ছবি সোর্সঃ এখান থেকে
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ গল্পটি প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনস্কদের জন্য লিখিত।
-কাজটা কি ঠিক হল? চিন্তিত কন্ঠে জানতে চাইল সায়রা।
-কেন? অবাক হয়ে জানতে চাইল রাইয়ান।
-না, মানে তুমিইতো বলছিল রাতে ফেরার সময় গলিতে ছেলেগুলো তোমার পিছু নিয়েছিল।
-আসলে তখন রাত হয়ে গিয়েছিল, গলিতে আমি আর ওই ছেলেগুলো ছাড়া তখন আর কেউ ছিল না, তাই হয়ত এরকম মনে হয়েছে। একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আরকি। এখন মনে হচ্ছে এটা আসলে তেমন কোন ব্যাপার না। সায়রাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলল রাইয়ান।
-তুমিতো ব্যাপার না বলেই শেষ। এদিকে সারাদিন আমি কত টেনশানে ছিলাম।
-টেনশান? কেন?
-বাহ, তুমি সকালে উঠে অফিসে চলে গেলে। সারাদিন আমি বাসায় একা। যদি ছেলেগুলো বাসায় আক্রমণ করত?
-দিনে দুপুরে একটা বাসায় হামলা করা কি এতই সোজা? আমাদের পাশে, ওপর-নীচে কতজন ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকছে। তারওপর আশেপাশেও এতগুলো বিল্ডিং।
-তারপরেও। আজকের দিনে কেউ বিপদে পড়লে আশপাশ থেকে কেউ এগিয়ে আসে না।
-আহা, তোমাকেতো সপ্তাহে এই একদিনই একা থাকতে হচ্ছে, শনিবার। সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন তুমি তোমার অফিসে, আমি আমার অফিসে। আর শুক্রবারতো আমি সারাদিনই বাসায় আছি, তোমার সাথে, তোমার পাশে।
-এমনভাবে কথা বল, মনে হয় সব কত সোজা। আমার স্কুল ছুটি হয় সাড়ে এগারটায়, সকালে। বাসায় আসতে বেশীতে বারটা। তোমার অফিস শেষ হয় ছয়টায়। আসতে আসতে সাড়ে ছয়টা-সাতটা। প্রতিদিন আমার সাড়ে ছয়-সাত ঘন্টা এই বাসায় একা থাকতে হচ্ছে।
-তোমার কথায় যুক্তি আছে, সেটা অস্বীকার করছি না। প্রতিদিন এতটা সময় একা থাকাটা এখন আসলেই রিস্কি তোমার জন্য। কি করতে চাইছ?
-চল, আমরা বাসাটা ছেড়ে দেই।
-বাসা ছেড়ে দেয়া কি এতই সোজা? শুকনো করে হাসল রাইয়ান।তুমি ভাড়া বাসায় থাকতে চাইছিলে না বলেই এই ফ্ল্যাটটা কেনা। মাথার ওপর এখন কতবড় লোনের বোঝা চেপে আছে-জান তুমি? মাসে মাসে আমার কত টাকা লোনের কিস্তি গুণতে হয়?
-তা জানি। কিন্তু আমরা এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিয়ে নিজেরা আরেকটা বাসায় ভাড়া থাকলাম, অন্য কোথাও। ভাড়ার টাকাটা এই বাসার ভাড়া থেকেই উঠে যাবে।
-তা হয়ত যাবে। কিন্তু এখান থেকে আমার অফিস, তোমার স্কুল-দুটোই কত কাছে। এত সহজেই কি এরকম লোকেশানে আমরা আরেকটা বাসা পাব?
-না পেলে দূরে বাসা নেব।
-অবুঝের মত কথা বললে কি করে হবে? এখন বাসা এত কাছে বলে হেঁটে যেতে পারছ। বাসা দূরে হলে আবার গাড়ি ভাড়ার কথা আসবে। লোনের কিস্তি আর গাড়ি ভাড়াতেই যদি সব টাকা চলে যায়, তাহলে আমরা খাব কি?
-তোমার সবসময় বৈষয়িক চিন্তা ভাবনা। আগে যখন ভাড়া বাসায় থেকেছি, তখন আমরা চলিনি?
-চলেছি, তবে তখন লোনের কিস্তি ছিল না। তাছাড়া…
-তাছাড়া কি?
