somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাক হৃদয়ে, বিহ্বল চোখে শুভ্র সফেদ মেঘপুঞ্জের সখ্যে অতিবাহিত মনোমুগ্ধকর কিছু মুহূর্ত (ছবিব্লগ)

২৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উন্মুক্ত আকাশে...

প্রায় চার মাসের মত সময় ধরে আমাদের প্রবাসী মেজো ছেলের বাসায় একটি চমৎকার অবকাশ কাটিয়ে আমরা সেদিন দেশে ফিরে আসলাম। কোথাও যাবার সময় যেমন মনে একটা আনন্দ থাকে, তার বিপরীতে ফিরে আসার সময় মনে অনুভূত হতে থাকে সাময়িক বিদায়ের একটা সূক্ষ্ম বেদনাবোধ। বিশেষ করে একেবারে শেষের সময়গুলোর স্মৃতি মনে ভাসতে থাকে। এবারে নবজাতক শিশুর কারণে বৌমা বিমানবন্দর পর্যন্ত আসতে পারেনি। তার সাথে এবং ছোট্ট নাতনি’র কাছ থেকে বাসা থেকেই উষ্ণ বিদায় নিয়ে এসেছিলাম।

সকালে খুব যত্নের সাথে ছেলের গাড়িতে আমাদের লাগেজগুলো তোলা, ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিকমত সাজিয়ে নিয়েছি কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা, গাড়িতে উঠে তার পছন্দের গান ছেড়ে দেওয়া (এবং আমারও, কারণ সে জানে আমার পছন্দের গান কোনগুলো), রওনা হবার পর পরই পথিমধ্যে এক গ্লাস কফি নিয়ে পাশে রাখা এবং কিছুক্ষণ পরপর চুমুক দিয়ে পান করে একান্তমনে তার গাড়ি চালিয়ে যাওয়া, চেক-ইন এর সময় সাহায্য করা এবং সব শেষে বিদায় আলিঙ্গণ, ইত্যাদি স্মৃতিগুলো ঘুরে ঘুরে মনে ভাসছিল। লাগেজ গোছানো নিয়ে আগের রাতে একটু টেনশনে ছিলাম, তাই ঘুমের সামান্য ব্যাঘাত ঘটেছিল। ক্লান্তিজনিত কারণে গাড়িতে আমি কিছুটা সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর একটু বেখেয়াল থাকায় ছেলেও হাইওয়ে থেকে বিমানবন্দরের পথে নামার একটি এক্সিট মিস করেছিল। ফলে, অযথা দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মূল্যবান ৩০ মিনিট অপচয় হয়। হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর আমার মনে হলো যে এতক্ষণে আমাদের বিমানবন্দর পৌঁছে যাবার কথা। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমরা কতদূরে আছি’? তদুত্তরে সে এক্সিট মিস করার কথা জানালো। ঘুমিয়ে যাবার কারণে তখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।

ছেলেকে বলেছিলাম, পার্কিং লট থেকে গাড়ী নিয়ে বের হবার সময় আমাদেরকে যেন একটা কল করে অথবা বার্তা পাঠায়। বাসায় পৌঁছেও যেন পাঠায়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা যখন বোর্ডিং এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তখন আমার আদেশানুযায়ী পাঠানো ছেলের বার্তা পেলাম, সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে। সে আরও লিখেছে যে সে বাসায় পৌঁছার আগেই হয়তো আমরা আকাশপথে উড্ডীন হবো, তাই সম্ভব হলে যেন আমরা বিমানে আসীন হবার পর তাকে অথবা বৌমাকে একটা কল করি, অথবা বার্তা পাঠাই। আমাদের প্লেনটা যখন বোর্ডিং ব্রীজ থেকে সরে এসে একটু একটু করে চলা শুরু করলো, তখনই আমি তড়িঘড়ি করে (কারণ পরমুহূর্তেই ফোন সুইচ অফ করে রাখার আদেশ পাওয়া যাবে) তার অনুরোধ পালন করে উভয়কে ফোন দিলাম, প্রথমে বৌমাকে, পরে ছেলেকে। ছেলে জানালো, সে তখনো বাসা থেকে ১২ মিনিটের দূরত্ব-পথে আছে। সম্ভব হলে রাতে ট্রাঞ্জিট পোর্ট থেকে যেন একটা কল করি অথবা বার্তা পাঠাই, এ অনুরোধ করে সে বিদায় সম্ভাষণ জানালো। আমিও তথাস্তু বলে বিদায় সম্ভাষণ জানালাম।

