মহা বান্দুলা উদ্যান
মিয়ানমার নামটি শুনলেই প্রথমেই আমাদের মনে পরে রোহিংগাদের কথা। প্রায় সাত আট লাখ শরনার্থী হয়ে আমাদের দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কবে তারা নিজ বাসভুমে ফিরে যাবে তার কোন ঠিক নেই। আমি আগের লেখাগুলোতেও উল্লেখ করেছি যে ১৮/১৯টি জাতিগোষ্ঠি অধ্যুষিত মায়ানমারের জনগনের মাঝে ঐক্যটা একটু কমই। তারা কখনো সুখী স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবন যাপন করেছে কি না আমার সন্দেহ। রাজ শাসিত মিয়ানমার বৃটিশদের কলোনী হয়ে অবশেষে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। কিন্ত অল্প দিনের ভেতরই তাদের জাতির পিতা জেনারেল অং সাংকে হত্যা করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়।
একটি কাচা বাজার যেখানে ধনীরা আসে না
মাঝখানে অল্প কিছুদিন সুচি মুলত সামরিক বাহিনীর পুতুল সরকার প্রধান ছিল।তারপর আবার এক ক্যু এর মাধ্যম চীনের মদদপুষ্ট সামরিক জান্তার হাতে এখন ক্ষমতা। বিশাল আয়তনের এক দেশ, অল্প জনসংখ্যা, অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ,আর বিশাল সমুদ্র তীর নিয়ে কৌশলগত ভু-রাজনৈতিক অবস্থান স্বত্বেও কিছু অসৎ ব্যাক্তি ছাড়া সাধারন মানুষের দারিদ্রর সীমার নীচে অবস্থান করছে। তাদের দেখলে আপনার মায়া লাগবে। ভ্রমনের জন্য আদর্শ একটি দেশ আজ চুড়ান্ত দুর্দশায় পতিত ।
সাধারন দরিদ্র জনগন ফুটপাথ থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে
সব
ধর্মীয় স্থাপনাতেই দেখেছি একই রকম দৃশ্য, সাধারন জনগন সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের মুক্তির জন্য প্রার্থনায় নিমজ্জ্বমান
এ দেশের সাধারন মানুষরা সামান্য নীচু স্তরের এবং অমানবিক কাজ যা থাইরা করে না, স্বল্প বেতনে্ সেই কাজ করার জন্য কত যে কষ্ট করে লুকিয়ে চুরিয়ে সীমানা পার হয়ে পাশবর্তী দেশ থাইল্যান্ডে আসে। ধরা পরলে কত যে হেনস্থা তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। যাই হোক আমরা যখন বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন অসাধারন কিছু মিয়ানমারবাসীর সাথে পরিচয় হয়েছিল, তাদের সাথে এখনো আমাদের ইমেইলে যোগাযোগ আছে। সেখানে থাকার সময় এক সকালে আমরা দুজন আমাদের গাইডকে নিয়ে হেটে হেটে ইয়াংগন শহরের কেন্দ্র পরিভ্রমনে বের হই যে স্থানগুলোর কোন উল্লেখ ব্রোশিউরে ছিল না, অনেকটা আমাদের ইচ্ছেমত। রাস্তায় বের হয়ে খানিকটা এগুতেই চোখে পরলো ট্রাই শ
রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টের সামনে দিয়ে যাওয়া এই যানবাহন অনেকটা আমাদের রিকশার মত তবে দুজন যাত্রী সামনে পেছনে দুদিকে মুখ দিয়ে বসে।
টেলিগ্রাফ অফিস
বৃটিশ নকশায় লাল রঙের দালান
এই দালানটি কিসের জানা হয় নি । তবে ছবিতে দেখা যাচ্ছে এখানে একটি বই এর দোকান আছে।
আবার ফুটপাথেও চলছে বই এর বিক্রি বাট্টা
খালি রাস্তার দুপাশে চোখ রেখে হাটছি হঠাৎ গাইড এক জায়গায় থেমে গেল। কি ব্যাপার জিজ্ঞেস করতে জানলাম এটা এক চিত্রশালা নাম লোকনাত আর্ট গ্যালারী। রাস্তার পাশেই এক দালানে এর অবস্থান। রাস্তার সাথে লাগানো গেট থেকেই কাঠের সিড়ি উঠে গেছে, সেটা বেয়ে হাজির হোলাম দোতালায়।
এই সেই চিত্রশালা নাম লোকনাত আর্ট গ্যালারি