-রাস্তার কতগুলো আজেবাজে ছেলের ভয়ে নিজেদের ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাব? কিসব কথাবার্তা বল।
-তাহলে সব জেনে বুঝে বিপদ মাথায় নিয়ে তুমি এখানেই থাকবে?
-আজব! বিপদ মাথায় নেয়ার কথা আসছে কেন?
-তুমি ভাল করেই জান কেন আসছে এই কথা।
-দেখ, তুমি রেগে যাচ্ছ। আমি এই ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইছি না, তার যথেষ্ট লজিকাল কারণ আছে। আর তাছাড়া চাইলেই কি এই রাত বিরাতে আমি বাসা ভাড়া পাব?
-লাগবে না তোমার বাসা ভাড়া নেয়া। আমার কোন কথাটা তুমি রেখেছ এই জীবনে? সকাল হোক, আমাকে আপার বাড়িতে দিয়ে আসবে।
-আশ্চর্য, এর মধ্যে আপার বাড়িতে যাওয়ার কথা আসছে কেন?
-আসছে, কারণ স্বামীর কাছে আমার চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই। আমি আমার বোনের বাসাতেই চলে যাব।
-দেখ…
তবে কি দেখতে হবে-সেটা আর বলতে পারল না রাইয়ান। বাসার কলিং বেল বেজে উঠেছে।
টিং টং।
-কে এল? আস্তে করে বলল সায়রা।
-বুঝতে পারছি না। এত রাতে কারও আসার কথা না।
-কোথায় যাও? ফিসফিসিয়ে বলল সায়রা।
-দেখি কে আসল।
-যদি ওই ছেলেগুলো হয়।
-মনে হয় না। বাসা পর্যন্ত আসার সাহস থাকলে আমার পিছু পিছুই তখন চলে আসত।
-তবুও…
-আহা, এত টেনশন করলে কিভাবে হবে? আগে দেখি কে এল।তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।
-কে? কে ওখানে? একটু জোরেই চিৎকার করল রাইয়ান।
কোন জবাব এল না রাস্তার ওপাশ থেকে।
-দরজায় কে দাঁড়িয়ে? কথা বলে না কেন? আবার চিৎকার করল রাইয়ান।
-আমি।ওপাশ থেকে ছোট্ট জবাব।
-আমিটা কে? রাইয়ানের প্রশ্ন।
-আমি মুন্না।
-কোন মুন্না?
-গলির শেষ মাথায় থাকি।
-চিনতে পারছি না। আমার কাছে কি চাই?
-দরজাটা খুলেন। একটু কথা ছিল।
-যাকে আমি চিনি না, তারসাথে কি কথা বলব।
-ভাই, দরজাটা একটু খুলেন। আমরা পাঁচ মিনিট কথা বলেই চলে যাব।
-আমরা মানে? সাথে আর কে কে আছে?
-আমি আর আমার বন্ধু।
-তোমাকেই চিনি না, তোমার বন্ধুকে কিভাবে চিনব?
-ভাই, অনেক রাত হইছে। আমাদেরকে রাজা ভাই পাঠাইছে। রাজা মিয়া। উনি আপনার সাথে কথা বলতে চায়।
এবার বুঝতে পারে রাইয়ান। রাজা মিয়া। স্থানীয় উঠতি নেতা। ছ্যাচড়া ছেলেপেলেগুলো সব ওরই চ্যালা চামুন্ডা।
-উনার সাথে আমার কি কথা?
