somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারার আলোয় একজন হিমু (বাকি অংশ)

৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চা খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পকেটে টাকা নেই । ঘড়ি দিয়ে ইচ্ছে করলে খাওয়া যায় তবে সেটাও করতে ইচ্ছে করছে না,হাজার হোক গিফটের জিনিস । আমার কিছু বন্ধু আছে যাদের ঘাড়ের উপর চড়ে দিব্যি সিগারেট,চা,সিঙ্গারা ইত্যাদি খাওয়া যায় তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমি যখন টাকার সমস্যায় পড়ি তখন কি করে যেন এরা টের পেয়ে যায় এবং আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে । আজো তাদের কাউকে পাওয়া গেল না । আমি চায়ের চিন্তা বাদ দিয়ে মিসির আলী সাহেবের বাসার দিকে রওনা দিলাম । একমাত্র তিনিই পারেন আমাকে বিনামুল্যে খাটি চা খাওয়াতে । এতেও বিরাট সমস্যা আছে,খাটি চা আমি একদম সহ্য করতে পারি না,আমার দরকার খাটি ভেজাল চা ।

“ অভাগা যেদিকে চায়,সাগর শুকিয়ে যায় ” এসব ফালতু কথা আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না । কিন্তু মিসির আলী সাহেবের বাসায় এসে প্রবাদটার প্রতি আমার তীব্র শ্রদ্ধা হতে লাগল,যখন শুনলাম আমি আসার ১৫ মিনিট আগে তিনি কক্সবাজ়ারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন । জিজ্ঞেস করে জানা গেল দু-একদিনের মধ্যে ফেরার সম্ভাবনাও নাকি নেই । তবে যিনি এসব তথ্য আমাকে দিলেন,তিনি যে খুব ঠান্ডা গলায় গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারেন তা স্বীকার না করে পারা গেল না ।

আমি গিয়ে তার কাছে প্রথমে জানতে চাইলাম,আপনি মিসির আলী সাহেবকে চেনেন ?
তিনি বললেন,কোন মিসির আলী যেন,ওই যে পানের দোকানদার ?
আমি বললাম,জ্বী জ্বী সেই মিসির আলীই,তবে পানের ব্যাপারটা আমার জানা নেই । তিনি পানও বিক্রি করেন নাকি ?
তিনি আমার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালেন এবং বললেন,মিসির আলী সাহেবকে আপনার কি দরকার ?
আমি বললাম,এককাপ চা খাবো তো তাই তাকে দরকার ছিল । বলুন তো এখন চা খাই কোথা থেকে ?
তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন,তিনি নেই বলে চা খেতে পারছেন না ?
আমি বললাম,ঠিক ধরেছেন । তা তিনি কোথার গেছেন বলতে পারবেন ?
তিনি বললেন,মিসির আলী সাহেব তেতুলিয়া গেছেন মাসখানিকের জন্য ।
আমি বললাম,সমুদ্র দেখতে গেছেন নিশ্চয় ?
তিনি বললেন,ঠিক ধরেছেন ।
আমি বললাম,টেকনাফ তো এখন কেউ যাবেই না যেহেতু তেতুলিয়াতেই এতো সুন্দর সমুদ্র তৈরী করা হয়েছে । আমিও যাবো ভাবছি । তা তেতুলিয়ায় যে সমুদ্রটা হয়েছে তার নাম কি ? উত্তরপোসাগর নিশ্চয় ?
তিনি এবার থতমত খেয়ে গিয়ে বললেন,স্যরি ভাই,তিনি মনে হয় তাহলে টেকনাফই গেছেন ।
আমি বললাম,ও তাই বলুন,তার মানে তিনি ওই পুরোনো সমুদ্রটাই দেখতে গেছেন ? আচ্ছা,আমি তাহলে যাই । আজকে রাতে তিনি যখন বাসায় ফিরে আসবেন তখন আমার কথা তাকে বলবেন ।
আমার কথা শুনে তিনি হা হয়ে গেলেন । বিস্ময়ে হা হয়ে যাওয়া মানুষদের দেখতে ভালো লাগে । আমি তাকে আরোও বিভ্রান্ত করার জন্য একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে এলাম ।