বাড়িটি বেশ পুরনো তারপর ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার আন্তরিক চেষ্টা পরিলক্ষিত হলো। দেয়ালের গায়ে বাধানো নানা রকম জল রঙ আর তৈলচিত্র। আমি একটা জিনিস এখানে খেয়াল করেছি এদেশের মানুষদের মধ্যে শিল্পপ্রীতি বেশ গভীর। তাদের সেই ভালোবাসা সেটা কাঠেই হোক, বা কঠিন শিলা পাথর থেকে মুল্যবান পাথরেই হোক কিম্বা কাপড়ের উপর আকা শিল্পকর্ম থেকে রঙ তুলিতো সবখানেই চোখে পরে।
লোকনাত আর্ট গ্যালারীতে ফ্রেমে বাধানো চমৎকার ছবি
কাঠের ফ্রেমে বাধানো, মনে হয় তৈলচিত্র
এটা মনে হয় জলরং
বিখ্যাত ইনলে লেকে পা দিয়ে নৌকা বাওয়ার আকা ছবি
লোকনাত আর্ট গ্যালারীর এই ছবিটি আমার খুব প্রিয় , আগেও মনে হয় একবার ব্যবহার করেছি।
এরপর আমাদের পরবর্তী গন্তব্য মহা বান্দুলা পার্ক যাতে আছে মিয়ানমারের স্বাধীনতার স্তম্ভ। সাড়ে সাত একর জায়গা জুড়ে এই পার্কটির আগে নাম ছিল ফিচে স্কয়ার যা ছিল একটি পতিত জলাভুমি। তৎকালীন বৃটিশ কলোনী বার্মার বৃটিশ চীফ কমিনশনার ফিচের নামে ১৮৬৭ সনে এখানে এই উদ্যানটি নির্মিত হয়। মহাবান্দুলা পার্কের চারিদিক ঘিরে আছে সড়ক পথ। এছাড়াও রয়েছে কিছু গুরুত্বপুর্ন ভবন।যেমন সিটি হল, হাই কোর্ট আর ইয়াঙ্রগনের অন্যতম সন্মানিত বৌদ্ধ বিহার সুলে প্যাগোডা ।
সুলে প্যাগোডা
সিটি হল । উল্লেখ্য সিটি হল আর মহা বান্দুলা স্তম্ভের স্থপতি একই ব্যাক্তি সিথু উ তিন
জনগনের বিনোদনের জন্য নির্মিত সবুজ এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এই পার্কের মাঝখানে শ্বেত পাথরের চত্বরের উপর বৃটিশ সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিশ্বরী মহারানী ভিক্টোরিয়ার এক শ্বেত পাথরের বিশালাকার মুর্তি ছিল যা ছিল এক আর্মেনীয় বনিক সংস্থার দেয়া উপহার। কিন্ত প্রথম এংলো বার্মিজ যুদ্ধের(১৮২৪-১৮২৬)পর ১৯৩৬ সনে জনগনের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই উদ্যানের নাম পালটে রাখা হয় বান্দুলা স্কয়ার।
পাথরে বাধানো স্তম্ভের গোড়ার দিক
রাজকীয় বার্মিজ আর্মির প্রধান সমর নায়ক, মিয়ানমারবাসীদের গৌরব, এক দেশপ্রেমিক,বীরোচিত অধিনায়ক নাম মহা বান্দুলা।বার্মার বিখ্যাত রাজা বোদপায়ার সৈন্যবাহিনীর প্রধান হয়ে যিনি জয় করেছিলেন স্বাধীন দুটো রাজ্য মনিপুর আর আসাম। পরবর্তীকালে প্রথম এংলো বার্মিজ যুদ্ধের সময় ১৮২৫ সালে তিনি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বৃটিশ সেনাবাহিনীর হাতে মৃত্যু বরণ করেন। এমনি সাজানো গোছানো চারিদিক
১৯৪৮ সালে মিয়ানমার বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর বান্দুলা স্কয়ার থেকে রানী ভিক্টোরিয়ার মুর্তি্টি বৃটেনে ফিরিয়ে নেয়া হয়। আর সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় মিয়ানমারের স্বাধীনতার স্বরণে একটি সুউচু স্তম্ভ(অবিলিস্ক)।
আমরা দুজন এই ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে চাইলাম সাথী হলো গাইড।আসুন দেখে সেই বিখ্যাত উদ্যান সাথে স্বাধীনতার স্তম্ভ তবে দুঃখের বিষয় সেখানকার জনগন কাগজে কলমে স্বাধীন থেকেও আজীবন পরাধীনই রয়ে গেল।
এত দুঃখের মাঝেও দুটি মেয়েকে দেখে মন ভরে গেল ।
পান বিক্রেতা
আর একজন মডেল
সব ছবি আমার ক্যামেরা নিক্কন ডিএস এল আর ও ক্যাননে তোলা ।
।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৩