somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লংঘনের খতিয়ান (১)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর এক নম্বর সুপার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশ। বর্তমান পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ঘটক এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘনের মধ্যে দিয়ে। তাইতো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুবৃত্তি ও মানবাধিকার লংঘন করেই চলেছে। যেন সৃষ্টিকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর গজব হিসাবে পাঠিয়েছেন। দেশে দেশে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘন করে এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের খলনায়ক হয়ে পরবর্তীতে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি সম্পন্ন দেশে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তি হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, সৃষ্টি করতে হয়েছে অনেক ইতিহাস। এ ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘৃণিত রুপটি, যা মানবত ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন এবং গোটা পৃথিবীকে ত বিত করুণ ইতিহাস। দস্যুবৃত্তিই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পেশা। আজ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধন সম্পদ, সহায় সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সবই বিভিন্ন দেশ থেকে জোর পূর্বক দস্যুতা ও প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা। এরা মূলত পরের ধন সম্পদের উপরই পুদ্দারী করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুতার শিকার হয়নি পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই। কিভাবে তারা মানবতা ও মানবাধিকারকে গলাটিপে হত্যা করেছে, সুন্দর এ পৃথিবীকে করেছে রক্তাক্ত, করছে ধ্বংসস্তুপে। যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবী ধ্বংসের দানব রুপে আর্বিভূত হয়েছেন। তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়নি এমন দেশ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর পরাশক্তি হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার উপরই খবরদারী শুরু করেছে । এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবের উপরও গোয়েন্দা নজরদারী করতে দ্বিধা করেনি তারা। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকল্প গণমাধ্যম উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তার বার্তায় উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুবৃত্তির নানা অজানা কাহিনী। তাদের আসল চেহারা পৃথিবীবাসীর সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে এ বিকল্প গণমাধ্যম। মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা সেজে মানবাধিকার ধ্বংসের মহানায়ক হয়ে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম তারা চালিয়েছে তা কিছুটা হলেও তুলে ধরেছে উইকিলিকস। যা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। তারাই পৃথিবীটাকে যেমন ইচ্ছা চালাচ্ছে। তাইতো সকল দেশ তাদেরকে সমীহ করে চলে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলো তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যস্ত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ মানবতা ধ্বংসের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টগণ। যারা ইতিহাসে মানবতা ধ্বংসের জন্য কুখ্যাত হয়ে রয়েছেন। কিন্তু পৃথিবীতে কোন সাম্রাজ্যবাদই চিরস্থায়ী হয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদও হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ধ্বংসের সীমানায় পৌছে গেছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব খর্বের কথা প্রকাশ পেয়েছে এফবিআইয়ের সা¤প্রতিক রির্পোটগুলোতে। কথায় আছে আলো নিবানোর আগে নাকি একটু বেশিই জ্বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পতনের আগে একটু বেশি কুকর্ম করে নিচ্ছে। এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবতা ধ্বংস, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুতা বর্ণনা করতে গেলে একটি বিরাট আকৃতির বই হয়ে যাবে। কারণ তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সচেতন পৃথিবীবাসী ও পৃথিবী গড়ার কারিগর এ তরুণ সমাজের উদ্দ্যেশে আংশিক কুকর্মের বর্ণনা পেশ করা হল, যাতে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংসের নায়করা এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সাম্রাজ্যবাদের শিকড়কে পৃথিবী থেকে উপড়ে ফেলে, একটি শান্তি, সুখের নির্মল পৃথিবী গড়তে পারেন।