-তা আমরা জানি না। উনি আমাদেরকে পাঠাইছে আপনাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, একটু কথা বলবে, তা-ই। কথা শেষ করে আবার চলে আসতে পারবেন।
-এত রাতে আমি কোথাও যাব না। তোমরা কাল জুম্মার পড়ে আসো।
ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো মিনিটখানেক চুপচাপ থাকে, হয়ত নিজেদের ভাবনা চিন্তাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। দরজায় কান লাগিয়ে ওদের কথা শুনতে চেষ্টা করে রাইয়ান।
-কিয়ের এত কস? লোকটা বাইর অইব না। চল, যাইগা। দরজার ওপাশ থেকে অন্য একটা ছেলে বলে ওঠে।
-এই লোকরে ছাড়া যাইলে রাজা ভাই আস্ত রাখব? মুন্না পালটা প্রশ্ন করে।
-তাইলে কি করবি? তৃতীয় একটা কন্ঠ বলে ওঠে।
তৃতীয় কন্ঠ আবার কোত্থেকে এল? আসলে ওরা কয়জন এসেছে? মনে মনে ভাবতে থাকে রাইয়ান। ইস, কেন যে কয়টা টাকা বাঁচাতে গিয়ে একটা ডোর ভিউয়ার লাগাম না। নিজেকে মনে মনে কয়েকবার গালি দেয় রাইয়ান।
-দাঁড়া, রাজা ভাইরে একটা কল দেই। মুন্না কন্ঠ শোনা যায় ওপাশ থেকে।হ্যালো, রাজা ভাই।
‘-’
-আমরাতো হের বাসার সামনে।
‘-’
-বলছি আপনার কথা। বলছি, আপনি কথা বলতে চান।
‘-’
-বলে সে এত রাতে কথা বলবে না। বলছে কালকে জুম্মার পরে আসতে।
‘-’
-এখন আপনিই বলেন আমরা কি করতাম?
‘-’
-ফোনে কথা বলবেন?
‘-’
-আইচ্চা, লাইনে থাকেন তাইলে।ভাই, ও ভাই।
রাইয়ানের বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। মুন্না এখন আর রাজার সাথে ফোনে কথা বলছে না, বরং ওরই সাথে কথা বলছে।
-হ্যা, বল। দরজার এপাশ থেকে রাইয়ান জবাব দেয়।
-রাজা ভাই আপনার সাথে কথা বলবে।
-বললাম তো এত রাতে আমি কোথাও যাব না। তোমরা আগামীকাল আস।
-আপনার কোথাও যাওয়া লাগবে না। রাজা ভাই লাইনে আছে, আপনি ফোনে উনার সাথে কথা সেরে নেন।
-উনার সাথে আমার কি কথা?
-সেটা আপনি আর উনিই জানবেন।আমি কিভাবে বলব?
রাইয়ান কি জবাব দেবে বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে।
-ভাই, ও ভাই। মুন্না আবার দরজায় নক করে।
-কি চায় ছেলেগুলো? সায়রা জানতে চায়।
এতক্ষণ টেনশানে ভুলেই গিয়েছিল বাসায় সায়রাও আছে, কন্ঠ শুনে মেয়েটার দিকে তাকায় রাইয়ান। ডাইনিং এর একটা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে, চোখেমুখে স্পষ্ট উৎকণ্ঠা।
-কি করব? দরজা খুলব? ওর কাছে জানতে চায় রাইয়ান।
সায়রা মুখে কিছু বলে না, নীরবে না-সূচক মাথা নাড়তে থাকে।
-না খুললে ওরা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
-তাহলে?
-আমি দরজা খুলছি, তুমি একটু আড়াল করে দাঁড়াও। কোন ঝামেলা দেখলে সাথে সাথে ৯৯৯-এ কল দিবা।
হ্যা-সূচক মাথা নেড়ে পর্দার আড়ালে সরে যায় সায়রা।
দরজা খুলে অবাক হয়ে যায় রাইয়ান। তিনজন নয়, দাঁড়িয়ে আছে চারজন। দরজার ওপাশ থেকে তিনজনের কন্ঠ শুনেছিল, আরেকজন মনে হয় প্রথম থেকে একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি।
ভাল করে ছেলেগুলোর দিকে তাকায় রাইয়ান। এলোমেলো চুল, যাচ্ছেতাই পোশাক। কোনদিক থেকেই ভদ্র ঘরের সন্তান বলে মনে হয় না। হ্যা, অফিস থেকে ফেরার পথে এই চারটা ছেলেই ওর পিছু নিয়েছিল।
-হ্যা, বল কি বলবা। মনের উৎকন্ঠাকে যথাসম্ভব মনের মধ্যে চাপা দিয়ে বলল রাইয়ান।
-আমাদের কিছু বলার নাই। রাজা ভাই আপনার সাথে কথা বলবে। বলতে বলতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকাটা ছেলেটা তার হাতে থাকাটা ফোনটা উঁচিয়ে ধরল। এরই নাম সম্ভবত মুন্না।
ছেলেটার হাত থেকে ফোন নিল রাইয়ান। হ্যালো।
-ওই মিয়া, এতক্ষণ কই আছিলেন? ফোনে আইতে এত সময় লাগে ক্যান?
