আমাদের দেশের মিঠাপানির একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল তাঁর অপার্থিব সৌন্দর্য্য নিয়ে
ফর্সা গায়ের রঙ কাদা পানিতে মাখামাখি, মাথার একরাশ সোনালী চুল জট পাকিয়ে আছে, ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে তরুনীটি কাপা কাপা হাতে ধরে আছে একটি কাদামাখা পিস্তল। অপেক্ষা করছে ভয়ংকর এক দানবের। অবশেষে গাঢ় কালো পানি থেকে মাথা তুলে তাঁর সুতীক্ষ ৬৪টি দাত নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত মেয়েটির উপর ঝাপিয়ে পড়তে উদ্যত হলে সরে গিয়ে ট্রিগারে চাপ দিলো লী। ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল নোনাপানির বিশাল কুমিরের মাথাটি।
দূর থেকে রাতারগুল
ঘাটে নৌকার সারি
এক ছুটির দিনে এডাম তাঁর বৌ গ্রেস আর শালী লীকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর প্রদেশের এক সোয়াম্প ফরেস্টে বেড়াতে যাবে, উদ্দেশ্য মাছ ধরা। লম্বা চওড়া পেটানো শরীর তাতে কোমরের বেল্টে রিভলবার গোজা জিম তাদের ট্যুর গাইড, ঝকঝকে নতুন নিজস্ব স্পীড বোটে তিন পর্যটককে নিয়ে রওনা দিল সেই তাদের রাতারগুলের উদ্দ্যেশ্যে। বেশ কিছুক্ষন চলার পর ভেতরে একটু খোলা যায়গায় এসে বোট থামলো । এসময় লী দেখতে পেল পানির মাঝে বেশ বড় কি যেন একটা নড়াচড়া করছে কিন্ত তারপর আর দেখা গেল না। তাঁর খানিক পরেই হঠাৎ করে এক ঝটকায় উলটে গেলো তাদের স্পীড বোট আর একটু পরেই ভেসে উঠলো গাইড জিমের আধ-খাওয়া লাশ।
এডাম বুঝতে পারলো একটা কুমির তাদের আক্রমন করেছে। সে তাড়াতাড়ি তাঁর স্ত্রীকে একটি গাছের উপর উঠিয়ে দিয়ে লীর খোজ করতে লাগলো। লী তখন সেই উল্টানো স্পীড বোটের নীচে আটকে পরেছে, তাঁর পা জড়িয়ে গেছে দড়িতে। এরই মাঝে সেই কালো কুচকুচে বিশাল দেহী কুমির এসে হাজির। এডামকে তাঁর স্ত্রী সতর্ক করলে সে লীকে খোজা বাদ দিয়ে গাছে উঠে পরলো। লী ততক্ষনে দড়ি থেকে পা মুক্ত করে বেরিয়ে এসে দেখে সেই ভয়ংকর কুমির তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। অনেক ঘটনা শেষে দুদিন পর চার জনার মাঝে একমাত্র জীবিত লী কি করে তাঁর বোনের মৃতদেহ নিয়ে ফিরে আসলো সেটা আপনারাই দেখুন, ২০০৩ এর সত্যি ঘটনা নিয়ে নির্মিত এক ভয়ংকর সাসপেন্স আর হরর ম্যুভিতে, নাম Black water । ম্যুভিটি ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া আর ইউকের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত।
বিশাল দেহী রিভলভার আলা জিম নয়, এই পিচ্চিটাই ছিল আমাদের নৌকার মাঝি
গাছের আড়ালে আরেকটি নৌকা যাচ্ছে অন্য দিকে
এগিয়ে যাচ্ছি বনের গভীরে, ম্যুভি দেখার পর এখন ভয় লাগে
বনের ভেতর দিয়ে
রাতারগুলের অপরূপ সৌন্দর্য্য
যাই হোক এই ম্যুভি দেখলাম আমি ২০২০ এ আর রাতারগুল গিয়েছিলাম তারও কয়েক বছর আগে। সত্যি বলছি এই ম্যুভি যদি আগে দেখতাম তাহলে রাতারগুলে যাবার আগে আমি তিনবার চিন্তা করতাম । পরিবেশের দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সোয়াম্প ফরেস্ট আর রাতারগুলের মধ্যে আপাতত কোন পার্থক্য দেখলাম না ।রাতারগুলের পানি হয়তো নোনা নয় (টেস্ট করে দেখি নাই) তবে মিঠা পানির কুমিরও তো আছে তাই না ? যাই হোক ম্যুভি দেখার আগে আপনারা আমার চোখে দেখে নিন রাতারগুলকে তাহলে তুলনা করতে সুবিধা হবে ।
বনের ভেতর নৌকা বাধা
বন থেকে কাঠকুটো সংগ্রহ করে আসছে মুরুব্বী
দূরে নীল আকাশ আর তার পাশে দেখা যাচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার ।
ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে
এটাও ওয়াচ টাওয়ার থেকে
ঘোরানো সিড়ি বেয়ে নেমে এলাম ।
আবার সেই বনের ভেতর দিয়ে ফিরে আসা
জালের মত জড়িয়ে থাকা গাছের মাঝ দিয়ে ফিরছি
পেছন ফিরে দেখি সেই নড়বরে টাওয়ারের উপর দাঁড়িয়ে আছে অনেক দর্শনার্থী
ভোলাগঞ্জের এই রাস্তা পার হয়েই মনে হয় গিয়েছিলাম
বর্তমানে সরকার রাতারগুল ভ্রমনের উপর ফী বসিয়েছে , আমাদের মত ফ্রী ফ্রী ঘোরা শেষ । অবশ্য পরিবেশ ধ্বংস করার করার মত যা আয়োজন চলছিল তাতে নিয়ন্ত্রন আরোপ করাটা জরুরীই ছিল ।
এই পোস্ট ভুয়া মফিজকে উৎসর্গ করতেই হয় কারন এতে আছে কুমির আর তাঁর উপর অস্ট্রেলিয়া আর ইউকের যৌথ প্রযোজনা

সব ছবি আমাদের মোবাইলে আর ক্যামেরায় তোলা
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৩০