* শ্যাময়েল হান্টিংটন একজন ইহুদী পন্ডিত। ‘সভ্যতার সংঘাত’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। পুস্তকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় পাশ্চাত্য সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য ইসলামকে হুমকি হিসাবে উপস্থাপন করা । এটাও প্রমাণ করা যে, ইসলাম ও মুসলিমের সাথে বস্তুবাদী কথিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্ধ এবং সংঘাত অনিবার্য। তার এই ত্বত্ত আমেরিকা ও ইউরোপের বৈদেশিক নীতির মূল চালিকাশক্তি। বৈদেশিক নীতি ছাড়াও আর্ন্তজাতিক যে কোন ইস্যু এবং অভ্যন্তরীন নীতি নির্ধারনে আমেরিকা ও ইউরোপ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে প্রতিপ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের তাবৎ সম্পদের সিংহ ভাগ নিয়ন্ত্রন করে ইহুদী ও খিষ্টান বলয়াধীন শক্তিগুলো । প্রায় সত্তর ভাগ মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় ইহুদীদের দ্বারা। আমেরিকা ও ইউরোপের সরকারগুলো কার্যত ইহুদী খৃষ্টান স্বার্থ সংরণে শতভাগ নিষ্ঠাবান। তারা মানবতাকে পদদলিত করে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পন্থায়। তারা তখনই হিংস জানোয়ার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। যখন তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ নিয়ে কতটা হীন, ঘৃন্য, জঘন্য ও পাপিষ্ট হতে পারে শয়তানের প্রতিভূ হতে পারে, তার একটি খন্ড চিত্র নিম্নে প্রদান করা হল:
১. আফগানিস্তানে তালেবান নির্মূলে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক অভিযান এখনো চলছে। কলম্বাসের আমেরিকা ও ভাস্কোদাগামার ভারতে আসার নৌপথ চিহিৃত করার পর ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা বিশ্বব্যাপী খৃষ্টীয় প্রধান্য বিস্তারের ল্েয যে আগ্রাসন, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। আফগানিস্তানে হামলা তারই আধুনিক সংস্করণ।
২. কলম্বাস আমেরিকা যাবার পথ চিহিৃত করার পর ব্যবসা ও ধর্ম প্রচারের ল্েয দলে দলে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা আমেরিকা যাতায়াত শুরুকরে দেয়। তবে মূল কাজ ছিল দস্যুতা। আমেরিকার বা আদিবাসী যারা রেড ইন্ডিয়ান বলে চিহিৃত, তাদের সহায় সম্পত্তি শক্তিবলে দখল করা। আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের উল্লেখযোগ্য ব্যবসা ছিল দাস ও মাদক ব্যবসা। আর উভয় প্রকার ব্যবসাই ছিল রেড ইন্ডিয়ানদের স্বার্থবিরুধী। দাস ব্যবসার মাধ্যমে যেখানে তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করত এবং এই শক্তি দিয়ে রেড ইন্ডিয়ানদের উপর হামলা চালাত। তাদের জমাজমি দখল করে নির্দোষ দাসত্বের মাধ্যমে চাষাবাদ করাত। আর মাদক ব্যবসার মাধ্যমে গোটা অধিবাসীদের মধ্যে মাদকাসক্তি ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী শ্বেতাঙ্গরা রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যালঘুতে পরিনত করার জন্য সংক্রামক ও মরণব্যাধী ছড়ায়, ব্যাপক মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটায়। নির্বিচারে গণহত্যা চালায় ও পালের পর পাল বুনো মেষ হত্যা করে পরিকল্পিত খাদ্য সংকট ও দুর্ভি সৃষ্টি করে। আজকে ওবামা বুশের পূর্ব পুরুষরা যারা ধর্মীয় উন্মাদের হাত থেকে বাচাঁর জন্য ইউরোপ থেকে পালিয়ে আমেরিকা গিয়েছিল, তারা আনন্দ উল্লাসের জন্য রেড ইন্ডিয়ানদের ও তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস বুনো মেষ হত্যা করত।
এর ফলে আধিবাসীরা এক পর্যায়ে রোগ ব্যাধি, খাদ্যভাব ও গণহত্যার শিকার হয়ে সংখ্যালগু জনগোষ্ঠিতে পরিনত হয় এবং বহিরাগতদের নির্দেশে অনুর্বর ও অস্বাস্থ্যকর স্থানে অমানবিক পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে তারা সম্পূর্ণ বঞ্চিত। দিন দিন তাদের সংখ্যা কেবল হ্রাসই পাচ্ছে। এ হল আমেরিকার আদি ইতিহাস!!
