somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১০

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব -
Click This Link

ইশকুল ! ইশকুল !!

১৯৭০ সালের জানুয়ারীর এক সকালে আমাকে স্কুলে ভর্তি করা হলো সরাসরি বড়ো ওয়ানে। শিশু শ্রেণীতে পড়তে হয়নি। মায়ের হাতে পাখার ডাঁটের মার খাওয়া আর ফখরুল ভাইয়ের কাছে বাল্য শিক্ষা পাঠের সুফল। স্কুলে ভর্তি হবার আগেই আমি বাংলায় যে কোন লেখা গড়গড় করে পড়ে ফেলতে পারতাম। হেড স্যারের রুমে বাবার হাত ধরে কাঁপতে কাঁপতে ঢূকলাম। দোর্দণ্ডপ্রতাপ হেড স্যার বজলুর রহমানের কথা ''অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা'' সিরিজের প্রথম পর্বেই লিখেছি। এখানে তার পুনরাবৃত্তি করলাম না। শুধু হেড স্যারের সাথে বাবার কথার সারাংশ তুলে দিই- '' স্যার, ছেলেকে আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। চামড়া আর মাংশ আপনার, আমি হাড্ডিটা ফিরে পেলেই চলবে। ছেলেকে মানুষ করে দেবেন।'' হেড স্যার হাসিমুখে বললেন, আপনি ভাববেন না। আমার ওপর ছেড়ে দিন। শুনে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।

বাড়ী এসে আম্মার কাছে এটা বলতেই আম্মা বললেন, ভয়ের কিছু নেই। এটাই স্কুলে দেবার নিয়ম।

নিয়ম মেনে স্কুলে যেতে শুরু করলাম। বাড়ীর খুব কাছেই স্কুল। নতুন পাকা বিল্ডিং। সামনে মাঠ। আইয়ুব খানের আমলে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলগুলো পাকা করা শুরু হয়। পাকা কারার পর আমরাই সে স্কুলের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হই। বড়ো হয়ে জেনেছি ১৯৪৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সময় সব জমি আমার দাদাই দিয়েছেন। দাতা হিসাবে তাই স্কুল কমিটিতে আমাদের একজন আজ অব্দি আছে। এখন আমার এক চাচাতো ভাই আছে। সে আবার ওটার সামনে অবস্থিত হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। মাস্টার্স করে গেছে জগা বাবুর পাঠশালা থেকে। (এখন তো সেটা পুরোদস্তুর বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের কালে জগন্নাথ কলেজকে এ নামেই ডাকা হতো) পরে জেনেছি আমার আম্মাই ২০ বছর কমিটি মেম্বার ছিলেন।

বাড়ীর লম্বা দরজার সাথে লাগা রাস্তা দিয়ে (যেটা দিয়ে বাস চলতো। ১৯৭৯ সালের দিকে সেটা পাকা হয়ে যায়) যেতাম স্কুলে। ছোট ছোট পায়ে যেতে লাগতো ৭/৮ মিনিট। স্কুলের সাথেই গ্রামের বাজার। ফলে স্কুলটা আমাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিলো। বাবা যদিও হাড্ডি পেলেই খুশী বলে এসেছিলেন স্কুলে সে রকম কিছুর সামনে পড়িনি। কারণ লেখা পড়ায় ভালো করে ফেললে স্যারদের আদর পাওয়া যেতো আমাদের কালে। বেশ ভিআইপি ছিলাম।

এক শ' তে দুই শ'

এটা পুরনো ও বিখ্যাত গল্প। অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় অঙ্কের খাতা দিলো। ১ শ' তে ১ শ'। ওপরে নীচের বিষয়টা হিসাব না করে বাড়ী গিয়ে আম্মাকে বললাম, আমি এক শ' তে দুই শ' পেয়েছি আম্মা। খাতা দেখে আম্মা হাসলেন। বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেই বেলা সেটা মাথায় ঢুকলো না। বাংলায় গিয়ে যখন ১ শ' তে ৯৮ পেলাম। তখন বিষয়টা মাথায় ঢুকলো।

গনি মিয়া একজন কৃষক

প্রথম শ্রেণীতে পড়া যে গল্পটি সবার মনে আছে সেটির প্রথম দিকটা সবার মুখস্ত - গনি মিয়া এক জন কৃষক। তার নিজের জমি নাই। অন্যের জমি চাষ করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন বর্গাচাষীর করুন অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপশি অপচয়ের কুফল শিক্ষা দেবার দারুন চেষ্টা ছিলো সেটা। কিন্তু সে চেষ্টা যে মাঠে মারা গেছে তার প্রমান আমাদের দেশে বিদ্যমান সর্বব্যাপী অর্থহীন ফুটানী।

মজার ব্যাপার হলো চাকরীসূত্রে উত্তরবঙ্গে কাজ করতে গিয়ে গনি মিয়ার সন্ধান পেলাম। সোজা বাংলায় সে অসাধারণ লেখকের সন্ধান পেলাম। এর লেখক কাজী জসিম উদ্দীন। ইনিও কবি ( পল্লী কবি নন) । তাঁর বাড়ী জয়পুরহাট (সাবেক বগুড়া) জেলার কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামে। বহু কীর্তিমান পুরুষের জন্মস্থান এ গ্রামটি । এ জসিম উদ্দীনের পুত্র ডা. আবু হায়দার সাজেদুর রহমান ছিলেন ৬০ ও ৭০ দশকের অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার। তাঁর ভাতিজা খুরশীদ আলম ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লে-ব্যাক গায়ক। তাঁর গাওয়া শত শত গান জনপ্রিয় হয়েছিলো। চাচার অনেক গানও তিনি গেয়েছেন। এ বাড়ীর কাজী মোখলেছার রহমান বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রাচীনতম পুরাকীর্তির স্থল মহাস্থান গড়ের কাছাকাছি অবস্থিত হারুঞ্জা গ্রামে কিছু পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান আছে।

নামতার কোরাস

আমাদের হেড স্যার খুব কাজের একটা পদ্ধতি বের করেছিলেন। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর সবাইকে ( তখন ওয়ান আর টু'র ছুটি হতো বারোটায়। ক্লাস শুরু দশটায়। বিষয় ছিলো বাংলা আর অঙ্ক) মাঠে জড় করতেন স্যার। বেত হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। একেক জনকে একেকটা নামতা ঠিক করে দিতেন। সে সেই নামতাটি বলতে থাকতো। তারটা শুনে সবাইকে চিৎকার করে নামতা বলতে হতো- একেকে এক ! দুইএকে দুই !! ইত্যাদি। কখন কার ঘাড়ে কোন নামতা বলার হুকুম হয় সে ভয়ে সবাই বিশের নামতা পর্যন্ত মুখস্ত করেছিলাম। কারণ, কোন নামতা বলতে না পারলে বজল মাষ্টরের বিখ্যাত বেতের বাড়ি খাওয়া অবধারিত ছিলো। নামতা মুখস্ত করার ফলে আমাদের অঙ্ক করার সময় বেঁচে যেতো। দ্রুত অঙ্ক করায় নামতা জানার বিকল্প নেই। আমার দুই ছেলেকে নামতা শিখাতে পারছি না। এখন নাকি সব সৃজনশীল। কিছুই মুখস্ত করতে হয় না।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:২৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×