ইদানিং রাস্তায় হেটে তেমন একটা মজা পাচ্ছি না । কেন জানি কাউকে পাশে নিয়ে হাটতে ইচ্ছে করে । তবে আজকে মজাই লাগছে । মানুষের ব্যাপারটা বেশ মজার । মানুষ নাকি একা থাকতে পারে না অথচ প্রতিটা মানুষই একা । অবশ্য প্রকৃতির রুপ একাই অনুভব করতে হয় যদিও অধিকাংশ মানুষের কাছে ব্যাপারটা অজানা । আমার এখন জোছনা দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এত সকালে সেটাও সম্ভব নয় । আমি আবারও হাটা শুরু করলাম । আকাশ হঠাৎ করেই কালো হয়ে এল । আমি দ্রুত জহিরুদ্দিনের বাসার দিকে পা বাড়ালাম । কারণ তার বাড়িতে বসে আরাম করে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শোনা যাবে,সাথে চানাচুর-টানাচুর জাতীয় কিছুও পাওয়া যেতে পারে । টাকার অভাবে জহিরুদ্দিন আজও টিনের চালার ঐতিহ্যটা ধরে রেখেছে এবং বৃষ্টির দিনে বাড়ির চালে বৃষ্টির করুন শব্দ উপভোগ করতে পারছে । আমি তার বাসায় পৌছানোর ঠিক তিন মিনিট পর বৃষ্টি শুরু হল । যে বৃষ্টি নেমেছে একে কুকুর-বিড়াল বৃষ্টি বলাও ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না,আমার ধারণা এর নাম হওয়া উচিৎ বাঘ-মহিষ বৃষ্টি । কারণ,বাঘের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য মহিষ যেভাবে শেষ লড়াইটা করে ঠিক তেমনি করে এখন খেটে খাওয়া মানুষগুলো লড়াই করছে বৃষ্টির সাথে । তবে, এ যুদ্ধে সবসময় মানুষেরই জয় হয় । আমার ধারণা যুদ্ধটা যদি খেটে খাওয়া মানুষের বদলে ধনী আর খুব জ্ঞানী মানুষেরা করতো তাহলে মানুষের পরাজয় নিশ্চিত ছিল ।
আমাকে দেখে জহিরুদ্দিন খুব খুশি হল । আমি বললাম,কি খবর তোমার,রিকশা নিয়ে আজ বের হও নি ?
জহিরুদ্দিন আনন্দে কুটিকুটি হয়ে বলল,কি যে কন না হিমুভাই ! এত দিন পর আসছেন গরীবের বাসায়,আর আমি আপনারে রাইখা যামু রিকশা চালাইতে ?
আমি বললাম,রিকশা না চালালে তোমার দিন চলবে কিভাবে ?
জহিরুদ্দিনের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না । আমি বললাম,কি ব্যাপার কথা বলছ না যে ?
জহিরুদ্দিন বলল,হিমুভাই দিন তো আমার কোনো দিনই চলে নাই,জোর কইরা চালাইছি সবসময় । আজও সেইভাবেই চালামু ।
আমি বললাম,সেটা কেমন ?
জহিরুদ্দিন বলল,যেদিন রিকশা চালাই না সেই দিন পয়সাও জোটে না । আর পয়সা না জুটলে খাবারও জুটে না । কিন্তু হিমুভাই দিন তো থাইমা থাকে না । পরের দিন আবার রিকশা চালাই,পয়সা রোজগার করি তারপর খাবার কিনে খাই । তবে হিমুভাই আজ আমি খুবই লজ্জার মধ্যে পরে গেলাম । ঘরে একটা পয়সাও নাই অথচ আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষটা আমার পাশে বইসা আছে । ইশ,হিমুভাই কি যে খারাপ লাগছে ।
আমি বললাম,খারাপ লাগার কিছু নেই । ঘরে মুড়ি-টুরি জাতীয় কিছু আছে ? না থাকলে এই ঘড়িটা বন্ধক রেখে কিছু মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে আস,মরিচ দিয়ে ঝাল করে খাবো ।
জহিরুদ্দিন কিছুক্ষণ ইতস্তত করে ঘড়িটা নিয়ে বের হয়ে গেল । আমি বৃষ্টির গান শুনতে লাগলাম । আজ বৃষ্টি থেমে থেমে পড়ছে,তাই শব্দটাও অন্য রকম হচ্ছে,ঠিক যেন কোনো অভিমানী মেয়ের কান্না । কান্নার সাথে বৃষ্টির অনেক মিল আছে । পরে একদিন ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে । কিছুক্ষন পরে হঠাৎ করেই জহিরুদ্দিন হুড়মুড় করে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকল ।
আমি বললাম,কি ব্যাপার ?
হিমুভাই,আমি কিছুদুর যেতে যেতে না যেতেই কিছু ছিনতাইকারী এসে আপনার ঘড়িটা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়া গেল । আমি বাধা দেয়ার আগেই ওরা আমাকে মারধোর শুরু করলো । হিমুভাই আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন ?
আমি কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে বললাম,তোমার গল্পটা বিশ্বাসযোগ্য তবে এখন যে দুজনেরই না খেয়ে থাকতে হবে সেটাও কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য । ঘড়ি থাকার সুবিধা কত সেটা এখন বুঝতে পারছ তো ?
জহিরুদ্দিন অপরাধীর ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে রইল ।
আমি বললাম,কান্নাকাটি বন্ধ করে ঘরে দেখ খাওয়ার কি আছে ।

