somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় ক্যাম্পাস

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় মেয়ের পর মায়ের কোল জুড়ে এসেছিল প্রথম ছেলে সন্তান।খুব শখ করে নাম রেখেছিল জয়।নামের মতোই ছিল তার কাজ।পুরো গ্রাম যেন একাই মাতিয়ে রাখত সে।দিনে দিনে হয়ে উঠতে লাগল সকলের নয়নের মণি। পড়ালেখায় বেশ ভাল ছিল বলে গ্রামবাসীর খুব স্বপ্ন তাকে নিয়ে।ভালো কিছু করে সকলের মুখ উজ্জ্বল করবে এই ছিল সকলের হৃদয়ে।SSC তে আশাতীত রেজাল্ট নিয়েই পাশ করল সে। ছেলেকে একা ঢাকা পাঠাবে না মা শতাব্দী বেগম।তাই তাকে গ্রামেই এক কলেজে ভর্তি করা হলো। তাছাড়া আর্থিক সংকটে সংসার। ছেলে ঢাকা গিয়ে কি করবে? তাছাড়া কীভাবেই বা থাকবে?


তাতে কি? থেমে থাকেনি জয়।কোনো কোচিং,বাসায় শিক্ষক ছাড়াই পড়ালেখা করতে লাগল সে।
কলেজের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়েই HSC তে বসল জয়।এত রেজাল্ট ধসের মাঝে আবারও সর্বোচ্চ রেজাল্ট অর্জন করল সে।


তার একটাই স্বপ্ন BUET।তার কোনো নির্দিষ্ট পছন্দের বিষয় নেই যেটা নিয়ে সে পড়তে চায়।তার একটাই কথা আমি BUETIAN হতে চাই।সেই লক্ষ্যেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে লাগল সে।

শান্তিপুরের এই শান্ত ছেলে কোনোদিনও দেখেনি বুয়েট।একবার এলাকার কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে ঢাকা গিয়েছিল ঘুরতে।তখন নীলক্ষেত থেকে সে কিছু বইও কিনেছিল।তখন বড় ভাইয়েরা বলেছিল চল তোকে বুয়েট দেখিয়ে আনি।একদিন তো এখানেই পড়বি। জবাবে সে বলেছিল-“আমি একবারে পরীক্ষার দিন প্রথম পা রাখব বুয়েটে।এর আগে এখানে আসব না,যেতেও চাই না। বুয়েট আপাতত আমার স্বপ্নে সাজানো ক্যাম্পাসের মতোই থাকুক।”


এমনই ছিল তার ইচ্ছাশক্তি আর স্পৃহা।ওর ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টা দেখলে যে কেউ হার মানতে বাধ্য।হয়তো এই প্রেষণাই ওকে পৌঁছে দিবে ওর গন্তব্যে।


তবে সে যাই হোক জয় কোনোদিন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেনি।সবসময় ভেবে এসেছে এবং সেই মোতাবেক চেষ্টাও করছে সে যে,কি করে সে তার বর্তমান সময় সঠিক পথে চালনা করবে।
ওর এই চিন্তাশক্তি দেখে বাবা-মার মধ্যে মাঝে মাঝে খারাপ বোধ কাজ করে। জয়কে তো ঠিক মতো তিনবেলা খাওয়াতেও পারে না।আর পড়ালেখার খরচ তো দূরের কথা।
কোনো ভর্তি কোচিং না করা ছেলেটিও স্বপ্ন দেখতে পারে, হয়তো স্বপ্ন পূরণও করবে সে। সেই লক্ষ্যে তার পড়ালেখা চলছে আপন গতিতে।


ঢাকা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা ২৮ সেপ্টেম্বর এবং আইইউটির পরীক্ষা ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। দুটো বিশ্ববিদ্যালয়েই চান্স পেয়ে জয়ের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে।
অতপর এলো সেই নির্ধারিত দিন।


৭ই অক্টোবর সকাল ৮টার মধ্যে উপস্থিত হলো বুয়েট ক্যাম্পাসে।পরীক্ষা দেওয়ার আগে শেষবারের মতো সূত্রগুলো ঝালিয়ে নিলো জয়।ভেতরে এক প্রকার ভয় এবং সংশয় কাজ করছে।তার বাবা তাকে সাহস দিতে লাগল।বলল- “দেখ বাবা, তোমার হারানোর কিছু নেই।আছে শুধু পাওনা। যা আছে কপালে তাই হবে।তুমি চেষ্টা করেছ এই অনেক।এখন শুধু ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিয়ে আস।বাকিটা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা।নিশ্চয় তিনি তোমাকে হতাশ করবেন না।"


বাবার দোয়া মাথায় নিয়ে ঢুকে গেল পরীক্ষার হলে। তার সিট পরেছিল আর্কিটেকচার বিল্ডিং এর ২য় ফ্লোরে, আর্কিটেকচার কম্পিউটার ল্যাবে। সে জানতো না তার জন্য এসি রুম অপেক্ষা করছে।এর আগে একবারই এসি রুমে গিয়েছিল সে।তার বড় ভাইয়ের সাথে একবার বসুন্ধরা শপিং মলে ঘুরতে এসে।

