somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেশের হরেক রকম নৌযান

১৭ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে, দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে
বালিরটেক, মানিকগঞ্জ
২০১১
একখানা ছইওয়ালা নৌকায় কালীগঙ্গা নদী দিয়ে বহু আগে একবার মানিকগঞ্জ থেকে বালিরটেক পাড়ি দিয়েছিলাম। শীতের সেই শান্ত- স্নিগ্ধ, নিস্তরংগ নদী বেয়ে এগিয়ে চলেছিল আমাদের নৌকা। নদীর পানি কমে আসায় তাঁর দুই তীর ছিল অনেক উচুতে। সেই নদীর পাড়ে গর্ত করে অজস্র পাখি ঘর বেধেছিল। তাদের কলকাকলি, নদীর কলকল আর সবুজ শ্যমল গাছের শোভায় মনে হচ্ছিলো প্রকৃত যেন তাঁর সবটুকু সৌন্দর্য্য উপুর করে দিয়েছিল চারিদিক ঘিরে। পরদিন ভোর সকালে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সুর্য্যি মামা যখন উকি দিল তখন গাছের উপর মাকড়সার জালে সেই আলো পরে যে অসাধারন এক স্বর্গীয় নঁকশা সৃস্টি হয়েছিল তা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।

নির্জন নিরালায়, দুজনে দুজনায়
মহেশখালী, কক্সবাজার ।
২০১৩
কক্সবাজার থেকে স্পীডবোটে করে গিয়েছিলাম মহেশখালিতে সে এক দারুন অভিজ্ঞতা আমাদের তিনজনার। আমিতো কিছুটা পথ সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে শুনে যাবোই না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্ত আমাদের হোটেলের পাশের রেস্তোরার গার্ড আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। যার জন্য এক অসাধারন রূপসী বাংলাকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম।

সুনসান চারিদিক
মহেশখালী, কক্সবাজার
২০১৩
এটাও মহেশখালি থেকে ফেরার সময় ঘাট থেকে তোলা ট্রলার। এখানেও আছে জোয়ার ভাটার খেলা। এখন ভাটার সময় তাই বেধে রেখেছে ট্রলারসহ আরো জলযানকে। আশেপাশে সুন্দরবনের চরিত্র অনুযায়ী লবনাক্ত পানির গাছ গজিয়ে উঠেছে আর ঠেকিয়ে রাখছে অসাধারন রূপসী দ্বীপ মহেশখালিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে।

কে গো তুমি আসো পিছু পিছু, কানে কানে বলবে কি কিছু!
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের পথে
২০১৮
নাফ নদী পার হয়ে নীল সমুদ্র বক্ষে আমাদের পিছু নিয়েছে এক নাম না জানা জলযান। সাগরের বুকে সাগর কন্যা সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের শেষ সীমানা, যে যায়নি তাঁর একবারের জন্য হলেও ঘুরে আসা উচিত। সেন্ট মার্টিন স্থানীয়রা বলে নারিকেল জিঞ্জিরা, এতো বলতেই হবে কারন অজস্র নারিকেল গাছের পাতার শর শর শব্দ সেই সাথে সৈকতে ক্ষনে ক্ষনে ভেংগে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এর মোহনীয় রূপে পাগল হয়নি এমন কাউকে খুজে পাওয়াই যে মুশকিল। আমাকে নিশিতে পাওয়া মানুষের মত তিনবার টেনে নিয়ে গেছে সেন্ট মার্টিন।

রূপসী হাওড় টাঙ্গুয়ার নিস্তরংগ জলে, ছইওয়ালা নাও খানি ভেসে ভেসে চলে
টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ, সিলেট
২০১৪
টাংগুয়ার হাওরে আমাদের মাঝি ভাই তাঁর নৌকা নিয়ে সারাদিন ছিল আমাদের সাথে। অনেক অনেক ভালো একজন মানুষ । তাহিরপুর থেকে আমাদের উঠিয়ে নিয়ে সারা টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরিয়ে এনেছিল। রূপমুগ্ধ আমরা অবাক বিস্ময়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম আমাদের দেশের অপার সৌন্দর্য্যের দিকে। অনেক অনেক বিল ঘুরিয়ে এনেছিল, এনেছিল পাখীদের রাজত্ব ঘুরিয়ে অবশেষে বিকেলে তাহিরপুরে পৌছে দিল মাঝি ভাই ।

কতদুর আর কতদুর
লালা খাল, সিলেট
২০১৪
আয়না সবুজ স্বচ্ছ লালাখালে একবার যদি কেউ নৌকায় ঘুরে আসে তাঁর মনে হবে বার বার ঘুরে আসি । আমাদের দেশের যে এত সৌন্দর্য্য তা ঘুরে না বেড়ালে চোখে পরার কথা নয়। একদিকে সিলেটের চা বাগান অন্যদিকে ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম তাঁর মাঝখান দিয়ে পান্না সবুজ রঙের পানি নিয়ে বয়ে চলেছে লালা খাল। লালাখালের বুক বেয়ে নৌকা করে বালি নিয়ে চলেছে দুজন।

