somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অপূর্ব আহমেদ জুয়েল
আমি অতি সাধারন একটা মানুষ …………পৃথীবির প্রতিটি মানুষের কিছু আশা-আকাঙ্কা থাকে, থাকে সীমাহিন স্বপ্ন। যেখানে সে তার জীবনকে সাজায় একিবারে নিজের মত করে। আমারো তেমন একান্ত কিছু স্বপ্ন আছে, যা আমাকে ভালো কিছু করার প্রেরনা যোগায়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ও বাংলাদেশ লুট হয়ে যাওয়ার ইতিহাস

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নাকি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ধরে রাখার জন্য আবার মাঠে নেমেছে এবং বলছে এই ‘চেতনা’ হুমকির মুখে এবং এটি ধরে রাখার জন্য আবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। (আওয়ামী লীগের ভোট দরকার আছে কেন বুঝলাম না!)
বাংলাদেশে গত এক দশকে জনগণের লুণ্ঠিত অধিকার ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কোন ভূমিকা নাই। তারা বালিতে মুখ গুঁজে ছিলো। এবং আড়ালে-আবডালে স্বৈরতন্ত্রের সহায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে এখন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট স্বৈরতন্ত্রের সহযোগী হিসেবে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ায় আদতে ভালোই হয়েছে। লজ্জা ভেঙেছে। এই ব্লগে অনেকই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাথে আছেন (উপর মহলেও আছেন)। তারা যদি নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরাও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র যুদ্ধে শামিল হতে পারি কিনা বিবেচনা করে দেখবো:

১) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসে। ১৫০টিরও বেশি আসনে আওয়ামী লীগ কোন ভোট হতে দেয়নি। প্রধান বিরোধীরা আসে নাই সত্য, কিন্তু বাকী যারা প্রার্থী ছিলো তাদেরকে বন্দুকের নলের মুখে রাতের অন্ধকারে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করিয়ে বিনা ভোটে ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছিলো। এই কলংক নিয়ে তারা ৫ বছর দেশ চালায়। কিন্তু ২০১৮ সালে তারা যা করে সেটি আরও বিষ্ময়কর! তারা ভোটের আগের রাতেই ভোট প্রায় সম্পন্ন করে ফেলে। বাংলাদেশে ভোট নিয়ে ইতোপূর্বে নানা কেলেংকারি হয়েছে সত্য। কিন্তু ভোটের নামে বিনা ভোটে কোন সরকার বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীর কোন দেশে ক্ষমতায় আসে নাই। এবং ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরার রেকর্ডও বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোথাও নাই (কয়েকদিন আগে জাপানের রাষ্ট্রদূত এ কথাটিই বলেছেন)। সুতরাং ভোটের নামে বিনা ভোটে এবং রাতের অন্ধকারে ভোট নিয়ে সরকার চালানো মানব ইতিহাসে এই প্রথম। শেখ হাসিনা সেই রেকর্ড তৈরির গর্বিত মালিক। আরও বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এভাবে ক্ষমতায় থেকেও সকাল-বিকাল “ভোট চোরদের কেউ বিশ্বাস করে না” বলার বেহায়াপনার দিক থেকেও শেখ হাসিনা অদ্বিতীয়! জনগণের সাথে মস্করা করার কোন নোবেল পুরস্কার থাকলে সেটি শেখ হাসিনাকে দেওয়া যেতে পারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে বলতে হবে বিনা ভোট ও রাতে ভোট করার এই গর্বিত অর্জনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিনা।

২) গত ১২ বছরে প্রায় ৬০০-এর বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। বহু পরিবার তাদের প্রিয়জনের লাশটাও এখনও পায় নাই। গুম এতই জঘন্য একটি অপরাধ যে জাতিসংঘ এটিকে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের গত ৭০ বছরের ইতিহাসে পদ্ধতিগত গুমকে (সিস্টেমেটিক এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স-এর আর কোন সঠিক বাংলা পাইনি) প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার গর্বিত কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার আগে গত ৭০ বছরের বাংলাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু মানুষ গুম হয়েছে, কিন্তু সরকারি রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নাগরিকদের রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাওয়া ও গুম করে ফেলার ইতিহাস শেখ হাসিনা তৈরি করেছেন। লিখে রাখেন, “আয়নাঘর” (গুম করা ব্যক্তিদের লুকিয়ে রাখার স্থান) নিয়ে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বহু নাটক-উপন্যাস, গান-কবিতা রচিত হবে। শেখ হাসিনা গুমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। বাংলাদেশে আর কোন সময়ে দেশের সাধারণ মানুষ গুমের ভয়ে, প্রিয়জনের লাশটাও পাবে না, এই ভয়ে এতটা ত্রটস্থ ছিলো না। বাংলাদেশে আর কখনো মায়েরা তাদের সন্তানদের কেবল লাশ পাওয়ার জন্য এতটা হাহাকার করে নাই। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে উত্তর দিতে হবে দেশের জনগণকে পদ্ধতিগতভাবে গুম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিনা।

৩) গত ১২ বছরে ২০০০-এর বেশি মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিনা বিচারে হত্যা করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিনা

৪) গত ১২ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ঘাম-মিশ্রিত পরিশ্রমে অর্জিত ও ব্যাংকে সঞ্চিত কয়েক লক্ষ কোটি টাকা এবং বিদ্যুত খাত থেকে জনগণের আরও কয়েক লক্ষ কোটি টাকা হরিলুট করা হয়েছে। এই পুরো লুটের নেতৃত্বে ছিলো আওয়ামী লীগের সামনের অথবা পর্দার আড়ালের নেতা, পৃষ্ঠপোষক, পোষ্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। বাংলাদেশের জনগণের এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করে আওয়ামী লীগের পোষ্য ব্যবসায়ী সামিট গ্রুপ (আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খানের ভাইয়ের কোম্পানী) ও এস আলম গ্রুপ (শেখ পরিবারের বিশেষ পছন্দনীয় লুটপাট এন্ড কোং, যাদের হাতে শেখ হাসিনা ইসলামী ব্যাংকসহ প্রায় আধা ডজন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তুলে দিয়েছেন) এখন সিংগাপুরে শীর্ষ ধনীদের কাতারে। জনশ্রুতি আছে এই লুটপাটের ভাগ একেবারে উপরের মহলে, আপাদ্বয়ের কাছেও গিয়েছে। সত্যমিথ্যা সময় বলে দেবে। তবে শীর্ষ মহলের যোগসাজশ ছাড়া এত বড় লুটপাট করেও বীরদর্পে, বুক ফুলিয়ে চলা অসম্ভব। সময় বদলালে অবশ্যই সবকিছু জানা যাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের এত বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট বৃটিশ কলোনিয়াল লুটেরাদের পর আর কেউ করেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে বলতে হবে জনগণের এই বিপুল সম্পদ লুটপাটও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ কিনা।

আপাতত এই কয়েকটি উত্তর যদি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বন্ধুমহল দেন, এবং লুকোচুরি না করে বলেন যে হ্যাঁ এগুলোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ তাদের এই ‘চেতনা’র কারবারে অংশী হবো কিনা বিবেচনা করে দেখতে পারে। জনগণ ’ইনফর্মড ডিসিশন’ নেওয়ার খাতিরে কুদ্দুস-ফেরদৌসী-রামেন্দু গং বা তাদের সহযোগীরা এই উত্তরগুলো দিয়ে যাবেন দয়া করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×