আগের পর্বঃ মায়া .... (১)
আরফান উদ্দিন সরকার, সংক্ষেপে আরফান সরকার। জন্ম ১৯১০ সালে, জমিদার বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। বাবার মৃত্যুর পর জমিদারীর হাল ধরেছিলেন ওনার সবচেয়ে বড়ভাই, তাই ওনাকে কখনো তেমন কোন বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়নি। ওনার বয়স যখন ১৭, বিয়ে করেছিলেন ১০ বছরের করিমা খানমকে। নির্ঝঞ্ঝাট সংসার, চখাচখির মত ভালবেসে ওনারা সংসার করে যাচ্ছিলেন। তেমন কোন উচ্চাশা ছিল না, জমিদারীর ভাগ বাটোয়ারা শেষে বড়ভাই তাকে তার প্রাপ্য হিসেবে যেটুকু দিতেন, তাতেই সংসার চালিয়ে নিতেন। কখনো এ নিয়ে তিনি কোন প্রশ্ন তোলেন নি, করিমা খানমও এ নিয়ে কোনদিন উচ্চবাচ্য করেন নি। ওনাদের নিজেদেরও পাঁচটি সন্তান হয়েছিল, পরপর চারটি মেয়ের পর একটি পুত্র সন্তান পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু নিয়তির পরিহাসে তার সেই ছেলেটি একদিন ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু বরণ করেছিল। এরপর থেকে আরফান সরকার আর করিমা খানম জগৎ সংসারের প্রতি নিদারুণ উদাসীন হয়ে পড়েছিলেন।
আরফান সরকারের জীবনে প্রথম বড় ধরনের আঘাত আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার কিছুকাল পর থেকেই। তাদের এলাকায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর লোকজনের আসা যাওয়া শুরু হয়। ১৯৪২ এর দিকে তাদেরকে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে হেক্টরের পর হেক্টর আবাদী জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তারপর শুরু হয় হুলস্থুল করে নানাবিধ সরঞ্জামাদি স্তুপীকৃত করে বিমান বন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়া। টনে টনে লৌহের স্তুপ আসলো, লক্ষ লক্ষ টন ইট পাথর আসলো, সেই সাথে আসতে থাকলো ভিনদেশী নির্মাণ শ্রমিক। এক সময় নিজ এলাকায় নিজেদেরকে পরবাসী হিসেবে তাদের মনে হতে থাকলো। আরফান সরকার খুব আত্মসম্মান সচেতন মানুষ ছিলেন। উনি তার নিজ বুদ্ধিতে বুঝতে পেরেছিলেন, অচিরেই ওনাদেরকে ওখানকার ভূমি থেকে সরে যেতে বলা হবে। তার আগেই তিনি নিজ বিবেচনায় করিমা খানমের সাথে আলাপ করে প্রায় দশ মাইল দূরে ওনার শ্বশুড় বাড়ীর সন্নিকটে জমি ক্রয় করে বসত বাটি নির্মাণ করবেন বলে মনস্থির করলেন। একদিন সকালে নিজের গরুগাড়ীতে করে অশ্রুসিক্ত নয়নে বাপ দাদার ভিটেকে বিদায় জানিয়ে উনি আর করিমা খানম বাচ্চাদের নিয়ে নতুন গন্তব্যে রওনা হলেন, সংসারের যাবতীয় অর্জন ফেলে রেখে, শুধু করিমা খানমের সোনাদানা আর তার যা কিছু নগদ অর্থ নিয়ে। ওনার কর্মচারীগণ হালের বলদ, দুধেল গাভী, ছাগল ইত্যাদি নিয়ে তাদের পরে পরেই পদব্রজে যাত্রা শুরু করে।