অনেক খোজাখুজি করে তিনদিন আগের কেনা পাথরের মত শক্ত হয়ে যাওয়া পাউরুটি পাওয়া গেল । আমি নতুন উদ্যোমে খুজতে লাগলাম এবং কিছুক্ষন পরেই খাটের নিচ থেকে টক হয়ে যাওয়া একটা ঝোলের পাতিল বের করে আনলাম । ঝোলটা মনে হচ্ছে দশদিন আগের । জহিরুদ্দিনকে বললাম বাসন দিতে ।

খেতে খুব একটা খারাপ লাগছে না । হালকা গন্ধ আসছে তবে সেটা চায়নিজের গন্ধের চেয়ে খুব বেশী একটা খারাপ না । আমি খুব উৎসাহের সঙ্গে খাচ্ছি । খাওয়া শেষ করে দেখলাম বৃষ্টিও থেমে গেছে । জহিরুদ্দিনকে কিছু না বলেই আমি আমার গন্তব্যে হাটা দিলাম ।

তিন

ইদানিং খুব মন খারাপ হচ্ছে কিন্তু কেন হচ্ছে সেই কারণটা আমার কাছে স্পষ্ট নয় । আচ্ছা,শুভ্রের মত কেউ কি আমাকে স্বপ্নে ডাকছে ? না,মনে হয় । তাহলে,কারণটা কি ? কিছু তো একটা অবশ্যই । কোনো ব্যাপারকে ভুলে যাবার চেষ্টা করলেই ব্যাখ্যাটা ক্লিয়ার হয়ে যায় । তাই আমি মন খারাপের ব্যাপারটা ভুলে যাবার চেষ্টা করলাম । এখন আমি শুভ্রের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি । আচ্ছা,প্রশ্ন আকারে ভাবা যাক ।

প্রশ্নঃ শুভ্রকে যে ডাকছে সে কি ছেলে না মেয়ে ?
উত্তরঃ অবশ্যই মেয়ে কারণ শুভ্র তো সেটা বলেই দিয়েছে ।
প্রশ্নঃ মেয়েটা কি বাস্তবে আছে ?
উত্তরঃ চান্স ফিফটি ফিফটি ।
প্রশ্নঃ বাস্তবে থাকলে সে কোথায় আছে ?
উত্তরঃ পৃথিবীতেই আছে ।
প্রশ্নঃ পৃথিবীর কোথায় আছে ?
উত্তরঃ কোনো এক জায়গায় আছে,পৃথিবীতে তো থাকার জায়গার অভাব নেই ।
প্রশ্নঃ সে বাস্তবে না এসে স্বপ্নে কেন আসছে ?
উত্তরঃ সেটা তাকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে ।
প্রশ্নঃ সে কি শুভ্রকে বিয়ে করতে চায় ?
উত্তরঃ সেটা আমি কি করে জানবো ? ব্যাপারটা যেহেতু শুভ্রকে নিয়ে তাই শুভ্রেরই জানার কথা তবে, মেয়েটাও বলতে পারবে ।

সিন্ধান্তঃ মেয়েটা হয়তো পৃথিবীতেই আছে কিংবা নেই । ওর সাথে শুভ্রের দেখা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে । মেয়েটা হয়তো শুভ্রকে বিয়ে করতে চায় কিংবা চায় না ।

নিজের বিশ্লেষনের ক্ষমতা দেখে নিজেই মুগ্ধ হলাম । এখন আর শুভ্রকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না । কি করা যায় ভাবছি । রাস্তায় হাটা যায় ইচ্ছে করলে । আমি রাস্তায় বের হয়ে এলাম । আজ আকাশে চাঁদ নেই । পথ চলতে বিরাট সমস্যা হওয়ার কথা কিন্তু তা হচ্ছে না কারণ রাস্তার মোড়ে মোড়ে ল্যাম্বপোষ্টে লাইট জ্বলছে । সেই আলো এসে পড়ছে চারিধারের গাছগুলোর উপর । গাছগুলোকে কেমন যেন ভৌতিক মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে এরা কিছু বলতে চাচ্ছে । আমি দাঁড়িয়ে এদের কথা বুঝতে চেষ্টা করলাম । মানুষ বলেই হয়তো কিছুই বুঝতে পারলাম না । আমার ধারণা গাছের কথা মানুষ না বুঝলেও,গাছ ঠিকই মানুষের কথা বুঝবে । তাই আমি একটা গাছকে জিজ্ঞেস করলাম,তোর নাম কি ? গাছটা চুপ করে রইল কিংবা হয়তো নামটা বলল কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না । গাছদের বিদায় জানিয়ে সামনে হেটে গেলাম । আমার পাশ কেটে কিছু মেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল । সম্ভবত বেশ্যাবৃত্তি এদের পেশা । এই হাসিটা কি বাস্তব নাকি কষ্টটাকেই এরা জোর করে হাসিতে রুপ দিয়েছে ? জানা সম্ভব নয় । এ পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে যা জানা সম্ভব নয় । বেশ্যা মেয়েগুলো নিজেরাও জানে না যে,তাদের এই হাসি কি বাস্তব নাকি নিছক ভ্রান্তি । আচ্ছা,শুভ্রকে যে মেয়ে ডাকছে সে এদের কেউ না তো ? আমি দৌড়ে গেলাম মেয়েগুলোকে খুজে বের করতে কিন্তু অনেকদুর হেটে গিয়েও কাউকে পেলাম না । কিছু জিনিসকে সময়মত না ধরতে পারলে পরে হাজার চেষ্টা করলেও ধরা যায় না,এরাও মনে হয় সে রকম । সামনে একটা মাঠ পাওয়া গেল । আমি মাঠে গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লাম । আকাশের তারা দেখছি । তারাগুলো মিটমিট করছে । মাথায় কেউ যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । কিছুটা শীত লাগছে । একটা কাথা জাতীয় কিছু পেলে বেশ ভালো হত । চোখের পাতা কাঁপছে ।
মনের ভেতর কে যেন সম্মোহনী কন্ঠে কবিতা আবৃতি করছে ।