-কে বলছেন? কন্ঠ দিয়ে যথাসম্ভব বিরক্তি প্রকাশের চেষ্টা করল রাইয়ান।
-কে বলছেন মানে? আমি রাজা, রাজা মিয়া।
-ও আচ্ছা, রাজা সাহেব। গতকাল সকালে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল। বলুন, কি ব্যাপার?
-আমি আর ব্যাপারের কি কমু? সব ব্যাপারতো আপনেই ঘটাইতেছেন।
-মানে? বুঝলাম না। আমি আবার কি করেছি?
-আপনে কি করেন নাই, হেইডা কন। কাইল সকালে এত কইরা কইলাম পুরা ব্যাপারটা আমি দেখতাছি, বুইঝা-শুইনা বিচার কইরা দিমু। আপনে আমার কথা হুনেন নাই তখন?
-হ্যা, শুনেছি।
-তাইলে?
-তাইলে কি?
-মিটমাট কইরা দিমু কইলাম, তবুও আপনে আইজকা থানায় গেলেন ক্যান?
-আমি থানায় গেছি, সে কথা আপনাকে কে বলল?
-দেহেন, আমি এই এলাকার মা-বাপ। এলাকায় যা কিছু হয়, সবই কানে আহে আমার।
-বাহ, আপনি দেখছি খুব কাজের লোক। আমি কি নিজের প্রয়োজনে থানায় যেতে পারি না? থানায় মানুষের অনেকরকম কাজই থাকে।
-আপনে থানায় গেছেন আমার পুলাপানগো নামে কমপেলেন দিতে, হেই খবর আমি পাইছি।
-দেখুন, ছেলেগুলো প্রতিদিনই গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে ইভটিজিং করে। আমার স্ত্রী ওই স্কুলের টীচার। ও ছেলেগুলোকে মানা করেছিল। ছেলেগুলো ওর কোন মানা শোনেইনি, উলটো ওর সাথে বেয়াদবী করেছে।
-হ, হেরা বেয়াদবী করছে, আমিওতো আপনেরে কইছি বিচার কইরা দিমু। কই নাই?
-তা বলেছেন। সেজন্য আমি গতকাল চুপ ছিলাম। আজ সকালে ছেলেগুলা আবার স্কুলে গিয়ে হাংগামা করেছে। স্ত্রীকে স্কুলে নামিয়ে দিতে গিয়েছিলাম আমি, আমার গায়ে পর্যন্ত ওরা হাত তুলতে চেয়েছে।
-ওরা শুধু হাত তুলতে চাইছে, আপনে একজনের গালে ডাইরেক্ট চড় বসায়া দিছেন।
-আমার সামনে কেউ যদি আমার স্ত্রীর সাথে বেয়াদবী করে, সেটা চুপচাপ মেনে নেওয়ার লোক আমি নই।
-তাই নাকি?
-একদম তাই। দেশে আইন আদালত আছে, আমি তার ওপরেই আস্থা রাখছি। আপনার কষ্ট করে বিচার না করলেও চলবে।আশা করি, বোঝাতে পেরেছি।
-রায়হান সাব, বাড়াবাড়ি অইয়া যাইতাছে কিন্তু।
-আমার নাম রায়হান না, রাইয়ান। দেখুন রাত হয়েছে, আমারও ঘুমাতে হবে, আপনারও ঘুম প্রয়োজন। এই ছেলেগুলোরও বাসায় ফিরতে হবে।রাখছি।
যার কাছ থেকে ফোন নিয়েছিল তার দিকেই আবার ফোনটা উঁচিয়ে ধরে রাইয়ান। নাও।
ফোন নিয়েই ছেলেটা আবার নম্বর ডায়াল করতে শুরু করে। ভাই…জ্বি ভাই…আইচ্ছা।
ছেলেটা পকেটে ফোন ঢোকায়।
-বাসায় যাও তোমরা, অনেক রাত হয়েছে। বলতে বলতে দরজা বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছিল রাইয়ান, কিন্তু তার আগেই …
রাইয়ান পেট চেপে ধরে মাটিতে শুয়ে পরে। পকেটে ফোন ঢোকানোর বাহানা করে ছেলেটা কখন পিস্তল বের করে এনেছে, তা বুঝতেই পারেনি রাইয়ান।
-মাগীটা ভিতরেই কোথাও আছে। আয় তোরা। বলতে বলতে মুন্না বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে। পিছু নেয় বাকি তিনটা ছেলে। শেষ ছেলেটা ঘরে ঢোকার হঠাৎ করেই রাইয়ানের তলপেটে লাথি মারে।
এমনিতেই অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছিল রাইয়ান, এখন মনে হয় যন পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে। চোখ পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগে বুঝতে পারে কেউ তার মুখে থু থু দিয়েছে, সাথে একটা গালি কানে আসে-শূয়োরের বাচ্চা।
-এখন সময় কত?
