somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা - ৫

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'আমার কথা - ৪' পড়ুন এখানেঃ view this link

যেদিন আমার ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষা হবার কথা, ঠিক তার আগের দিন আমার এলো গা ফাটা জ্বর, সাথে প্রচন্ড মাথাব্যথা আর বমি। এর একদিন আগে ভরদুপুরে প্রচন্ড রোদে খেলতে নেমেছিলাম। ঘরে ফিরে গায়ের ঘাম না শুকোতেই তরিঘরি করে গোসল করেছি, এটাই জ্বরের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এবং আমাকে দোষারোপ করার চেষ্টা চলছিলো। কারণ যাই হোক, আমি চাচ্ছিলাম মাথাব্যথাটা অন্ততঃ দ্রুত কমে যাক, জ্বর থাকলেও থাকুক। তখন মাথাব্যথার জন্য নাপা বা প্যানাডল/প্যারাসিটামল ছিলনা, ছিল এ্যসপ্রো ট্যাবলেট। একসাথে দুটো খেলাম, কাজও কিছুটা হলো। রাতে আর পড়াশুনা করা সম্ভব হলোনা। ভেবেছিলাম, জ্বর কমে গেলে সকালে উঠে অঙ্কগুলো কিছুটা দেখে নিব। কিন্তু বিধি বাম। ভোর রাত থেকে আবার সেই আগের মত জ্বর আর মাথাব্যথা। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল দশটায়, রিপোর্ট করতে হবে ন’টার মধ্যে। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে বিছানায় উঠে বসে আছি ভোর চারটা থেকে। আমার জ্বরের কারণে বাসার সবার মুখ মলিন, তাই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো। সাতটার দিকে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম। মনে হচ্ছিলো, কত তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দেয়ার পালাটা শেষ করা যায়!

বাসা থেকে সকাল আটটায় আব্বা আমাকে নিয়ে কার্জন হলের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। রিক্সায় বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো। ভয় হচ্ছিলো, হয়তো পরীক্ষা দিতে পারবোনা, আর সেক্ষেত্রে সেটা আমার পরিবারের জন্য কতটা হতাশার কারণ হবে সেটা ভাবতেও খারাপ লাগছিলো। যাহোক, যথাসময়ে কার্জন হলে পৌঁছলাম। পরীক্ষা তদারককারী দলের লোকজন খুব চৌকষ ছিলেন। আমাদের এডমিট কার্ড পরীক্ষা করে যার যার জায়গায় বসিয়ে দিলেন। দলনেতা পরীক্ষার নিয়ম কানুন সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে কিন্তু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন। প্রথমে হবে ১০০ নম্বরের অংক পরীক্ষা, তার পর আধা ঘন্টা বিরতি দিয়ে একসাথে বাংলা ও ইংরেজীর ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হবে, দুটোর মাঝে দশ মিনিটের বিরতি দিয়ে। ছোটবেলা থেকে আব্বা একটা অভ্যাস করিয়েছিলেন যে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে প্রথমে একবার পুরো প্রশ্নটা পড়ে নিতে হবে। যে প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে ভাল পারি, সেটা দিয়ে শুরু করে ভালো পারার ক্রমানুযায়ী পরের উত্তরগুলো লিখে যেতে হবে। কিন্তু অংক প্রশ্নটা হাতে পেয়ে অস্বস্তির কারণে আমি এ নিয়মের ব্যতিক্রম করলাম। ১ নং প্রশ্ন থেকেই উত্তর লেখা শুরু করলাম আর কোনোটা না পড়ে। এভাবে শেষ ঘন্টা পর্যন্ত প্রশ্নের ক্রমানুযায়ী উত্তর লিখে গেলাম। খাতা জমা দেবার সময় দেখি তখনো একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি, যদিও উত্তরটা জানা ছিলো। ততক্ষণে বুঝে গেছি যে যেগুলোর উত্তর করেছি তার মধ্যেও একটা ভুল হয়ে গেছে। এই তীব্র প্রতিযোগিতার পরীক্ষায় অঙ্কের মত বিষয়ে দুটো প্রশ্ন মিস করার পরিণাম কী হতে পারে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলাম। আব্বার নিয়ম মানি নাই বলে মনে মনে অনুতপ্ত হচ্ছিলাম। মানলে অন্ততঃ একটার নম্বর যোগ হতো।