Birds are tweeting,
Stars are twinkling,
Night is glittering,
And a lonely man is sleeping.

নিজের অজান্তেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এল । আমি অন্য এক জগতে পা রাখলাম । সেই জগতের নাম ঘুমের জগৎ কিংবা মৃত্যুর জগৎ । দুটো একই জিনিস । ঘুম মানে অন্ধকার আবার মৃত্যু মানেও অন্ধকার । প্রতিদিনই আমরা ঘুমের মাধ্যমে মৃত্যুর জগতের সাথে পরিচিত হচ্ছি । অথচ,ঘুমকে আমরা ভয় পাই না কিন্তু মৃত্যুকে পাই । কারণ কি ? কারণ একটাই । ঘুম থেকে আমরা এক সময় জেগে উঠি কিন্ত মৃত্যুর ঘুম থেকে জেগে উঠা সম্ভব নয় কোনোদিন ।

ঘুম ভেঙ্গে দেখি নিজের বিছানায় শুয়ে আছি আর আমার চারপাশে কিছু উৎসুক মুখ । সব ঘটনা মনে করতে আমার দুই মিনিট সময় লাগলো ।

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,কি ব্যাপার ? এখনও বেচে আছি নাকি ? এটা কি জাহান্নাম ? পৃথিবীতে কাজ যা করেছি সেই অনুযায়ী এখানে জাহান্নামই পাবার কথা । কিন্তু আপনারা জাহান্নামে কেন ? তার মানে আপনারাও সমান পাপী । ভালোই হল চেনা মানুষ পাওয়া গেল । তা ম্যানেজার সাহেব পৃথিবীতে কুকাজ তো মনে হয় কম করেন নি,না হলে আপনি এখানে কেন ?
আমার কথা শুলে সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করলো ।
আমি হাফ ছেড়ে বললাম,আহহ বেঁচেই আছি মনে হয়,উফফ বাঁচা গেল ।
ম্যানেজার সাহেব বললেন,হিমু সাহেব সব খুলে বলেন ।
আমি বললাম,কি আর বলব,ভূতের সাথে দারুন ফাইট হয়েছে । আমি পকেটে হাত ঢুকালাম । সাথে সাথে খালি হাত বের করে এনে বললাম,এই দেখুন ভুতের নাক ভেঙ্গে ভাঙ্গা নাক পকেটে করে নিয়ে এসেছি ।

ম্যানেজার সাহেব আবার ভূতকে খুব ভয় পান । তিনি বললেন,বুঝেছি হিমু সাহেব আর বলতে হবে না । আমার আবার একটা ছোট্ট কাজ আছে,আমি তাহলে যাই ।

আমি বললাম,এখনি যাবেন কি ! আসল গল্প তো শুরুই করি নি । তারপর,ভুতটার চুল ধরে কিছুক্ষন ঝাকিয়ে গাছের উপর ছুড়ে মারলাম । গাছ থেকে আবার ভূতটাকে ছুড়ে দিল কে যেন । আমি আবারও ছুড়ে দিলাম,এভাবে কিছুক্ষন ভূতটাকে নিয়ে ব্যাডমিন্টন খেললাম । শেষে আমি ভূতটার কান টেনে ছিরে ফেললাম তবে মজার ব্যাপার হল ভূতটার কোনো কানই ছিল না ।
ম্যানেজার সাহেব ভয়ে কাপতে লাগলেন । আমি বললাম,ম্যানেজার সাহেব আপনি এবার যেতে পারেন । তিনি তৎক্ষনাৎ কেটে পড়লেন ।
খালেক সাহেব বললেন,মায়ের দেয়া তাবিজ ছিল বলে এ যাত্রা বেচে গেলেন ।
আমি অবাক হয়ে বললাম,তাবিজ ছিল নাকি ? ভূতটা মনে হয় সেজন্যই ভয়ে পালিয়ে গেল । মাদুলির জোরেই তাহলে এ যাত্রা বেচে গেলাম ।

