somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের দুই মাতা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহাভারত যখন লিখিতরূপ পায়(খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে)তাঁর আগে থেকে নারীর স্বাধীনতা শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে থাকে। নারীর স্বাধীনতা যুগের অনেকটা অবসান ঘটলেও থাকে তাঁর অবশেষ।এ কারণে মহাভারতের নারীদের বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে জ্বলে উঠতে দেখা যায়।

মহাভারতের প্রধান দুইমাতা চরিত্র হল- গান্ধারী, কুন্তী । এই দুই শক্তিশালী নারী চরিত্র মহাভারতে নতুন প্রাণ দিয়েছে। তাঁদের ত্যাগ, সাহসিকতা, স্বামীভক্তি, ব্যক্তিত্ব মহাভারতের কাহিনিকে সমৃদ্ধ করেছে।

গান্ধারী

গান্ধারী গান্ধার রাজকন্যা। পিতা গান্ধারাজ তাঁর অজ্ঞাতে হস্তিনাপুরের রাজপুরুষ অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সাথে বিয়ে দেন। গান্ধারী নির্লোভ, জ্ঞানী, দূরদর্শিনী ছিলেন। মহাভারতের কবি তাঁকে জ্ঞানবতী (সভাপর্বে)বলেছেন। স্বয়ং ধৃতরাষ্ট্র তাঁকে দূরদর্শিনী (উদ্ যোগ পর্বে) এবং সার্বিক জীবনাচরণে তিনি সংযত ও সংযমী ছিলেন এ কারণে তাঁকে ‘ব্রহ্মচারিণী’(স্ত্রী পর্বে) বলা হয়েছে।

গান্ধারী পিতা এবং স্বামী উভয়ের বিরুদ্ধে তীব্র অভিমানে আহত হয়েছেন। স্বামী অন্ধ জানার পর তিনি নিজেও চোখে কাপড় বেঁধে অন্ধত্ব বরণ করেছেন। তিনি জানতেন ক্ষত্রিয় বিঁধানে স্বামীকে অতিক্রম করা যায় না।

দুর্যোধন –কর্ণ-শকুনি সাথে পুনর্বার দূতিক্রিড়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ধৃতরাষ্ট্রের দুর্বলতা গান্ধারীর অজানা ছিল না। তাই এই সর্বনাশা ষড়যন্ত্রের শিকার না হবার জন্য তীব্র ভাষায় ধৃতরাষ্ট্রকে সর্তক করে বলেছেন,

“ মহারাজ তুমি, নিজের দোষে দুঃখের সাগরে নিমগ্ন হয়ো না। নির্বোধ অশিষ্ট পুত্রদের কথা শোন না। পাণ্ডবরা শান্ত
হয়েছে, আবার কেন তাঁদের ক্রুদ্ধ করছ? তুমি স্নেহাবশে দুর্যোধনকে ত্যাগ করতে পারনি, এখন তাঁর ফলে সর্বনাশ হবে’’।
(সভাপর্ব)

দুর্যোধন কর্তৃক কৃষ্ণের সন্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে, গান্ধারী দুর্যোধনকে তিরস্কার করে বলেন,

‘পুত্র আমার পিতা ও ভীষ্ম দ্রোনাদি সুহ্রদগণের কথা রাখ। রাজত্বের অর্থ মহৎ প্রভুত্ব তা কোন দুরাত্মারা এই পদ কামনা করতে পারে না। পাণ্ডবগণ ঐক্যবদ্ধ মহাবীর, তাঁদের সাথে মিলিত হলে তুমি সুখে পৃথিবী ভোগ করতে পারবে।বৎস, ভীষ্ম দ্রোণ যা বলেছেন তা সত্য, কৃষ্ণার্জুন অজেয়’।
(উদ্ যোগ পর্ব)

মহাভারতের কাহিনিতে প্রথম থেকে গান্ধারী সত্য, ন্যায় আর কল্যাণের পথে ছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকালে, দুর্যোধন প্রতিদিন মায়ের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন আর তাঁর উত্তরে মা গান্ধারী বলেছেন,

