়ে বসে থাকে আর নিজেকে দেবদাস ভাবে। নিজেকে প্রতারিত অসহায় ভাবতে অনেক মানুষ পছন্দ করে।

এখন আর আমি এসব পাত্তা দেই না। বয়স তো কম হলনা। জীবনে এসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত। তবে আমার সব বন্ধু বর্ষার ব্যাপারে আমার উপর ক্ষিপ্ত। ইদানীং আরও খেপেছে বর্ষা অসুস্থ হবার পর। আমাকে জানানোর পরও আমি দেখতে যাই নি।

তীব্র রোদেলা দুপুরে আমি রাস্তায় বের হলাম। এসময় হাঁটতে মজা আছে। চৈতি একটু আগে ফোন দিয়েছিল। বলেছে যে বর্ষার অবস্থা খুব খারাপ। আমি চাইলে শেষবারের মতো দেখতে পারি। আমি রেখে দিয়েছি। কিছু বলিনি। যাবো না আসলে। কাউকে সুখী করার কিংবা কারো কথা শোনার ইচ্ছা আমার নেই। প্রখর এই দুপুরে রাস্তায় কেউ নেই। শুধু আমি আর কয়েকটা কুকুর। এই মুহূর্তে বাতাস থেমে গেছে। মনে হয় বৃষ্টি আসতে পারে। বাহ ! চমৎকার হতো বৃষ্টি নামলে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম বৃষ্টি নামলে হাসপাতালে গিয়ে বর্ষাকে দেখে আসবো। বৃষ্টির মাঝে বর্ষাকে দেখা। খুবই রোমান্টিক হবে ওর জন্য। সে নিশ্চয়ই আমাকে দেখে কেঁদে ফেলবে। তারপর মারা যাবে। আমি বৃষ্টির দিনে কাঁদতে কাঁদতে কাউকে মরতে দেখিনি। এবার নিশ্চয়ই এমন অভিজ্ঞতা হবে। বেশ খুশি লাগছে এখন। কিন্তু বর্ষা যদি না মারা যায় ? তখন তো আমি বিপদে পড়বো। মাঝখান দিয়ে আমার দিনটা মাটি হবে। এর চেয়ে ভালো রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভিজি।

বৃষ্টি অবশেষে নেমেছে। তবে বৃষ্টি না শুধু। বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের মতে বজ্রসহ বৃষ্টি নেমেছে।এখন যদি কাঁদতে পারতাম তাহলে বৃষ্টির পানি আমার কান্না ধুয়ে নিতে পারতো। চমৎকার একটা কাব্যিক বাক্য হয়ে যেত। কিন্তু অজ্ঞাত কারনবসত আমার কান্না পাচ্ছেনা। কারন আমার কোনও কষ্ট নেই। মানুষ কিভাবে প্রচণ্ড কষ্ট পায় সে ব্যাপারটা অনেক বছর যাবত দেখিনা। যারা কষ্ট পায় তাদের কাছ থেকে দূরে থাকি। মানুষ যখন কষ্ট পায় তখন সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুলভাবে প্রার্থনা করে। কিন্তু কষ্ট কেটে গেলে আবার সব ভুলে যায়। আমিও সব ভুলে গেছি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×