মন খারাপ করেই হল থেকে বের হলাম। বের হয়ে দেখি আব্বা আমার জন্যে কিছু খাবার দাবার কিনে এনেছেন। অনেক জোর করলেন, কিন্তু আমার তেতো মুখের কারণে কোন কিছু খেতে রুচি হলোনা, যদিও পেটে প্রচন্ড খিদে ছিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম, আব্বার নিয়ম ভাঙ্গার কথাটা চেপে যাবো। কিন্তু ওনার মত একজন নিষ্ঠাবান এবং কেয়ারিং পিতার কাছে কোন কিছু গোপন করতে বা কোন কপটতার আশ্রয় নেয়াটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে বলে মনে হলো। তাই তাঁকে সবকিছু খুলেই বললাম। তিনি অভয় দিলেন। এই প্রথম তার মুখে শুনলাম, পরীক্ষায় পাশ করা বড় কথা নয়, অভিজ্ঞতাই বড় কথা। এ পরীক্ষায় আমি পাশ না করলেও কোন সমস্যা নেই। কথাটা তিনি কিজন্য বলেছিলেন, তা বুঝতে অসুবিধে হলোনা।

পরের পরীক্ষার জন্য পুনরায় হলে প্রবেশ করলাম। পরীক্ষার উত্তেজনার দাপটে, নাকি আব্বার কাছ থেকে অভয়বাণী পাওয়াতে জানিনা, ইতোমধ্যে মনে হলো ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেছে। ইংরেজী প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে মনে হলো, এর চেয়ে সহজ পরীক্ষা জীবনে দেই নাই। প্রশ্নগুলো খুব আধুনিক ও সহজবোধ্য মনে হয়েছিলো, অনেকটা আলাপচারিতার মত। স্কুলের পরীক্ষার মত গতানুগতিক নয়। সময় শেষ হবার অনেক আগেই আমার লেখা শেষ। খাতা নেয়ার পর মনে হলো, ইংরেজী দিয়ে অঙ্কের ভুলগুলো কাভার করতে পারবো। বাকী পরীক্ষার জন্য দশ মিনিটের বিরতিটাকেই অনেক দীর্ঘ মনে হতে লাগলো। অবশেষে বাংলার প্রশ্নপত্র পেয়েও আমি মহাখুশী হলাম। ইংরেজীর মতই, বাংলা প্রশ্নের ধরণগুলো দেখেও খুব ভাল লেগেছিলো। সময়ের আগেই প্রায় এক নিঃশ্বাসেই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ করে বসে থাকলাম। বের হবার পর আব্বা অধীর আগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন, পরীক্ষা কেমন হয়েছে। আমি আস্থার সাথে ঘোষণা দিলাম, কেউ গায়ের জোরে নম্বর কাটতে না চাইলে নম্বর কম দিতে পারবেনা। এর চেয়ে ভালো পরীক্ষা দেয়া যায়না। আমার কপালগুনেই, নাকি হলের বাইরে বসে থাকা প্রার্থনারত আব্বার দোয়া, ঠিক কোনটার কারণে আমার পরীক্ষাদুটো এত ভালো হলো তা ঊর্ধ্বাকাশে বসে থাকা সকল পরীক্ষার মালিকই ভালো জানেন, তবে আমার হাসিমুখ দেখে আব্বার কঠিন মুখেও একটা খুশীর আভা চিকচিক করে উঠেছিলো।

চলবে…
(ইতোপূর্বে প্রকাশিত)

ঢাকা
০৮ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×