৩. ইউরোপীয়রা যখন প্রথম আমেরিকায় পর্দাপন করে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এক কোটি দশ লাখ আদিবাসী বাস করত। ইউরোপীয় গণহত্যার কারণে বর্তমানে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এদের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে দশ লাখেরও নীচে। কানাডায় মাত্র পাঁচ লাখের মত রেড ইন্ডিয়ান বেঁচে আছে যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মাত্র। তবে তারা যে পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে তাতে এপিচি, মাইকান, সুবিকেট, বিউথাক, নারাংগানসেট, ওয়াম, পানাগ প্রভূতি উপজাতীয়দের মত নিশ্চিহৃ হতে বেশি সময় লাগবে না। শ্বেতাঙ্গদের নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে এসব উপজাতি সমূহ নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে।
৪.আমেরিকার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর শ্বেতাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক পরিচয়ে বাণিজ্যের নামে রণপ্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ার উদ্দ্যেশে তরী ভাসায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পরই মার্কিন বাণিজ্য ও রণতরী মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে হাজির হয়। প্রথমে তারা শুরু করে আদিম ব্যবসা যা প্রাচ্যের জাতিসংঘের কাছে গর্হিত অপরাধ হিসাবে চিহিৃত। প্রথমে এই ব্যবসায় বৃটিশরা মনোনিবেশ করে। পরে মার্কিনীরা এতে ভাগ বসায়। এই ব্যবসায় শতকরা ৫শ ভাগের বেশি লাভ হত। এই লাভজনক ব্যবসাকে নিরাপদ করার ল্েয মার্কিনীরা উঠেপড়ে লাগে।
৫. মার্কিন বণিকরা ইজমির ও অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আফিম ক্রয় করে ভূমধ্য সাগরে পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক সাগর হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘূরে ভারত মহাসাগর ও দণি চীন সাগর দিয়ে চীনের ক্যান্টনে নিয়ে যেত। এ জন্য তাদেরকে মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও আধুনিক লিবিয়ার জলসীমা ব্যবহার করতে হত। বাণিজ্য তরীগুলো এসব দেশের বন্দর থেকে খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করত। সেজন্য এসব দেশকে মার্কিন বণিকদের বড় অংকের কর দিতে হত। যা মার্কিন সরকার ১৭৮৭ সালে মার্কিন বণিকদের নিরাপত্তা বিধান ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত একটি স্বার করতে মরক্কোকে বাধ্য করে। একই ধরণের চুক্তি স্বার করতে ১৭৯৬ সালে লিবিয়াকে এবং ১৭৯৭ সালে তিউনিসিয়াকে বাধ্য করে।
৬. এতেও মার্কিনীরা সন্তুষ্ট হল না। তারা উল্লেখিত দেশ গুলোর ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮০১-১৮০৫ সাল পর্যন্ত প্রথমে লিবিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করে। মার্কিন রণতরীর বহর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী অবরোধ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেফারসনের অনুমোদনক্রমে যুদ্ধমন্ত্রী চিমোথি পিকারিং এর নির্দেশে তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল যথাক্রমে উইলিয়াম এটন ও জমস এল ক্যাথকাট লিবিয়ায় সামরিক অভ্যূথান ঘটানোর ষড়যন্ত্র শুরু করে। ল্েয পৌছার জন্য তারা লিবিয়ার শাসকের ভাই মিসরে নির্বাসিত হামেদ করমানের সাথে চুক্তি করে। মতা দখলের জন্য মার্কিনীরা তাকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করবে এই শর্তে যে, তিনি মার্কিনীদের বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি করবেন। পাশাপাশি তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল উইলিয়াম এটমকে তার সেনাবহিনীর সর্বাধিনায়ক করবে। অতঃপর এটম ও কারমনেলির সমর্থকরা মার্কিন মেরিন সেনা ও নৌ বাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীর সমর্থনে লিবিয়ার দেরনা শহর দখল করে নেয়। এ অবস্থায় ত্রিপলীর শাসনকর্তা ইউসুফ কারমানলি মার্কিনীদের সাথে এক অসম চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য হন। এটম লিবিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধানের পদটি দখল করে । এই কৃতিত্বের জন্য ম্যাসাচুয়েটস কর্তৃপ তাকে দশ হাজার একর ভূ-সম্পত্তি উপহার দেয়। একই কায়দায় অনুরুপ একটি চুক্তি সম্পাদনে করতে বাধ্য করা হয় মরক্কোকেও। এভাবে করে মার্কিনীরা দস্যুতার মাধ্যমে আস্তে আস্তে পৃথিবীতে সাম্র্যাজ্যবাদের কালো হাত প্রসারিত করে।
৭. লিবিয়া ও মরক্কোকে মার্কিন পরিকল্পনা সফল হবার পর তারা নজর দেয় কিউনিসিয়ার প্রতি। তিউনিসিয়ায় হামলা চালানোর অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য সেখানকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত শাসনকর্তার সাথে ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকে। ফলে শাসনকর্তা তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হন। আর সেই অজুহাতে ১৮০৫ সালের ১লা আগষ্ট জন রজার্ট এর নেতৃত্বাধীন মার্কিন নৌ বহর কোন প্রকার সতর্কবানী ছাড়াই তিউনিসিয়ায় প্রচন্ড গোলাবর্ষন শুরু করে। পাশাপাশি রজার্ট তিউনিসিয়ার শাসকের কাছে একটি চুক্তির খসড়া পাঠিয়ে বলেন, এতে স্বার না করলে তার রাজধানীকে গোলার আঘাতে গুড়িয়ে দেয়া হবে। বাধ্য হয়ে সরকার প্রধান সে অসম চুক্তিতে স্বার করেন।
৮. ১৮১৫ সালে কমোডর স্টিফেন ডেকাডুর ও কমোডর উইলিয়াম ব্রিজের নেতৃত্বে জলদস্যু দমনের নামে দু-স্কোয়াড্রন মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ আলজেরিয়ার উপকূলে এসে হাজির হয়। আলজেরিয়ার জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য জাহাজে বৃটিশ পতাকা উড়িয়ে স্কোয়াড্রন দু’টি পোতাশ্রয়ে প্রবেশ করে আলজেরীয় নৌ-বহরকে ধ্বংস করে দেয়। এর পর আলজিয়ার্স শহরের উপর প্রচন্ড গোলা বর্ষন শুরু করে । পাশাপাশি আলজিয়ার্সের গর্ভনর ড. ওমরের কাছে বশ্যতামূলক এক চুক্তিনামা পাঠায়, যাতে মার্কিন বণিকদের বিশেষ সুযোগ ও ভূমিসহ অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। চাপের মুখে মার্কিনীরা গর্ভনরকে সে চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
৯. এই সময় মার্কিনীরা আবারো নতুন করে তিউনিসিয়া ও ত্রিপোলী ও মৌরিতানিয়ায় আগ্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়তি দাবী-দাওয়া আদায় করে নেয়।
১০. ভারত মহাসাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ল্েয মার্কিনীরা বর্তমান ওমান ও থাইল্যান্ডকে এক অধীনতামূলক চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করে।
১১. ১৮৮২ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষনের পর মিসরকে দখল করে নিতে বৃটিশকে সহযোগিতা করেছিল মার্কিন স্কোয়াড্রনের চারটি যুদ্ধ জাহাজ। গোলার আঘাতে আলেকজান্দ্রিয়াকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার পর শত শত মিসরীয়দের লাশ মাড়িয়ে বৃটিশ বাহিনীর সাথে সেখানে অবতরণ করে মার্কিন মেরিন সেনা।
