somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি (ছবি ব্লগ)

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে আমাদের বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার এক সার্বজনীন উৎসব । এসো হে বৈশাখ গানের সুরে মাতাল হয়ে বাংলা বছর শুরু হবে আমাদের দিনপঞ্জীতে ।এই বৈশাখ কে উপলক্ষ করে শুরু হবে কত রকম মেলা । আজ বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরের এক বর্ষবরণের মেলাকে আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম ।


সিয়েম- রেপ যাবার সময় চোখে পড়লো মেলায় ছুটে যাওয়া মানুষের দল । মাইক্রোবাসের জানালার ভেতর থেকে তোলা

দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার বিখ্যাত একটি উৎসব হলো ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল । প্রতি বছর নভেম্বর মাসে এই উৎসবটি ক্যম্বোডিয়ার প্রতিটি শহরেই লোকজন গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে । আর এ উপলক্ষে কত কিছুর আয়োজন যে শুরু হয় তা বলে শেষ করা যাবে না । সাথে থাকে তাদের বিখ্যাত নৌকা বাইচ । প্রদেশ সিয়াম-রেপ ও এর বাইরে নয় । সারা শহর আর গ্রাম থেকে নানা রকম মানুষ এসে হাজির হয় সিয়েম রেপ নদীর ধারে। আর এই নদী আর তার পাশের রাস্তা ঘিরেই শুরু হয় মেলা । এখানে উল্লেখ্য যে এদিন থেকেই নমপেনের বিখ্যাত নদী তোনলে -সাপ এর পানি পুরো উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। অর্থাৎ বিশাল মেকং নদী থেকে পানি বয়ে চলে তোনলে- সাপ নদীর উতস তোনলে- সাপ লেকের দিকে রাজবাড়ীর সামনে এই নদীর পাড় ঘেষেই অনুষ্ঠিত হয় ক্যম্বোডিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আর বিশাল ওয়াটার ফেষ্টিবেল।


মেলার রাস্তায় ঢুকতেই হাতের বা দিকে তারকা বিশিষ্ট হোটেল যার চত্বরে বসা অতিথিরা তাদের উৎসব পালনে ব্যস্ত


হোটেলের ঠিক পাশেই বসে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপর পড়া বৃদ্ধ ভিক্ষুক

যাক আমরা দেখি সিয়েম রেপের মেলা। যেদিন এখানে এসে পৌছালাম সেদিনই ছিল তাদের পানি ছিটানোর উৎসব। দেখেছি একদা স্রোতস্বীনি বর্তমানে মৃতপ্রায় সিয়েম-রেপ নদীর দু ধারে মানুষের মেলা। আজ তাদের বর্ষবরণ সুতরাং মেলা তো আছেই । হোটেলে থেকে বের হয়ে টুকটুক নিলাম কারন তারা বোঝাতে চাইলো যদি আমরা হেটে যাবার চেষ্টা করি তবে অনেক পথ হাটতে হবে । সুতরাং তিন মার্কিন ডলার দিয়ে টুকটুক ভাড়া নিলাম ।এ রাস্তা সে রাস্তা ঘুরিয়ে মেলার খানিকটা দুরেই থামিয়ে বল্লো আর ভেতরে যাওয়া নিষেধ । আসার সময় দেখি সেটা আমাদের হোটেল থেকে এতটাই কাছে যে এর পাশেই আমরা রাতে খেতে আসতাম ।


এখান থেকেই শুরু হলো হাটা পর্ব ।


ঠেলাগাড়ীর ভেতর ফল মুল আর খাবার দাবার , ফলের ভেতর কাঁঠালের কোয়া দেখা যাচ্ছে ।
আমার দেখা মায়ানমার , থাইল্যন্ড , ক্যম্বোডিয়ায় ফল বিক্রেতারা কাঁঠালের কোয়া ছাড়িয়ে পিস বা ওজন হিসেবে বিক্রী করে, সুন্দর ফয়েলে মুড়িয়ে। এমন কি ভেতরের বিচিও ফেলে দেয়া থাকে । আমাদের মত ঘরদোর ভরে ফেলে না কাঠালের বর্জ্য দিয়ে ।


এটা মায়ানমারের চায়না টাউনের । দেখুন কি সুন্দর করে কাঠাল বিক্রী করছে । অন্যান্য ফলের কথা নাই বা বললাম


ভারী মিষ্টি মেয়ে আর পেছনে সেই আমাদের দেশের মতই প্লাস্টিকের বিভিন্ন নকশার বেলুন । জানি না মেয়েটিকে কিনে দিয়েছিল কিনা ?


