somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিশাচ কাহিনীঃ এবার তোর পালা

১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হ্যালো।
-বেন উজীর ভাইয়া, আমি স্মৃতি বলছি,, দারাজ সাহেবের মিসেস। চিনতে পেরেছেন?
-কোন স্মৃতি? ঠিক চিনতে পারিনি।
-আমরা আপনার পাশের বিল্ডিং-এ থাকি। আমার হাজবেন্ড এফডিসিতে আছে।
-নাহ, মনে করতে পারছি না।
-গত বছর বোট ক্লাবে আপনার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন হারুন ভাই। আমার স্বামী লম্বা করে, শ্যামলা রঙ, একটু আলাভোলা চেহারা।
-ওহ, চিনতে পেরেছি। নির্মল বাবু স্টেজে উঠে আপনার খুব প্রশংসা করেছিলেন। আপনার বিউটি পার্লারের স্কীন ট্রিটমেন্ট নাকি খুব ভাল।
-এইতো চিনতে পেরেছেন।
-তো এই রাত বারটার সময় হঠাৎ ফোন করেছেন? কোন সমস্যা?
-আসলে একটা ইমার্জেন্সি এসে গেল হঠাৎ।
-বলুন, কি ব্যাপার?
-আমাদের পাশের বাসার নায়লা ভাবী আমার ভাল বান্ধবী। উনার আবার বিড়াল পালার খুব শখ।
-তাই নাকি?
-জ্বি, ভদ্রমহিলা রেগুলার রাস্তা থেকে বেওয়ারিশ বিড়াল এনে নিজের ঘরে জায়গা দেন, তাদের পরিচর্যা করেন।
-ভাল তো।
-সমস্যা হচ্ছে, বিড়ালগুলা বেশিদিন উনার বাসায় থাকে না। কয়েকদিন পর হাওয়া হয়ে যায়।
-রাস্তার বিড়াল, হয়ত রাস্তায় ফিরে যায়।
-আমাদেরও সেটাই ধারণা ছিল।
-ছিল মানে? এখন কি ধারণা বদলেছে?
-সেটা জানানোর জন্যইতো ফোন দিলাম।
-ইন্টারেস্টিং কেস মনে হচ্ছে। একটু খুলে বলুন ব্যপারটা।
-জানেন বোধহয়, আমাদের নিচতলায় কয়েকটা ব্যাচেলর মেয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছে। পিয়াসা, মৌ, আঁচল -আরও কিসব যেন নাম। মুখে মুখে বলে তারা নাকি স্টুডেন্ট, অথচ মেয়েগুলা সারাদিন ঘুমিয়ে থাকে আর রাতেরবেলা তাদের ঘর থেকে আলো আসে, হৈচৈ শোনা যায়।
-করোনার মধ্যে সব ইউনিভার্সিটির ক্লাস অনলাইনে হচ্ছে। সেজন্য হয়ত ঘর থেকে বের হয় না। আপনার হয়ত এজন্য মনে হয়েছে ওরা সারাদিন ঘুমিয়ে থাকে।
-আরে না, না। এর মধ্যে অন্যকাহিনী আছে।
-অন্যকাহিনী? কিরকম?
-ঘটনা হয়েছে, সেদিন আমাদের দুই বিল্ডিং পরে নাসির সাহেবের বাসায় দাওয়াত। আমাদের ফিরতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল, ধরুন সাড়ে এগারটা-বারটা। সিড়ি দিয়ে উঠতে যাব, মনে হল যেন সিড়ির পেছন থেকে 'মিয়াও' শুনতে পেলাম।
-মনের ভুল ছিল?
-আমিও তাই ভেবেছিলাম। সাকলায়েনকে বললাম, যাও না একটু, দেখতো ব্যাপারটা।
-সাকলায়েন মানে? আপনার সাথে রাতের বেলা সাকলায়েন কেন? আপনি না দারাজ সাহেবের স্ত্রী?
-হ্যা, আসলে আমার হাজবেন্ড একটু বিজি ছিল, তাই সেদিন পার্টিতে আসতে পারেনি। তাই আমি একাই গিয়েছিলাম। এদিকে নাসির সাহেব লোকটা একটু কেমন যেন, মনে হচ্ছিল যেন চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে। এজন্যই সাকলায়েন একটু এগিয়ে দিচ্ছিল আরকি। বোঝেনই তো, যা দিনকাল পড়েছে।আর প্রতিবেশীর একটা দায়িত্ব আছে না?
-তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু আপনার সেই 'অন্যকাহিনী'তো এখনো বুঝলাম না।
-সেটা বুঝিয়ে বলার জন্যইতো ফোন করেছি।আপনি আমাদের ড়েএব মানে রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার বাবা।আপনাকেইতো বলব।
-বলুন, আমি শুনছি।
-তো সাকলায়েন সিড়ির পেছনে গিয়ে দেখে কি... উহ, কি যে ভয়ানক দৃশ্য। নাহ বাবা, আমি এসব একদম বলতে পারব না।
-দেখুন, মাঝরাতে ফোন করে আপনি এরই মধ্যে আমার অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছেন। আলগা ন্যাকামি বাদ দিয়ে আসল কথা বলুন।
-আচ্ছা, কেয়া ভাবী কি ঘুমাচ্ছে?
-হোয়াট?
-মানে আপনার স্ত্রী কি ঘুম? উনি আবার আমাদের কথা শুনছে নাতো?
-কেয়া আমার এক্স ওয়াইফ। ওসব বাদ দিয়ে আসল কথায় আসুন।
-আর ঐ শুকনামত লম্বা মেয়েটা? মীম না কি যেন নাম।
-আমি কিন্তু এবার ফোনটা রাখব।
-না, না, ফোনটা রেখে দেবেন না প্লিজ। আসলে হয়েছে৷ কি, খুব ভয়ানক দৃশ্যতো, তাই এভয়েড করার চেষ্টা করছিলাম।
-কথা শেষ করুন।
-হ্যা, সাকলায়েন গিয়ে দেখে কি, ওই যে মেয়েটা আছে না, মৌ নাম, সে একটা বিড়ালকে চাকু দিয়ে মাঝ বরাবর কেটে ফেলেছে। একটা মাটির পাত্রে ওটার রক্ত কালেক্ট করেছে আর ওটার হৃদপিন্ডটা চিবিয়ে খাচ্ছে।
-বলেন কি?
-সাকলায়েন দেখেতো ভয়ে চিৎকারই করে ঊঠল। মেয়েটা সাথে সাথে ওকে আচড় দিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে গেছে। বেচারা সাকলায়েন
এখন পানি দেখলেই ভয় পাচ্ছে, ভেজা বেড়ালের মত নেতিয়ে যাচ্ছে।
-সাকলায়েনকে আচড় দিল আর আপনাকে দেখেনি মেয়েটা?
-নাহ, আমিতো আগে থেকেই 'লাইভে' ছিলাম, তাই আর আমাকে ঘাটানোর সাহস পায়নি।
-ওহ, আপনিতো ব্যাপক৷চালু মাল। তা ওকে কি আর দেখা গেছে এলাকায়?
-নাহ।
-পালিয়েছে মনে হয়। তাহলেতো প্রবলেম সলভড।
-না না, এখনো সমস্যা রয়ে গেছে।
-আবার কিসের সমস্যা?
-এরপরও নায়লার বিড়াল গায়েব হয়েছে। এবার বিড়াল মেরেছে পিয়াসা আর ওর এক্সবয়ফ্রেন্ড মিলে, সাফাত না রাফাত, কি যেন নাম।
-কবেকার ঘটনা এটা?
-ধরুন ঘন্টা দুয়েক আগের।
-তো ওরা কিছু বলেছে? কেন এসব করছে?
-দেখুন, আর ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে না, এবার সরাসরি কথা বলি। সাফাত আর পিয়াসা এসেছিলা আমার বিউটি পার্লারে, স্কীন ট্রিটমেন্ট এর জন্য।আগে থেকেই যেহেতু সন্দেহ ছিল, তাই চিকিৎসার নাম করে ওদেরকে বাবা খাইয়ে দিয়েছি, নেশার ঘোরে স্বীকার করেছে ওরা শয়তানের উপাসনা করে। ওরা একটা কাল্টের সদস্য আর আপনি তার লিডার। বিড়ালের রক্ত আর হৃদপিণ্ড ওরা আপনার জন্যই নিয়ে যায়।
-তাই নাকি?
