আমাদের শিক্ষা জীবনে প্রথম বাংলা সাহিত্যের সাথে পরিচয় ঘটে সবুজ সাথী বই এর মাধ্যমে। সেই বইতে ছিল নানা রকম শিক্ষা মুলক গল্প, কবিতা,প্রবন্ধ। কিন্ত আজ চিন্তা করলে দেখি সে সব কি আমাদের শিশু মনের যথার্থ উপযোগী ছিল??
ফটিককে মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভালো শিক্ষা লাভের জন্য মামা বাড়ি পাঠানো হলো। মায়ের কোল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ফটিক মামীর আদরে আল্লাদে অচিরেই তার কি করুন পরিনতিটাই না হলো! এই সব গল্প কি আমাদের শিশু মনের উপযোগী ছিল! আমি বলবো না, বরং এই গল্প আমাদেরকেও মামী নামক আত্মীয়ের প্রতি ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল।
তারপর গনি মিয়া একজন কৃষক সাথে তার দুঃখের কিচ্ছা। শরতচন্দ্রের মহেশ। এটাও কি আমাদের শিশু মনের উপযুক্ত!! মহেশের মৃত্যু আমাদের হৃদয়কে করুন রসে চুপচুপে করে তুলেছে৷
কবিতার কথা কি বলবো! জসীমউদ্দিন এর বিখ্যাত কবর কবিতা। এই কবিতার কষ্টের ভার বহন করার মত আমাদের শিশুমন কতটা উপযুক্ত ছিল! তখনো আমাদের বেশিরভাগ এরই দাদা দাদী বেচে আছেন। তাদের আদরে স্নেহে আমাদের হৃদয় মাখামাখি। সেইখানে এই কবিতা পড়ে আমি চোখের পানি ফেলি নাই এমন দিন ছিলো না। স্কুলে টিচাররা পড়তে দিলেও গলা বুজে আসতো।
এরপর আসেন যতীন্দ্র মোহন বাগচীর বিখ্যাত কবিতা কাজলা দিদি তারপর সুফিয়া কামালের আজিকার শিশু। জসিমউদদীন এর আসমানী ভেন্না পাতার ছানি দেয়া ঘরে বসবাস! কি করুন, কি করুন! আমার মনে হয় উনারাও এটা আমাদের শিশুদের জন্য উপযুক্ত বলে রচনা করেনি।
এইসব গল্প, কবিতা আর নানাবিধ প্রবন্ধ আমাদের মনে কি গভীর রেখাপাত করতে পারে তা বোধহয় আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকজন চিন্তা করেও দেখেনি। এখন মনে হয় আমাদের ওই শিশু মনের জন্য হাম্পডাম্পটি কিই উপযুক্ত ছিল না! অথবা ছড়া ও ছবির এই কবিতা যা পড়ে অনেক হেসেছি ছোট্ট বেলায়।
দাদুর মাথায় টাক ছিল,
সেই টাকে তেল মাখছিল,
এমন সময় বোলতা এসে,
হুল ফুটিয়ে পালায় শেষে,
ঘুলিয়ে দিল বুদ্ধি দাদুর,
ফুলিয়ে দিল টাকটারে,
ব্যাথার চোটে কাদলো দাদু,
আনলো ডেকে ডাক্তারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৭