আসতে আসতে ঘরের ভিড় কমতে লাগল । আমি সবাইকে ভয় দেখানোর জন্য ভূতে ধরা মানুষের মতই আচরন করতে লাগলাম । আসল ঘটনা ছিল এমন যে,আমি রাতে ওই মাঠেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । তখন আমাদের মেসের কেউ সেখান দিয়ে যাচ্ছিল এবং আমাকে এত রাতে খালি মাঠে শুয়ে থাকতে দেখে সে ভয় পেয়ে যায় এবং মেসে এসে সবাইকে এই ভয়ংকর ঘটনা শোনায় । এত রাতে কেউ আর মাঠ থেকে আমাকে আনতে যাওয়ার সাহস করে নি । পরদিন সকালে সবাই যখন আমাকে আনতে মাঠে যায় তখন গিয়ে দেখে সেখানে আমি নেই । কিন্তু,মেসে ফিরে এসে যখন তারা দেখে যে আমি নিজের বিছানায় গিট্টু মেরে শুয়ে আছি তখন সবার আক্কেল গুডুম । তারা ধরে নিয়েছে এটা ভূতেরই কারবার । অথচ,আমি যে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় নিজেই হেটে মেসে চলে এসেছি এটা কেউই জানত না ।
আমি ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে গেলাম । সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম,দুপুরে কাঁচা মাংস দিয়ে লাঞ্চ করব আর ড্রিংক্স হিসেবে রক্ত খাবো চিনি দিয়ে গুলে । তারপর,মেস থেকে বের হয়ে এলাম ।


আমি এখন নাজিরা বাজার এলাকায় । সেখানে গিয়ে দেখি আজও শুভ্র একই অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে । ও মনে হয় অসহায় ভঙ্গিতে দাড়াতেই বেশী পছন্দ করে ।
আমি সামনে গিয়ে বললাম,কি খবর ?
শুভ্র বলল,হিমু সাহেব নাকি,আমি তো আপনাকেই খুজছিলাম ।
আমি বললাম,আমিও তোমাকে খুজছিলাম ।
শুভ্র বলল,কেন খুজছিলেন ?
আমি বললাম,তোমার ঘড়িটা ফেরত দেবার জন্য যেটা তুমি রিকশাওয়ালাকে দিয়েছিলে ।
শুভ্র অবাক হয়ে বলল,বলেন কি ! ওই ঘড়ি আপনি কোথায় পেলেন ?
আমি বললাম,গতকাল মালিবাগ গিয়েছিলাম,সেখানে গিয়ে দেখি সেদিনকার ঐ রিকশাওয়ালা একটা ঝুপড়ি টাইপ চায়ের দোকানে বসে কুড়মুড় করে বিস্কিট খাচ্ছে সাথে চানাচুর জাতীয় কিছু ছিল । আমি গিয়ে ঘড়িটা চাইলাম । রিকশাওয়ালা সাথে সাথে আমাকে চিনে ফেলল,তারপর আমাকে চা খাওয়াতে চাইল । আমি চা খেয়ে ঘড়িটা নিয়ে সটকে পড়লাম ।
শুভ্র বলল,হিমু সাহেব আমার ধারণা গল্পটা আপনি বানিয়ে বললেন । আসলে আপনি আমার ঘড়িটার মত হুবহু একটা ঘড়ি কিনে এনে এখন আমাকে দিচ্ছেন ।
আমি বললাম,তোমার বুদ্ধি ভাল । এখন ভেবে দেখ ঘড়িটা নেবে কিনা,না নিলে এটা দিয়ে আমি চা খেয়ে ফেলব । ও ভালো কথা,তোমার স্বপ্নে যে মেয়েটা আসে তার ব্যাপারে আমি ভেবেছি ।
শুভ্র খুব উত্তেজিত হয়ে বলল,ভেবে কিছু পেলেন ?
আমি বললাম,পেয়েছি কিন্ত সবার সামনে বলাটা কি ঠিক হবে ? চল অন্য কোথাও যাই ।

শুভ্রকে আমি জিয়া উদ্যানে নিয়ে গেলাম । আমি ভেবে কি পেয়েছি সেটা জানার জন্য ও অস্থির হয়ে উঠেছে ।
আমি কানে কানে বললাম,মেয়েটা বাস্তবে আছে মনে হয়,আবার নাও থাকতে পারে । আমার কথায় শুভ্রের আগ্রহে ভাটা পড়ল ।
আপনি কি এই কথাটা বলার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন ?
আমি হাসি মুখে বললাম,মেয়েটার সাথে দেখা করতে চাও ?
শুভ্র হঠাৎ করেই যেন কেমন বিব্রত হয়ে গেল । আস্তে করে বলল,হ্যা চাই ।
আমি বললাম,ঠিক আছে আজকে রাত্রে তোমাকে ওর সাথে দেখা করিয়ে দেব । এখন বল ওর জন্য কি করা যায় ?
শুভ্র বলল,হিমু সাহেব ও কি সত্যিই আসবে ? আচ্ছা,যদি সত্যিই আসে তাহলে কি করে ওকে সারপ্রাইজ দেয়া যায় ?
আমি বললাম,তুমি ওকে এক আকাশ জোছনা দিতে পারো । এতে ও খুব খুশি হবে ।
শুভ্র বুঝতে পারছে না আমার এসব কথা । ও হা করে তাকিয়ে আছে । ওর সমগ্র চিন্তা এখন মেয়েটিকে ঘিরে,আমার ফালতু কথা শোনার সময় ওর এখন নেই ।