নতুন জায়গায় এসে ঘর বাড়ী ওঠালেন বটে, কিন্তু সংসারে আরফান সরকারের কিছুতেই মন বসে না। বেশীরভাগ সময় অদূরে বয়ে যাওয়া ধরলা নদীর তীরে বসে থেকে বা হাঁটাহাঁটি করে কাটান। করিমা খানমও নিজের বাপের বাড়ীর একেবারে কাছাকাছি চলে আসার আনন্দ তেমন উপভোগ করতে পারছিলেন না, স্বামীর চিন্তিত মুখ ও আপাতঃ কর্মহীন জীবন যাপন দেখে। তিনটি বছর ওনারা অতি কষ্টে সেখানে কাটিয়ে যুদ্ধ থেমে যাবার পর পুনরায় আগের ভিটায় ফিরে এলেন। এসে দেখলেন, ভিটেয় ঘুঘু চড়ে। যা কিছু রেখে গিয়েছিলেন তার কিছুই নেই, এমনকি ঘরের টিনের চালগুলো পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে। আবার শূন্যহাতে ওনারা নতুন সংসারের গোড়াপত্তন করলেন। জমিদারীর ভাগীদার হিসেবে প্রজাদের খাজনা যা কিছু পেতেন, তাই দিয়ে তাদের সাংবাৎসরিক খরচাপাতি চলে যাচ্ছিল। ঘরের ভাত খেয়ে আবাদী রবিশস্য, তামাক, ইক্ষু ইত্যাদি অর্থকরি ফসল দিয়ে অচিরেই তারা সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাচ্ছল্য ফিরে পেলেন।
১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা রহিত হয়ে যাওয়ায় আবার তাদের সুখী সংসার জীবনে আঘাত নেমে আসে। খাজনা আসা বন্ধ হলো, উল্টো নিজের জমা জমির খাজনা সরকারকে দেয়া শুরু হলো। তাদের সংসারেও টানাপোড়েন শুরু হলো। আরফান সরকার আগের মত আর হাত খুলে বাজার হাট করতে না পারায় দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে আসতে শুরু করলেন। তিনি যতই হতাশ হন, করিমা খানম ততই তাকে আশার আলো দেখান। এদিকে তাদের চার চারটে পিঠেপিঠি মেয়ে একে একে বড় হয়ে উঠতে শুরু করলো। আরফান সরকার দিশেহারা হয়ে উঠতে শুরু করলেন। তার মেয়ে সবগুলোই দেখতে কালো হলেও তার মতই লম্বা হওয়াতে এবং দীর্ঘকেশী হওয়াতে লাবণ্যময়ী ছিল। সম্বন্ধ আসতে থাকাতে তিনি ততটা বাছ বিচার না করেই একে একে দুই এক বছর পর পর মেয়েগুলোকে পার করে দিলেন। সবচেয়ে ছোটটাকে দিলেন নিকটবর্তী এক ছিটমহলের এক কর্মঠ যুবকের সাথে। একে একে চার মেয়েকে বিদেয় দেয়ার পর আরফান সরকার আর করিমা খানম হাত পা ঝাড়া পক্ষী দম্পতির মত শান্তির নীড়ে জীবন যাপন করে যেতে চেয়েছিলেন বাকী সারাটা জীবন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তা নির্বিঘ্নে ঘটেনি।
সেই এলাকায় সপ্তাহের প্রতি রবিবার এবং বৃহস্পতিবার হাট বসতো। কোন প্রয়োজন না থাকলেও আরফান সরকার প্রতি হাটবারে হাটে যেতেন। মিষ্টি তার খুব প্রিয় ছিল, তাই নির্দিষ্ট একটি মিষ্টির দোকানে বসে প্রথমে তিনি কিছু মিষ্টি খেয়ে নিতেন। ওঠার সময়ে করিমা খানমের জন্যেও কিছু মিষ্টি কিনে আনতেন, যদিও তার পতিপ্রাণা স্ত্রী বহুদিন তাকে বলেছিলেন যে মিষ্টি তার তেমন প্রিয় নয়, তাই তার জন্য মিষ্টি না আনলেও চলবে। কিন্তু তিনি