somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুটান ভ্রমনে যাবার আগে আমার এক দিন!

০৩ রা মে, ২০১১ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের একটি জীবন্ত এ্যলার্ম দেয়া ঘড়ি আছে, তা হলো একটা চড়ুই পাখী। প্রতিদিন ভোর ছটা থেকে সে আমার বেডরুমের বারান্দার গ্রীলে বসে অক্লান্ত ভাবে ডেকেই চলে চিক্‌ চিক্‌, চিক্‌ চিক্‌ শব্দ করে। থাই এর দরজা খোলা থাকার জন্য তার ডাকাডাকিতে সকালে কারো ঘুমানোর সাধ্য নেই।

আমার স্বামীর অফিস ৮টা থেকে শুরু। সে ৭.২৫ মিনিটেই বের হয়ে যায়। আগে দেখতাম সেল ফোনে ৬টায় উঠার জন্য এ্যলার্ম দিয়ে ঘুমাতো, এখন আর দেয় না ।কিন্ত নচ্ছার চড়ুইটা মনে হয় শুক্র, শনি বা ছুটির দিন কিচ্ছুই বোঝেনা !

যাই হোক আগের রাতে আমার কর্তা একটা ব্রাউন রংয়ের খাম দিয়ে বল্লো, 'শোনো এটা তে পাসপোর্ট, টাকা পয়সা আর কিছু কাগজ পত্র আছে। তুমিতো গুলশানে আমাদের পরিচিত ট্র্যাভেল এজেন্সি চিনোই। ওখানে গিয়ে টিকেট টা নিয়ে আসো, আমার বুকিং দেয়া আছে। সব কিছু করা আছে শুধু যাবে আর টিকেটগুলো নিয়ে আসবে'।

প্রসংগত বলি ড্রুক এয়ারলাইন্সের টিকেট পাওয়া খুব ঝামেলা। কারন আর কোনো এয়ারলাইন্স নেই।তাই আগে থেকে বুকিং না দিলে মুশকিল।
পরদিন সকাল দশটা আমি রওনা দিলাম গুলশানের উদ্দেশ্যে।

ফোন বেজে উঠলো মিস্টি রিং টোনে।
আমার স্বামীঃ
'হ্যালো তুমি কই '?
"আমি গুলশান ১ এ"।
'শোনো আমাদের কিন্ত ট্র্যাভেল ট্যাক্স ফ্রি। ওটার কাগজ দিয়ে দিয়েছি ওটা দেখাতে ভুলো না'।
"আচ্ছা"।

আবার ফো্নঃ
ছেলের।
'আম্মু তুমি কই'?
"ট্র্যাভেল এজেন্সীর সামনে, কেনো"?
'কখন আসবে ? তাড়া তাড়ি বাসায় এসো, আমি বাইরে যাবো'।
"আশ্চর্য তো বের হতে পারলাম না এখনি তোমার বাইরে যাওয়া দরকার"।

ট্র্যাভেল এজেন্সীর অফিস, কফি খাচ্ছি আর অপেক্ষা করছি।
ফোনঃ এবার স্বামী।
'শোনো কই তুমি? টিকিটের হার্ড কপিটা নিও ভুটান বলে কথা ইলেকট্রনিক্স কপি যদি না চলে'।
"আচ্ছা"।
আধা ঘন্টা পরে টিকেট আসলো ব্যাগে ভরে লিফটের দিকে যাচ্ছি,

ছেলের ফোন।
'আম্মু শোনো ভালো কোনো স্ন্যাকস নিয়ে এসো। বাসায় তো তোমার ঐ পঁচা কতগুলো বিস্কিট ছাড়া আর কিছু নেই'।
"কেনো আপেল, কলা"!
'ওগুলো কিছু জিনিস হলো খাওয়ার'!
"আচ্ছা"।
গাড়িতে উঠলাম।

স্বামীর ফোনঃ
'কই তুমি' ?
"টিকেট নিয়ে বের হয়েছি"।
'এক কাজ করো আমার মনে ছিলনা, তুমি তো গুলশান ২ এর ল্যান্ডমার্ক বিল্ডিংএর ডিবিএইচ অফিসটা ভালো করেই চিনো তাইনা! অনেক বারই তো গিয়েছো'!
"হু"।
'ওখানে যাও অমুক সাহেবের সাথে দেখা করলে তোমাকে একটা চিঠি দিবে ওটা একটু নিয়ে আসো, খুব দরকারী'।
"আচ্ছা"।

চিঠি নিয়ে রওনা দিলাম বাড়ীর দিকে। ওয়ান্ডারল্যান্ড পর্যন্ত আসতে না আসতেই ফোন কর্তার,
'কই তুমি'?
"এখানে ওয়ান্ডারল্যান্ডের সামনে"
'গুড, স্টপ করো,
তুমি একটু কস্ট করে ডেভোলাপারের অফিসে যাও। আমরা যে ওদের কোনো টাইলস আর বাথরুম ফিটিংস নিবোনা সেটা একটু লিখিত দিয়ে আসো। মুখে বল্লে নাকি হবেনা এই মাত্র ফোনে জানালো'।
"আচ্ছা ঠিক আছে"।

