somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঠারোর আগুন, কবিগুরুর ক্যামেলিয়া ও জামাতিদের স্বপ্নভঙ্গ

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই হিটলার যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করলেন এবং এরপর ফ্রান্স দখল করে নিলেন তখন ইউরোপবাসীর টনক নড়ে উঠলো। শান্তির ইউরোপে রক্ত কেন? সে সময়ের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ফ্রান্সের লেখক এইমে সিজার (Aimé Césaire) তাঁর বিখ্যাত ‘ডিসকোর্স অন কলোনিয়ালিজম’ (Discourse on Colonialism) বইয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, হিটলার এমন কী কী করেছেন যা ইউরোপের দেশগুলো শত শত বছর ধরে আফ্রিকার দেশগুলোতে করেনি? বর্তমান আওয়ামী সরকারের কর্মকান্ড দেখে আমার মনেও প্রশ্নের উদয় হয়, আওয়ামীলীগ কী কী করেছে যা জামাতিরা সরকারে থাকতে করেনি?

কিন্তু আমরা কেউ কেউ সেসব ভুলে যাই, কেউ কেউ জানিও না। না জানাটা অবশ্য জামাতিদের রক্তে। না জানার কারণেই তারা জামাতি। পরিচিত এক জামাতির সাথে আলাপের এক ফাঁকে বললাম, জামাতিদের জীবনদানকারী জিয়া ক্ষমতা দখল করার পর সংসদে ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করেছিল সেটা সম্পর্কে সে কতটুকু জানে। সে স্বীকার করলো কিছুই জানে না। যারা জানেন না তাঁদের জন্য বলি। জিয়ার এই আইন অনুয়ায়ী পচাত্তুরের আগের কোন হত্যাকাণ্ড যেমন, একাত্তুরের গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু ও জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যার কোন বিচার হতে পারবে না। জামাতি ভাইটি অবাক হয়ে গেল।

জামাতিদের সাথে আমাদের পার্থক্য এই যে, আমরা যেকোন অন্যায় অবিচার দেখলে, সে আমাদের প্রিয় সরকার করলেও আমরা প্রতিবাদে শামিল হই। ভ্যাট, কোটা আর সর্বশেষ কিশোর বিদ্রোহে আমরা সমর্থন দিতে কার্পণ্য করিনি। যদিও আমাদের পছন্দের সরকার এর কোনটিই ভাল চোখে দেখেনি। কিন্তু খেয়াল করে দেখেন, হেফাজত গণজাগরণমঞ্চের কর্মীদের হত্যা করার ঘোষণা দেয়ার পর একে একে প্রায় ১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তখন আজকের প্রতিবাদে যে জামাতিরা আমাদের পাশে পাচ্ছে, তখন আমরা তাঁদের পাইনি। বরং হত্যার সমর্থনের তাঁদের লেখাজোখা দেখেছি। 

সর্বধর্মের অনুসারীদের নিয়ে একটি সমন্বয়বাদী সমাজের স্বপ্ন দেখা এই আমাদের এক বিপদ। প্রায় সব দেশেই তারা সংখ্যালঘু। মায়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে যে গুটিকয় বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ প্রতিবাদ করে, অবজ্ঞাভরে তাঁদের নাস্তিক মুসলিমপন্থী ডাকা হয়। একই কথা খাটে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের বেলায় যারা নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ায়।

কিন্তু এত কিছু বলেও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তটস্থ সরকারের কিশোর বিদ্রোহ দমনের পন্থা নিয়ে সমালোচনা করা থেকে আমরা বিরত থাকতে পারিনা। সরকারের পুলিশ এতই কম পড়েছে যে বাড়তি হেলমেটওয়ালাদের ভাড়া করতে হয়। কিছু গুজব সত্বেও সেসব ছাপিয়ে শিশুদের যে রক্ত আমরা ঝরতে দেখেছি, আওয়ামী সরকার যেন মনে রাখে এই আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি, প্রতিবিন্দু রক্ত থেকে ফিনিক্স পাখির মত প্রতিবাদী আঠারোর আগুন দাউ দাউ করে জ্বলবে।

এই আন্দোলন নিয়ে শেষ এই লেখায় সিনেমার এক্সট্রা বাংলাদেশের জামাতিদের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলতে চাই। জামাতিরা যেভাবে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে সরকার পতনের দিকে নিয়ে যেতে গিয়ে আন্দোলনকে পথহারা করেছে তাতে আমার কবিগুরুর ‘ক্যামেলিয়া' কবিতার কথার মনে পড়ে যায়। এ কবিতায় নায়ক গোপনে ভালবাসে কমলা নামের এক মেয়েকে। মেয়ের পিছু পিছু কোলকাতা থেকে দার্জিলিং যায় সে। সেখানে এক বন্ধু থেকে একটি ক্যামেলিয়া ফুলের টব উপহার পেয়ে সে ভাবে এই গাছের ফুল দিয়েই কমলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবে। দিন যায় আর জলপানি দিয়ে সেই গাছের যত্ন নেয় নায়ক। বহু প্রতীক্ষার পর একদিন ফুল ফোটে। তাঁর বাসায় কাজ করে এক সাঁওতাল মেয়ে। এই মেয়েকে দিয়ে সে ফুল কমলার কাছে পাঠাবে। তাই সাঁওতাল মেয়েটিকে ডাকল সে। মেয়েটি এসে বলল, 'বাবু, ডেকেছিস কেনে।’ নায়ক তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখে সেই ক্যামেলিয়া ফুল সাঁওতাল মেয়ের কানে, তাঁর কালো গালের উপর আলো করেছে। এত যত্নের এত আকাঙ্ক্ষার ফুলের এই পরিণতি দেখে নির্বাক নায়ক মনের দুঃখে দার্জিলিং থেকে কলিকাতায় ফিরে আসে। 


জাহিদ কবীর হিমন
আখেন, জার্মানি থেকে
১১ আগস্ট ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×