সম্প্রতি নারীর সাথে করমর্দন নিয়ে বেশ আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে একটি মজার ঘটনা মনে পড়ল, যা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর জীবনের সঙ্গে জড়িত। ঘটনাটি তুলে ধরেছেন তাঁর চিফ প্রটোকল অফিসার আরশাদ সামি খান, যিনি গায়ক আদনান সামির পিতা এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন। তাঁর লেখা Three Presidents & an Aid বইতেই এই ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়।
করমর্দন না করার নিয়ম
বেনজির ভুট্টো প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সামিকে ডেকে বলেছিলেন—
❝আমি পুরুষদের সঙ্গে হাত মেলাই না। তাই আমার এই বিষয়টা সবাইকে স্পষ্ট করে বলে দাও। আমি কারো প্রসারিত হাত ফিরিয়ে দিতে চাই না। সেটা অভদ্রতা হবে।❞
অতএব, সামির ওপর দায়িত্ব পড়ল—যেখানেই যাওয়া হোক, সবাইকে আগেভাগেই জানাতে হবে যে প্রধানমন্ত্রী করমর্দন করেন না।
আরাফাতের সফর
কিছুদিন পর পাকিস্তানে আসেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত। ভুট্টো পরিবার ও আরাফাতের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক। তাই বেনজিরও তাঁকে বিশেষ সম্মান করতেন।
সামি যথারীতি আরাফাতের প্রতিনিধি দলকে আগেই বলে দিয়েছিলেন—“প্রধানমন্ত্রী পুরুষদের সঙ্গে করমর্দন করেন না।”
যেদিন আরাফাত পাকিস্তানে পৌঁছালেন, করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজন করা হলো জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা। বিমান থেকে নামার আগেই বেনজির আবারও সামিকে মনে করিয়ে দিলেন—
❝ভুলে যেয়ো না, তাঁকে বলবে যেন আমার সঙ্গে হাত না মেলায়।❞
সামি বিমানে উঠে ভদ্রভাবে জানালেন—
❝Your Excellency, প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো নীচে অপেক্ষা করছেন। এবং মনে করিয়ে দিই, তিনি পুরুষদের সঙ্গে করমর্দন করেন না।❞
আরাফাত হেসে উত্তর দিলেন—
❝হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি। ধন্যবাদ আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।❞
করমর্দনের বিপাকে প্রধানমন্ত্রী
কিন্তু বিমান থেকে নামতেই আরাফাত ভিড়ের দিকে হাত নাড়লেন আর সরাসরি বেনজিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন! হতভম্ব বেনজির মুহূর্তের জন্য বিস্ময় আর রাগে সামির দিকে তাকালেন। কিন্তু এত মানুষের সামনে আর ক্যামেরার ঝলকানির মাঝে কিছু করার ছিল না—তাঁকেও হাত বাড়াতেই হলো।
মুহূর্তেই ক্যামেরাগুলো সচল হয়ে উঠল, ইতিহাসে বন্দি হয়ে গেল সেই করমর্দনের দৃশ্য।
রাগ ও রসিকতা
হাত মেলানোর পর গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে বেনজির ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছিলেন। সামিকে ভর্ৎসনা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। কিন্তু যেহেতু আরাফাত কাছেই হাঁটছিলেন, তাই সাবধানে নিচু স্বরে ভাঙা উর্দুতে সামিকে বললেন—
❝তুমি কি তাঁকে বলেনি যে আমি হাত মেলাই না?❞
কথাগুলো আরাফাতের কানে এড়াল না। আর তিনি উর্দুতেও অভ্যস্ত ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হেসে উঠে বললেন—
❝ম্যাডাম, ভাগ্যিস আমি আপনাকে চুমু খাইনি! আমাদের আরব রীতি অনুযায়ী আন্তরিকতা প্রকাশে আমি অভ্যর্থনাকারীদের দুই গালে দু’বার চুমু খাই।❞
হঠাৎ বলা এই কথায় তিনজনই হেসে উঠলেন। আরশাদ সামি অবশ্য নিশ্চিত করেছিলেন, করমর্দনের ছবি যেন টিভি কিংবা পত্রিকায় না ছাপা হয়।
ঘটনাটি নিছকই রসিকতা ও পরিস্থিতির বেখেয়ালি বাঁক। তাই যার ইচ্ছে তিনি হাত মেলান, যার ইচ্ছে না মেলান। তবে এ ঘটনাটি দেখায়—কূটনীতির মঞ্চে অনেক সময় নিয়মের দেয়াল ভেঙে মুহূর্তের হাসিই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় সমাধান।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


