somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ট্রস ট্রস বেত্রাঘাত

০১ লা মে, ২০২০ ভোর ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারিদিকে করোনা নিয়ে এত কথা-বার্তা-চাপ, তবু আজ বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মনটা বেশ ভাল। থেকে থেকে হেসে উঠছেন। বুক থেকে গলা পর্যন্ত ঢেউ খেলে যাচ্ছে। চনমনা অবস্থায় বেল টিপলেন, ঘরে ঢুকল সচিব।

মন্ত্রীঃ এসেছেন ভাল কথা কিন্তু আগেই বলে রাখি জ্ঞান দিবেন না। আপনারা দুই পাতা বিসিএস গাইড পড়ে সচিব হইছেন, কথায় কথায় এমন ভাব দেখান যেন আমরা ঠেলাগাড়ি আর আপনারা মার্সিডিস বেঞ্জের লেটেস্ট মডেল। আমরা জনগণ থেকে উঠে এসে আজ মহান নেতায় পরিণত হয়েছি। কথাটা মাথায় রাখবেন।

সচিবঃ অবশ্যই স্যার, কী যে বলেন স্যার! তা স্যারের মনটা একটু ভাল মনে হচ্ছে। ঘটনা কি? 



মন্ত্রীঃ হে হে আর বইলেন না। ওই তথ্যমন্ত্রণালয়ে আছে না একটা বলদ কি যেন নাম, হাসান না ঠাসান। বলদে আজকে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে করোনা-দুর্যোগ কীভাবে বিএনপি-জামাতের ঘাড়ে চাপানো যায়, আর করোনা শেষ হলে সেটা সরকারের সাফল্য বলে কীভাবে প্রচার করা যায় তার জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ভাড়া করতে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার আবেদন করেছে। এটা শুনে নেত্রী তাকে সবার সামনে একশবার কান ধরে উঠবস করাইছে। নেত্রী মাঝে মাঝেই এমন টুকটাক সাজা আমাদের দেন। এর আগে সাহারা খাতুনকে হিন্দি গানের সাথে শিফন শাড়ি পড়ে ড্যান্স দিতে হইছিল। আলহামদুলিল্লাহ, আমার পালা কখনো আসেনি। আসবেও না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি একটা মন্ত্রীর থাকে, সেটা একমাত্র আমারই আছে।

সচিবঃ অবশ্যই আছে। সেটা নিয়ে দ্বিমত করার মত একটা গাধাও এ দুনিয়াতে বেঁচে নাই আমি গ্যারান্টি দিয়া বলতে পারি স্যার। তবে স্যার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটা চিঠি এসেছে। এই ধরেন।



মন্ত্রীঃ চিঠি? চিঠি কিসের? চিঠি পরে, কিন্তু আপনের সাথে আমার বোঝাপড়া আছে। সেই কবে বলেছি মাত্র ট্রাক পিপিই আর সার্জিক্যাল মাস্ক আমার শ্বশুরবাড়ি পাঠাইতে। কোন খবর নাই। স্বাস্থ্যসচিবের কাজটা কি আমাকে বুঝান?

সচিবঃ স্যার, ব্যাপক সঙ্কটে আছি। হাসপাতালগুলাতে দিয়া কুলাইতে পারি না। এছাড়া শহরের ভিআইপিদের বাসাতেও এসব সাপ্লাই করতে হচ্ছে।



মন্ত্রীঃ যা ভাবছিলাম আপনি আমার রুমে আসা মানে জ্ঞান দিবেন। পিপিই ছাড়া আমার শ্যালিকা রান্নাঘরে যেতে পারে না, এটার থেকে কি মুর্খ গরিব শ্রমিকদের হাসপাতাল আপনার থেকে বড় হয়ে গেল? রাগের ঠেলায় আপনার ম্যাডাম আজকে বাসা থেকে খাবার পাঠায় নাই। হোটেল থেকে খাবার এনে দুপুরে ইফতার করলাম। এখন চুকা ঢেঁকুর উঠতেছে।

সচিবঃ সরি স্যার। বিষয়টা দেখতেছি। 



মন্ত্রীঃ এর আগেও আপনি আমার শশুরবাড়িতে আমাকে ছোট করেছেন। ছোট শালা যেদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের ডাক্তার সেজে হজ্বে গেল, আপনাকে বলেছিলাম মক্কার হোটেলে পনেরোদিনের জন্য একটা মাগির ব্যবস্থা করতে। করেন নাই। বউ ছাড়া এতদিন দূরদেশে থেকে হজ্বের মতো পবিত্রকাজে মন বসে? বলেন বসে? (মন্ত্রীর চেহারায় অনেক রাগ)

সচিবঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) স্যার আপনার ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি এত সুন্দর লাগছে দেখতে! সামান্য একটু রাগ করলে মনে হয় সাক্ষ্যাৎ অমিতাভ বচ্চনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কীভাবে পারেন স্যার এত স্মার্ট থাকতে?


