somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অপূর্ব আহমেদ জুয়েল
আমি অতি সাধারন একটা মানুষ …………পৃথীবির প্রতিটি মানুষের কিছু আশা-আকাঙ্কা থাকে, থাকে সীমাহিন স্বপ্ন। যেখানে সে তার জীবনকে সাজায় একিবারে নিজের মত করে। আমারো তেমন একান্ত কিছু স্বপ্ন আছে, যা আমাকে ভালো কিছু করার প্রেরনা যোগায়।

রাজনীতিকে সভ্য করার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কত দূর

১৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যেমন আছি তেমন রব’ বললে এবার আর হচ্ছে না। ২০২২ সালের নাগরিকেরা ২০১৮ সালের কুমিরের ছানা দেখে ভুলবেন না। ক্ষমতাসীন মহলও মনে হয় সেটা বোঝেন। তাই দেখা গেল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের বার্ষিকীতে কোনো বিজয় মিছিল হলো না। আওয়ামী লীগ দিনটিকে নীরবেই পিছলে যেতে দিল। দিনটা বিএনপি ও গণফোরামেরও বটে। ৩০ ডিসেম্বরের আয়োজনে অংশ নিয়েছিল তারাও। বিএনপি ছয়জন আর গণফোরাম দুজন সাংসদ শপথ নিয়ে সেই সংসদকে ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের’ মালা পরিয়েছিলেন। বিরোধী দলের এমন উদার ত্যাগের উদাহরণ আর আমাদের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু বাম জোট ৩০ ডিসেম্বরকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। সব কালো মেঘে বৃষ্টি হয় না। হালের বামেরা যতটা গর্জান, ততটা বর্ষান না। কবি শামসুর রাহমানের কবিতার চরণ বিএনপির মনের গুমরানো কথা হতে পারে, ‘তুমি বলেছিলে, আমাকে বাঁচাও। অসহায় আমি তাও বলতে পারিনি’। বিএনপির এই অসহায়ত্ব কেবল তাদের একার ছিল না। চাই বা না চাই, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রেরই অসহায়ত্ব হিসেবেই দাঁড়িয়ে গেছে।

জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া উড়ু উড়ু করছে। তার আগে শুরু হয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আলোচনা। বাংলাদেশের ইতিহাস দেখায়, দেশের নেতারা আলোচনার টেবিলে কোনো কিছুর মীমাংসা করার মতো মানুষ নন। শুধু কথায় কখনো চিড়া ভেজেনি। ১৯৭১ সালে হয়নি, ’৮৬-৮৭-তে হয়নি, ’৯০-এ হয়নি, ’৯৬-এ হয়নি, ২০০১-এ হয়নি, ২০০৬ সালেও হয়নি। ২০১৪ ও ’১৮ সাল তো সেদিনের কথা। কত রক্ত তবু বৃথা গেছে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি কখনো অর্জন করতে পারেনি। করতে দেওয়া হয়নি আসলে। নির্বাচন কমিশন নামে স্বাধীন হলেও কাজ করেছে মোসাহেবের মতো। রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসন শুধু নয়, নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ক্ষমতার চাপে-তাপে বাঁকিয়ে ফেলা হয়েছে। যখন কিছু করার নেই, তখন উপভোগ করার করুণ নীতি নিয়েছি আমরা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ চালানোর যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে নির্বাচন দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের পর রাতারাতি শান্তির সুবাতাস আর সমৃদ্ধির নহর বইবে না। তবে দমবন্ধ অবস্থা থেকে বেরোনোর পথটা খুলবে।

নির্বাচন দরকার রাজনীতির মাঠ থেকে অপরাধীদের সরানোর জন্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে দুর্বৃত্ত ও তাদের ক্রিমিনাল আচরণকে চাপে ফেলার জন্যও। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যিনি নির্বাচিত হন, ভোটারের দুর্ভিক্ষে যিনি ফাঁকতালে জিতে যান, ভোটের আগের রাতে যাঁরা দাঁও মারেন, তাঁদের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া মানুষ তুলনামূলক বেশি জবাবদিহি করেন, বেশি গণতান্ত্রিক হন। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধমনিটা সংকুচিত হয়ে আছে। তাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

পথ আরেকটা ছিল, সেটা হলো গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান। উনসত্তরের মতো ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া সত্তরের নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে পারত না। নব্বইয়ের নগরকেন্দ্রিক গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া একানব্বইয়ের নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারত না। গণ-অভ্যুত্থান হলো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দাপট দিয়ে দেশ চালানোর বিরুদ্ধে জনগণের পাল্টা দাপট প্রতিষ্ঠা করা। সেই রক্তক্ষয়ী পথ এড়ানোর জন্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনাকারী সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

