somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Ode On The Lungi- Kaiser Haq/ লুঙ্গিগাথা

৩১ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই ফার্স্ট ইয়ারে পড়েছিলাম, এখন হঠাৎ মনে পড়ায় বাংলা করলাম।
আসলে আমার বাংলাটা থেকে ইংরেজিটাতেই মজা বেশি হবে!
ইংরেজিটা পড়লে একটু বেশি আরাম পাওয়া যাবে।

যদি কেউ ইংরেজি পড়তে চায়ঃ
Ode On The Lungi - Kaiser Haq


দাদা ওয়াল্ট, আমাকে অনুমতি দিন, ভাবনাগুলো আপনার সাথে শেয়ার করি,
যতোবার আমি আপনার প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া পড়ি ততোবারই মনে হয় এটা এর থেকেও বেশি।
আমি কল্পনায় সময়ের সাথে জবরদস্তি করে ভাবি,
আপনি ইন্ডিয়া পার হয়ে আসেন একবার বাংলাদেশে।

ইদানীং ভাবি,
এ কেমন বস্ত্রীয় সমতা!
আমরাতো গণতান্ত্রিক আদর্শ হতে বহু দুরে,
আমরা কুটিলও, মুখে আর মনে বৈষম্য!
যদিও সবাই মুখে বলি সব পোশাকের সমান অধিকার
কিন্তু কিছু কিছু পোশাকের আছে আলাদা কদর।

নাহ! আমি কোনো অভিযোগ করছি না!
জ্যাকেট আর টাইকে আমি অবজ্ঞা করছি না,
তাদেরও আছে নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা।
বিভিন্ন উপলক্ষে তাদের আছে আলাদা যোগ্যতা
কিন্তু আমি বলছি আরো মৌলিক এক পোশাকের কথা!

শত শত মিলিয়ন লোক
প্যাসিফিক থেকে আফ্রিকা, সবাই পরে লুঙ্গি।
কতো বাহারি নাম তার: সারঙ, মুন্ডা, তামান, সারাম, পিনন, মা'আওয়াইস, কাঙগা, কাইকি, ধুতি।
তারা দিনে রাতে, ঘরে বাহিরে সর্বদাই পরে লুঙ্গি।

কেবল ভাবুন –
যেকোনো মুহূর্তে
লুঙ্গি পরিহিত লোক আছে এ দুনিয়ায়
ইউরোপ আমেরিকার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।

এখন চেষ্টা করুন একটি পরতে
হোয়াইট হাউজের যেকোনো অনুষ্ঠানে –

এমনকি আপনিও, দাদা ওয়াল্ট,
গণতন্ত্রের বরপুত্র,
এটি পরবেন না।

আপনি পরতেন যদি
পেতেন একটি কিল্ট –
কিন্তু লুঙ্গি? কখনোই না।

কিন্তু কেন? – এটা সেই প্রশ্ন
যা আমি সকলকে ভাবতে বলি-
এটাকি সভ্যতার সংঘাতে?

এটাতো কিম্ভুতকিমাকার, যে আমাদের সাথে রেশমি ঘাগরা
কিংবা লুঙ্গি তাদের সাথে!
তবে কি এটা নব্য সাম্রাজ্যবাদ,
পোশাকের কর্তৃত্ব!

কিভাবে বাদামী ও হলুদ সাহেবেরা, নাক কুঁচকায় তাদের স্বজাতির প্রতি যারা লুঙ্গিতেই সন্তুষ্ট!

বিচিত্রতাও আছে,
শ্রীলঙ্কায় দেখুন, তারা পার্টি ড্রেস রঙিন সারংকে করে!
দেখুন মায়ানমারের পলিটিসিয়ানদের দিকে
বিদেশি রাজনৈতিকদেরও তারা স্বাগতম করে লুঙ্গি পরে!

মায়ানমারের আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠা অবধি অপেক্ষা করুন,
আমেরিকার স্যাভিল রো'তেও লাইন পরে যাবে লুঙ্গির দরুন।

ব্যক্তিগত জীবনেও আছে লুঙ্গির কদর,
আমার কাজিন, আমেরিকা থাকে,
বাসায় এসেই আরাম খোঁজ লুঙ্গির ফাকে!
তার ছেলে বাবার লুঙ্গি পরায় লজ্জিত,
সুযোগ পেলেই লুকিয়ে রাখে অদ্ভুত লুঙ্গিটা আলমিরার তাকে!

বিষয়টা হতাশার
আমিও লোক নই ছাড়বার,
এখন সময় কিছু একটা করবার।

আমি ভেবে নিয়েছি,
এটাকে পতিত হতে দিবো না।

কেউ যদি এর পরে কটাক্ষ করে,
আমি সগর্বে ঘোষণা করবো
আমি একজন লুঙ্গি কর্মী !

