somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরৎসংহার

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শরৎ নিয়ে লিখতে বসে ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। সেই ছোটোবেলা থেকে বইএ পড়ে এসেছি বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। ছয়টি ঋতু ছয়টি পাখির মতো এসে নানা সুরে ডাকাডাকি করে। আমাদের ঘুম পাড়ায় ঘুম ভাঙায়। ঋতুগুলোর দিকে তাকিয়ে আমরা গান গেয়ে বলে উঠি Ñ ‘মোরা পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি পাখির ডাকে জেগে।’
তবে আমাদের শৈশবে, গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্ত- ঋতুতে এদেশ যে নতুন নতুন রূপে সেজে উঠতো তার জন্য আসলে বই পড়বার দরকার হত না। প্রকৃতির নানা পরিবর্তন আর জনজীবনে তার প্রভাবের মধ্য দিয়ে ঋতুগুলো নানা রঙে, নানা ছন্দে আর ভঙ্গিমাতে স্পষ্ট হয়ে উঠতো। আমরা জানতাম, বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই ঋতু আছে চারটি। গ্রীষ্ম বর্ষা শীত ও বসন্ত। এই ঋতুগুলো নানা দিক দিয়ে প্রখর প্রবল। গ্রীষ্মের তাপ, বর্ষার বারিধারা, শীতের কামড় আর বসন্তের মনোরম আবহাওয়ায় ফুল ফসলের গরিমাÑ এসবের ভেতর দিয়ে ঋতুগুলো তাদের জয়পতাকা উড়িয়ে হৈচৈ করে আসে আবার ফিরে যায়।
তবে শুদ্ধ স্বরের মাঝখানে কোমল স্বরের মতো দুটি ঋতু শরৎ আর হেমন্তের রূপরসগন্ধ অনেক দেশেই অনুভব করা যায় না। বাংলায় এই দুটি ঋতুর কী অপরূপ শোভা আর ব্যঞ্জনা! আকাশমাটির বিস্তীর্ণ সীমান্তে, ফসলের মাঠে, বৃক্ষশাখায় পত্রপল্লবে, বাতাসের গানে, আলোকের রঙখেলায়, জীবনের গন্ধে Ñ সব কিছুর মধ্যে শরৎ আর হেমন্ত আলাদা হয়ে ওঠে। এ দুই ঋতু যেন ষড়ঋতুর স্বরলিপিতে একটি গাঢ় মীড়। গ্রীষ্মের তীব্র গম্ভীর নিনাদ থেকে স্বর আরও উচ্চে উঠে গিয়ে ঝমঝমিয়ে বাজতে থাকে বর্ষায়। তারপর একসময় বৃষ্টির ধারা আসে ক্ষীণ হয়ে, টাপুরটুপুর টুপটাপ শব্দের ভেতর দিয়ে আকাশে মেঘের তৈজসপত্র গুছিয়ে তোলা হয়ে যায়। একটা ভিজে ভিজে পরিষ্কার হাওয়া এসে সব কিছু ফটফটে করে তোলে। নীল নীল সাদা সাদা আলোর ভেতর দিয়ে কেমন ভাসতে ভাসতে আসে একটা শান্ত মধুর সুর। মাটির সাথে ছুঁয়ে ঘাসের সাথে মিশে নদীর ধারে একটু নেচে ফিক করে হেসে-ওঠা বাতাসের সাথে গলা মিলিয়ে সে সুর আবার আকাশের নীলে। এই নীল থাকতে থাকতে সূর্য রোজ রঙস্নান সেরে আলোটাকে রঙধনুর শেষ দুটি রঙতন্ত্রিতে মিলিয়ে বেঁধে নেয়। কমলা আর লাল। কেমন সোনা সোনা ঝলক। মাঠে