somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ ক্লাব লিঃ এবারের ‘মা দিবস’ উপলক্ষ্যে একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘মায়ের কাছে প্রথম চিঠি’ শীর্ষক এই সংকলনে ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু করে চলতি সময় পর্যন্ত সকল স্তরের প্রতিনিধিত্বমূলক ক্যাডেটদের লেখা ‘মায়ের কাছে প্রথম চিঠি’ এ সংকলনে প্রকাশ হবে। তবে চিঠিটি সবাই লিখবে বর্তমান সময়ে, তাঁর স্মৃতি থেকে যে চিঠিটি লেখা হয়েছিল, বা লেখাই হয়নি, কিন্তু লেখা হতে পারতো, তা নিয়ে। প্রতিটি চিঠিতেই প্রত্যেক ক্যাডেট তাঁর পরিপ্রেক্ষিত থেকে প্রথম দিন কলেজে এসে তাঁর কী অনুভূতি হয়েছিলো, কিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলো এবং তাঁর ফেলে আসা গ্রাম বা শহরের পারিপার্শিকতা নিয়ে সে কী ভেবেছিলো তা প্রকাশ করবে।

উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। ইচ্ছে হলো, আমিও একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দেই। সে ইচ্ছে থেকেই আয়োজকদের সকল নিয়ম মেনে এ চিঠিটি লিখলাম।



মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

০৮ জুলাই ১৯৬৭
রাত নয়টা
ফজলুল হক হাউস
এমসিসি

শ্রদ্ধেয়া আম্মা,

আমার সালাম নিবেন। আশাকরি আব্বা গতকাল আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে ভালোভাবে বাসায় পৌঁছেছেন। আব্বা যখন গতকাল পড়ন্ত বিকেলে আমাদের কলেজ অডিটোরিয়ামে আমাকে রেখে ঢাকা ফিরে যাবার জন্য ধীর পদক্ষেপে কলেজের মেইন গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে ওনাকে দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। এমনিতেই আপনাদের সবাইকে রেখে এখানে আসার সময় অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছিলাম। কারণ তখন আমার সামনে আপনারা সবাই ছিলেন। কিন্তু গতকাল আব্বা যখন ফিরে যান, তখন আমার আশে পাশে চেনা পরিচিত কেউ ছিল না, যারা ছিল তারা সবাই অপরিচিত। তাই কান্না রোধ করার কোন চেষ্টাই করিনি।

একটু আগে ডিনার করে আসলাম। এখানে খাওয়া দাওয়া খুব ভালো, এ নিয়ে আপনি মোটেই চিন্তা করবেন না। একটু পরেই, দশটার সময় “লাইটস আউট” হবে। তখন সব লাইট নিভিয়ে দিয়ে সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। আমি আমাদের হাউসের দোতলায় একটি রুম পেয়েছি। এখানে আমরা এক রুমে মোট দশ জন থাকি। তার মধ্যে আটজন আমরা নতুন ক্যাডেট, আর দু’জন আমাদের দু’বছরের বড়, সিনিয়র ক্যাডেট। ওনাদের মধ্যে একজন রুম ক্যাপ্টেন, অপরজন এসিস্ট্যান্ট রুম ক্যাপ্টেন। ওনারা দু’জনই খুব ভালো, দু’জনের বাড়িই সিলেট জেলায়। গতকাল ওনারা আমাদেরকে এখানকার অনেক নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন।

নতুন আটজনের মধ্যে পাঁচজন আমরা বাংলা মিডিয়াম থেকে এসেছি, তিনজন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তো। ঐ তিনজন অনেক বড়লোক, ওদের সবার গাড়ি আছে। ওরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে, তখন অনর্গল ইংরেজিতে বলে, যা আমি পারি না। তবে ওদের সব কথা আমি বুঝি। আশাকরি আমিও কিছুদিনের মধ্যেই ওদের মত ইংরেজিতে কথা বলতে পারবো, কারণ এখানে ক্লাসে পাঠদান হবে ইংরেজি ভাষায়। ইতোমধ্যে পাঠ্যবই পেয়ে গেছি, বাংলা ছাড়া সব বই ইংরেজিতে লেখা। কয়েকটা বই এর কিছু পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখেছি, আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হয় নাই। ইংরেজি পড়ুয়া আমার বন্ধুরাও খুব ভালো। ওদেরই একজন গতকাল আমাকে টাই এর নট বাঁধা শিখিয়েছে, যা আমি আগে পারতাম না। আজ টেইলর এসে আমাদেরকে খাকি ইউনিফর্ম এবং অন্যান্য কিছু পোশাক দিয়ে গেছে, যা আগামিকাল থেকে আমাদের পরতে হবে।

গতকাল দুপুরে আপনি আমার জন্য পোলাও কোর্মা রেঁধেছিলেন। আমার আর যা যা প্রিয় খাবার, তার অধিকাংশই মেন্যুতে ছিল। টেবিলে খাবারগুলো দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু খেতে বসে দেখি, আমার সে পছন্দের খাবারগুলো কিছুতেই গলা দিয়ে নামছে না। ঢোক গিলে গিলে আর পানি খেয়ে খেয়ে কোনরকমে খাওয়া শেষ করেছিলাম। আমার খুব খারাপ লাগছিল আপনাদের জন্য। এখন আষাঢ় মাস, এখানে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। একটু আগে আমার জানালার খুব কাছে একটা শিয়াল এসে ‘হুক্কাহুয়া’ ডাকছিল। এখানে রাত হলেই অনেক শিয়াল ডাকাডাকি করে। একটু পরেই সব লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়তে হবে। তাই আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আব্বাকে আমার সালাম জানাবেন।


ইতি,
আপনার স্নেহের, …..
(পুনর্লিখিত, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৭
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×