somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হিমন
পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

মানিকের যাদব পণ্ডিতের মৃত্যু আর আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় থাকার জরুরত

০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বাংলা ভাষায় যত উপন্যাস লিখিত হয়েছে সেটির তালিকায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুলনাচের ইতিকথা” অবশ্যই মাত্র কয়েকটির একটি। অতি ক্ষুদ্র আকৃতির এই গল্পে যাদব পণ্ডিত নামের এক চরিত্র আছে যিনি একাধারে আধ্যাত্মিক, সূর্যবিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ। গ্রামের মানুষ নানা বিপদে তাঁর কাছে আসে। অনেকে তাঁকে ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও ভাবে।

একদিন তিনি উপন্যাসের মূল নায়ক ডাঃ শশীকে বলেন যে তিনি কোন এক রথের দিন মারা যাবেন। শশীকে তিনি একথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন। তবু শশী একজনের কাছে তা প্রকাশ করে এবং পরে তা ছড়িয়ে পরে মানুষের মুখে মুখে। ঘটনাচক্রে কিছুদিন পরেই রথের মেলা। এদিকে এককান দুকান হতে হতে পুরো অঞ্চলের মানুষ বলতে শুরু করেছে এবং বিশ্বাস করতেও শুরু করেছে যে, আসছে রথের দিনই যাদব পণ্ডিত মারা যাচ্ছেন, আর তিনি যেহেতু বিদ্বান মানুষ তাই তাঁর কথার নড়চড় হবেনা, তিনি আসছে রথের দিনই মরবেন। শেষে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, না মরলে যাদব পণ্ডিতের ইজ্জত থাকছে না, এতদিনের অর্জিত মানুষের বিশ্বাস-আস্থা ধূলায় লুটোবার জো। তাই তাঁকে অতি গোপনে বিষপানের মাধ্যমে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে সম্মান রক্ষা করতে হোল। যদিও ডাঃ শশীই শুধু তা জানলো, আর কেউ না, আর পণ্ডিতের মান রক্ষায় তিনি চিরটাকাল তা গোপন রাখার শপথ নিলেন।

এই অপ্রয়োজনীয় স্বেচ্ছামৃত্যুর মৃত্যুর সাথে আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় থাকার জরুরতের সাদৃশ্য কোথায়? বাংলাদেশের মত চিরকালীন-সমস্যাসংকুল সমাজ যদি খোদার আরশ থেকেও পরিচালিত হয়, তবু এক মেয়াদে তাকে সিংগাপুর বানানো সম্ভব নয়। হাসিনা এটি জানে আর বোঝে বলেই ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ট হয়েই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেয়। সুস্থ গণতন্ত্রে যদিও এই ব্যবস্থা একটি অসুস্থ পন্থা, কারণ একটি দেশ সবসময় জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হবে, কখনোই সেখানে অনির্বাচিত কেউ থাকবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা জ্ঞানতাপস মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এই ব্যবস্থাকে জনগণের আত্ম-অবিশ্বাসের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থ্যাৎ, একটি মাত্র জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জনগণ দুটি দলকেই বিশ্বাস করেনা, তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার, অথচ দুটি দলের একটির কাছে দেশটিকে তুলে দিচ্ছে পাঁচ বছরের জন্য! আত্ম-অবিশ্বাসের এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল।

কিন্তু হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করেছেন বিশুদ্ধ গণতন্ত্র বজায় রাখতে নয়, সেটি তিনি করেছেন নিছক নিজের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতেই। যাদব পণ্ডিত যেমন স্বেচ্ছামৃত্যুকে জরুরী মনে করেছিল, আওয়ামীলীগও ভাবছে তাঁদেরই ক্ষমতায় থেকে যাওয়া জরুরী, এর নাম তাঁরা দিয়েছে 'উন্নয়নের ধারাবাহিকতা’। এটা কি যাদব পণ্ডিতের মত প্রেস্টিজ ইস্যু তাঁদের জন্য? দেশ পরিচালনার জন্যে আওয়ামীলীগ নিজেদের অবধারিত বিকল্প কেন ভাবছে? এটা ব্যাখ্যা করতে আপনাদের নিয়ে যাব ৩ হাজার ৮'শ বছর আগের ব্যবিলন শহরে, খৃষ্টপূর্ব ১৭৬৩ সালে। আজকের যে বাগদাদ শহর, সেকালে তা ছিল ব্যবিলন শহর যা সেকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে পরিচিত ছিল, জনসংখ্যা ছিল প্রায় দশলাখ। শাসকের নাম হামুরাবি। সেই কাহিনী পরের কিস্তিতে শোনাব।


৪ঠা আগস্ট ২০২৩
বার্লিন থেকে
জাহিদ কবীর হিমন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৩:১২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×