somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক অদ্ভুত কো-ইনসিডেন্স !

০৭ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কো ইনসিডেন্স বা কাকতালীয় ঘটনা অনেক মানুষের জীবনেই ঘটে, এটা নতুন কোনো কিছুনা। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা আছে যা মানুষের মনে গভীর দাগ একে যায়। তেমনি এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল আমার তৎকালীন হবু স্বামীর জীবনে, যাতে আমিও সামান্য জড়িত ছিলাম।
সম্পুর্ন সত্যি এই ঘটনাটি আমিই তারই সহায়তায় লিখছি।

ঘটনাটি সে সময়ের যখনও সে আমার স্বামী হয়নি। তবে সে আমার পুর্ব পরিচিত এবং পারিবারিক ভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। সে সময় বৃটিশ কাউন্সিলের এক বৃত্তি নিয়ে সে বিলেত যাচ্ছিল উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্য।
এটা শুনে আমার এক কাজিন ঢা বি র ইংরেজী বিভাগের ছাত্রী তাকে লন্ডন থেকে একটি বই কিনে এনে দেয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করে।কারন বইটি ঢাকা তো দুরের কথা কলকাতাতে ও পাওয়া যাচ্ছিল না।

বইটির নাম ছিল My years in an Indian prison

লেখিকার নাম Marry Tylor

বই আর লেখিকার নাম ধাম লিখে আমি তার হাতে চিরকুট টা ধরিয়ে দিলাম।
তার পর সে ফিরে আসার পর যে কাহীনিটা শুনলাম সেটা তার জবানীতেই এখানে বলছি।

আমার ক্লাশ হতো ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে। স্থানটি ছিল লন্ডনের একেবারে মাঝখানে গাওয়ার স্ট্রীটে।এই কলেজের ঠিক পাশেই ছিল বিখ্যাত বুক শপ ডিলন্স। কয়েক দিন পর একটু অবসর পেয়ে আমি চিরকুট টা নিয়ে বইয়ের দোকানে গিয়ে বইটি খুব সহজেই পেয়ে গেলাম।
দেখলাম একটি মেয়ের ছবি দিয়েই পুরো কভার,আর সেটাই লেখিকা মেরী টাইলরের।
ভালো করে মলাটের দিকে তাকিয়েই আমি চমকে গেলাম !
কি আশ্চর্য আমি যে কদিন এখানে আছি, প্রতিদিনই তো দেখা হয় এই মেয়েটির সাথে আমার! কারন সে হচ্ছে আমার কলেজেরই সেক্রেটারী এবং আমাদের ব্যাচের সব রকম দায়িত্বে আছে।
আমি আর দেরী সইতে পারছিলাম না, দাম মিটিয়ে দৌড়ে দোতালায় উঠে মেরীর অফিস রুমে ঢুকে পড়লাম। কিন্ত গিয়ে দেখি আমার চারজন ভারতীয় সহপাঠী তখন মেরীর সাথে কি নিয়ে যেন আলাপ করছে।আমি তাদের সামনেই বইটি মেরীর মুখের সামনে মেলে ধরে বল্লাম,
'মেরী ইজ দিস ইউ' !
মেরী যেন থমকে গেল, তার মুখ থেকে যেন সমস্ত রক্ত সরে গেল এক মুহুর্তের মধ্যে। সে কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো, "তুমি এখন যাও, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো"।
এক রকম ঠেলেই সে যেন আমাকে তার রুম থেকে বের করে দিল। হতভম্ব আমি বোকার মত রুমের বাইরে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে হোস্টেলে চলে গেলাম। ঠিক আছে কাল কথা হবে মেরীর সাথে। সব সময় আমার প্রতি অমায়িক আচরন করা মেরীর এই দুর্বোদ্ধ আচরনের কারণটি মাথা থেকে সরাতে পারছিলাম না এক মুহুর্তের জন্যও।
রাতে খাবার পর বইটি নিয়ে বসলাম পড়ার জন্য। একশ পৃস্ঠার মত বইটি যতই পড়ছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। যে সময় কার ঘটনা মেরী লিখেছে তখন ভারতের পশ্চিম বাংলায় নকশাল আন্দোলন তুঙ্গে। আর বিদেশীনি মেরী ছিল সেই আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।
কিন্ত কিছুদিনের মধ্যেই সে পুলিশের হাতে ধরা পরে ভারতীয় জেলে দুই বছর অসহনীয় জীবন কাটায়। এরপর বৃটিশ সরকার আর ভারতীয় সরকারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে ফিরে যায়।
তারপর তার সেই ইউ সি এলে চাকরী শুরু। বইটি ছিল তার দুই বছরের বন্দী জীবনের উপখ্যান।

পরদিন যখন আমি কলেজে পা রাখলাম সাথে সাথে মেরী এগিয়ে এসে তার গত দিনের ব্যবহারের ব্যাখ্যা দিতে যেন ব্যাস্ত হয়ে উঠলো। বার বার অনুরোধ করলো ক্লাশের পর আমি যেন অবশ্য তার অফিস রুমে যাই। আমার ও তর সইছিল না এই রহস্য উন্মোচনের জন্য।

অবশেষে ক্লাসের পর সেই বহুল প্রতিক্ষীত সাক্ষাৎ। মেরী তখন অকপটে বলে গেল তার সেই কাহীনি যা তার বইটিতেও লেখা ছিল না।

যদিও মেরী বৃটিশ কিন্ত পড়াশুনা করছিল জার্মানীতে। সেই সময় সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় কলকাতার এক বাংগালী মেধাবী ছাত্র অমলেন্দু সেনের। প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়ে পরে প্রেম তারপর বিয়েতে গড়ায় তাদের সম্পর্ক।
এই অমলেন্দু সেন ছিলেন তৎকালীন পশ্চিম বঙ্গের বিখ্যাত বামপন্থী নেতা চারু মজুমদারের দল নকশাল বাড়ী আন্দোলনের এক জন অন্যতম সক্রিয় কর্মী।
অমলেন্দু সেনের সাহচর্যে এসে মেরী সম্পুর্ন বদলে যায় তার ভাবাদর্শে । ধীরে ধীরে সে ও হয়ে উঠে এই বাম আন্দোলনের একজন সক্রিয় আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মী। শিখে নেয় বাংলায় কথা বলা, লেখা ও পড়া।

জার্মানী থেকে পড়ালেখা শেষ করে পঃ বাংলায় এসে সহজেই অমলেন্দুর পরিবারের সাথে মানিয়ে নেয় মেরী। স্বাভাবিক সংসারতো তাদের ছিল না, কারন তারা দুজনেই ছিল সক্রিয়ভাবে নকশাল আন্দোলনের সাথে জড়িত।
কিন্ত দুর্ভাগ্য যে কিছুদিনের মধ্যেই তারা দুজনেই ধরা পরে জেলে গেল।

আগেই বলেছি দু বছর পর বৃটিশ সরকারের প্রচেস্টায় মেরী মুক্তি পেলেও যখন সে এ ঘটনা বর্ননা করছিল তখনও তার স্বামী অমলেন্দু সেন কলকাতার জেলে।

এরপর মেরী তার সংগ্রহ থেকে আমাকে এমন কিছু দেখালো যা আমাকে আরেক দফা চমকে দিল। তা ছিল বিভিন্ন বাংলা বিপ্লবী পত্র পত্রিকার লিফলেট সেই সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন গনবাহীনির কিছু বাংলা লিফলেট ও পত্রিকা।
তৎকালীন বাংলার বামপন্থী রাজনীতির উপর মেরীর জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা দেখে আমি সত্যি চমকৃত হয়েছিলাম। কারন বিশ্ব বিদ্যালয় জীবনে আমি নিজেও বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম।

যা হোক মেরীর ইতিহাস না হয় জানলাম। কিন্ত গতকালের রহস্যময় আচরনের ব্যাখাটি জানার জন্য আমি খুবই কৌতুহলী ছিলাম যার ব্যাখ্যা মেরী নিজেই দিল।
সে যা বল্লো, তা ছিল ভারতীয় সরকার জানতো না যে মেরী এই প্রতিস্ঠানে চাকরী করে। যদি তারা জানে মেরী সেখানে চাকরী করে তাহলে তারা তাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীকে সেখানে আর পড়তে পাঠাবে না। ফলে প্রতিস্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।যা মেরীর কোনোমতেই কাম্য ছিল না।
তাই কাল যখন আমি তার রুমে প্রবেশ করে তার সামনে বইটি মেলে ধরেছিলাম, তখন আমার চারজন ভারতীয় সহপাঠী সেখানে উপস্থিত ছিল। যাদের সামনে মেরী তার আত্নপরিচয় দিতে চায়নি।

যা হোক আমি দেশে ফিরে আসার বছর দুয়েকের বেশী সময় তার সাথে আমার চিঠিতে যোগাযোগ ছিল। তখন তো আর মেইল, এফ বি ছিল না। নিয়মিত যোগাযোগের অভাবে এর পর আস্তে আস্তে সব কিছুই স্মৃতির গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সর্বশেষ জেনেছিলাম অমলেন্দু সেন মুক্তি পেয়েছে আর মেরী তার সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে। কিন্ত কোথায় ভারত না বিলেত না জার্মানীতে তা বলতে পারছি না। আর বোধহয় পারবো ও না যদি না এমন একটি কাকতালীয় ঘটনার পুনারাবৃত্তি হয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:২০
১০৫টি মন্তব্য ১০৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×