somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বাংলা মুভি "মোস্ট ওয়েলকাম"- রিভিউ উইথ সাম খিচুড়ি থিংকিং

২০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের কয়েকদিন আগেই দেখি বাসার কাছে সেনা অডিটোরিয়ামে নাকি এম এ জলিল অনন্ত সায়েবের “মোস্ট ওয়েলকাম” আসছে:|:| । সঙ্গে সঙ্গেই আমার মাথায় নানারকম চিন্তা ভাবনা আরম্ভ হয়ে গেল । এমনিতে ১০ বছর আগের ইনসিডেন্টটা ভুলিনাই, কিন্তু এই হলটাতে এটাক হয়নাই এইটুকুই যা ভরসা । তারপরেও নানা দ্বিধাদ্বন্দের মাঝ দিয়ে ঈদের দিন এসে পড়ল । আগেই খবর পেয়েছিলাম টিকিটের দাম ৩০, ৪০, ৫০ টাকার মত । হলে গিয়ে ১২টার শো ধরার সিদ্ধান্ত নিলাম । তখনো ভয় যায়নাই । সকালে উঠে সেজেগুঁজে নামাজে গেলাম ।

আসার সময় কাকা পাকড়াও করল:-/:-/ । অগত্যা কাকার বাসায় গেলাম । উনার অভ্যাস হচ্ছে, বাসায় কেউ আসলে উনি নিজের কর্মস্থলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া গান(!):|অতিথিদের দেখান(হ্যাঁ দেখান, তাঁর কুচড়ে মুচড়ে কষ্ট করে গান(!) সে এক দেখার মতই জিনিস বটে! অনেক কষ্টে একটা গানের কথা উদ্ধার করতে পারলাম:((, “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম” । যাই হোক, সকালের শো এর টাইম ঘনিয়ে আসায় একটু পোলাও-গোশ্ত খেয়ে সৌখিন গায়কের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে হলের উদ্দ্যেশ্য বেড়িয়ে পড়লাম ।

৪০ টাকার টিকিট কিনে হলে সিট নিলাম । এই হল হাইফাই না /:) /:) /:) । অনেকখানি মলিন । স্টার সিনেপ্লেক্সের মত এই হলের সিট “কুত্তালেঞ্জা ফ্লেক্সিবল” না, একটু কসরত করতে হয় । যাই হোক, ফিল্ম শুরু হল । জাতীয় সংগীতের সময় দাঁড়াতেই মুভি এগিয়ে দেয়া হল । “মুশকিল আসান বাবা”র মাজার দেখিয়ে সিনেমা শুরু হৈল ।

এরপরেই টাকা আদায়ের জন্য একদল সন্ত্রাসী এক ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে যায় । তার জন্য মুশকিল আসান বাবার মাজার “প্রবলেম বক্স”এ এ নিয়ে চিঠি লেখা হয় । অন্য একদল সন্ত্রাসীর লুটের টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীকে মুক্ত করা হয় । এরপর প্রথম গ্রুপটাকে শায়েস্তা করে মুখোশ পরা “ফাটাকেষ্ট” থিমের সাথে পর্দায় আসা অনন্ত:((:(( । অনন্ত লুটেরাদের কয়, তোরা যদি ভাল হয়ে যাস তবে তোদের মোস্ট অয়েলকাম, জবাবে সন অব দি গানেরা:P কয়, যারা আমাগোর লগে টাল্টিবাল্টি করে আমরা হেগোর “গুডবাই” কই…… এ কথা শুনে অনন্ত ও মুশকিল আসান এসোসিয়েটস “……ধুম ধুম ধুমানি, তেঁড়া ঘাড়ে কিলানি……বাপ আইবে এখুনি, ছাইড়া দেনা গুলতানি……” স্টাইলে পিট্টি দেয় অনন্ত সায়েব । এরপরে আসল কাহিনী শুরু ।