একঘন্টা ধরে দুনিয়ার ফাইল পত্র নকশা দেখে নানান রকম কসরৎ করে সব বুঝিয়ে বের হোলাম।

ছেলের ফোনঃ
'আম্মু তুমি কই'?
"আমি ১ আর ২ এর মাঝখানে"।
'ভালো কথা, তুমি অবশ্য করে গুলশান মার্কেট থেকে আমার জন্য একটা বডি স্প্রে নিয়ে আসবা । আর ঐ ইটালিয়ান পাস্তাটা এক প্যাকেট এনো, শুধু নুডলস আমার ভালো লাগেনা'।

এবার আমি ফোন করলাম স্বামীকে।
"শোনো আমি গুলশান মার্কেটে, কিছু লাগবে"?
'হ্যা হ্যা ভালো কথা মনে করেছো , আমার জন্য জিলেটের একটা শেভিং ফোম আর জিলেটের ম্যাক থ্রি ৩টা রেজার যে একসাথে থাকে ওটা নিয়ে আসো'।
"আচ্ছা"।

যাক্‌ ঝামেলা শেষ হলো। তাহলে এবার বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম।
ফোনঃ স্বামী।
'কই তুমি'?
"মহাখালী"।
'তোমার কাছে তো ক্রেডিট কার্ড আছে তাই না'?
"হু"
'পাসপোর্ট আর টিকেট ও তো আছে'?
"হু"
'শোনো এক কাজ করো। তুমি বুথ থেকে টাকা তুলে মানি এক্সচেন্জ অফিস ঐ যে প্রিমিয়ামের পাশে তুমি তো ভালো করেই চিনো তাই না'?
"হু"
'ওখানে পাসপোর্টে কস্ট করে একটু ডলার এনডোর্স করে আনো। আমিতো একদমই সময় পাচ্ছিনা।
দেখোতো বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়'।

আমার তখন রাগের চোটে গলা দিয়ে আর শব্দ বের হচ্ছেনা।
যাই হোক দুনিয়ার ভেজাল শেষ করে বাসায় আসলাম।

অন এ্যারাইভাল ভিসা, ছবি লাগবে। এছাড়া আমরা সব সময় পাসপোর্ট সাইজের কিছু ছবি নিয়ে যাই। আমাদের টা আছে, ছেলেরটা নেই।
বল্লাম "যাও, আব্বু পাসপোর্ট সাইজের ছবি তুলে আসো"।
"কি ! আমি পারবোনা, তোমাদের এত কপি আছে, আমার নাই কেনো'!
"শেষ হয়ে গেছে তোমারগুলো"।
'না আমি যাবো না, তুমি তুলে আসো'।
"তোমার ছবি আমি তুলে আসলে কি কাজ হবে "!
আব্বু সোনা লক্ষী ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে পাঠালাম ছবি তুলতে।

ক্লান্তিতে শরীর ভেংগে আসছে। নাকে মুখে দুটো গুজে বিছানায় পরতে না পরতেই ফোন।
আমার স্বামীঃ
'কি করো'?
"কিছু না, এমনি শুয়ে আছি"।
'হে হে তা তো থাকবেই, তোমার মত আরামে কয়জন আছে' !
"তাতো ঠিকই"!
'শোনো যে জন্য ফোন করেছি। সময় তো আর নেই, আর মাত্র তিনদিন। তুমি শিউলিকে দিয়ে ট্রলি স্যুটকেসগুলো বের করো, বড়টা না ছোটো আর মাঝারিটা নিও, মুছে পরিস্কার করাও'।
"শিউলি! ও কোথা থেকে আসবে! ও কাজ সেরে কখন চলে গেছে"।
'তাহলে একটু কাজ করো, তুমি একটু কস্ট করে পরিস্কার করে
তোমার আর তোমার ছেলের জিনিস পত্র গুছাতে শুরু করো।
আমারটা আমি রাতে বাসায় এসে করবো'।

আমি আর একটা কথা না বলে ফোনটা অফ করে দিলাম। আমার ভুটান বেড়ানোর দরকার নেই। গেলে আমি একাই যাবো!
না হলে ওরা যাবে।

আজ সেই ক্লান্তহীন ডেকে যাওয়া চড়ুইটাও সকালে আমার ঘুম ভান্গাতে পারেনি।
উঠে দেখলাম সকাল আট টা বাজে আমার স্বামী অফিসে চলে গেছে। এখনও ফোনটা অফ!


আর আমার ড্রাইভারের টাও একটু এ্যাড করি !
টিকিটের জন্য ট্রাভেল অফিসে ঢোকার সাথে সাথে ফোনঃ
ড্রাইভার আলী।
" আফা আমি এই অফিসের সামনে জাগা না পাইয়া একটু সামনে গিয়া চিপার মধ্যে পার্কিং করছি। আপনি নামনের আগে একটা ফোন দিয়েন"।
'আচ্ছা'
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:৫৮
৭৮টি মন্তব্য ৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×