বাস্তবতা হলো রাজনীতির ময়দানে এখন জনগণ নেই। গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করার তাকত বিএনপির পক্ষে শিগগির অর্জন করার অবস্থা নেই। কেবল জোরজুলুমেই তারা কমজোরি হয়নি, নিজেদের ভুলও রয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে জনগণের দাবি নিয়ে মাঠে থাকার কোনো পথই তারা বের করতে পারেনি। দেশি-বিদেশি পরিস্থিতিও তাদের অনুকূলে নয়।

তাহলে রইল তৃতীয় একটা পথ। সেটা হলো এলিট সেটেলমেন্ট বা অভিজাত বন্দোবস্ত। সেটা কী রকম? আমরা মাৎস্যন্যায়ের কথা জানি। অষ্টম শতকে বাংলার অভিজাত সমাজ বিরাট এক কাজ করেছিল। তার আগের শতবর্ষজুড়ে এই দেশে চলছিল চরম অরাজকতা। মানীর মান থাকত না, গরিবের আহার জুটত না, বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে গ্রাস করে, তেমন মাৎস্যন্যায়ে মানুষ হাঁসফাঁস করছিল। সে রকম অবস্থায় অভিজাত সমাজের নেতারা একসঙ্গে বসে তাঁদের একজনকে নেতা নির্বাচিত করেন। সেকালের পদবি অনুযায়ী গোপাল হলেন রাজা। তিনি ৭৫০ থেকে ৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। গোপাল বাংলার শতবর্ষব্যাপী চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করেন। তাঁর নামের অংশ ‘পাল’, অর্থ যিনি পালন করেন, রক্ষা করেন। বাংলার গণতান্ত্রিক রেওয়াজের সেটাই আরম্ভ। সে সময়ের অভিজাত মানুষেরা এই বন্দোবস্তের পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের এলিট অংশ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের উপায় বের করার যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটাও একধরনের এলিট সেটেলমেন্ট। আরেক অর্থে এটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। আমাদের নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখাও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিল। তাতে শুধু অবাধ নির্বাচনের কথা ছিল না, নাগরিকদের জান-জবান ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবিও ছিল। এই রাজনৈতিক বা নাগরিক বা এলিট বন্দোবস্ত সহিংসতার সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনবে, রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যে কারও একচেটিয়া ক্ষমতাকে প্রশমিত করবে। চোখের বদলে চোখ নিতে নিতে একসময় সবাই অন্ধ হয়ে যাওয়ার সর্বনাশা ঝোঁকের লাগাম টেনে ধরবে।

এই রাজনৈতিক বন্দোবস্তে মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে রাজনীতিকদেরই। প্রতিহিংসার শিকার তো তাঁরাই হন বেশি। ক্ষমতার পালাবদলের সময় যে হানাহানি হয়, তা ঠেকাতে আগেভাগেই এই বন্দোবস্তে সবার একমত হওয়া জরুরি। একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার এ রকম বন্দোবস্তের মাধ্যমেই সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক সরকারে পরিণত হতে পারে। যেকোনো দলই দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকলে অহংকারী হয়ে পড়ে, তার ভেতরে সমাজের অপশক্তিগুলো বাসা বাঁধে। নিজেকে নবায়িত করার জন্যও নাগরিক মহল ও রাষ্ট্রের বিবিধ প্রাতিষ্ঠানিক খুঁটির সঙ্গে মিলে এ রকম এক বন্দোবস্তে আসা তার প্রয়োজন। না হলে ‘হয় আমি থাকব, না হয় তুমি থাকবে’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেটা কারও জন্যই ভালো হওয়ার কথা নয়।

মোদ্দাকথা, রাজনীতিকে শান্তিপূর্ণ এবং উদ্ধত ক্ষমতাকে সভ্য করতে হলে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া আর কোনো শান্তিপূর্ণ পথ নেই। এই বন্দোবস্ত মানলেই যে রাজনৈতিক বিরোধের অবসান হবে, দলমত সব গুলিয়ে ছাতুর মণ্ড হবে, তা নয়। কিন্তু তাঁরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংবিধানের মূলনীতির অধীনে চলতে দিতে এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার সাধারণ নিয়ম বিষয়ে একমত হবেন। আজ হোক কাল হোক, এটাই ভবিতব্য।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:৩০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×