জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটা চুম দিয়ে যায়,
ঝরা পাতাদল নীরবে কাঁদে ভূমিশয্যায়!
গত তিনদিন ধরে হাঁটা হচ্ছে না। গত পরশুদিন কয়েক স্তরে গরম কাপড় পরে আমরা দু’জনে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। অল্প কিছুদূর (৪০০ স্টেপ এর মত) যাওয়ার পর নাক দিয়ে কনকনে বাতাস ঢোকা শুরু করলে রণে ভংগ দেই। ভুলে মাস্ক না নেয়াতে ঠাণ্ডাটা একটু বেশিই কাঁপন ধরিয়েছিল। গতকাল হাল্কা বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা বাতাস বইছে দেখে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও হাঁটার পরিকল্পনা বাদ দেই। আজ বারে বারে আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলাম। এই ভালো তো এই মন্দ। দুপুর বারটার দিকে আকাশে ঝলমলে রোদ উঠেছে দেখে ব্যাকইয়ার্ডে কিছু ভেজা কাপড় নেড়ে দিয়ে বাইরে বের হবার জন্য মনে মনে তৈরী হচ্ছিলাম। গরম কাপড় বের করে হাতে নেয়ার আগেই দেখি এক পশলা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দৌড়ে গিয়ে শুকাতে দেয়া ভেজা কাপড়গুলো তুলে আনতে আনতে সেগুলো আরও ভিজে গেল।
একেতো খুবই ছোট দিন, তার উপরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, এমন দিনে প্রকৃতি তার খেয়ালিপনা মানুষের মনেও বিস্তৃত করে। মনের অবস্থাটাকে ঠিক ‘বিষণ্ণ’ বলা যায় না; কেমন, তাও ঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় না। বলা যায় না, লিখা যায় না, শুধু মনে মনে নিরন্তর ভাবা যায় আর গান শোনা যায়ঃ এই মেঘলা দিনে একেলা..... অথবা এমন দিনে তারে বলা যায়....। মন থাকে মাঝে মাঝে অস্থির, মাঝে মাঝে বাঁধনহারা। খুব ইচ্ছে হয়, সুন্দর করে কিছু একটা লিখি, কেননা লিখার মত কত কিছুই তো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়! একবার লিখতে বসি, একবার উঠি; কিন্তু দিনশেষে তেমন কিছুই লিখা হয় না। বিকেলে মনে হলো, আবহাওয়ার এ বিষণ্ণতাকে ধরে রাখার জন্য আপাততঃ কয়েকটা ছবি তুলে রাখি। অন্ততঃ আকাশের এবং মনের এ অস্থিরতাটুকু ছবিতে তো স্মৃতি হয়ে থাকবে কিছুকাল!
আমাদের দেশে সাধারণতঃ শীতকালে বৃষ্টি হয়না; কদাচিৎ হলেও তা হয় হাল্কা, ঝিরঝিরে, ক্ষণিকের তরে। হাড়-হাড্ডিতে কাঁপন না ধরানো পর্যন্ত এমন বৃষ্টি বেশ উপভোগ্যই হয়ে থাকে। মেলবোর্নের বৃষ্টিও হাল্কাই হয়; খুব কম সময়ই তা প্রবল ধারায় ঝরে। কিন্তু বৃষ্টির সাথে এখানকার কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসটাই বড় মারাত্মক। তখন যেন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড় হয়ে আসে। ঘরে হীটারের উষ্ণতাও বেশিক্ষণ ভালো লাগে না। মনে হয় অস্থি-চর্ম শুকিয়ে আসছে। গরম কাপড় চোপড় আর হাত-মোজা পা-মোজা পড়ে আর কাঁহাতক বসে থাকা যায়! ল্যাপটপে যে কিছু লিখবো, হাত-মোজার কারণে তাও বিঘ্নিত হয়। এমতাবস্থায়, চা-কফি হাতে নিয়ে প্রিয় কোন লেখকের বই পড়াতেই বেশি আনন্দ পাওয়া যায়।
শীতকালে মেলবোর্নে দিন হয়ে যায় মাত্র সাড়ে নয় ঘণ্টার, আর রাত সাড়ে চৌদ্দ ঘণ্টার। এটা ২২শে জুন এর কাছাকাছি সময়ে হয়ে থাকে। দেখতে দেখতে দিন চলে যায়। এত ছোট দিন আমার ভালো লাগে না। একেতো এত ছোট দিন, তার উপর যদি সারাটা দিন আকাশ মেঘলা থাকে, সেই মেঘের ছায়া মনের মধ্যেও পড়ে। তার উপর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই! বৃষ্টির কারণে বোধহয়, গাছে কোন পাখি দেখা যায় না। আকাশেও না। আকাশের বিষণ্ণতা মানব মনেও সংক্রমণ করে। সে বিষণ্ণতা কাটাতে কেউ পুরনো দিনের গান শুনে, এতে তাদের মনটা ভালো হয়ে যায়। কেউ জানালা দিয়ে কাঁচের গায়ে বৃষ্টির ঝাপ্টা দেখে, বৃষ্টি না হলে মেঘলা আকাশটাকেই দেখে আর বাতাস উঠলে গাছের ডালপালার আন্দোলিত হওয়া দেখতে দেখতে মগ্ন চৈতন্যে হারিয়ে যায়। যাদের এসব কোন কিছুই ভালো লাগে না, তারা হয়তো নিজ নিজ শখের কিছু কাজ করে, নতুবা স্মৃতি রোমন্থন করে, নয়তো কোন প্রিয়জনের সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন হয়। শীতের কাঁপন শরীরের সাথে সাথে মনের কোন গোপন কোণেও হয়তো থিরথির একটা কাঁপন তুলে যায়।
(বন্ধ জানালার এপাশ হতে ওপাশের ছবি তোলা হয়েছে বলে ছবিগুলোর মান ভালো হয় নাই, সেজন্য দুঃখিত)
"জানালায় বৃষ্টির ফোঁটা,
ভূমিতে পতিত পাতা
একসাথে সুরে সুরে গায়,
"বিদায় পৃথিবী, বিদায়"!
The raindrops on the window and the fallen leaves on the ground together sing a song of melancholy.
071632 June 2022
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৩ রাত ১:৩৬