ছবিতে আরিয়ান চৌধুরী(অনন্ত) দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন নিষ্ঠাবান অফিসার । তার এখনকার মিশন হচ্ছে দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপীদের শায়েস্তা করা । সে তার প্রথম টার্গেট হিসেবে ঠিক করে শীর্ষ ঋণখেলাপী এবিসি(আহমেদ শরীফ)কে । তারা টিম নিয়ে এবিসির বাসায় হানা দেয় আরিয়ানের লোকজন । কাবিলার “কি খাইবেন স্যার? ঠান্ডা না গরম?” শুনে আরিয়ান সাহেব বিচিত্র হাসি দিয়ে বলা শুরু করেন “গরম খেলে নরম হয়ে যাব…………” এরপর অনেক খোঁজাখুজির পরও অবৈধ টাকা পয়সা খুঁজে না পাওয়াতে এবিসি স্বরুপে ফিরে আসে । একপর্যায়ে আরিয়ান প্রায় ১০ কোটি টাকা খুঁজে পায় । ঘটনাচক্রে ফোনে কথা হয়ে যায় এবিসির মেজাজী মেয়ে অধরা(বর্ষা)র সাথে । বাকি টাকা খুঁজে বের করার কথা বলে এবিসিকে শাসিয়ে যায় আরিয়ান ।

ওদিকে মুশকিল আসান বাবার মাজারে চিঠি লিখলে কে সব সমাধান করে দেয় তাই নিয়ে তদন্ত করা শুরু করে পুলিশ অফিসার জীবন(বাপ্পারাজ) । সে প্রায়ই মাজারে গিয়ে মাজারের খাদেম(রাজ্জাক) এর কাছ থেকে আসল কথা জানার প্রচেষ্টা চালায় । কিন্তু খাদেম্ সাহেবকে আয়ত্তে আনা গেল না । বারবার বিফল হয়ে একবার খেপে খাদেমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায় জীবন । কিন্তু অনন্তের বাধায় ব্যর্থ হয় ।

অন্যদিকে আরিয়ানের হাতে বাবার চিতপটাং হবার খবর জানতে পেরে অধরা ক্ষেপে যায় । সে দুর্নীতি দমন কমিশনের অফিসে(“স্পিড” সিনেমায় অনন্য চৌধুরীর একই অফিস;););)) গিয়ে আরিয়ানকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালায় । নিজেই নিজের জামাকাপড় ছিঁড়ে রুমের বাইরে গিয়ে হল্লা শুরু করে । তখন এক মুরব্বী শ্রেণীর লোক অফিসে সিসিটিভিতে ভেতরের সব দেখেছেন বলে জানান :P:P:P। অধরা এভাবে “ধরা” খাবার পর কিছু লেকচার শুনে মেজাজ খ্রাপ করে চলে যায় ।

এরপর দ্বিতীয় টার্গেট আসিফ খান(মিশা সওদাগর) এর আগমন । উদ্বোধনী বক্তৃতার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় । এখানে আসিফ খানের ক্ষেত্রে শুরু হইল “খেমটা নাচ”X((, সে নাচের কথা কমই বলি…………এমন সময় ধুম কইরা ক্রিষ মুভির মাস্ক পড়ে আরিয়ানের আগমন, এরপরে আসিফ খানকেও শাসিয়ে যায় আরিয়ান(বুঝলাম না বাংলাদেশ থেকে এত তাড়াতাড়ি ঐখানে গেল কেমনে!:|)

এরপরে আসিফ খান তার চাচা এবিসির সাথে লিয়াজো করে আরিয়ানকে শায়েস্তা করার প্ল্যান করে । তারা তখন ভাবছে আরিয়ান & মুখোশওয়লা দুই ব্যাক্তি । বস্তি কেনার কথা বলে আরিয়ানের জন্য ফাঁদ পাতা হয় । পরে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেলের মাধ্যমে বন্দী করার পর আরিয়নের পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় । পরে অধরার ইজ্জত সংক্রান্ত টালবাহানা করে মাস্কের আড়ালে যে আরিয়ানই যে ধনীদের সম্পদ নিয়ে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিত সেই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় । আরিয়ানের ওপর একপর্যায়ে "দুব্বল" হয়ে পড়ে অধরা ।
আসিফ-এবিসি গং এর ব্ল্যাকমেলের কারণে তাদের আটকে যাওয়া টাকা উদ্ধার করার জন্য থাইল্যান্ড যায় আরিয়ান । এভাবে মুভি এগিয়ে যায় চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
কেউ যদি আগের মুভিগুলোড় মত ঠা ঠা করে হাসার জন্য হলে যেতে চান তবে নিরাশ হতে পারেন । কারণ আগের মুভিগুলোতে হাসানোর জন্য ক্লোজ শটে অনন্ত সাহেবের এক্সপ্রেশনের একটা বড় ভূমিকা ছিল । এ মুভিতে সেরকম ক্লোজশট তেমন একটা নেই । আর ফাইট সিকোয়েন্সের সময় “ক্রিশ” মুভির মত একটা মাস্ক পড়ে ফাইট করেছে নায়ক । একারণে মার্কামারা “জিদ্দি” এক্সপ্রেশনগুলো ধরা পড়েনি/:)