জীবনের পথ পাথরের মত ভারী, তাই নিয়ে মোরা চলেছি যে সারি সারি
বিছানাকান্দি, সিলেট
২০১৫
বিছানাকান্দির বুক জুড়ে অজস্র পাথর আর নুড়িতে বোঝাই।সেই পাথর নৌকায় ভরে চলেছে কোন অজানায়। ভারতের মেঘালয় রাজ্য যাতে রয়েছে অজস্র পাহাড় আর সেই পাহাড়ের বুকে জমা কষ্টগুলো যেন পাথর হয়ে বেরিয়ে আসছে চোখের পানির মত আর টুপ টাপ করে একে একে গড়িয়ে এসে জমা হচ্ছে বিছানাকান্দির বিশাল বুকে। সেই দুখী পাহাড়ের কান্না জমা পাথর কুড়িয়ে আমাদের দুঃখী মানুষরা তাদের দুঃখ ঘোচানোর কাজে ব্যস্ত।

চলেছি ভয়াল জল পথ ঠেলে, যদি মধুর দেখা কভু মেলে
সুন্দরবন, খুলনা
২০১৮
সুন্দরবনের মৌয়াল মধুর সন্ধানে জীবন বাজি রেখে চলেছে নৌকায়। যে কোন মুহুর্তে বনের রাজা দক্ষিন রায়ের মুখোমুখি হতে পারে, হতে পারে কুমিরের খাবার, চুপিসারে পা ধরে টেনে নিয়ে যাবে অতল জলে, আর কিছু না হোক অজস্র সাপখোপ তো আছেই । তারপরও পেটের তাগিদে বন্ধ হয়না তাদের এই ভয়-সংকুল পথে চলা।

একাকী
দুবলার চর
২০১৬
সুন্দরবনের দুবলার চরে নেমেছিলাম সবাই, তখন দেখা হলো বৈঠা বেয়ে চলা এক নিঃসংগ নৌকার। ধুধু চরের ওপাশে সাগর মিশেছে দিগন্ত রেখায় যা এক অসাধারন সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে।

রঙ বাহারী ট্রলার
কক্সবাজার, ফিশারী ঘাট।
২০১৭
জাল গুছিয়ে খাবার দাবার আর মিঠা পানি নিয়ে রওনা হবে সাগরে তাঁর প্রস্ততি নিচ্ছে জেলেরা। জানে না কবে ফিরে আসবে পরিবার পরিজনের কাছে বা আদৌ কি সেই বিস্তীর্ন জলরাশি পেরিয়ে সমুদ্র সেচে মানিক রতন কুড়িয়ে আনতে পারবে কি না !

ভাংগনের শব্ধ শুনি
হিজলা বরিশাল।
২০১৪
"শুধু বিঘে দুই আছে মোর ভুই আর সবই গেছে ঋনে,
বাবু কহিলেন বুঝেছো উপেন এ জমি লইবো কিনে"

কবি রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত এই কবিতার মতই কি জীবন বরিশালের হিজলাবাসীদের? যা ছিল সম্পদ সবই গেছে, ছিল শুধু বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটেটুকু তবে সেটা কবিতার সেই জমিদার বাবুর গ্রাসে নয়, হারাতে হচ্ছে কীর্তনখোলা নদীর গ্রাসে। যেটুকু সম্বল ঘরের চাল, বাশের বেড়া আর ছেড়া কাথাকানি নিয়ে নৌকায় করে আরেক যায়গায় চলেছে নতুন ঠাইয়ের সন্ধানে। জানেনা কি আছে তাদের ভাগ্যে! তারপরও যেতে হবে।

ট্রলার দুর্বিনীত এক জলযান, হেসেখেলে কেড়ে নেয় শত মানুষের প্রান
সুন্দরবনের পথে মরাভোলা নদী
২০১৪
সুন্দরবন ভ্রমনে যেতে মরাভোলা নদীতে খুব সকালে দেখা মিললো শরীরের চারভাগের তিনভাগ ডুবিয়ে রাখা রঙ বেরংগের ট্রলারের। যেতে পথে দেখা মিলে বালি বহন করা এই ট্রলারগুলোর। এর চালকরা অত্যন্ত বেপরোয়া। এদের সীমাহীন দুর্বিনীত আচরনে অনেক মানুষের প্রান গিয়েছে। তারপরও একটুও শোধরায়নি তাদের চরিত্র। আমাদের নিয়ে চলা গাইড ট্যুরস লিমিটেডের লঞ্চ অবসরকেও সামনে থেকে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়েছিল। এতে লঞ্চের এক কর্মচারী মাথায় বাড়ি খেয়ে নদীতে পরে গিয়েছিল। ভাগ্যিস তাঁর সহকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেছিল নাহলে সেদিন আমাদের এক মৃত্যুর সাক্ষী হতে হতো। পরে চাদপুর হাসপাতাল থেকে তাঁর মাথায় সেলাই করে আনা হয়েছিল।

সব ছবি আমার ক্যামেরা , মোবাইলে তোলা ।
ছবির স্বর্বসত্ব সংরক্ষিত



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৩
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×