খাওয়ার সময় তার স্ত্রীর কথা মনে মনে স্মরণ করতেন। তিনি খাচ্ছেন আর তার স্ত্রী খাবেন না, এ কথা তিনি কখনোই মেনে নিতে পারতেন না। তাই ফেরার সময় তিনি অল্প করে হলেও করিমা খানমের জন্য কিছু মিষ্টি নিয়ে আসতেন। করিমা খানমের কী পছন্দের ছিল, তা তিনি ভাল করেই জানতেন- সেটা হলো তিলের খাজা। ঐ জিনিসটা তিনি বেশী করে আনতেন, আর আনতেন বাজারের সবচেয়ে বড় ইলিশ মাছটা, যা তাদের উভয়ের পছন্দের ছিল।
বিশ্বযুদ্ধের এবং বিমান বন্দরের কারণে তাদের এলাকার রাস্তাঘাটগুলো পাকা হয়ে গিয়েছিল। তাই সবসময় রিক্সা আর টমটম (ঘোড়ার গাড়ী) চলতো। তাদের বাসা থেকে যে রাস্তা ধরে হাটে যেতে হতো সেটা প্রায় আধা মাইল সোজা উত্তরে চলে গিয়েছিল, তার পরে ঘন গাছ গাছালির আড়াল হয়ে পূবে বাঁক নিয়েছিল। আরফান সরকার যখন হাটে যেতেন, এই আধা মাইল রাস্তার দিকে করিমা খানম এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতেন। দৃষ্টির আড়াল হয়ে যাবার পরেই তিনি ঘরের কাজে মনোনিবেশ করতেন। তার স্বামী সাধারণতঃ পায়ে হেঁটে তিন মাইল দূরের হাটে যেতেন, কিন্তু ফিরতেন রিক্সায়। তাঁর ফেরার সময় হলে তিনি কাজ ফেলে এসে ঘন ঘন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। রিক্সাটা বাসার একেবারে কাছাকাছি এলে তিনি ত্রস্ত হয়ে আরফান সরকারের গামছাটা এবং এক বদনা পানি নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এ কাজটা তিনি প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে সারাটা জীবন করে গেছেন।
করিমা খানমের রান্না বাড়া ও ঘর সংসারের কাজ ছাড়াও আরেকটা রুটিন কাজ ছিল। সেটা হচ্ছে সকাল, দুপুর ও বিকেল- এই তিনবেলা আরফান সরকারের জন্য হুঁকোর ছিলিম জ্বালিয়ে তা পরিবেশন করা। এটা করতে গিয়ে তিনি শুধু ছিলিমে আগুনই দিতেন না, বেশ কয়েকবার গড়গড় করে হুঁকো টেনে গালভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে নিশ্চিত হতেন যে সেটা আরফান সরকারের মন মত হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে প্রথম প্রথম তার খুব অসুবিধে হতো। কাশতে কাশতে অস্থির হতেন। তার তামাটে মুখে যেন কামারের হাঁপরের আগুনের লাল আভা ফুটে উঠতো। কিন্তু স্বামীর প্রতি অগাধ ভালবাসা অচিরেই তাকে এ কাজে অভ্যস্ত করে তোলে, এবং এ কাজটি তিনি কখনো অন্য কাউকেই করতে দিতেন না। হুঁকো টেনে পরিতৃপ্ত হয়ে লাজুক আরফান সরকার মাঝে মাঝে আশে পাশে কেউ না থাকলে লঘু স্বরে গানের সুর ধরতেন, আর করিমা খানম হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে তা নিশ্চুপ হয়ে শুনতেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাদের জীবনের শেষ আঘাতটি তাদেরকে একেবারে কাবু করে ফেলে। বৈশাখের শুরুতে একদিন সাত সকালে পাক