পৌষ মাস নাকি শেষ হয়ে আসছে। সকালে খালামনিরা আগের রাতের বানানো ভাপা পিঠা খেতে খেতে নানুর সাথে আলাপ করছিল তাই শুনেছি। আমি বাপু পৌষ মাঘ বুঝি না তবে প্রচন্ড শীতে আমার জান বের হয়ে আসছে, একেবারে মনে হয় হাড় ফুড়ে মজ্জার ভেতর গিয়ে ঢুকেছে। আমি তাড়াতাড়ি ওয়ার ছাড়া নানুর শালুর লেপটার নীচে গিয়ে ঢুকি। প্রতিদিন রাতেই নানু আমাকে তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেয়, বলে তুই ছোট মানুষ আমাদের সাথে খেতে গেলে তোর অনেক দেরি হবে । তা ঠিক ওনারা সবাই যখন খেতে বসে তখন তো আমি ঘুমিয়ে এক্কেবারে কাদা। প্রচন্ড শীতে আজ আমার ঘুম আসছে না একেবারেই। নানুকে জড়িয়ে ধরে যখন ঘুমাই তখন আস্তে আস্তে চারিদিকটা গরম হয়ে উঠে।
চৌচালা টিনের লম্বামত ঘর, কাঠের বন্ধ জানালার উপর চাদর দেয়া। তাও হু হু করে বাতাস আসছে। আমি একা একা শুয়ে আছি শুনি চালের উপর টপ টপ করে কিসের যেন আওয়াজ । ছোট খালামনিকে জিজ্ঞেস করলে জানালো ওগুলো কুয়াশা পানি হয়ে ঝরে পরছে চালে । বাপ্রে কি কুয়াশাই না তাহলে বাইরে ।
চল্লিশ পাওয়ারের টিমটিমে এক ঘোলাটে বাল্বের আলোয় ঘরের কোনায় কোনায় অন্ধকার জমাট বেধে আছে। আমি লেপ থেকে মাথা বের করে সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দেখি আবার টুপ করে ঢুকে পরি। নানু কখন আসবে কে জানে ! আমার ভালোলাগে না একা এক ঘরে শুয়ে থাকতে । যদিও পাশের ঘর থেকে সবার কথা শুনছি। তারপর কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। অনেক রাতে হটাত দরজায় কে যেন ঠক ঠক করে কড়া নাড়ছে। নানু কখন এসে আমার পাশে শুয়ে পরেছে জানি না । আবারও কড়া নাড়ার শব্দ, আমি ফিস ফিস করে নানুকে ঠেলা দিয়ে বলি "নানু, নানু কে যেন কড়া নাড়ছে । বিস্মিত গলায় নানু বলে উঠে, হ্যা আমি শুনেছি কিন্ত এত রাতে কে আসলো !
আস্তে আস্তে লেপ সরিয়ে উঠে নানু বাতি জালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । আমি বলছি 'নানু একলা যেও না, তুমি মামাকে ডাকো'। ততক্ষনে উনি দরজার কাছে । আস্তে করে কাঠের বড় ডাসাটা নামালো তারপর খিল না খুলেই জিজ্ঞেস করলো কে আপনি এত রাতে ! "বুজান, বুজান দরজা খুলেন আমি"। চিকন পাড়ের থান শাড়ি পরা আমার নানু দরজা খুলতেই বিছানায় আতংকে উঠে বসা আমি দেখতে পেলাম দরজার ওপাশে ঘন কুয়াশার মাঝে লম্বামত একটা লোক দাঁড়িয়ে। সেই মিটমিটে আলো আর কুয়াশার ছায়ার ওপাশে সাদা পাকা বাবড়ি চুলের লোকটির মুখ ভর্তি বসন্তের গভীর দাগ। তার পরনে একটা সাদা লুংগী আর মলিন সাদা খদ্দরের চাদর। এক হাতে একটি মাটির কলসী আরেক হাতে ছেড়াখোড়া একটা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো লোকটি হাসি ভরা মুখে বলে উঠলো, "বুজান আমারে চিনতে পারতাছেন না, ভাগ্যকূল থিকা আসছি !
আমি খঞ্জর" ।
ছবি আমার আকা
https://www.somewhereinblog.net/blog/June/30352266
দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ পর্ব