বেছে নিন ২০০০ রিল, দেখে নিন ২০০০, এক দাম দুই হাজার,এমনটি হয়তো বলছে শার্ট বিক্রেতা মহিলা তার নিজ ভাষায়। উল্লেখ্য গার্মেন্টস শিল্পে ক্যম্বোডিয়া অনেক এগিয়ে গেছে ।


স্থানীয় খাবারের দোকান, চকলেট আচার এসব মনে হচ্ছে বাইরে থেকে


পদ্ম আকৃতির রঙ্গীন শোলার ধুপকাঠি জালানোর পাত্র।


ধুপকাঠি জালানোর পাত্রের আরেকটি ছবি


এটাই হলো আজকের দিনের প্রধান আকর্ষন "নৌকা বাইচ"। একে ঘিরেই এই মেলা আর নদীর দুপারে মানুষের ভীড়।


নদীর ঐ পাশে সাজানো বিভিন্ন দলের মঞ্চ
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি , হঠাৎ চোখে পড়লো ক্যম্বোডিয়া পিপলস পার্টির উলটোদিকেই চাদোয়া টাঙ্গানো এক সাজানো মঞ্চ । বুঝলাম সমাজের গন্যমান্য অতিথিদের জন্য ।


পার্টি অফিস


মঞ্চের নীচে লাল ভেল্ভেটের চেয়ার । সন্মানিত অতিথিরা বসে আছেন ।
মুখ বাড়িয়ে দেখতে গিয়েছি কি হচ্ছে অমনি নিরাপত্তা রক্ষী সহ সেখানকার ব্যবস্থাপকরা আমাদের সাদর আমন্ত্রন জানালো ভেতরে এসে বসার জন্য । আমিতো যাবোইনা । তারাও বার বার ডাকছে বসার জন্য। সহ পর্যটক বল্লো "চলো অসুবিধা কি ওরাই তো ডাকছে"। আমি দ্রুত আমাদের কাপড়-চোপড়ের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম ডাকা ডাকির রহস্য ভেদের জন্য । সহ পর্যটক একটা টি সার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যন্ট আর আমি ট্রাউজার আর কুর্তি । মেলাতে পারছিলাম না কেন ডাকছে । বার বার নিজেদের পোশাক আশাক দেখি আর ওদের দিকে তাকাই। যাক চেয়ারে গিয়ে বসলাম । ভীষন অস্বস্তি হচ্ছে। পাশেই কিছু হাসি খুশী নিরাপত্তা রক্ষী বসা । আমারতো সেই সুকুমার রায়ের কবিতার দশা । "কেউ যদি পা পিছলে পড়ে , প্যয়দা এসে পাকড়ে ধরে, কাজীর কাছে হয় বিচার, একুশ টাকা দন্ড তার "। যাক শেষ পর্যন্ত সসন্মানেই বসে উপভোগ করলাম সেই জাতীয় উৎসব তাদের।


সামনের সারিতে সবুজ পোষাক পড়া বিশিষ্ট অতিথিরা । বাইচের প্রস্ততি চলছে

স্বস্ত্রীক প্রধান অতিথির পরিচয় জানা হলো না । রাজশাসিত ক্যম্বোডিয়ার রাজ বংশীয় কেউ নাকি সেই প্রদেশ প্রধান অজানাই রয়ে গেল । শুরু হলো নৌকা বাইচ । আস্তে আস্তে আঁধার ঘনিয়ে আসছে । বিভিন্ন রঙের পোশাক শোভিত মাঝি মাল্লা নিয়ে নৌকা যেখানে প্রস্তত তা আমাদের নজরের বাইরে। তাই সবার মত দারুন উত্তেজিত আমরাও মনিটরে চোখ রেখে বসে আছি ।


সবুজ দল জিতলো , মুহুর্মহু করতালিতে ফেটে পড়ছে সবাই
আস্তে আস্তে সেই চাঁদোয়ার নীচ থেকে বেরিয়ে এলাম উন্মুক্ত রাস্তায় । অন্ধকার নেমে এসেছে, আবার পথে হেটে চলেছি আমরা । মাথার উপর আলোক সজ্জা ।