বাহিনীর তাড়া খেয়ে ওনারা একটা গরুর গাড়ীতে করে শুধু পরিধেয় কিছু বস্ত্র আর দুই বস্তা শুকনো মরিচ সাথে নিয়ে সাত মাইল দূরে তাদের মেজ মেয়ের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তাদের অতিশয় বিপন্ন অবস্থাটা অনুধাবন করে তাদের জামাই বাবাজী সহৃদয়তার সাথে তাদের অভ্যাগমনকে স্বাগত জানালেন। কিন্তু প্রখর আত্মসম্মানবোধের আধিকারী আরফান সরকার দুই একদিন সেখানে থেকেই উশখুশ করতে শুরু করলেন। পকেটে যে কয়দিন টাকা ছিল সে কয়দিন অন্ততঃ কিছু হলেও তিনি মেয়ের সংসারে বাজার সদাই করে দিতেন। সে সময়ে সেই দুই বস্তা (চার মণ) শুকনো মরিচ ভীষণ কাজে দিয়েছিল। মাসখানেক সেখানে থেকে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে অন্য মেয়ের বাসায় যান। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের আটমাসে তিনি ঘুরে ঘুরে মনে প্রচন্ড গ্লানিবোধ নিয়ে একে একে চার মেয়ের বাসায় পালাক্রমে অবস্থান করে দেশ স্বাধীন হবার পরে শূন্য হাতে জীর্ণ পোষাকে নিজ ভিটেয় ফিরে আসেন। কিন্তু এবারেও সেই আগের বারের মতই অবস্থা- চালহীন ঘরহীন ভিটে যা সাপ খোপের দখলে, আর চারিদিকে প্রসারিত জঙ্গল। আবারো সেই একই কর্মযজ্ঞ শুরু হলো, ঘর দোর বানানোর আগে, উঠোন পরিস্কার করে কিছুদিন খোলা আকাশের নীচে কাটানো এবং আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।
বয়সের ভারে যখন আরফান সরকার ন্যুব্জ হতে শুরু করলেন, তখন করিমা খাতুনের কথা ভেবে ভেবে তিনি নীরবে অশ্রুপাত করতেন। তার স্ত্রীও অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে ছিলেন, কিন্তু স্বামীর সংসারে এসে মাঝে মাঝে তিনি যারপরনাই অভাবী জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশ্য এ নিয়ে করিমা খানমের কোনই অভিযোগ ছিল না, কারণ তার সরল সোজা স্বামীকে তিনি প্রাণভরে ভালবাসতেন এবং তিনি অনুধাবন করতেন, তার স্বামীও তাকে কতটা ভালবাসতেন। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে স্বামীর সাথে রাগে অভিমানে তিনি সর্বোচ্চ দু’টি দিন মাত্র কথা না বলে কাটিয়েছিলেন এবং এ দুটি দিন তার কাছে নরকের মত মনে হয়েছিল। মান ভাঙ্গার পর নিজেকে তিনি উজার করে স্বামীকে পুনরায় ভালবেসেছিলেন। একদিন ওনারা দু’জন একান্তে আলোচনা করে মনস্থির করলেন তাদের যে ছোট মেয়েটা ছিটমহলবাসী, তাদেরকে সপরিবারে ডেকে নিয়ে তিনি বাড়ীর কাছেই কিছু জায়গা জমি লিখে দিবেন। তার কর্মঠ স্বামী একটা কিছু করে খেতে পারবে।