মন্ত্রীঃ (মন্ত্রীর চেহারায় হাসি হাসি ভাব চলে আসল) হে হে হে লজ্জা দিলেন। কাভি খুশি কাভি গাম দেখার পর অমিতাভ বচ্চনের মতো দাড়ি রেখেছি। কেটে ফেলব ভেবেছিলাম। কিন্তু বাংলার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মওলানা ইব্রাহিম বলেছেন, দাড়ির খোঁচায় স্ত্রীলোকের যৌবন জেগে উঠে। আমি নিজে বহু মেয়েলোকের সাথে এর প্রমাণ পেয়েছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম যৌবন যতদিন, দাড়ি ততদিন।

সচিবঃ মওলানা ইব্রাহিমের তো ছাগলা দাড়ি। ওতে যৌবন জাগে কিনা কে জানে।



মন্ত্রীঃ আরেকজনের বউ নিয়া আপনের কাম নাই। আপনাকে আমার ঘর থেকে এলভিস প্রিসলির খসখসানি আর উস্তাদ রশিদ খানের ভেড়বেড়ানি ফেলে দিয়ে মমতাজ আর আশরাফ উদাসের ওই ক্যাসেটটা আনতে বলেছিলাম যেটাতে বিখ্যাত ওই গানটা আছে, নারীরা পর্দায় থাকে না, ওড়না রাখে গলায় পেঁচাইয়া শরীরটাতো ঢাকে না। এই মাইজভাণ্ডারী গানের কাছে ওই এলভিস-রশিদ তেজপাতা! কই সেই ক্যাসেট?

সচিবঃ সেদিন এক বুদ্ধিজীবীর বাসায় গিয়ে দেখলাম তিনি এলভিসের গান শুনছেন, আমি ঘরে ঢোকার পরেই টুক করে রশিদ খানের খেয়াল ছাড়লেন। ভাবলাম জ্ঞানীগুণীরা এসব শোনে তাই আপনার জন্য এনেছিলাম। সমস্যা নাই, ওই ক্যাসেট যোগাড় করা এই মুহুর্তে আমার প্রথম প্রায়োরিটি। করোনা নিয়ে একটা মিটিং আছে, সেটা ক্যানসেল করতেছি। ইউ হ্যাভ মাই ওয়ার্ড স্যার।



মন্ত্রীঃ রসময়গুপ্তের ইতিহাসভিত্তিক রোমান্টিক বইগুলাও আমার টেবিলে চাই।

সচিবঃ কি? জি জি অবশ্যই! অবশ্যই! আমার তো ঘুমই হয়না এই সাহিত্যের দুটি পাতা না পড়লে।



মন্ত্রীঃ প্রাইমমিনিস্টারের অসিফ থেকে আসা চিঠিটা খুলে দেখেন তো জরুরী তলব কিনা!

সচিবঃ জি স্যার আমি চিঠি পড়েই আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। ঘটনা সুবিধার না। 



মন্ত্রীঃ কেন কেন?

সচিবঃ মন্ত্রীসভার আগামী বৈঠকে আপনাকে ট্রস ট্রস করে বেত্রাঘাত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। 



মন্ত্রীঃ কি বলেন এসব? হঠাৎ নেত্রী ক্ষেপে গেলেন কেন?

সচিবঃ আপনি ইদানীং মিডিয়ায় করোনা নিয়ে কথা বলেন অথচ আপনার পিছনে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকে না। এই হল অপরাধ।

মন্ত্রীঃ ট্রস ট্রস শব্দটা কি সত্যি লিখেছে?

সচিবঃ জি লিখেছে, বোল্ড করা।



মন্ত্রীঃ বেত্রাঘাত কি মন্ত্রীসভার বাইরে আর কেউ জানবে?

সচিবঃ নেত্রীর নির্দেশে বেত্রাঘাতের দৃশ্য সব টিভি চ্যানেলে লাইভ প্রচার করা হবে। আর বলা হবে করোনায় ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বেত্রাঘাত করা হল। জরিপে দেখা গেছে এতে সরকারের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হবে।




মন্ত্রী অবাক হয়ে গেলেন, তিনি ঘেমে যেতে থাকলেন। বললেন, দ্রুত ডাক্তারকে আসতে বলুন, প্রেশারটা বেড়ে গেল মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১২:০৮
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×