ক্ষেতে নদীর পাড়ে উঠোনে। সোনায় মোড়ানো দেশ বলতে তখন মন ঝমঝম করে বেজে ওঠে। এই ঝমঝম কমলসোনা রঙ-করা সিঁড়িতে পা রেখে শরতের ঢাকের বাদ্যের সাথে নাচতে নাচতে হেমন্ত একটু করে মীড়ের চূড়ায়। ততক্ষণে গায়ে এসে লাগে হিমের শিহরন। সুর আবার চলে যায় তীব্রতায়। কুয়াশায় খেজুর পাতায় মটর খেতের ওষ-এ তার দাঁতকিড়মিড় গিটকিরি। এই করতে করতে বসন্তের রঙমাতালিয়া রোদ্দুর আর গন্ধমাতাল বাতাসের পাল্লায় পড়ে ঋতুর গানে তখন উত্তাল ছন্দ।
কিন্তু এখন আর যেন দেশে সেই ঋতুরঙ্গ নেই। জলবায়ু সংকটের কবলে পড়ে বিশ্বপরিবেশের আজ নাভীশ্বাস উঠছে। আবহাওয়ার আচরণে এসেছে পাগলামি। প্রকৃতির একরোখা গোঁয়ার্তুমি ভরা চালচলনকে এখন ঠিক মিষ্টি মিষ্টি ঋতু নামে ডাকা যায় কি না সেটাই ভাববার বিষয়। এখন বছরের আট নয়মাস থাকে গরমকাল। বৃষ্টি গেছে কমে। আবার বন্যা হলে পানি নামতে ভুলে যায়। যতটুকু শীত Ñ এসেই দুদ্দাড় করে উত্তরাঞ্চলে গিয়ে বসে পড়ে গ্যাট হয়ে। আর শহর থেকে তো গ্রীষ্মই নড়ে না। পরিবেশ দূষণ জলবায়ু সংকট এসব মোকাবেলা করেও এদেশে এখন যতটুকু ঋতুবৈচিত্র্য আছে তা আছে কিছুটা গ্রামাঞ্চলেই। শহর থেকে ঋতু উধাও।
শহরে গ্রীষ্ম ঋতু নেই আছে প্রচণ্ড গরম, ঘাম, হাঁসফাঁস, গাঁজিয়ে ওঠা ফলপাকুড়ের আবর্জনার বোঁটকা গন্ধ, নোংরা পরিবেশ, পানি বিদ্যুতের অভাব।
বর্ষা ঋতুর রোমান্টিকতার কথা চিন্তাও করা যায় না। কাদা প্যাচপ্যাচ রাস্তাগুলোয় প্রতিদিন পথ চলতে গিয়ে মনে হয় পদে পদে ক্ষয়ে যাচ্ছে আয়ু। রিকশায় নোংরা ভেজা পলিথিনের দুর্গন্ধের ভেতরে গুটিশুটি মেরে বসে ভাবতে হয় পকেটে যে টাকা আছে তা দিয়ে বাজারে গিয়ে দুটো সবজি আর কাঁচামরিচ কেনা যাবে তো?
আর শরৎ ঋতু? শহরে শরৎ? শরবন কাশবন ছাড়া শরতের রঙই তো ফুটবে না! শহরে বন কোথায়? তা-ও আবার কাশবন! টিভিতে ফেরদৌসী রহমানের ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের বাচ্চারা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে না বুঝেই গান করে Ñ ‘শরৎ এলো কাশের বনে নদীর কিনারায়/ সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে নীল আকাশের গায়।’ ওদের কাছে এ গানের মানে জানতে চাইলে ওরা বলবে আশ্বিন-কার্তিক মাস দুটো হলো শরৎ। আর কাশ কী? কাশের বন? সাদা মেঘ? ভেলা কী জিনিস? এসব শব্দের শানে নজুল জানতে চাইলে ওরা টালুমালু চোখে চেয়ে বলবে, আপা ওটা মনে হয় হবে ঘাস। ভুল করে কাশ লেখা হয়েছে!

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×