মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি জয়দেব। চারণ কবি হিসেবে তার খ্যাতি। এই কবি জয়দেবকে নিয়ে এক মজার গল্প আছে।
একবার কবি জয়দেব মনঃস্থির করল সে ইশ্বরের গুনগান নিয়ে কবিতা লিখবে। যথারীতি সমুদ্রপাড়ে এক নির্জন যায়গায় বসে কবিতা লেখা শুরু করল জয়দেব। হঠাৎ খেয়াল করল, একটু দুরে ছোট্ট একটা পাখি তার ঠোটে করে সমুদ্রতীর থেকে বালি নিয়ে সমুদ্রে ফেলছে। জয়দেব কৌতুহলী হয়ে পাখির সাথে কথা বলতে গেল।
জয়দেব: ওহে পাখি তুমি সমুদ্রতীর থেকে বালি নিয়ে সমুদ্রের মাঝে ফেলছো কেন?
পাখি: আমি সমুদ্রের মাঝে বাধ দিব
জয়দেব হাসল এবং বলল
জয়দেব: ওরে বোকা পাখি, সমুদ্র বিশাল জলরাশির সমাহার। এতে বাধ দেয়া সম্ভব নয়।
পাখি: অবশ্যই সম্ভব।
জয়দেব: কিভাবে?
পাখি: তুমি সৃষ্টি হয়ে যদি স্রষ্টার গুনগান লিখে শেষ করতে চাও তবে আমি কেন সমুদ্রে বাধ দিতে পারব না। সমুদ্রে বাধ দেয়া স্রষ্টার গুনগান লেখার থেকে অনেক সহজ।
কবি জয়দেব লজ্জিত হয়ে চলে আসল।
কিছু মানুষ আছে যারা কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য যুক্তি ব্যতিরেকে স্রষ্টাকে অস্বীকার করে। এদের কথা চিন্তা করতে গিয়ে একটা গল্প মনে পড়ে গেল।
এক জন্মান্ধ ভিক্ষুক পথভ্রমনে ক্লান্ত হয়ে এক ঘরের সামনে এসে আশ্রয় নিল। ভিক্ষুক লোকটি ক্ষুধার্ত ছিল। ভিক্ষুক বাসায় কেহ আছে কিনা জানতে চাইল। ঘরে কেবল এক বৃদ্ধা মহিলা ছিল।
ভিক্ষুক: মা, আমি খুব ক্ষুধার্ত। আমাকে খাবার দেয়া যাবে?
বৃদ্ধা: ফরে শুধু পনির আছে। পনির দিব?
ভিক্ষুক জন্মান্ধ, সে কখনো পণির দেখে নাই।
ভিক্ষুক: পণির কি?
বৃদ্ধা: পণির দুধ দিয়ে তৈরি।
ভিক্ষুক: দুধ কেমন?
বৃদ্ধা: সাদা
ভিক্ষুক: কেমন সাদা?
বৃদ্ধা: (একটু ভেবে) বকের মত।
ভিক্ষুক: বক কেমন?
এবার বৃদ্ধা পড়ল মহাফ্যাসাদে। বক কেমন তা কি করে বুঝাবে। বৃদ্ধা ভিক্ষুকের হাত বাকা করে বকের মত বানিয়ে বলল, বক এইরকম! ভিক্ষুক তার নিজ হাতে অন্য হাত বুলিয়ে ভীষণ ভয় পাইল এবং বলল, মা, আমার পনির দরকার নাই। এত বাকা এবং শক্ত খাবার! শেষে আমার গলায় বিধে থাকবে এবং আমি মারা যাব। এই কথা বলে ভিক্ষুক পণির না খেয়েই চলে আসল।
আর এভাবেই ইশ্বর সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবেই আমরা সৃষ্টি হয়ে স্রষ্টাকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখাই