somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইষ্টার আইল্যান্ড এক অমীমাংসীত রহস্যে ঘেরা দ্বীপ

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রহস্যময় পাথুরে দৈত্য
রাপা-নুই, রাপা-নুই ….বার কয়েক শব্দটি উচ্চারণ করে দেখা যাক জিনিসটা কি ? কেমন অদ্ভুত নতুন ধরনের একটি শব্দ তাই না? আসলে এটি কিন্ত একটি দ্বীপের নাম, কয়েকজন হয়তো বলবেন, 'আমিতো কবেই শুনেছি এ নাম’।
কেউবা বলবেন ‘না এমন নাম কখনোই শুনিনি’।
কিন্ত যদি বলি ইষ্টার আইল্যন্ডের নাম শুনেছেন তখন অনেকেই হয়তো বলে উঠবেন 'ওহ এ দ্বীপের কথা আমরা অনেক আগেই শুনেছি'।
ইষ্টার আইল্যান্ড পৃথিবীর বুকে আজও এক রহস্যময় দ্বীপ। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক এই দ্বীপে কি আছে ? কেন এত রহস্য তাকে ঘিরে ? বিস্তারিত বর্ননায় না গিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবেই বলি অমীমাংসিত থেকে যাওয়া এই দ্বীপ ঘিরে রচিত হাজারো কল্প কাহিনীর কিছু কিছু অংশ ।


ইষ্টার আইল্যান্ড
উনিশ শতাব্দীতে তাহিতির এক পর্যটক ঘুরতে ঘুরতে এসে এ দ্বীপের দেখা পেয়েছিলেন। রাপা নামে তাহিতির এক দ্বীপ আছে যার আকৃতি অনেকটা এ দ্বীপের মতই কিন্ত আয়তনে এর চেয়ে খানিকটা ছোট।তাই সেই রাপার সাথে নুই অর্থ বড় যোগ করে নাম রাখলেন রাপা-নুই। আমাদের এই পৃথিবীর বৃহত্তম যে মহাসাগর প্রশান্ত তারই বিশাল বুকের একপাশে বহুকাল আগে থেকেই জেগে আছে ত্রিকোনাকৃতির এক আগ্নেয় দ্বীপ নামটি যার রাপা -নুই । বুকের মাঝে একাধিক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি নিয়ে দৈর্ঘ্যে পনের মাইল আর প্রস্থে দশ মাইল আকারের এত্তটুকু এই ছোট্ট নিঃস্বংগ দ্বীপটি সভ্য জগত থেকে শত শত মাইল দূর।


মহা সমুদ্রে দ্বীপটি যেন একটি বিন্দুমাত্র

দক্ষিন আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় কুল ঘেষে সরু লম্বা হয়ে নীচে নেমে এসেছে যে দেশ নামটি তার চিলি।বিখ্যাত নোবেল প্রাইজ পাওয়া সাহিত্যিক পাবলো নেরুদার দেশ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত, পরিচিত সামরিকজান্তা অগাস্টেপিনোচিওর দেশ হিসেবেও।


সামরিক জান্তা অগাস্টে পিনোচের সাথে ইষ্টারআইল্যান্ড এর নাম না জানা এক আদিবাসী সুন্দরী

সেই চিলি থেকে রাপা- নুই ২,৩০০মাইল দূর।আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এক দ্বীপ, কত পর্যটকের আরাধ্য স্বপ্নের দ্বীপ তাহিতিও ২৫০০ মাইলদূর।কাছে্র যে প্রতিবেশী জনমানবহীন এক দ্বীপ তার দুরত্বও ১৪০০মাইল।রাপা নুই দ্বীপ যখন আবিস্কার হয় তখন তাকেও প্রায় জনমানবহীন বলার মতই অবস্থা।


এমনি এক পাল তোলা জাহাজে চড়ে এসেছিলেন ওলন্দাজ কাপ্তেন

প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে এক দুঃস্বাহসী ডাচ আবিস্কারকের নজর পরে রাপা -নুই এর উপর, আর সেই তারিখটি ছিল ১৭২২ খৃষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল। মনে হয় সেদিনটি ছিল রবিবার, খৃষ্ট-ধর্মাবল্মবীদের পবিত্র একটি দিন ইষ্টারসানডে।সেই পবিত্র দিনটি থেকেই উনি এর নাম রাখলেন ইষ্টারআইল্যান্ড।