‘যে পক্ষে ধর্ম সেই পক্ষেই জয় হবে’।
(স্ত্রী পর্ব)

জ্ঞানী গান্ধারী জানতেন দুই কুলের মধ্যমণি কৃষ্ণ এই ভয়াবহ যুদ্ধ থামাতে পারতেন কিন্তু থামান নি। তাঁকে অভিশাপ দিয়ে বলেছেন,
“ মধুসূদন তুমি কেন এই যুদ্ধ হতে দিলে?তুমি যখন কুরুপাণ্ডব জ্ঞাতিদের বিনাশ অপেক্ষা করছো, তখন তোমার জ্ঞাতিগণকেও তুমি বিনষ্ট করবে’’।
(স্ত্রী পর্ব)


কুন্তী

জন্মের আগেই কুন্তীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর পিতার নাম শূরসেন এবং স্বামীর নাম পান্ডু। অঙ্গরাজ কর্ণ, ইন্দ্রপ্রস্থের অধিপতি যুধিষ্ঠির, ভীম এবং অর্জুন তাঁর পুত্র। যমজ সহদর নকুল ও সহদেব তাঁর সতীন মাদ্রীর গর্ভে জন্মালেও কুন্তী তাঁদের নিজ সন্তানদের মত ভালোবাসতেন।

কুন্তী যখন কুমারী ছিলেন তখন তাঁর গৃহে দুর্বাসামুনি অতিথি হয়ে আসে এবং কুন্তী তাঁকে সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করেন। এতে খুশি হয়ে দুর্বাসামুনি তাঁকে এক অদ্ভুত বর দেন। বর পেয়ে কৌতূহলী কুন্তী কুমারী অবস্থায় সূর্যদেবকে কামনা করে বসেন এবং সূর্যদেবের সাথে মিলিত হয়ে এক পুত্র জন্ম দেন যাকে পরবর্তীতে যমুনার জলেতে ভাসিয়ে দেন। এই পুত্র পরবর্তীতে কর্ণ নামে পরিচিত হন।

পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যুর পর কুন্তী নিজের ও মাদ্রীর ছেলেদের নিয়ে হস্তিনাপুরে আসেন।নিজ পুত্র ও মাদ্রী পুত্রের মাঝে কোন ভেদ করেননি। সমান আন্তরিকতায় সবাইকে ভালোবেসেছেন। মায়ের এই গুন পরবর্তীতে যুধিষ্ঠিরকে পেয়েছিল। বন পর্বে, যজ্ঞ তাঁকে মৃত ভাইদের মাঝে যেকোন একজনকে জীবনদান করতে চাইলে যুধিষ্ঠির নকুলের জীবন প্রার্থনা করেন।

‘ কুন্তী ও মাদ্রী দুজনেই আমার পিতার স্ত্রী, এদের দুজন পুত্র জীবিত থাকুক এই আমার ইচ্ছা, মাতা কুন্তীর পুত্র হিসেবে আমি জীবিত আছি আর মাতা মাদ্রীর একজন পুত্র জীবিত থাকুক এই আমার ইচ্ছা। আমি দুই মাতাকেই তুল্যজ্ঞান করি’।
(বন পর্ব)

যুধিষ্ঠির রাজ্যগ্রহণের পর কুন্তী তাঁকে উপদেশ দেয়,

‘যুধিষ্ঠির তুমি কখনও সহদেবের উপর অপ্রসন্ন হয়ো না, সে তোমার ও আমার অনুরক্ত। কর্ণকে সর্বদা স্মরণ করে, সর্বদা সকলে দ্রৌপদীর প্রিয় সাধন করবে। কুরুকুলের ভার তোমার উপরই পড়েছে’।


সার্বিক ভাবে, মাতৃস্নেহের দুই প্রতিচ্ছবি মাতা গান্ধারী ও মাতা কুন্তী মানবীয় আচরণ হাজার বছর ধরে বয়ে চলেছে ভারতীয় নারীরা। ব্যক্তিগত দোষ ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু মাত্রিস্নেহে সবাই এক।








সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×