চার

এখন মধ্যরাত । আমি শুভ্রের জন্য অপেক্ষা করছি । দুর থেকে কে যেন হেটে আসছে । চাদের আলোয় তাকে খুব রহস্যময় দেখাচ্ছে । পরনে হলুদ পাঞ্জাবী,চুলগুলো এলোমেলো । এই জাতীয় দৃশ্য দেখেই মনে হয় কবিরা রোমান্টিক কবিতা লিখতে গিয়ে খিচুরি পাকিয়ে ফেলতেন । আরও একটু কাছে আসতেই চেহারা বোঝা গেল,শুভ্র । আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম । শুভ্র হাসল না,ওকে খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে । আমরা প্রায় দশ মিনিট নীরবতা পালন করলাম । ঠিক এমন সময় গতকালের ঐ মেয়েগুলিকে আসতে দেখা গেল । তবে,আজ এদের মধ্যে কোন হাসি নেই ।

আমি শুভ্রকে বললাম,এই যে তোমার সেই কল্পনার মেয়ে আসছে ।
শুভ্র উত্তেজনায় কাপছে । আমি শুভ্রকে নিয়ে মেয়েগুলোর কাছে গেলাম । মেয়েগুলো চলে যাচ্ছিল,আমি তাদের ডেকে থামালাম ।
এই যে শুনছ ।
মেয়েগুলো অবাক হয়ে তাকালো । আমাদেরকে হয় তো খরিদ্দার ভাবল,কারণ খরিদ্দাররা সাধারণত আমাদের মত ভদ্রলোকের পোশাক পরেই আসে,ভদ্রভাবেই তাদের নিয়ে যায় এবং নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আসল রুপ বেরিয়ে আসে ।

একটা মেয়ে এগিয়ে এসে বলল,আমাদেরকে বলছেন ?
আমি বললাম,জ্বী তোমাদেরকেই বলছিলাম । তবে, ব্যস্ত থাকলে যেতে পার ।
মেয়েটা বলল,আজকে আমরা আর কোথাও যেতে পারব না,আমরা অসুস্থ হয়ে পরেছি ।
আমি বললাম,কেন কেন ?
মেয়েটা বলল,এক সাথে বেশী ট্রিপ নিয়ে ফেলেছি তো সেই জন্য । আজ আর পারব না ।
আমি বললাম,দেখ আরও একটা ট্রিপ নেবে কিনা,ভাল এমাউন্ট পাবে । শুধু কয়েক ঘন্টার ব্যাপার ।
মেয়েটা তার সঙ্গীদের সাথে কি যেন আলাপ করল । তারপর বলল,আচ্ছা আমি রাজি ।
আমি বললাম,গুড । তোমাকে এই ছেলেটার সাথে সারারাত হাটতে হবে,খুবই ভালো ছেলে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি এর স্টুডেন্ট,প্রতিবার হায়েস্ট নাম্বার পায় । কি পারবে না ? অবশ্য তার বিনিময়ে তোমাকে এক হাজার টাকা দেয়া হবে ।

মেয়েটা আমার প্রস্তাবে খুবই অবাক হল তবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র আরও বেশী অবাক হল । কারণ,শুভ্রের পড়াশোনা বিষয়ে এত কিছু আমার জানার কথা না । আমি মেয়েটির সাথে থাকা অন্যান্য মেয়েগুলোকে একশত করে টাকা দিয়ে তাড়াতাড়ি করে কেটে পড়তে বললাম । তারা চলে গেল ।
শুভ্র কানে কানে বলল,হিমু সাহেব আপনি যে বললেন এক হাজার টাকা দেয়া হবে সেটা কিভাবে দেব ? আমার কাছে তো এক পয়সাও নেই ।
আমি বললাম,টাকার দরকার নেই । তোমার সাথে হাটার পর মেয়েটাকে টাকা দিলেও সে নেবে না । ভাল কথা এটাই তোমার স্বপ্নের সেই মেয়ে তো ?
শুভ্র লজ্জায় লাল হতে শুরু করল । আমি বললাম,লাল হচ্ছ কেন,রাতের বেলা লাল রঙ ভাল লাগে না,আকাশের মত নীল হতে চেষ্টা কর । আচ্ছা আমি তাহলে যাই । দেখি কোন খুপরি টাইপ হোটেল পাওয়া যায় কিনা,রাতের খাবার খেতে হবে ।