সমুদ্রের দিকে পেছন ফেরা এক সার পাথরের মুর্তি, ধারনা করা যায় এরা শাসক গোষ্ঠিরই অন্তর্ভুক্ত

যা হোক হাজার তিনেক আদিবাসী অধ্যুষিত সেই দ্বীপে ওলন্দাজ অধিপতি তিন ধরনের বৈশিষ্টপুর্ন গোত্রের মানুষের সন্ধান পান।
সেই তিন গোত্রের লোকেদের ছিল তিন রকম গায়ের রঙ।একদল ছিল গাঢ় কৃষ্ণবর্ন, কিছু ছিল লালচে রঙের যা রেড -ইন্ডিয়ানদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।আর আরেক দল মানুষ ছিল লাল চুলের শ্যমলা গায়ের রঙ বিশিষ্ট।


সারা দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাথরের মুর্তি যা মোয়াই নামে পরিচিত

এ দ্বীপটি তে তিনি আঁখ, কলা, ডুমুর ইত্যাদি শস্যের সন্ধান লাভ করেন বলে তার লেখায় উল্লেখিত রয়েছে।তবে সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক যে বস্তুটি তিনি দেখতে পান তা হলো দ্বীপের প্রান্ত ঘেষে সমুদ্রের দিকে পেছন ফিরে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করানো অদ্ভুত মানব চেহারা বিশিষ্ট শত -শত দৈত্যাকার পাথরের মুর্তি।


সমুদ্রের দিকে পেছন ফিরে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে থাকা দৈত্যাকার পাথরের মুর্তি।
কঠিন আগ্নেয়শিলা খোদাই করে তৈরী এই মুর্তিগুলোর সংখ্যা ছিল ৮৮৭টি যা মোয়াই নামে পরিচিত।তবে সেই ওলন্দাজ পরিব্রাজকের পর তৃতীয় যে ইউরোপিয়ান সেখানে পা রেখেছিলেন তিনি হলেন বিখ্যাত বৃটিশ নাবিক এবং আবিস্কারক জেমস কুক।১৭৭৪ সনে তিনি ইষ্টারআইল্যন্ডে গিয়ে দেখতে পেলেন খুব অল্প সংখ্যক মুর্তিই তখন দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে।বেশিরভাগ মাটিতে শায়িত অবস্থায় পরে আছে দ্বীপের চারিদিকে, কিছু বা ছিল অর্ধনির্মিত আর কিছু কিছু ছিল মাটিতে আংশিক বা পুরোটাই প্রোথিত।


মাটির ভেতর অর্ধেক শরীর প্রোথিত মোয়াই, বিশেষজ্ঞদের কল্পনায়

এখন প্রশ্ন হলো কারা এই দ্বীপে এত বিশাল বিশাল মুর্তি তৈরী করেছিল? সেখানে যদি না তৈরী হয় তবে তা সেই সুদুর জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কি ভাবে আসলো?কারা নিয়ে এসেছিল সেইটনটন ওজনের কঠিন আগ্নেয়শিলার মুর্তি? যদি সেখানেই বানানো হয় তবে সেই লোহার মত শক্ত পাথর খোদার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তারা কোথায় পেয়েছিল?নাকি নিজেরাই সে সবআবিস্কার করেছিল ? না এর কোন সঠিক উত্তর আজও মেলেনি রয়ে গেছে অজানা আর তা জানার জন্য আজো চলছে বিস্তর গবেষনা, বিভিন্নজনের বিভিন্ন মতবাদ।


পলিনেশিয়া থেকে নৌকায় চেপে ইষ্টার আইল্যন্ডের দিকে আসা একদল মানুষ

কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে এ দ্বীপে প্রথম বসতি গেড়ে ছিল পলিনেশিয়া থেকে আসা মানবগোষ্ঠী আর তাদেরই তৈরী এই মুর্তি।এই পলিনেশিয়ানরা কাঠের নির্মিত সরু নৌকা যাকে ক্যানো বলা হয়ে থাকে তাতে চেপে পাড়ি দিত হাজার হাজার মাইল।আর এই পথ পাড়ি দিতে তারা সাহায্য নিতো রাতের আকাশে নক্ষত্রের মত ফুটে উঠা তারকারাজির, সুনীল আকাশের রঙ, মেঘপুঞ্জের আকার-আকৃতি, ফুলে ফেপে আসা রাশি রাশি তরঙ্গ-মালার গতি পথ আর সেই সাথে সমুদ্রের বুকে খাবার খুজতে আসা সামুদ্রিক পাখিদের ঝাঁক দেখে।


