বাংলাদেশ পারেও বটে!
গতকাল বাংলাদেশ যেভাবে, যে পরিস্থিতিতে ক্রিকেট টি-২০ ম্যাচটা ভারতের সাথে হেরে গেলো, সেভাবে হারতে বিশ্বের খুব কম টিমই পারবে। প্রথম থেকে খেলার ১৭ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশই আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলো। এমনকি বলা যায়, খেলার শেষ তিনটি বলের আগে পর্যন্ত। শেষ ওভারে মুশফিক দুটো বাউন্ডারি হাঁকিয়ে কাজের কাজটিই করেছিলেন বটে, কিন্তু ঐ পরিস্থিতিতে শেষ সহজ কাজটুকু তিনি করে যেতে পারলেন না। তিনি মাঠের বড় পর্দায় নিজেকে ফিনিশিং হীরো হিসেবে দেখতে পাচ্ছিলেন। সবাই দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরছে, চুমু খাচ্ছে, মাটিতে ফেলে তার উপরে দলের বাদ বাকী খেলোয়াররা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এই খায়েশ থেকেই তিনি আরেকটা বাউন্ডারি হাঁকালেন। ততক্ষণে শক্তি অনেকটা ক্ষয় হয়ে গেছে, তাই মারে তার জোর ছিলো না। ফলে যা হবার তাই হলো, সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে তিনি বিদায় নিলেন। তিনি চোখটা খুলে দেখলেন না যে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা তখন দূর দুড়ান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, বাউন্ডারি ঠেকানোর আশায়। শুধু ব্যাটে একটু টুক করে লাগিয়ে দৌড় দিলেই কাজ হয়ে যায়। অথচ সেটুকুই না করে তিনি হীরোইক শট খেলতে গেলেন। তার চমৎকার অর্জনটুকু ধূলোয় মিশিয়ে দিলেন।
মুশফিককে হয়তো বা তবু ক্ষমা করা যায় এজন্য যে ওরকম সময়ে একজন পারফর্মিং খেলোয়াড়ের ওরকম ইচ্ছে মনে জাগতেই পারে। আর তাছাড়া উনি আউট হবার পরও খেলাটা বাংলাদেশের আয়ত্তের মধ্যেই ছিল। কিন্তু মাহমুদ উল্লাহ এমন পরিস্থিতিতে একই কাজ কী করে করতে পারলেন? তার মনেও কি একই ইচ্ছে জেগেছিলো? কি নির্বোধ অর্বাচীনের মতই না ঐ রিস্কী পুওর শটটা খেলে তিনিও নিজের অর্জনটুকু ধূলোয় মিশিয়ে দিলেন! ঐ সময়ে যদি টেইল এন্ডের বোলাররাও ব্যাটিং করতো, তারাও ঐ পরিস্থিতিতে এমন সিলি শট খেলতেন না। তারা হয়তো বল ব্যাটে না লাগলেও বাই এর জন্য আচমকা ইঁদুর দৌড় দিয়ে বসতেন। তাতেও হয়তো কাজের কাজটুকু হয়ে যেতো। অথচ দলের স্বনামধন্য এক্স ক্যাপ্টেন এবং এক্স ভাইস ক্যাপ্টেন ক্রীজে থাকতে এমন অপকম্মটা ঘটে গেলো, ষোল কোটি ক্রিকেট লাভিং বাংলাদশীকে চরম হতাশার সাগরে ডুবিয়ে! মাহমুদ উল্লাহ'র কাছ থেকে আরেকটু সুবেবিচিত খেলা জাতি আশা করেছিলো।
আমার মতে খেলার শেষ বলটি ওয়াইড হয়তো ছিলো। ব্যাটস্ম্যানদ্বয়ের যেকোন একজন আম্পায়ারের কাছে আপত্তি প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হয়তো তাদের কেউ তা করেন নি। আমি হলেও হয়তো করতাম না।
ভারতীয় সমর্থকদেরকে এবং বিশ্বের অন্যান্য বাংলাদেশ বিরোধী ক্রিকেট খেলোয়াড়, সমালোচক, অফিসিয়াল এবং কমেন্টেটরদেরকে আরও এক দশক ধরে বাংলাদেশ দলকে এবং সমর্থকদেরকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর হাস্যকৌতুক করার পূর্ণ রসদ তুলে দেয়া হলো! এ খেলা দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হবে, আমাদেরকে লজ্জিত না করলেও হতাশাগ্রস্ত করে রাখবে নিঃসন্দেহে, অন্ততঃ যতদিন পর্যন্ত না আমরা ভারত কিংবা তাদের চেয়েও শক্তিশালী কোন দলকে কনভিনসিংলী পরাজিত করতে পারবো।
খায়রুল আহসান
২৪ মার্চ ২০১৬