ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন যেন পাক্কা তিরিশ মিনিট হাটি। কেন বাপু ঘড়ি ধরে পাক্কা তিরিশ মিনিট কেন! দু এক মিনিট এদিক ওদিক হলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে! বুঝি না বাপু। ভোর ভোর সক্কাল বেলা আমি চলে যাই আমাদের অপরূপ সুন্দর পার্কটায়। কিন্ত আমার ভালো লাগে না। এত্ত এত্ত স্বাস্থ্যসেবীদের ভীড়ে হাটতে গিয়ে আমি খেই হারিয়ে ফেলি। কেউ খুব দ্রুত লয়ে হেটে আমাকে পিছু ফেলে কত দূর চলে যায়, আমি পিছেই পরে থাকি। আবার বর্ষীয়ান মহিলাদের দল হাতে তসবিহ নিয়ে ধীরে সুস্থে হেটে যাচ্ছে আর কত গল্পের ঝুড়ি খুলে যে বসে তার ইয়াত্তা নেই।
"তোমার তিরিশ মিনিট হয়েছে ! ভালো একটা চাকরি জুটেছে দেখি আমার"।
হেসে হেসে বলি, "হ্যা হ্যা এই যে ফিরছি'। ব্লাড সুগার মাপা আর ডাব খাওয়াদের দল পেরিয়ে দ্রুত লয়ে ঘরে ফিরে আসি ।
ঠিক দুক্কুর বেলা, যখন ভুতে মারে ঠেলা তখনও দু একদিন পার্কে হাটি। আমার সাথী হয় কখনো দু একটা কুকুর, কিম্বা গাছের উপর ক্যাচর-ম্যাচর করা ঝগরুটে শালিকের দল আর নয় তো পুকুরে ভেসে থাকা কিছু রাজহাস। গর্বিত গ্রীবা দুলিয়ে সাতার কাটছে তারা দল বেধে। আবার টুপ করে গলা ডুবিয়ে ঠ্যাং উচিয়ে খাবার খুজে মরছে।
আমার সবচেয়ে ভালো লাগে সন্ধ্যার পর। সেই কামিনী আর শিউলির গন্ধ মাখা পথ দিয়ে হাটতে। খানিকটা পর গন্ধরাজ তার গন্ধে মাতোয়ারা করে রেখেছে এক দিক। এদিকে কিছুটা আলো আলো। আবার অনেকটা পথ বড় বড় গাছে ঢাকা ঝুপসী আধার। সেই ছমছমে আধার পথে হাটতে সাপ খোপের ভয় করলেও আমার ভালো লাগে কারন সেখানেই আমার প্রিয় পাখিদের বসবাস। বিশাল বিশাল সেই গাছের ডালে বা বাশের আগায় শিকার ধরার আশায় চুপচাপ বসে থাকে প্রিয় পাখি প্যাচারা। বেশিরভাগই দুস্টু মিস্টি খুড়ুলে প্যাচা ওদের দেখলে আমি থমকে দাড়াই। ওরাও আমাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, কখনো ২৭০ ডিগ্রি মাথা ঘুরিয়ে। সেই নির্জন নিরিবিলিতে ওদের হু হু হু ডাক বুকের ভেতর গিয়ে আঘাত করে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকি। ওরাও ছুটন্ত ছুচো বা ইদুরের থেকে মুখ ফিরিয়ে আমাকে দেখে নেয়। আমার ঘোর ভেংগে যায় ফোনের ভেতর থেকে ভেসে আসা কর্কশ কন্ঠ,
তোমার কি তিরিশ মিনিট এখনো হইলো না !

ছবি আমার মোবাইল ক্যামেরায়
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৩