নীলাকাশের বুকে দু দিকে দু ডানা মেলে উড়ে চলেছে সাগরের রাজসিক এক পাখী সিগাল

সেই বিশেষজ্ঞদের মতে খৃষ্টপুর্ব ৪০০ অব্দে পলিনেশিয়ান মানবরা প্রথম পা ফেলেছিল সেই দ্বীপে।তাদের মতে সেই সমুদ্রস্রোত যা তাদের ভাসিয়ে এনে ছিল সেই জনমানবহীন দ্বীপে তা আর তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় নি।আটকে পড়েছিল তারা সেখানে জন্মের মত।
ধারনা করা হয়ে থাকে যে সে সময় সেখানে বসবাস করা মানুষ জাতির মাঝে দুটি শ্রেনী ছিল।এক শ্রেনীর ছিল লম্বা কান আরেক শ্রেনীর ছিল খাটো কান। মনে করা হয়ে থাকে লম্বা কানের জাতিরা ছিল শাসক আর যারা প্রথম এসে ছিল তারাই ছিল ছোট কান-ওয়ালা শ্রমিক শ্রেনীর। বেশীরভাগ মুর্তির লম্বা কান থাকায় এ ধারনা করা হয়।পরবর্তীতে ছোট কান-ওয়ালারা শাসক শ্রেনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে এবং তাদের বেশীর ভাগকে হত্যা করে বলে মনে করা হয়ে থাকে।


আগ্নেয়গিরির জ্বালা মুখের কাছের কঠিন শিলা দিয়ে নির্মিত হতো এই মুর্তি


শিল্পীর কল্পনায় আঁকা পাথরের মুর্তি তৈরী
রাপা নুই দ্বীপের মুর্তিগুলো দেখে বোঝা যায় যে এসব সেই আগ্নেয়দ্বীপের মৃত আগ্নেয়গিরির মুখের কাছের দেয়াল থেকে কঠিন আগ্নেয়শিলা কেটে সেখানেই ভাস্কররা ভাস্কর্য্যগুলো তৈরী করেছিল।সেই দৈত্যাকার মুর্তিগুলো তৈরী হবার পর সেগুলো কেটে এনে অথবা গড়িয়ে গড়িয়ে আগ্নেয় পর্বতের গোড়ায় নিয়ে আসা হতো।কারো কারো মতে গাছ কেটে তার গুড়ির উপর শুইয়ে মুর্তিগুলোকে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় টেনে নিয়ে যাওয়া হতো।এভাবে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলতে ফেলতে দ্বীপটি একসময় গাছ শুন্য হয়ে পরেছিল।যা ছিল সেখানকার পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি বড় কারন বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।আর সেই বৈরী পরিবেশের কারনেই দ্বীপটি পরবর্তীতে পরিত্যক্ত এবং প্রায় জনমানবহীন হয়ে পড়েছিল।


গাছের গুড়ির উপর শুইয়ে কি ভাবে টেনে নিয়ে যেতো মুর্তিগুলো তা পরীক্ষা -নিরীক্ষা করে দেখছে একদল বিশেষজ্ঞ

এই টন টন ওজনের মুর্তিগুলো জায়গা মত নিয়ে যাওয়ার সর্বশেষ মতবাদ হচ্ছে পুলি পদ্ধতি।তাদের সেই নির্মানশালা আগ্নেয়গিরির মুখের কাছ থেকে মুর্তিগু্লোকে গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে নামিয়ে এনে চারিদিকে শক্ত দড়ি বাধা হতো।তারপর নির্দিষ্ট জায়গায় টেনে নিয়ে যাওয়া হতো সেগুলোকে। সে সময় দ্বীপের ঘাসগুলোও ছিল দারুন শক্ত যা থেকে এই দড়ি বানানো হতো।