ঘুম থেকে জেগে উঠলে মানুষের মাথায় এই প্রশ্নটাই সবার আগে আসে। রাইয়ানেরও ঠিক তাই হল।
-দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম? নিজেকে প্রশ্ন করে সে।
ঠিক তখনই টের পায়, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা। কিছুক্ষণ আগেই যার পেটে গুলি করা হয়েছে, ব্যথা ছাড়া তার আর কিসের অনুভূতি হবে?
একবার নিজের হাতের দিকে তাকায় রাইয়ান।গুলি লাগার সাথে সাথেই তলপেট চেপে ধরে শুয়ে পড়েছিল ফ্লোরে, রক্তে ফ্লোর আর হাত-দুটোই ভিজে গেছে।
সায়রা কোথায়?
ঠিক তখনই কান্নার শব্দ শুনতে পায় রাইয়ান। সায়রার কান্না।
সায়রা কাঁদছে। সাথে ‘না না… দোহাই লাগে তোমাদের… প্লিজ এমন কোর না’ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কিছু শব্দ শুনতে পায় সে।
কোথায় সায়রা?
আবার কান্নার শব্দ ভেসে আসে।
-চোপ মাগী। ওই ছেলেদের একজনের কন্ঠ শোনা যায়। সাথে বাকিদের সম্মিলিত কুৎসিত হাসি।
সর্বশক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাইয়ান, পা বাড়ায় বেডরুমের দিকে।যতই এগিয়ে যেতে থাকে সায়রার কান্না আর ছেলেগুলোর কুৎসিত হাসি ততই প্রবল হয়ে বাজতে থাকে তার কানে।
অবশেষে বেডরুমের দরজায় এসে দাঁড়ায় রাইয়ান।
সায়রার শাড়ির আচল গড়াগড়ি খাচ্ছে মেঝেতে। একজন তাকে পেছন থেকে ধরে রেখেছে, আরেকজন তার ব্লাউজ নিয়ে টানাটানি করছে। আর মুন্না…
ছেলেটাকে দেখে রিফ্লেক্সবশত নিজের চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিল রাইয়ান, ধাতস্থ হয়ে আবার ওদের দিকে চোখ ফেরায়।
মুন্না ইতিমধ্যেই পরনের প্যান্ট খুলে ফেলেছে।সম্পুর্ণ উলঙ্গ হয়ে সায়রাকে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করতে করতে বিশ্রীভাবে হাসছে।
রাইয়ান বুঝতে পারে তার সময় শেষ হয়ে আসছে, এই চারটা ছেলের বিরুদ্ধে খালি হাতে একা কিছুই করতে পারবে না।তখনই তার চোখ যায় মেঝেতে পরে থাকা মুন্নার প্যান্টের দিকে। পকেট থেকে একটু করে বের হয়ে আছে বন্দুকের বাট!
ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় রাইয়ান। নিঃশব্দে প্যান্টের পকেট থেকে বের করে নেয় বন্দুকটা।
এগুলোতেই কি ছয়টি করে বুলেট থাকে?