কিছু পজিটিভ দিকঃ

১। মোটরসাইকেলের শটগুলো ছাড়া একশান সিকোয়েন্স বাংলাদেশী দর্শকদের জন্য ভালোভাবেই উতরে যায় । পাবলিক ভালোই তালি দিল । মোটরসাইকেল্এর লাফ দেয়ার শটগুলো পুরাই আজগুবি ।
২। ফাইট সিকোয়েন্সগুলোতে তেমন একটা খুঁত ধরা যাচ্ছে না ।
৩। বেশিরভাগ এক্টরদের অভিনয় ভালো হয়েছে । এম এ জলিল অনন্ত ইংরেজি তেমন একটা বলেননি । মুখোশ পড়ে ফাইট করার আইডিয়াও খারাপ না ।
৪। গল্পটাতে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে বলে মনে হয়েছে, তবে কোন সিনেমার(সাউথ/অন্যান্য) নকল কিনা সেটা বুঝতে পারলাম না ।
৫। গানগুলো শ্রুতিমধুর ।
৬। অনন্ত সাহেবের মুখে প্রথমবার “স্টপ” শুনলাম ।
৭। লোকেশনগুলো সুন্দর ।
৮। “পি আই এ” এর প্লেন দেখিনাই ।


কিছু নেগেটিভ দিকঃ

১। নাচের ধরণ ।
২। স্নেহা উল্লাল ও রাধিকার উপস্থিতি- এদের উপস্থিতি খুবই কম । একটা করে গান ও মাত্র কয়েক মিনিটের দৃশ্যে তাদের দেখা গেছে । তাদের ক্যারেক্টারটা না থাকলেও এমন কিছু হত না । এক ধরণের ধোঁকার মত হয়ে গেল ব্যাপারটা ।
৩। অনন্ত ও বর্ষার চরিত্রকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । রাজ্জাক, বাপ্পারাজ এদেরকে জাস্ট গেস্ট এপিরিয়েন্স মনে হইতে পারে । এটা ভালো লাগল না ।
৪। প্রথম দিকের ভিলেনদের ডেরায় হিন্দি আইটেম সং ।
৫। নায়কের সংলাপ উচ্চারণ প্রায় আগের মতই আছে । "ছাড়া" কে বলেন "সারা"......পুরা মুভিতেই "ছ", "স" নিয়ে হাস্যকর গোলমাল ।
৬। একটা ব্যপার বুঝলাম না, মুশকিল আসান বাবার মাজার যদি মাজার হয়, তবে অনন্ত জলিল ওরফে আরিয়ান চৌধুরী "মুশকিল আসান বাবা" হন কি করে???X((X((X((


একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, কাহিনী যাই হোক না কেন, সাধারণ হলের মানুষ হাততালি দিতে এত ভাবে না । অবশ্য এটাও ঠিক, এই ধরণের সিনেমা আর একশান দেখে না সাধারণ মানুষ । আর “দি স্পিড” এর তুলনায় “মোস্ট ওয়েলকাম” কিছুটা হলেও একটু ম্যাচিওর মুভি । গড়াগড়ি খাবার জন্য দেখলে হতাশ হওয়া লাগতে পারে ।


ব্যাস এইটুকুই, ঈদ মোবারক:):):)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৪৬
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×