দড়ি দিয়ে পুলি পদ্ধতিতে টেনে আনছে সেই দৈত্যাকার মুর্তি শিল্পীর কল্পনায় আকাঁ

পরবর্তী কালে সে স্থানে ব্যাপক ভাবে মেষ-চারণ ভূমির সৃষ্টি হওয়ায় এই ঘাসের বিলুপ্তি ঘটেছে।সেই ঘাসের দড়ি-বাধা মুর্তিগুলো তিরিশ-পয়ত্রিশজন লোক মিলে পুলি পদ্ধতিতে টেনে চলতো। বেশিরভাগ লোক দড়ির এক দিক ধরে টানতো আর অন্য মাথায় অল্প কিছু লোক পেছন দিকে টেনে ধরতো।এভাবে আগু পিছু করতে করতে মাসখানেক ধরে এক একটি মুর্তি কয়েক মাইল পথ পেরিয়ে সমুদ্রতীরে দ্বীপের কিনারে তাদের নিদৃষ্ট জায়গায় পৌছাতে সক্ষম হতো।


সারি বেধে দাঁড়িয়ে থাকা মোয়াই
সুনীল সমুদ্রের দিকে পেছন ফেরানো দ্বীপের মাঝ বরাবর দৃষ্টি দেয়া এই পাথুরে দৈত্যগুলোকে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে রাখতো।।ইষ্টার দ্বীপে যে ৮৮৭ টি মোয়াই বা পাথুরে দৈত্যাকৃতির মুর্তি পাওয়া যায় তার মধ্যে অল্প কিছু মাত্র তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পেরেছিল।বাকিগুলো পথের মাঝে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।কারণ সেই প্রচন্ড ভারী মুর্তিগুলো টেনে আনার সময় কোনটি যদি উলটে যেত তবে তাকে আর সোজা করা সম্ভব ছিলনা তাদের পক্ষে।তখন তাদের আরেকটি মুর্তি আনার জন্য যেতে হতো।


মাটিতে পরে যাওয়া এই দৈত্যাকৃতির মুর্তি যা আর টেনে তোলা সম্ভব ছিল না কারো

রাপা -নুই দ্বীপের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতো এই মুর্তি তৈরী করা হচ্ছে বিধাতার ইচ্ছায়।আর তার সন্তুষ্টির জন্যই তারা সবাই মিলে এই বিশাল বিশাল মুর্তি তৈরী করতো। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া যা নির্মান করা ছিল দুঃসাধ্য এক কাজ।সেখানকার শাসক শ্রেনীরা সবাই তাদের পুর্বপুরুষদের পুজো করতো। তবে তারা সবাই একটি দেবতারই পুজো করতো যার নাম ছিল MAKE MAKE ।


দ্বীপ-বাসীর একমাত্র পুজিত দেবতা MAKE MAKE

১৯৫০ খৃষ্টাব্দে মূর্তিগুলো প্রথম মাটি খুড়ে বের করে প্রত্নতাত্বিকরা।এর পর তার ছবি তুলে প্রকাশ করলে সারা দুনিয়াব্যাপী এক প্রচন্ড আলোড়নের সৃষ্টি হয়।সেই আলোড়ন যা আজও থেমে যায়নি।অনেক গল্পের প্রচলন আছে এই দ্বীপকে ঘিরে।কেমন করে এই নির্জন নিভৃতদ্বীপে প্রথম মানুষ আসলো? কোথা থেকে আসলো? যারা এসেছিল শেষ পর্যন্ত কি হলো তাদের ?একটা দুটো নয় কে বানালো এই শত শত পাথুরে দৈত্য ! ইত্যকার প্রশ্ন আজও ভেসে বেড়ায় এখনো।


আগ্নেয়গিরির কঠিন শিলা খোদাই করে মুর্তি
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের ধারনা এক সময়ের এই জনশুন্য দ্বীপে জনসংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছিল প্রায় ১১,০০০হাজারের মত।গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ , রোগব্যাধি সম্পদের অপ্রতুলতা, দাসব্যবসায়ীদের ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো রাপা-নুই বাসী।আস্তে আস্তে তারা শুরু করলো একে অপরের মাংস খাওয়া। শ্রমিকরা বন্ধ করলো মুর্তি বানানোর কাজ। দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্য্যগুলোও কাত হয়ে পড়লো এধার ওধার। পরবর্তীতে আশে পাশের সমুদ্রতলেও কিছু কিছু মুর্তি পড়ে থাকতে দেখা যায়।


সাগর তলে পরে থাকা মোয়াই
বেশীরভাগ মানুষই তখন নির্মম মৃত্যুকে বরণ করেছে যখন প্রথম ইউরোপীয়রা সে দ্বীপে পা রাখলো।তারা দেখতে পেয়েছিল সৎকার না হওয়া অনেক লাশ এধার ওধার পরে থাকতে।অর্থাৎ তাদের কবর দেয়ার ও কেউ ছিল না বা যারা ছিল তাদের ও সেই তাগিদ ছিলনা কারন তারাও অনাহারে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় ছিল।এটা হলো একটা মাত্র তত্ব।এমন শত শত তত্ব রয়েছে এই রহস্যময় দ্বীপ ও তাদের বাসিন্দাদের নিয়ে।


মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে দ্বীপের চারিদিকে মূর্তির সারিগুলো কালো কালো বিন্দু দিয়ে চিন্হিত

একটি তত্ব হচ্ছে যেমন ইষ্টারআয়ল্যান্ডবাসীর প্রধান খাদ্য ছিল মিষ্টি আলু যা তারা চাষ করতো।মিষ্টি আলুর জন্মভুমি মধ্যআমেরিকা।সেই সুদুর আমেরিকার মিষ্টি আলু ইষ্টার-আয়ল্যান্ডবাসীরা কি করে পেলো সে প্রশ্ন আসতেই পারে।এটা কি সম্ভব যে ইষ্টার-আয়ল্যান্ডের কিছু লোক ২৩০০ মাইল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেই সুদুর চিলিতে গেলো, সেখানে তারা মিষ্টি আলু খুজে পেয়ে নিয়েএলো ? ফিরে আসলো সেই দ্বীপে যেখানে কিনা তারা আটকে পরেছিল? এটা অসম্ভবই মনে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইয়োরোপ থেকে আমেরিকার সবচেয়ে কাছের ভূখন্ডটির যে দূরত্ব তারো চেয়ে বেশী একটা দূরত্বের ভূখন্ডে গিয়েছে তারা যে ভূখন্ডটি এই ১৪৯২ সালে জন অধ্যুষিত হয়েছে মাত্র।


এমন করে সমুদ্র পারি দিয়ে কি তারা মিষ্টি আলু আনতে গিয়েছিল ২৩০০ মাইল দুরের দেশ চিলিতে!

তাহলে প্রশ্ন আসে ইষ্টার-আয়ল্যান্ডে কি চিলির লোকেরাই বসতি বানিয়েছে? কন-টিকি নামের যে বই বা ছবিটির কথা আমরা জানি তার ভিত্তিটাই গড়ে উঠেছে এই থিওরীর উপর।তারপরে ও ইষ্টার-আয়ল্যান্ডের মাটি খুড়ে যে শবাধার মিলেছে তাদের ডিএনএ বলছে এরা পলিনেশিয়ান, আমেরিকান ইন্ডিয়ান নয়। পলিনেশিয়ানরা তাদের জীবনটাই কাটিয়েছে জলে।তারা জানতো কি করে ছোট ছোট ক্যানো ভাসিয়ে জলপথে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিতে হয়।তারা জানতো, কোথায় যাচ্ছে তারা।মজার ব্যাপার আমেরিকান আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা এটাই জানতোনা।


আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা জানতো না এমন করে সাগরবক্ষে নৌকা ভাসানোর কথা

তারপরে ও হতে পারে, কিছু আমেরিকান ইন্ডিয়ান ঝড়ের মুখে পড়ে ইষ্টার-আয়ল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে পড়েছিলো আর তাদের কাছে ছিলো মিষ্টি আলুর বীজ। পাখিদের পেটে চালান হয়েও এই বীজ সেখানে গিয়েছিল অন্যান্য শস্যেরমত !কিন্ত আলু উৎপন্ন হয় এর গায়ে জন্ম নেয়া অঙ্কুর বা স্প্রাউট থেকে, সুতরাং পাখির পেটে করে বীজ আসা একেবারেই অসম্ভব।ফলে নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না যে আমেরিকা থেকেই গিয়েছিল সেই দ্বীপের আদিবাসীরা।


লাল টুপি পরিহিত বা চুড়ো বাঁধা এক সার মোয়াই

এভাবেই বিভিন্ন মতামতের ফলে সেখানকার বসতীদের ইষ্টারদ্বীপে আগমন কোথা থেকে হয়েছিল তা নিয়ে পৌছানো যাচ্ছেনা কোন স্থির সিদ্ধান্তে। আবার কারো কারো দৃঢ বিশ্বাস এই বিশাল ওজনের মোয়াই বা মুর্তিগুলো কোন ভাবেই সেই দ্বীপ বা পৃথিবীর মানুষের তৈরী হতে পারেনা। এটা অবশ্যই মহাকাশ থেকে কোটি কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা কোন ভিন গ্রহের বাসিন্দাদের কাজ।পাথরের গায়ে স্পেস স্যুট পড়া বেশকিছু আঁকা মুর্তি চোখে পড়ে।এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরো কিছু কিছু প্রমানও তারা দিয়েছে।