ঘড়িতে বেজে সকাল ৯টা।ঘণ্টা পড়ল পরীক্ষা শুরু হলো।পরীক্ষা দিতে দিতে কীভাবে যে সময় পার হলো টের পাওয়া গেল না। রসায়ন প্রশ্নটা একটু অন্যরকম হয়েছে বিগত বছরগুলো থেকে। সে যাই হোক,জয়ের পরীক্ষা ভালো হয়েছে এটাই মূল কথা। এখন রেজাল্ট দেওয়ার অপেক্ষা।

খুশি মন নিয়েই সে বাড়ি ফিরে আসল।না জানি কি হবে,কত চিন্তা তার মার মনে।দিন রাত সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাচ্ছে জয়ের ভালো ফলের অপেক্ষায়। এরপর তার পরীক্ষা সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেখানেও পরীক্ষা দেয়।তিনদিনের মধ্যে রেজাল্টও পেয়েছে।১৫৯ তার মেধাক্রম।এরপর বাকি আছে রুয়েট,কুয়েট ও চুয়েটে একাধারে।


মায়ের মনে চিন্তা বুয়েটের রেজাল্টটা দিয়ে দিলে হয় এতগুলো জেলায় গিয়ে পরীক্ষা দিতেই হবে নতুবা বুয়েটে ভর্তির বন্দোবস্ত করতে হবে। অন্যখানে পরীক্ষা দিতে না যাওয়াটাই সকলের কামনা।এতে যাওয়া আসার টাকাগুলোও তো বেচে যাবে।


অতপর ১৭ই অক্টোবর রাত ১০টায় এলাকার মিশু ভাইরা বাসায় এসে হাজির। জয়ের আব্বু গেইট খুললে সাহিল বলে উঠল চাচা জয় কোথায়?


জয় তো পাশের ঘরে বাবা।কেন,কি হয়েছে?


মিশু চিৎকার করে পাশের রুমে গিয়ে জয়কে জড়িয়ে ধরে প্রথম কথাটা বলে উঠল ১২১তম।তুই ১২১তম হয়েছিস বুয়েটে।একটু আগে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।জয়ের দুচোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু টপ টপ করে পড়ছে।তার মা তো জয়কে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদেই দিয়েছে।


পরদিন সকালে পুরো গ্রামবাসী এসে হাজির,জয়কে সংবর্ধনা দিতে।ফুলের মালা নিয়ে গ্রামের মুরব্বিরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় জয়কে।এ শুধু জয়ের নয় পুরো গ্রামের এক বিরাট পাওয়া।জয় শান্তিপুরের এই প্রথম সন্তান যে কিনা বুয়েটে পড়তে চলেছে।


উপজেলা চেয়ারম্যান জয়ের হয়ে সকলকে মিষ্টি বিতরণ এবং তার জন্য দোয়ার আয়োজন করে।সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে জয়ের এখন বুয়েটে যাবার পালা।

আজ দুপুর ৩টার বাসে জয় ঢাকা যাবে।দুইদিন পর থেকে তার ক্লাস শুরু।পুরো গ্রামবাসী এসেছে তাকে বাস পর্যন্ত এগিয়ে বিদায় দেওয়ার জন্য।সে একাই যাচ্ছে ঢাকা। এক কাজের জন্য তার বাবার পক্ষে সম্ভব হলো না ছেলেকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া।

পুরো গ্রামবাসীর চোখ গর্বে ছলছল করছে।এইতো আমাদের ছেলে জয়।আমাদের ছেলেও পারে বুয়েটে পড়তে,প্রকৌশলী হতে।আমরাও পারি মাথা উঁচু করে দাড়াতে।
বাসে উঠে সকলকে বিদায় দিয়ে রওনা হলো নতুন এক দুনিয়ার উদ্দেশ্যে,অচেনা এক স্থানে,অজানা এক জগতে,অজানা এক গন্তব্যে।


জানা নেই তার,কোন মহাসমুদ্রের দিকে যাচ্ছে সে।কেমন হবে তার আগামী পথচলা।কেমন হবে তার আশেপাশের মানুষগুলো।কেমন করে থাকবে তার প্রাণপ্রিয় বাবা-মা।
সকলকে রেখে একা সে চলে গেল অন্য এক দুনিয়ায়।যার হদিস সবাই দিতে পারে না।বুয়েটের খুব কাছে এসেও পারল কি বুয়েটকে আপন করে নিতে? রাস্তায় যাওয়ার পথে সাভার মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে তার প্রাণ চলে যায়। তার পাওনা হয়তো এতটুকুই ছিল যে তার ১ম নামাজে জানাযা বুয়েটে অনুষ্ঠিত হবে।

“আমি চিৎকার করিয়া কাদিতে চাহিয়া করিতে পারি নি চিৎকার।”
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:১৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×