১২. ১৮২০ এর দশকে মার্কিনীরা সুমাত্রার উত্তর ও উত্তর পশ্চিম উপকূলে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার মানসে নানা প্রকার রোগ ছড়িয়ে দেয়। যে করণে সেখানে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এতে সুমাত্রা বাসীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা যায়। মার্কিন নাবিকেরা উদ্দেমূলক ভাবে নানা ঔদ্ধাত্যপূর্ণ ও গর্হিত আচরণের মাধ্যমে এই অসন্তোষকে আরো বাড়িয়ে দিলে স্থানীয় জনগণ ১৮৩১ সালে মার্কিন বণিক ও মৈত্রী নামক একটি জাহাজে হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ গ্রহনার্থে ১৮৩২ সালে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পোটেম্যাক কুয়ালাবাটুতে ভিড়ে এবং এর নাবিকরা বন্দরে অবতরণ করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে দেড়শ মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন এবং দুইশত জন আহত হয়। মার্কিনীদের উদ্দেশ্য যাতে কোন প্রকারে স্থানীয় বাসিন্দারা টের না পায়, সে জন্য পোটেম্যাকে ওলন্দাজ পতাকা উড়ান হয়েছিল।
১৩. ১৮৪২ সালে ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ বিশিষ্ট এক মার্কিন নৌ-বহরের কমান্ডার চালর্স উইলিয়াম সুলু দ্বীপপুঞ্জের শাসক সুলতান মুহাম্মদকে একটি অধীনতামূলক মার্কিন চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
১৪. ১৮৫০ সালের ২৩ জুন মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি চুক্তিতে স্বার করতে ব্র“নাইর সুলতান ওমর আলীকে বাধ্য করে মার্কিনীরা। অতঃপর ১৮৯৬ সালে ব্র“নাইর উত্তরাংশের বিরাট এলাকা মার্কিনীদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিতেও সুলতানকে বাধ্য করে। এরপর সুলতান বাধ্য হন আমেরিকান ট্রেডিং কোম্পানী অব বোর্ণিও’র প্রধান কর্মকর্তা টোরিকে এমবোয়ানা ও মারুদুর রাজা হিসাবে নিয়োগ করতে। সুলতান রাজাকে স্বাধীন সার্বভৌম শাসকদের মত আইন প্রনয়ন, মৃত্যু দন্ড দান, মুদ্রা তৈরি ও প্রচলন, প্রতিরা বাহিনী গঠনসহ নানাবিধ মতা প্রদানে ও বাধ্য হন।
১৫. ১৮৯৯ সালে আজকের ফিলিপাইনের তৎকালীন সুলতান জামাল উল কিরামের সাথে মার্কিনীরা এক সমঝোতা চুক্তিতে উপনীত হয়। কিন্তু স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার পর ১৯১৩ সালে মার্কিনীরা সকল মুসলিম এলাকা দখল করে নেয় এবং তাদেরকে সংখ্যালঘু জাতিতে পরিনত করা হয়। যে কারণে ফিলিপাইন এখন একটি খৃস্টান রাষ্ট্র।
১৬. ১৯৭০ সালের মধ্যে কৌশলে ৫০ জনেরও বেশি মার্কিন সেনা অফিসার মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি নেয়, যার মধ্যে জেনারেল স্টোন কায়রোতে মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ স্টাফ এবং কর্নেল চেইলি লঙ সুদানে মোতায়েনকৃত মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ অব স্টাফের পদ দখল করে। এরপর ইরিত্রিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিনীরা মিসর-ইথিওপিয়া যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয় এবং যুদ্ধে মিসরীয়দের পরজয় ঘটে। এই যুদ্ধে মিসর আর্থিক এবং সামরিক দিক থেকে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সে সুযোগে ১৯৮২ সালে বৃটিশ মিসরকে দখল করে নেয়। এেেত্র মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলোও বৃটিশকে সহায়তা করে। কর্নেল চেইলি লঙ এতে নেতৃত্ব দেয়। পাশাপাশি তারা ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়াকে আলাদা করে ফেলে একটি খৃষ্টান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×