তার ছোট মেয়ে চলে আসার পর নাতি নাতনিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার মধ্য দিয়ে তাদের দিন ভালই কেটে যাচ্ছিল। ১৯৮৩ সালে আরফান সরকার একদিন হাট থেকে এসে ভীষণ ঘামতে শুরু করলেন। করিমা খানম একটা হাতপাখা নিয়ে এসে জোরে জোরে বাতাস করতে থাকলেন। কিন্তু কিছুতেই ঘাম ছাড়ছিল না। একসময় তিনি এক কাত হয়ে ঢলে পড়লেন। মুহূর্তের মধ্যে তার সারাটা শরীর অবশ হয়ে গেল। সপ্তাহ দুয়েকের মত শয্যাশায়ী থেকে তিনি করিমা খানমকে অকুল পাথারে ভাসিয়ে চিরপ্রস্থান করলেন। তার মৃত্যুর পর করিমা খানম শব্দ করে কাঁদতে পারেন নি, কিন্তু তার দু’চোখ থেকে অশ্রুর অঝোর ধারা নীরবে ঝরে ঝরে তাঁর শাড়ীর আঁচল ঘন ঘন সিক্ত করে যাচ্ছিল। তার মুখে অন্ন প্রবেশ করছিল না, জোর করে খেতে গেলে বেরিয়ে আসতে চাইতো। কিন্তু দুঃখী মানুষের জীবনের সব কান্না একদিন থেমে যায়, অশ্রু শুকিয়ে যায়। করিমা খানমও ধীরে ধীরে একদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন। ছোট মেয়েটাকে সপরিবারে কাছে টেনে নিয়ে আসার সে বিচক্ষণ সিদ্ধান্তটি আরফান সরকারের মৃত্যুর পর করিমা খানমকে আরো সতেরটি বছর সুস্বাস্থ্যে বেঁচে থাকতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।
আরফান সরকারকে সমাধিস্থ করা হয় তাদের পারিবারিক গোরস্থানে নয়, তার বাড়ীর বহিরাঙ্গণে। তিনি বেঁচে থাকতেই একদিন তারা উভয়ে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, যদি আরফান সরকার আগে মারা যান, তবে তিনি সমাহিত হবেন বাড়ীর বহিরাঙ্গণে, যেন করিমা খানম নির্বিঘ্নে যখন খুশী তখন তার ক্ববরের কাছে যেতে পারেন, স্পর্শ করতে পারেন, এবং ক্ববরের দেখভাল করতে পারেন। আর যদি করিমা খানম আগে মারা যান, তবে তাকে সমাহিত করা হবে পারিবারিক কবরস্থানে, কারণ আরফান সরকারের সেখানে যেতে কোন বিধি নিষেধ নেই। করিমা খানমের ইচ্ছায় তার ক্ববরের পাশে আরেকটা ক্ববরের জায়গা রেখে জোড়ক্ববরটি পাকা করা হয়। ১৭ বছর ধরে করিমা খানম প্রতিটি দিন কয়েকবার করে তার স্বামীর ক্ববরের কাছে গিয়ে নীরবে দাঁড়াতেন, যতটুকু দোয়া কলেমা দরুদ জানতেন তা পড়তেন এবং নীরবে তাকে ভালবাসা জানিয়ে আসতেন। তার বিশ্বাস ছিল, তার এ ভালবাসার বাণী ক্ববরে শায়িত আরফান চৌধুরীর দেহাংশ, কিংবা স্রষ্টার কাছে ফিরে যাওয়া তার রূহ অনুধাবন করতে পারবে।
অবশেষে একদিন করিমা খানমেরও ডাক এলো। তিনি তার স্বামীর পাশে সমাহিত হলেন। তবে এখন আর কেউ সেই জোড়ক্ববরকে দেখভাল করে না। সেখানে কাক পাখি বসে, বিষ্ঠা ত্যাগ করে, কেউ পরিস্কার করে না। রবিশস্যের ক্ষেতে একটি জোড়ক্ববর তুলে জায়গা নষ্ট করার জন্য অর্বাচীন কেউ কেউ গালমন্দ করে যায়। মায়া ভালবাসার অনুভূতি তাদের জরাগ্রস্ত মনকে স্পর্শ করে না। তৎসত্ত্বেও ইহজীবনে মায়ায় ভালবাসায় জড়িয়ে থাকা দুটি মানুষ সেই জোড় ক্ববরের নীচে আজও হয়তো স্বর্গীয় মায়া ভালবাসায় জড়িয়ে থেকে ঘুমিয়ে আছে।
ঢাকা
০৫ আগস্ট ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