-একদম তাই। আমার খুব দাবী সিম্পল। দারাজ আপনার বাসার বাইরে দাড়িয়ে আছে। আপাতত আপনার মাসেরাতি'র চাবীটা ওকে দিয়ে দিন। আর বাকি দাবী দাওয়া নিয়ে নাহয় কাল আলোচনা করব।
-আর যদি আমি অস্বীকার করি?
-ওদের স্বীকারোক্তি সব ভিডিও করা আছে।
-ঠিক আছে, আমি দরজা খুলছি।


দুই
দারাজ বিছানায় এসে বসল।
-এই জলদি বল না, বেন উজীর কি সব দিয়েছে?
হ্যা-সূচক মাথা নাড়ল দারাজ।
-মাসেরাতির চাবি? নগদ টাকা? বাড়ির দলিল? দুবাইয়ের টিকেট? সব?
আবার হ্যা-সূচক মাথা নাড়ে দারাজ।
-কি হল, কথা বল না কেন? সেই তখন থেকে শুধু মাথা নাড়ছ। কোথায় মাসেরাতির চাবী?
এবার আংগুল দিয়ে নিজে মুখের দিকে ইংগিত করে দারাজ।
-গাড়ীর চাবী মুখে নিয়ে বসে আছ? আক্কেল বুদ্ধি সব নষ্ট হয়ে গেল নাকি? দেখি হা কর, চাবীটা দাও।
দারাজ হা করে। চাবী নিতে গিয়েও স্মৃতি থেমে যায়।কিসের চাবী? দারাজের দুইঠোঁট ফাক হয়ে বেরিয়ে এসেছে শ্বদন্ত!
-এটা কি কোন প্র‍্যাংক? মানে কি এসবের?
-মানে খুবই সহজ। পেছন থেকে বলে ওঠে একটা পরিচিত কন্ঠ।
পেছনে ফিরেই অবাক হয়ে যায় স্মৃতি। বেন উজীর কখন তাদের বাসায় ঢুকেছে আর কোন ফাকে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে-বুঝতেই পারেনি।
-তুমিই ওকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়েছ?
বেন উজির নিঃশব্দে হাসে। এই হাসির একটাই মানে হয়।হ্যা।
-দারাজ খুব ভাল করে জানে তোমার আর সাকলায়েনের কাহিনী। অথচ তোমার স্কীন কেয়ার সেন্টার দিয়েই ঘরের আয় রোজগার চলে, তাই কিছু বলতেও পারছিল না। তাই ও যখন মাসেরাতি'র চাবী নিতে এল, খুব সিম্পল একটা প্রস্তাব দিলাম। আমি একটা ভ্যাম্পায়ার, অথচ হাই সুগারের কারণে মানুষের রক্ত খেতে পারি না। কুকুর-বেড়ালের রক্ত দিয়ে চালাতে হয়। তুমি নাকি খুব ফিট, রক্তে একদম মিষ্টি নেই। যখনই মুখ খোল, শুধু তিতা-ই বের হয়। তাই ও আমাকে দেবে তোমার রক্ত আর বিনিময়ে আমি ওকে দেব...
এই গভীর বিপদের মাঝেও নিজের কৌতুহলকে চাপা দিতে পারে না স্মৃতি। -কি পাবে দারাজ?
-আমার নাম বেন উজির। তাই এমন কিছুই পাবে যার আগে কোন নজির ছিল না।
-সেটা কি?
-তোর জেনে আর কি লাভ? বলতে বলতেই স্মৃতির ঘাড়ে চেপে বসে শ্বদন্ত। সেটা দেখার জন্যতো এ দুনিয়ায় তুই থাকবি না... ...


ঘোষণাঃ গল্পে প্রকাশিত প্রতিটি ঘটনা, স্থান-কাল-পাত্র ও সংলাপ কাল্পনিক, বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। কেউ যদি কোন ঘটনা বা চরিত্রের সাথে কোন মিল খুঁজে পান, সেটার দায় একান্ত তারই, লেখকের নয়। কারণ ভ্যাম্পায়ার বলে বাস্তবে কিছু নেই, অন্যের রক্ত চুষে বেঁচে থাকা যায় না।






সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:৪২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×