অনেকের সাথে হাটা শুরু ভাঙ্গা পথের মেলায়
পথে দুপাশের বিচিত্র সব খাবারের দোকান। বসেছে স্থানীয় গ্রামীন খাবারের পসরা নিয়ে।কেনার জন্য আমাদের দিকে হাসি মুখে চেয়েছিল । চোখে প্রত্যাশার দৃষ্টি । কিন্ত অপরিচিত খাবারের ব্যপারে আমার মত ক্ষুদে পর্যটক এখনও বেয়ার গ্রীল বা লোনলি প্ল্যানেটের পর্যটকের ধারে কাছেও যেতে পারে নি। ভরষা সেই কে এফ সি বা ম্যকডোনাল্ডস।


আমাকে ইশারায় যা বল্লো তাতে বুঝলাম মেলা শেষ বলে সে আমাকে এক পট আট আনা, দুই পট বারো আনাতেই দেবে এই পোকা ভাজা


আমাকে ছবি তুলতে দেখে বিক্রেতা মহিলা তাড়াতাড়ি কিছু সবুজ পেয়াজ ডাটিতে সাজিয়ে দিল তার পসরা
আমি মাথা ঝুকিয়ে হাসি মুখে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে চললাম সামনে ।


এই খাবারটা আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের খাবার তালিকায় দেখা যায়


আমার কৌতুহল দেখে খুলে দেখালো কি আছে । জানি না কি তবে ভাতের সাথে কালো কালো ওগুলো কি কোন কিছুর বীজ না পোকা বুঝলাম না । তাই আর কেনার দুঃসাহস হলো না ।


ছোট ছোট মুরগী ভাজা সাথে ভাতের প্যকেট ।
আমরা এখানে বিনা বাঁধায় ছবি তুলছিলাম । কিন্ত পাশেই নাইট মার্কেটের অস্থায়ী দোকানীরা খুব চালাক। কাচের মধ্যে লিখে রেখেছে এই সব সাপ ভাজা, ব্যাং ভাজা না কিনে শুধু ছবি তুলতে গেলে এক মার্কিন ডলার দিতে হবে।


এর ভেতরে কি আছে আল্লাহ মালুম কিন্ত কি সুন্দর তাল পাতায় বোনা পাত্রগুলো । সাজিয়ে রাখার মত
এসব দেশের মানুষগুলো সত্যি অনেক শিল্পমনা। তাদের সব কিছুতে থাকে সৌন্দর্যের ছোয়া। আমরা আলো আধারি পথে হেটে চলেছি । চেয়ে দেখি দু দিকের সবুজ ঘাসে সতরঞ্জি বিছিয়ে খেতে বসেছে দূর দুরান্ত থেকে আসা মানুষ পরিবারের লোকজন নিয়ে। মাদুর বিছিয়ে বাড়ী থেকে রান্না করে এনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাবার এই পিকনিক সংস্কৃতি আমি নমপেনেও দেখেছি, ছুটির দিনে রাজ বাড়ী আর নদীর সামনের বিশাল চত্বরে ।


শ্রান্ত কিন্ত তৃপ্ত লোকজনের রসনা বিলাস ।


এবার ফেরার পালা , হৈ হুল্লোড় করে হেটে হেটে চলেছে উচ্ছল তরুনীর দল ।


কেউবা সঙ্গীর মটর সাইকেলে চেপে


হিসাব মেলাচ্ছে হয়তো সারা দিনের বিকিকিনির ।


ভাঙ্গা মেলা থেকে ফিরে চলেছে তার পসরা নিয়ে


ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে , ছুটে চলেছে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ।


নেস্ক্যাফে কফির প্রমোশন চলছে


হোটেলের ফেরার পথে দেখি হাসি খুশী মেয়েরা এক্যুরিয়ামে পা ডুবিয়ে ফিশ ম্যসেজ করছে বিনে পয়সায় ।

এই যে এত এত ছেলে মেয়েরা রাত করে এক সাথে ঘুরছে, ফিরছে, পথ চলছে কৈ কোন ছেলেদের তো দেখলাম না মেয়েদের দেখে টিজ করছে বা কোন অশালীন দৃশ্য চোখে পড়লো না । ওরাওতো আমাদের মতই এক অনুন্নত দেশ ।

এক শুভান্যুধায়ীর অনুরোধে নামটা পালটে দিলাম।

সব ছবি আমাদের ক্যমেরায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৪৪
৬৯টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×