বন্ধু ও সহযাত্রী লুঙ্গি প্রেমীরা,
চলুন আমরা লুঙ্গির জন্য পার্টি ও প্যারেড আয়োজন করি,

হলমার্ক ও আর্চির সমর্থন চাই
একটি আন্তর্জাতিক লুঙ্গি দিবস চালু করতে

যেদিন জাতিসংঘ প্রধান একটি লুঙ্গি পরে
বিশ্ববাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

দাদা ওয়াল্ট, আমি আমার লুঙ্গি উদযাপন করি, আমি আমার লুঙ্গির গান গাই।
আমি যা পরেছি, আমি তা পরবোই।

এটাই উপযুক্ত সময়,
আপনার প্যাসেজ টু ইন্ডিয়ার থেকে বড় কিছু করুন,
টু বাংলাদেশ করুন।

লুঙ্গির ভেতরে আরাম করুন একটা কটেজে
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।

(সগর্বে আমরা বলি, এটাই পৃথিবীর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত)
দেখবেন আটাশজন লোক লুঙ্গি পরেই সমুদ্রস্নান করছে!

কী এই জিনিস
(আমার শিক্ষিত বন্ধুরা, আমি ব্যু ব্রাম্মেলের কথা উল্লেখ করছি!)

আমি আবার বলছি, কী এই জিনিস
যা নিয়ে আমি বলেই চলেছি?

একটি আয়তাকার কাপড়,
সাদা, রঙীন, চেক কিংবা প্লেইড,

যেনতেনভাবে ৪৫⨯৮০ ইঞ্চি,
পাশাপাশি অর্ধেক কাটা

আর চোঙ্গার মতো করতে
সেলাই আঁটা

আপনি এর ভেতরে ঢুকে পড়তে পারেন
আর ঢিলা বাঁধনে বাঁধতে পারেন

কোমরের চারপাশে –
ওয়ান সাইজ ফিটস অল!

আর বসার জায়গার ময়লা?
লুঙ্গির ভেতরের দিকটা বের করে ঝেড়ে নিন পয়লা!

এটার পার দিয়ে মুছতে পারবেন হাত,
সাবধান হয়ে অধিক নুয়ে ধোয়া মুখ মুছবেন,
নইলে জাঙ্গিয়া পরা না থাকলে যেতে পারে জাত!

খুলে রাখলে এটা হয়ে যাবে ওড়না বা চাদর।
ব্যবহৃত হয়ে গেলেও এর কমেনা কদর –

বাসনের ন্যাকড়া কিংবা মেঝে মুছনি হিসেবে
অথবা কাঁথা বানানোর উপকরণ হিসেবে

অথবা আপনি আপনার কল্পনাকে কাজে লাগাতে পারেন
'সবকিছুর তত্ত্ব'র সুপারস্ট্রিংকে অলংকৃত করতে চেয়ে
(এই শিরোনামের বই
সম্মানিত স্টিফেন হকিংয়ের)

মূলত লুঙ্গি হলো ফিগ পাতার বর্ধিত রুপ
যা মানুষকে দিয়েছে তার সঙ্গতির স্বরুপ।

বছরের বেশি সময়, যখন খালি গায়ে
ঠান্ডায়, আপনি সুন্দর দিন-যাপন করতে পারেন
কেবল এক জোড়া লুঙ্গি নিয়ে,

পুকুর বা নদীতে ডুব দিয়ে
লুঙ্গি পরে সাঁতার কেটে,

লুঙ্গিটাকে কাছা মেরে জি স্ট্রিংয়ের মতো পরিবর্তন করে নিয়েন শুধু।

তপ্ত রোদে
একটা লুঙ্গিই পারে আরব কিংবা শিখ পাগড়ী হতে।

তীব্র শীতে, বাড়তি একটা লুঙ্গিই পারে পঞ্চের আরাম দিতে!


কুস্তি করতে
কিংবা কাবাডি খেলতে
জি স্ট্রিংয়ের মতো বা কাছা করে লুঙ্গি পরা যায়

কিন্তু ফুটবল কিংবা ক্রিকেট মাঠে
অথবা বর্ষায় জলে হাঁটতে
এটাকে উপর-নিচ ভাঁজ করা হয়
আর হাঁটুতে ওঠানো হয়।

সংক্ষেপে,
যারা আগ্রহী তাদের জন্য লুঙ্গি একটা পরিপূর্ণ বস্ত্র।
সামাজিক সাম্যেরও এটা একটা অস্ত্র!
এবং বিশ্বের সকল দারিদ্র্যের প্রতীক এটা।
হাস্যরসের মাধ্যমে এটা প্রান্তিক লোকেদের বক্তব্য।

এছাড়াও লুঙ্গির আরো কতক ব্যবহার আছে,
রোমান্টিক সময়ে এটা দুজনের জন্য স্লিপিং ব্যাগ।
এর ভেতরে যদি বয়স্কদের কৌতুকের বই আর মদের বোতল প্রিয়ার সাথে তবে তার ভেতরেই আপনার স্বর্গ।

যদি কারোর খারাপ দিন আসে,
যদি অবিশ্রান্ত বর্ষণের কারণে বন্যা কিংবা প্রবল জলস্রোত দেখা দেয়,
তবে নেমে পড়ে যেনো জলে,
হাতের সাহায্যে বাতাস ভরে নিলেই হলো, বেলুনের মতো ফুলে ওঠে এটাই হবে আপনার নৌকা!(এ যেনো লুঙ্গির ভেতর বাতাস আর আমিতো...)
এরপর ভাসতে ভাসতে যদি গাছের আগায় আশ্রয় পায় তবে লুঙ্গিটা খুলে নিংড়ে নিয়ে পতাকার মতো নাড়াতে থাকলেই,
এটাই হয়ে যাবে তার দুঃসময়ের পতাকা!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×