দুটো ইতিমধ্যেই রাইয়ানের পেটে চলে গেছে। ওদের কারও ভাগ্যে তাহলে একটার বেশি জুটছে না।
-মুন্না। বজ্রকন্ঠে ডাক দেয় রাইয়ান।
উত্তেজনার বশে এতক্ষণ কেউই ওর উপস্থিতি খেয়াল করেনি, হঠাৎ করে রাইয়ানের বজ্রকন্ঠ শুনে সবাই চুপচাপ হয়ে যায়।
-তুইই এখনো মরস নাই? সবার আগে নিজেকে সামলে নেয় মুন্না। শুয়োরের বাচ্চা… রাইয়ানকে লক্ষ্য করে ছুটে আসতে শুরু করে।
বন্দুক উঁচিয়ে ধরে রাইয়ান। শুটিং গেম খেলা ছাড়া বাস্তব জীবনে কখনো বন্দুক চালায়নি সে, তবুও নির্ভুলভাবেই ট্রিগারে চাপ দেয় সে।
এক সেকেন্ডের একশত কিংবা এক হাজার ভাগের এক ভাগ সময় হয়ত বয়ে যায়, তার আগেই মুন্নার নিথর উলঙ্গ দেহটা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।
ব্লাউজ ধরে টানাটানি করতে থাকা ছেলেটা সায়রাকে ছেড়ে দিয়ে এবার রাইয়ানের দিকে অগ্রসর হয়।
-তোরে আমি শেষ…
কথার শেষাংটুকু ছেলেটার মুখের ভেতরেই রয়ে যায়। দলনেতার পাদাংক অনুসরন করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সেও।
রুমের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল একজন। মেঝেতে পড়ে থাকা দুটো লাশের দিকে একবার তাকায় সে, এরপর তাকায় রুমের একমাত্র দরজার ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা রাইয়ানের দিকে।
বাঁচতে হলে এই রুম থেকে তাকে বেরোতে হবে, আর বেরনোর একমাত্র পথ আগলে ধরে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে আহত রাইয়ান।
অবশেষে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে রাইয়ানের অগ্রসর হওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয় সে।
আবার বন্দুক উঁচিয়ে ধরে রাইয়ান। কিন্তু…
প্রাণপণ চেষ্টার পরেও ট্রিগার চাপতে পারে না সে।
ব্যাপার কি? ট্রিগার কি লক হয়ে গেছে?
পরিস্থিতি বুঝতে ছেলেটার সেকেন্ডখানেক সময় লাগে, ঠোঁটের কোণে একটা ক্রূর হাসি ফুটে ওঠে।
-মর হারামজাদা। রাইয়ানের বুক বরাবর লাথি দেয় সে।
তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায় রাইয়ান, সাথে সাথেই তার বুকের ওপর বসে পড়ে ছেলেটা।
-তুই মরস না ক্যা? বলতে বলতেই সর্বশক্তি দিয়ে রাইয়ানের গলা চেপে ধরে ছেলেটা।
পিস্তল ফেলে দিয়ে রাইয়ান দুহাত দিয়ে তার গলার ওপর থেকে ছেলেটার হাতের বাধন আলগা করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে।
-মর। আবার বলে ওঠে ছেলেটা।
রাইয়ানের চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসতে শুরু করে।চোখ খোলা রাখার মত শক্তিও যেন তার অবশিষ্ট নেই।
ঠিক তখনই…
এক ফোটা তরল এসে রাইয়ানের মুখের ওপর পড়ে।
রক্ত!
চোখ তুলে তাকায় রাইয়ান। বুঝতে পারে তার গলার ওপর থেকে ছেলেটার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসছে, ছেলেটা ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে একপাশে। তার গলা থেকেই এক ফোটা রক্ত গড়িয়ে পড়েছে রাইয়ানের মুখের ওপর !
সায়রার দিকে তাকায় রাইয়ান।পেছন থেকে যে ছেলেটা তাকে ধরে রেখেছিল, হাত দুটো সে ছেড়ে দিয়েছে।রাইয়ানের ফেলে দেয়া পিস্তল এখন সায়রার হাতে, সেই পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে তৃতীয় আক্রমণকারীর গলা বরাবর।
অবশেষে সেও মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
-মাফ চাই, আমারে ছাইড়া দেন। শেষ আক্রমণকারী কেঁদে ওঠে।
রাইয়ান সায়রার দিকে তাকায়, সায়রা রাইয়ানের দিকে। চোখে চোখে দুজনের কথা হয়।
ছেলেটা আর কোন শব্দ উচ্চারণের সুযোগ পায় না।
১০/০৮/২০২২~১১/০৮/২০২২।
আমার লেখা আরও কিছু ছোট গল্পঃ
ছোটগল্পঃ ধোঁয়াটে শহরে একদল ঘোলাটে মানুষ
ছোটগল্পঃ মুক্ত বিহংগ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:১৯