somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালী চরিত্র দুই শতাব্দী পূর্বে - ১

০৫ ই মে, ২০১২ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব কথা-এ লেখাটি সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকা থেকে পুনর্মুদ্রণ করেছিলো সাপ্তাহিক রোববার, ১৯৮৮ সালে। দুই সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাটি পোস্ট করলাম। প্রায় ২৫ বছর আগের ম্যাগাজিন দুটির পুরনো নিউজ প্রিন্টের পাতাগুলো নষ্ট হচ্ছে দেখে ডিজিটাল কায়দায় তা সংরক্ষণের চেষ্টা করলাম। প্রায় সোয়া দুই শ' বছর আগের পর্যবেক্ষণ এখনো প্রাসঙ্গকি মনে হচ্ছে বলে সবার সাথে তা দুই পর্বে শেয়ার করলাম।

বাঙালী চরিত্র দুই শতাব্দী পূর্বে

অভী দাস

( ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক দেশ থেকে এই প্রবন্ধটি বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখেই পুনর্মুদ্রিত হলো। এতে তৎকালীন বৃটিশ রাজ্যের অধীনে উপমহাদেশে কর্মরত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে দু’শ’ বছর আগে বাঙালী চরিত্র কেমন ছিলো—তা-ই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বাঙালী চরিত্র সম্পর্কে এতে যা বলা হয়েছে,বলা বাহুল্য, সেটা মোটেও সুখকর নয়। যেমন, বলা হয়েছে: বাঙালীরা অধিকাংশই অত্যন্ত অলস,অজ্ঞ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন; হীনচেতা ও অকৃতজ্ঞ এবং অনেক সময়েই প্রতিহিংসা-পরায়ণ,স্বার্থপর,মিথ্যাচারী ও নির্লজ্জ। শিশুকাল থেকেই শেখানো হয় যে, বিষয়-সম্পত্তি সঞ্চয় করাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তাছাড়া, শঠতা,প্রবঞ্চনা প্রভৃতি পরিবেশের মধ্যে এরা বড় হয়ে ওঠে। জালিয়াতি ও ফাঁকিবাজিকে এরা খুব বাহবার কাজ বলে মনে করে। যে ক্ষেত্রে লালসা বা প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি অবাধে চরিতার্থ করা যায়, সেখানে এই হীন আচরণেএদের ক্লান্তিবোধ নেই। ... ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরপর দু’শ’ বছরে বাঙালীর চরিত্র অবশ্যই পাল্টেছে; সম্ভবত কিছু চারিত্রিক গুণাবলিও বাঙালীরা এর মধ্যে অর্জন করেছেন। তবে মোটের ওপর বাঙালী চরিত্রের দোষ গুন বুঝে নিতে এই প্রবন্ধটি যে প্রভূত সহায়ক হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায়, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে উপরোক্ত দোষগুলো প্রায়ই প্রত্যক্ষ করা যায়। মনে রাখতে হবে যে, বৃটিশ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের এই প্রতিবেদনগুলো এক গোপন উদ্দেশ্যে প্রণীত ও প্রেরিত হয়েছিলো-প্রধানত এ-দেশের প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনার স্বার্থে। সুতরাং মোটিভেশন কিছু থাকলেও, পুরোটাই অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো না। দেশের ভাগ্য বিড়ম্বিত ও অসহায় মানুষের কথা থাক, আজ আমরা যখন দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি ও প্রশাসনের অধীশ্বর ব্যক্তিদের দিকে তাকাই, তখন কি দেখি ? দেশের বিবেক বলে পরিচিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী, বিচারক, আইনজ্ঞ,চিকিৎসক,প্রকৌশলী,শিক্ষকমণ্ডলী এবং ধর্মব্যবসায়ী-প্রায় প্রত্যেকের দিকে তাকালে কি দেখতে পাই আমরা ? সবিনয়ে স্বীকার করছি, ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছেন; কিন্তু মোটের ওপর চারদিকেই চাটুকার ও মোসাহেবদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আরো এক ধরনের বিসদৃশ প্রতিযোগিতাও প্রায়ই দেখা যায়- কে কাকে ডিঙিয়ে যেতে পারে ? বাঙালী চরিত্রের এ-সব দিক নির্ণয়ে প্রতিবেদনটির অপরিহার্য প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এর বাইরেও যদি কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে তিনি তার বক্তব্য যুক্তিসহ লিখিত আকারে আমাদের জানাতে পারেন-অবশ্যই তা পত্রস্থ করা হবে। কেননা, আমরা মনে করি যে, এতোদিন পরেও বাঙালী চরিত্রের আত্মসমীক্ষা ও আত্মবিশ্লেষণের অপরিহার্যতা রয়েছে।)