আমি ওদের রেখে সামনে হাটা দিলাম । ডুবে থাকা চাঁদটা হঠাৎ করেই আবার উকি দিল। এই জোছনা প্লাবিত রাতে এমন মধুর মিলন সত্যিই অবিশ্বাস্য ।
ভাগ্য খারাপ । কোনো হোটেলই খোলা নেই । অবশ্য খোলা থাকলে যে খুব গাপুর-গুপুর করে খাওয়া যেত তা না । পকেটে হাত দিয়ে দেখি স্কচটেপ মারা দুটো ২ টাকার নোট বের হল । এই টাকা দিয়ে ভাত তো দুরের কথা ভাতের একটা দানাও পাওয়া যাবে না । তাতে সমস্যা খুব একটা হবে না । না খেয়ে থাকারও খুব দারুন একটা আনন্দ আছে,আমি এখন সেই আনন্দ বেশ উপভোগ করছি । সামান্য চিরতার জল পেলে ভালো হত । খালি পেটে চিরতা নাকি খুবই উপকারী । ভরা পেটে চিরতা খেলে নাড়ি-ভুড়ি উল্টে আসে কিন্তু খালি পেটে খেলে সেই রিস্ক থাকে না কারণ উল্টে আসার মত কিছু তো পেটে থাকেই না,উল্টে আসবে কি । হঠাৎ করে হাত মাথায় চলে গেল । দেখি সেখানে এক ঝাক আউলা-ঝাউলা চুল । আমাকে সম্ভবত বাদরের মত দেখাচ্ছে এখন । তবে এতে লজ্জার কিছুই নেই । মানুষকে বাদরের মত দেখাবে এটাই নিয়ম বরং না দেখালেই লজ্জা পেতে হত । বাদরজাতির উপর আমার খুব ভক্তি হতে লাগল । কি মহৎ একটা জাতি ! আবেগে আমার চোখে পানি চলে এল । আমি সেখান থেকে কেটে পড়লাম ।

মেসে ফিরে গেলে অবশ্য রাতের টক হয়ে যাওয়া পোলাও পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে না । খাদ্যের অন্বেষনে ছুটবে নিম্ন শ্রেনীর প্রানীরা । আমি যেহেতু খুবই উচ্চ শ্রেনীভুক্ত তাই আমার ভাগ্য খারাপ,চাইলেও খাদ্যের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে পারব না । উচ্চশ্রেনীর জন্য খাদ্যরাই উল্টো ছুটে আসবে । একটা মাইক পাওয়া গেলে ভালো হত । এনাউন্স করে দেয়া যেত যে,খাদ্য সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলছি,একজন খুবই উচ্চশ্রেনীর মানুষ অভুক্ত অবস্থায় রাস্তায় অবস্থান করছে । আমার ধারণা এই এনাউন্সের পর কিছু সুস্বাদু খাবার সুড়সুড় করে আমার কাছে চলে আসত । কিন্তু তাও এখন সম্ভব না । আচমকা মনে পড়ল যে আমার প্যান্টের পেছনে একটা লুকায়িত পকেট আছে । এই পকেটের নাম চোরা পকেট বা ডাকাতি পকেট বা এই জাতীয় কিছু । ইংরেজীতে এর নাম হিডেন পকেট । আমি খুব উৎসাহের সঙ্গে পকেটে হাত ঢোকালাম কারণ আমার নিজেরও জানা নেই এতে কি আছে । তবে এইটুকু বুঝতে পারছি যে সেই পকেট থেকে আর একটা স্কচটেপ মারা দুটাকার নোট বের হবার চান্স আছে । কিন্তু না,পকেট থেকে যা বের হল তার নাম কাগজের ঠোঙ্গা । আমি খাবারের আশায় ঠোঙ্গার ভেতর হাত ঢুকালাম । ভেতরে কোনো খাবার নেই তবে আঠা জাতীয় কি যেন হাতে লেগে গেল । জিনিসটা কি বুঝতে পারলাম না । তবে,নাকের কাছে হাত নিয়েই বুঝতে পারলাম জিনিসটা দুই দিন আগের কেনা ভাপাপিঠা । গুড়গুলো সব গলে গেছে,এটা আর খাওয়া যাবে না । আমি ঠোঙ্গাতে হাত মুছে পিঠাসহ সেটা ছুড়ে ফেললাম ।
সামনে হাটতে যাব এমন সময় কে যেন বলল,ভাই আপনি মহান । আমি বিস্ময় নিয়ে পেছনে তাকালাম । দেখি আমার ছুড়ে দেয়া পিঠাটা রাস্তার ধারে ঘুমিয়ে থাকা এক ভিক্ষুকের উপর গিয়ে পড়েছে এবং সে এটা কুড়মুড়িয়ে খাচ্ছে ।

আমি যে সত্যিই মহান তা প্রমান করার জন্য পকেট থেকে আরও একটা খালি ঠোঙ্গা বের করে অন্যদিকে ছুড়ে দিলাম । ভিক্ষুকটা সেটাকেও খাবার ভেবে তুলে আনতে গেল,আমি তৎক্ষনাৎ সুড়ুৎ করে উধাও হলাম ।

