লাবণি ঘরে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। লাল হয়ে উঠেছে মুখ। লাবণি খুব ফর্সা। একটু বড় চটালো মুখ। আদিবাসীদের মতো কোমল আর কঠোরে মেশানো এক ধরনের লাবণ্য। রোদ্দুর আর পরিশ্রমে লাবণির চামড়া খুব সাড়া দেয়। লাল হয়ে ওঠে। আগুনের খাপরার মতো জ্বল জ্বল কেের। লাবণির চোখের মনি দুটোতেও আগুনের রঙ। একটু খয়েরি মেশানো লালচে। চুলও লালচে। বেশি ফর্সা মেয়েদের চুল যেন একটু লালই থাকে। আজকাল তো মেয়েরা বিউটি পারলারে গিয়ে চুলে কত রকম রঙ করে। লালচে, খয়েরি, বাদামি, সোনালি এমন কি সাদা রঙও করতে দেখা যায় বেশি ফ্যাশনেবল মেয়েদের। লাবণি কখনো চুলে রঙ করেনি। তবে নানারকম হেয়ারকাট-এ লাবণির শখ আছে। চিকন করে ভুরু প্লাক করে। এত ফর্সা চামড়া তার পরেও মুখে মধু কমলার খোসা দুধের সর কী কী বেটে মাঝে মাঝে প্যাক লাগায়। পারলারে ফেসিয়াল করে। এসব করে লাবণি নিজেকে আরও ঝকমকে ধারালো তরবারির মতো করে তোলে।
লাবণির স্বাস্থ্য ভালো। উচ্চতা সাধারণের মেয়েদের তুলনায় একটু বেশিই। আমার ‘পছন্দ আছে’ বলে যখন মাকে আমি প্রথম লাবণিকে দেখিয়েছিলাম, মা বিয়েতে আপত্তি করেননি, তবে বলেছিলেন, উচালাম্বায় মাইয়া তো দেওয়ের লাহান। বউ মানুষ হইবো পাতলাপুতলা ছোটখাটো।
মা কী যে বলেন। আজকাল বলে লম্বা মেয়ের জন্য সবাই পাগল! আর লম্বা হোক খাটো হোক সেটা তো আর কেউ নিজে বানায় না। আল্লাহরই সৃষ্টি। এ কথার পর মায়ের আর কিছু বলার থাকে না।
লাবণি কালারফুল সালোয়ার কামিজ পরতে ভালোবাসে। তবে মাঝেমধ্যে শাড়িও পরে। বিশেষ করে বেড়াতে টেড়াতে গেলে। চওড়া পাড়ওয়ালা শাড়ি পছন্দ ওর। বিমানবালাদের মতো নিপুণ পাট করে শাড়ি পরে লাবণি। বুকের ওপর দিয়ে পাহাড়ি ঢঙে পাড়টা ডানেবাঁয়ে সোজা টেনে বিছিয়ে দেয়। তারপর ছয় ইঞ্চি চওড়া করে কুচানো ভাঁজ করা আঁচল কাঁধের ওপর পিন দিয়ে আটকে দেয়। এই স্টাইলে শাড়ি পরলে মেয়েদের দুই বুকের মাঝখানের ক্লিভেজে একটা দুর্দান্ত খাঁজ ঢেউ তুলতে থাকে। লাবণির স্তনও খুব ধারালো। একেবারে আফ্রিকান আদিবাসী রমণীদের মতো পাথুরে। ও জানে শাড়ির পাড়ের এই ঢেউ তোলা স্রোত ওর বক্ষ সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তুলবে। কাজেই যেদিন লাবণি শাড়ি পরে সেজেগুজে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হয় সেদিন ওর দিকে তাকিয়ে আমি আর চোখ ফেরাতে পারি না। স্বামী হিসেবে লাবণির এই উদ্ভিন্ন যৌবন আমার ভালো লাগবারই কথা। আর তাকে আরও একটু উদ্ভিন্ন করে তুলতে লাবণির সুচারু সাজগোজেও আমার আপত্তি নেই। বরঞ্চ আমি লাবণির সাজগোজ করা দেখতে পছন্দই করি। পাট পাট করে শাড়ি পরা শেষ হলে বহুদিন আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছি। লাবণি ছদ্ম কোপে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে আমি কপট ভয়ে পেছন ফিরে ওর পীনোন্নত বক্ষচূড়া আমার পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়েছে কি না তা দেখার ভান করে রসিকরাজ গোপাল ভাঁড়ের আদিরসাত্মক গল্পের দৃশ্যায়ন ঘটিয়েছি। তাতে লাবণির ফর্সা মুখের রক্তাভ চামড়ার নিচে রাশি রাশি রক্তগোলাপ ফুটে উঠেছে। চোখমুখ দারুণ সোহাগী ভঙ্গিমায় কুঁচকে ওর প্রিয় বকা দিয়ে বলে উঠেছে Ñ বদমাইশ!
এখনও লাবণির গায়ে একটা লিনেনের জংলি ফুলের ছাপ তোলা লম্বা কামিজ। মনে হয় মার্কেট থেকে ও হেঁটেই এসেছে। গেস্ট হাউসের কাছাকাছিই একটা সুপার মার্কেট আছে। দশ মিনিটের হাঁটা পথ। লাবণি ওড়নার প্রান্ত তুলে ঘামে ভেজা মুখ মোছে। একটা প্লাস্টিকের বালতি কিনে এনেছে। টেবিলের ওপর বালতিটা নামিয়ে তার ভেতর থেকে জাদুকরের মতো বের করতে থাকে কাচের থালা বাটি গেলাস চামুচ মগ জগ ইত্যাদি। আমি অবাক হয়ে বলি, এসব কী? এগুলো দিয়ে কী হবে? এখানে কি তুমি সংসার পাতবে না কি?
লাবণির মুখে একটা ছায়া ঘনায়। ক্লান্তি জড়ানো নিঃশ্বাসগুলো হালকা পাখায় ছায়ার ভেতরে ফড়িঙের মতো উড়তে থাকে ওর চারপাশে। মুহূর্ত পরেই ছায়া সরে যায়। মেঘলা রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়ে। হাসে লাবণি।
ছোট দশ ফিট বাই দশ ফিট রুমের ভেতরে একমাত্র ক্লজেটটির খোলা তাকে তৈজসগুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে বলে Ñ হোজ্জার গল্পটা জানো না?
কোন গল্প?
(চলবে....)