কাউকে বিদায় জানানো কিংবা কারো কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসা, আমার জন্য দুটোই বেদনাদায়ক। ছোটবেলায় যখন আমাদের বাসায় কোন কাজ উপলক্ষে কিংবা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে কেউ দুই একটা দিন থেকে যেত, তার যাবার সময় আমি তাকে যেতে দিতে চাইতাম না, কিংবা তার সাথে সঙ্গী হতে চাইতাম। মা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আমাকে নিবৃত করতেন। ছাত্রাবস্থায় কিংবা কর্মজীবনে যখন বাড়ি থেকে আসার সময় মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিতাম, তখন মায়ের চোখমুখ দেখেই বুঝতে পারতাম তিনি কতটা বেদনার্ত। বাবার অভিব্যক্তিহীন মুখ দেখে মোটেই বুঝতে পারতাম না, তিনি বেদনা বোধ করছেন কিনা। আজ মনে মনে ভাবি, বিদায় মুহূর্তে আমার মুখাবয়বও কি তেমনি অভিব্যক্তিহীন থাকে? আত্মজরা কি বুঝতে পারে, আমার ভেতরে কি তোলপাড় চলে? নিজের অনুভূতি থেকে আজ বাবার জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছে। বেচারা কখনো প্রকাশই করতে পারেন নি, কঠিন শিলাসম তার হৃদয়ের তলদেশে কতই না স্বচ্ছসলিল একটি প্রস্রবন বহমান ছিল!

প্লেন যখন আকাশে পাখা মেলে দিয়ে প্রথমে মেঘের দেশে প্রবেশ করলো, তখন জানালা দিয়ে দেখা বাইরের ধূসরতা মনকে আরও ভারী করে তুললো। তবে একটু পরে প্লেনটা আরও অনেক উঁচুতে উঠে গেল, ভূমি থেকে প্রায় বার হাজার মিটারের কাছাকাছি। তখন চারিদিক ঝলমলে রৌদ্র সমুজ্জ্বল। নীচ দিয়ে হেসে হেসে ভেসে ভেসে যাচ্ছিল নীলাকাশে সাদা পেঁজা মেঘের ভেলা। কখনো সেগুলো আবার একত্রিত হয়ে মেঘশয্যার আকৃতি ধারণ করছিল। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ যেন কোন মহানায়কের জন্য বিছিয়ে রেখেছে সেই শ্বেতশুভ্র মেঘশয্যা! মেঘের এমন আনাগোনা দেখে মুহূর্তের মধ্যে আমার মন ভালো হয়ে গেল। সারাটা পথ, দিনের আলোয় যেটুকু ছিলাম, সাথে আনা আমার এক শিক্ষকের লেখা একটা বই পড়ে আর ক্ষণে ক্ষণে মেঘের দিকে তাকিয়েই আমার কেটে গেল। কিছুক্ষণ পর পর ছবি তুলে রাখলাম। সান্ধ্যকালীন জলখাবারের ট্রে হাতে ধরা বিমানবালার আহবানে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। আগে শোনা পাইলটের সম্ভাষণের কিছু নির্দেশিকা মনে ছিল। বুঝলাম, একটু পরেই বিমানের অবরোহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

যাত্রাপথে দেখা সেসব মেঘমালার ছবি দিয়েই সাজালাম আজকের এই ছবিব্লগ।


ঢাকা
২৯ জুলাই ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ৬৭৩



উড্ডয়নের ছয় মিনিট পর তোলা ছবি


অস্ট্রেলীয় আকাশে বেলা ৩টা ৫৫ তে তোলা ছবি


অস্ট্রেলীয় আকাশে বিকেল ৪টা ৪৪ এ তোলা ....


অস্ট্রেলীয় আকাশে বিকেল ৪টা ৪৫ এ তোলা, নীলাকাশে সাদা পেঁজা মেঘের ভেলা ....


সুমাত্রা ও জাভা সাগরের উপর দিয়ে.... বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে


ওপরে সায়াহ্নের নীরবতা, নীচে কুলু কুলু রবে (হয়তো) বহমান জাভা সাগরের মৃদুকল্লোল.....


ইন্দোনেশীয় আকাশের কোন এক কোণে, হয়তো বা.... সময়, সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিট।


An wooly wooly, fleecy fleecy white bed.
231818 July 2022


সূর্যের আলো ক্রমশঃ কমে আসছে.... সন্ধ্যে ৬টা ১৯ মিনিট।


সন্ধ্যে ৬টা ৪৪ মিনিটে....


মালয়েশীয় আকাশে.... সময়, সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে।


সন্ধ্যা ৬টা ৫৪ মিনিটে.....


সায়াহ্নে.... ৭টা ৩৬ মিনিটে



সাঁঝের আকাশ, কুয়ালালামপুর, সন্ধ্যে ৭টা ৩৭ মিনিটে।


কুয়ালালামপুরের আকাশ, সন্ধ্যে ৭টা ৩৯ মিনিটে। এর ২৮ মিনিট পর প্লেনটি মালয়েশীয় রানওয়ে স্পর্শ করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩০
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×