আমি এখন একটা গাছের নিচে শুয়ে আছি । ঘুম ঘুম লাগছে কিছুটা তবে আমি শিওর ঘুমুতে গেলেই এই ভাবটা সাথে সাথে কেটে যাবে । এখন শুয়ে শুয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবা যাক । আমি একজন মহাপুরুষ ---- খুবই খাটি কথা । আমি আমার সকল চাহিদাকে তুচ্ছ করেছি ---- তাও ঠিক । কিন্তু কেন করেছি ? কারণ বাবা আমাকে করতে বলেছিলেন সে জন্য ? হয় তো তাই । এখন কি আমি আমার চাহিদাকে কিছুটা প্রাধান্য দিতে পারি না ? অবশ্যই না,কারণ আমি মহাপুরুষ । তবুও আমি মনে মনে ঠিক করলাম আমি রুপাকে বলব ঃ রুপা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি । তুমি আমাকে যতটা ভালোবাস তার চেয়েও বেশী । কেউ আমার ময়ুরাক্ষী নদীটা চুরি করে নিয়ে গেছে । আমি জানি সেটা তুমিই করেছ । এসব ভাবতে ভাবতে একসময় আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলাম ।

পরিশিষ্ট

আরো এক বছর পরের কথা । আমি কোনো একটা কাজে নাজিরা বাজার গিয়েছি । রিকশায় করে গিয়েছিলাম কিন্তু পকেটে টাকা ছিল না । আমি রিকশা থেকে নামার পর রিকশাওয়ালা বলল,ভাইজান টাকা দেন,একটা পান কিনা খাই ।
আমি বললাম,টাকা তো নেই । রিকশওয়ালা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো । সম্ভবত এই ধরনের আচরনের সাথে সে পরিচিত নয় ।
রিকশাওয়ালা এবার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,তাড়াতাড়ি টাকা দেন কইলাম ।
আমি বললাম,দেব না । না,দিলে কি করবে ?
রিকশাওয়ালা মনে হয় কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই কে যেন পেছন থেকে ডাকল ।

এই যে শুনছেন ?
আমি পেছনে ফিরে তাকালাম । দেখি চশমা পরা একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চেহারাটা চেনা মনে হল কিন্ত ধরতে পারছিলাম না ছেলেটা কে । ছেলেটার হাত ধরে একটা মেয়েও দাঁড়িয়ে আছে । মেয়েটিকে দেখে আমি চিনে ফেললাম । সেই বেশ্যা মেয়েটি কিন্ত,এখন আর তাকে সে রকম লাগছে না । পরীর মত সুন্দর লাগছে । তবে শুভ্রের মধ্যে খুব সামান্য চেঞ্জ এসেছে । তার অসহায় ভাব ভঙ্গি আরো তীব্র হয়েছে । শুভ্র সম্ভবত মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলেছে । এখন আর সে অসহায় নয় । মেয়েটিই এখন সবসময় ওকে ছায়ার মত ঘিরে থাকবে ।
আপনি হিমু সাহেব না ।
আমি বললাম, না আপনি ভুল করছেন । আমি হিমু না ।
দেখুন আপনি মিথ্যে বলছেন,আমি শিওর আপনিই হিমু ।
আমি বললাম,ঠিক আছে,আমি হিমুই । এখন ওই রিকশাওয়ালাকে আমার হয়ে ৩০ টা টাকা দিয়ে এস ।
শুভ্র টাকা দিতে গেল । মেয়েটাও সাথে সাথে গেল । আমি পেছন থেকে কেটে পড়লাম । এক দৌড়ে অনেক দূর চলে গেলাম । একটা চায়ের দোকানে এসে বসে পড়লাম ।

শুভ্রের মত একজন ছেলেও ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে বিয়ে করল এক বেশ্যাকে,মোটামুটি অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার । অবশ্য মেয়েটি ছিল তার কল্পনার মেয়ে । আমার কল্পনায় কি এমন কেউ আছে ? হয় তো আছে কিংবা নেই । আমিও কি তার
দেখা পেলে তাকে ভালোবাসার কথা বলব ? উত্তর জানা নেই নিজেরও । তবে আমি জানি এমন কারো দেখা আমি কোনোদিনই পাব না ।
দোকানদার বলল,ভাই কি দিমু ?
আমি চা দিতে বললাম । শুধু চা ভালো লাগবে না,দুটো বিস্কিট হলে ভালো হয় । আমি বিস্কিটও দিতে বললাম । পকেটে কোনো টাকা নেই । তবে সেটা কোনো সমস্যা না । চায়ের ব্যবস্থা যখন হয়েছে টাকার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে । টাকার জন্য তো জগতের কিছুই থেমে থাকে না । তাহলে আমার খাওয়াটাই বা থেমে থাকবে কেন ?




.......................................
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×