মিদুল গার্মেন্টস এর এক জন শ্রমিক। ওর অর্থেই ওর পরিবার চলে। ওর বাবা তিন বছর যাবত সঠিক চিকিৎসার অভাবে ঘড়ে অসুস্থ হয়ে পরে আছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। রিদুল ওর ছোট ভাই টাকার অভাবে ওর লেখা পড়া ও বন্ধো। ওরা শ্যাম পুরের একটা বস্তিতে থাকে। লেখা পড়া ছাড়ার পর রিদুল বস্তির ছেলে দের সাথে চলতে চলতে
বেয়ারা হয়ে গেছে।প্রথমে মাঝে মাঝে নেশা করতো। এখন ওর নেশা ছাড়া চলেই না। এর টাকা আসে ও মাজে মাজে লেগুনা, টেম্পুর হেলপারি করে ও এলাকার বড় ভাই দের সাথে মাঝে মাঝে মিছিল মিটিং এ যায়। এ দিয়ে ওর বস্তির সস্তা নেশার কাজ চলে যায়। এসব সস্তা নেশা এখান থেকে ওখান করে ও কিছু নেশার কাজ চলে। আর মিদুলের যা আয় তা দিয়ে ওর পরিবার ই তো ভালো ভাবে চলে না, রিদুলের লেখা পরা কি ভাবে চালাবে।
ওকে ওর অসুস্থ বাবা অনেক বার বুঝিয়েছে, তুই ও তোর বড় ভাই এর সাথে গার্মেন্টস এ কাজে যোগদে। এ তে তোর একটা ভবিষৎ হবে। আর নেশা করা ও ছাড়। এ গুলা ভালা না বাবা। দেহছ না তোর ভাই একা এই সংসারটা চালাই তে পারছে না। এই কথা গুলো যতখন ওর খাবার খেতে সময় লাগে ততক্ষণ ও শোনে।কিন্তু তার পর আর ওর তা মনে থাকে না। হরতাল হলেই বস্তির ছেলেদের মধ্যে একটা ঈদ উৎসব এর মতো উৎসব ভাব চলে আসে।রিদুলের বড় ভাই এর কাছ থেকে ডাক আসলো।
-কি রিদুল মিয়া দেশের কি কোন খবর রাহো।
-কি হইছে ভাই ,কইয়া হালান,কি করন লাগবো খালি এক বার কন।
- আগামী ৭ তারিখ হরতাল, ৬তারিখ সন্ধায় তুমি দেহা করবা।
-ঠিক আছে ভাই।
-তাইলে তুমি এহন যাও, আমার অনেক কাজ আছে।
রিদুল বস্তিতে এসেই রিন্টু, মলাই, প্রেম তোরা কই তোরা সবাই এদিক আয়। ভাই কইছে আগামী ৭ তারিখ থেইকা হরতাল, আমাগো সবাইর হরতালে যাইতে হইবো। এর জন্য ভাই আমাগো সবাইরে লাল নোট দিবো। আমরা গাড়ি ভাংগুম, গাড়িতে আগুন দিমু, আবার লাল নোট ও পামু, কতো মজাই না হইবো। কি কস তোরা মজা হইব না। হ ভাই পুরাই ঈদ ঈদ লাগতাছে। ঠিক আছে ৭ তারিখ সকালে কিন্তূ সবাই থাকবা।
৬ তারিখ সন্ধ্যা
-কি রিদুল মিয়া আইছো।
-হ ভাই।
-তোমার কথাই এতখন কইছি, পোলাডার কইলজাডা অনেক বড়। তোমাগো লাইগা এই গুলা রাখছি। তোমাগো হরতাল এই বার দিনে না রাইতে করতে হইবো।
-ঠিক আছে ভাই।
-এই খানে দুই লিটার পেট্রোল আছে। আগুন ধরাইয়া খালি বাসে মারতে হইবো। পারবা না?
-পারুম মানে ভাই, অবশ্যই পারুম।
-ঠিক আছে, ঐ গুলান কাল বিকালে নিয়া যাইবা।
-ভাই গাড়ি ভাঙন লাগবো না?
-না তা লাগবো না, এই বার আগুন দিয়া মানুষ পুড়াইয়া মারন লাগবো। কি মিয়া ভঁয় পাইছো, কোন সমেস্যা নাই।
আমি আছি না।
-না ভাই আপনি কইলে সব কিছু করতে পারুম।
-আর আমরা যদি একটা মানুষ পোরাইয়া মারতে পারি।তাইলেই আমাগো হরতাল সফল হইবো। আর হরতাল সফল হলেই সরকার পতন হইবো। তহন আমগো নেতায় মন্ত্রী হইবো।
তোমাগো তহন টাঁকার অভাব হইবো না। খালি বড় লাল নোট দিমু।
আর হেইগুলান দিয়া তোমরা দিন রাইত রিলাক্স করবা। বিদেশি লাল পানি খাইয়া। তহন অনেক মজা হইবো না?
-হ ভাই, তাইলে ভাই অহন যাই।কাল বিকালে আইমু।
-ঠিক আছে যা।
৭তারিখ বিকাল
-ভাই বোতল দুইডা দেন।
-নে, কিন্তু সাবধানে নিতে হইবো।
-ঠিক আছে ভাই।
ওরা সন্ধ্যা হতে হতেই একটা বাসে পেট্রোল বোমা মারলো।
বাসের ভিতর হুড়ো হুরি শুরু হল।
অনেকে বাস থেকে নামতে পারলো না,৬/৭ মিনিটেই বাসের ভিতর যে মানুষ গুলো আটকা পরে পুরে গেল।
চার দিকে বাতাসের সাথে মিশে পোড়া মানুষের মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে পরলো। চিৎকারে চার দিকের মানুষ দৌরে এল।
ওরা ও খান থেকে পালিয়ে বড় ভাই এর কাছে এলো।
-কি রে রিদুল পুরাই তো চমক দেহাইছস। তুই তো আসলেই একটা কইলজা অলা পোলা। কত জন মরছে জানস।
-না ভাই, ১২জন। নে তোর লাইগা একখানা লালা নোট, আর বাকী সবার জন্য ২ খান।
-ঠিক আছে ভাই তঁয় এহন যাই।
-ঠিক আছে যা, আবার ডাকমুনে।
রিদুল বারিতে যেতেই দেখে ওদের ঘরে তালা দেওয়া। ওর বাসার পাশের অ্যান্টির কাছে জানতে চাইলো।
-আন্টি আমগো মায় কই গেছে?
-তোর ভাই গার্মেন্টস থেইকা আহনের পথে বাসে যেন কারা বোমা মাড়ছে। তোর ভাইরে ঐ হান দিয়া ঢাকা মেডিকেল এ নিয়া গেছে।
রিদুল তাড়া তাড়ি করে রিকশা নিয়া মেডিকেল এ গেলো।
সে খানে গিয়ে মিদুল দেখছে চার পাশে শুধু মানুষের ভির আর কান্না কাটি করছে মানুষ। এর ভিতর ওর মা বাবা কে ও দেখলো। তার সামনে একটা লাশ । সম্ভবত ও টাই ওর ভাই এর লাশ। ও সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে ওর ভাই কেই হত্যা করল।