মুর্তির গায়ে এ ধরনের ভিনগ্রহের মানুষের ছবিও আঁকা রয়েছে

ভিনগ্রহবাসীর কাজ বলে যারা বিশ্বাসী তাদের আরেকট যুক্তির পেছনে ছিল রাপা -নুই দ্বীপে আবিস্কৃত কিছু শিলালিপি যা Rongorongo নামে পরিচিত। সে সময় প্রশান্তমহাসগরীয় অঞ্চলের জনগন লিখতে জানতো না।এমনকি আমেরিকার রেডইন্ডিয়ানরাও না।আর আমরা সবাই জানি আজ থেকে কয়েক হাজার খৃষ্টপুর্বে এই এশিয়া মহাদেশেই সর্বপ্রথম লেখার সুচনা হয়েছিল।তা হলে কি করে সেই জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাপা -নুই এর লোকেরা লিখতে শিখেছিল! তাদের সে লেখার পদ্ধতি ছিল একেবারেই তাদের নিজস্বধারার।


রয়েছে পাথরের গায়ে খোদাই করা স্পেস শিপের ছবি যা যুগের তুলনায় এক অবিশ্বাস্য

সে শিলা পাথরগুলোতে কি লেখা তা আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।কে তাদের লিখতে শিখিয়েছিল ? কোথা থেকে তারা এই অভিনব লেখা শিখে এসেছিল ? এমন লেখা তো পৃথিবীর আর কোন অঞ্চলে দেখা যায়না। প্রশ্ন উঠে তবে কি করে লিখতে জানলো সেই জগত বিচ্ছিন্ন সেই দ্বীপবাসীরা ? তাহলে কি সেই ভিনদেশী গ্রহবাসীরাই তা শিখিয়েছিল দ্বীপবাসীদের! পাথরে লেখা এই শিলালিপিতে ভিন গ্রহের থেকে আসা লোকের উল্লেখ রয়েছে বলে ধারনা করা হয়।


রাপা- নুই এ পাওয়া শিলালিপি Rongorongo অনুমান করা হয় এতে আছে ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের কথা

তাই বলা যায় এই রাপা- নুই দ্বীপ বা ইষ্টার-আইল্যান্ডের হারিয়ে যাওয়া বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা আর দ্বীপের চারিদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথুরে দৈত্য তৈরীর ব্যাপারটি সত্যিরহস্যময়।কি হতে পারে?


লম্বা কানওয়ালা মোয়াই
সেই লম্ব কর্ন বিশিষ্ট শাসকদলই কি বিধাতাকে সন্তষ্ট করার জন্য ছোটকানওয়ালা লোকদের অমানুষিক পরিশ্রমে বাধ্য করেছিলো সেই ৮৮৭ টা দৈত্যাকার মোয়াই তৈরীতে ! নাকি মেনে নেবো এগুলো কোন ভিনগ্রহের মানুষের কাজ হিসেবে ! সেই সুদূর গ্রহ থেকে আসা একদল গ্রহবাসী এই বিশাল পাথুরে দৈত্যগুলো বানিয়েছিল নির্জন দ্বীপে বসে বসে।


এত জটিল রহস্য উধঘাটনে এই বাকহীন পাথরের মোয়াইরা সাহায্য করতে পারবে কি ?
এই দ্বীপ আজও পৃথিবীতে এক বিশাল অমীমাংসীত রহস্যের আধার হয়েআছে রহস্যকারবারীদের কাছে।
কে জানে সঠিক তথ্য যে কোনটি হয়তো সময়ই বলে দেবে। অনেক কিছু বলার আছে, আছে অনেকজনের অনেক রকম মতামত।তবে আমি আমার পাঠকদের জন্য খুব সংক্ষিপ্তভাবে এই রহস্যময় দ্বীপের উপর কিছুটা আলোকপাত করতে চেয়েছি।সাথে বোঝার সুবিধার্থে নেট থেকে কিছু ছবি সংযোগ করা হলো।


এই রহস্যের কঠিন জট খোলার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের গত্যান্তর নেই।

তথ্যসুত্র আর ছবি নেট




সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬
৭৮টি মন্তব্য ৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×