সূত্র :
সাপ্তাহিক রোববার।
দশম বর্ষ ঊনবিংশ সংখ্যা ৩ এপ্রিল ১৯৮৮/২০ চৈত্র ১৩৯৪
দশম বর্ষ বিংশতিতম সংখ্যা ১০ এপ্রিল ১৯৮৮/ ২৭ চৈত্র ১৩৯৪
সম্পাদক-আবদুল হাফিজ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিক আজাদ



ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর কয়েক দশক পর্যন্ত-অর্থাৎ রাজা রামমোহন রায়ের কাল থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু পর্যন্ত শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা জাতীয় জীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে বাঙালী ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছে। মুসলিম আমলে বা আরো আগে হিন্দু যুগে বাঙালীর প্রভাব কোন কালেই দেশব্যাপী বিস্তারলাভ করতে পারেনি। মহাভারতের বিশাল কর্মকাণ্ডে বঙ্গের উল্লেখ অবশ্যই বিদ্যমান; তবে তা অত্যন্ত গৌন ও অগৌরবের। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা যে ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে বঙ্গরাজ যোগ দিয়েছিলেন সত্যধর্মব্রতী পাণ্ডব পক্ষে নয়, পাপাচারী কৌরব পক্ষে এবং যুদ্ধেক্ষেত্রে তিনি স্বয়ং দুর্যোধনের পশ্চাদভাগ রক্ষা করেছিলেন। মোগল বা পাঠান আমলে বাংলার বাইরে বাঙালীর সগৌরব উপস্থিতি নগন্যপ্রায়।

তাই সবিশেষ লক্ষণীয় যে বাঙালীর অভাবিত নব জাগরনের উদ্ভব ঘটে পূর্বাঞ্চলে ইংরাজ শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবার পর। আর তার বিলোপ ঘটতে থাকে ইংরাজ শাসন অবসানের সূচনা থেকে। এই প্রায় শতাব্দীব্যাপী সময়ে বাংলার মণীষীরা প্রতিভা ও সুমহান চরিত্রবলে সর্বজনশ্রদ্ধার আসন লাভ করেছিলেন। বস্তুত বাঙালীর সামগ্রিক ইতিহাসে এ এক বিস্ময়কর ঘটনা। যাকে ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকার বলেছেন, কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইউরোপে যে নবজাগারণ ঘটে তার তুলনায় বাংলার নবজাগরন ছিলো অধিকতর ব্যাপক,গভীর ও বিপ্লবাত্মক। কিন্তু এ দেশে ইংরাজ শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবার সময়ে অথবা আরো সুস্পষ্টভাবে বলা যায় এই নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ের আবির্ভাবকালে বাংলার সাধারণ মানুষের চরিত্র কেমন ছিলো ?

বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন বৃত্তির মানুষ-পরিব্রাজক,সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিবিদ বিভিন্নভাবে বাঙালী চরিত্রের রূপ নির্দেশ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী পরষ্পরবিরোধী। কেউ বলেছেন বাঙালী চিন্তাশীল,বিপ্লবী; কারো মতে বাঙালী কল্পনাবিলাসী,বাস্তববিমুখী,অলস, আবার কারো কারো ধারণা বাঙালী কলহপ্রিয়,আত্মকেন্দ্রিক। কোন ব্যক্তিচরিত্রকে একটিমাত্র অভিধায় চি‎হ্ণিত করা দু:সাধ্য। আর সমাজতো বিচিত্র মানুষের সমষ্টি মাত্র। কাজেই দ্রষ্টার মানসিকতা,পরিবেশ ও কাল অনুযায়ী তার উপলব্ধি ভিন্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

পলাশী যুদ্ধের পনেরো বছর পর রাজা রামমোহনের আবির্ভাব। তাঁর জন্মের (২২ মে ১৭৭২) মাত্র এক মাস পূর্বে ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন (১৩ এপ্রিল ১৭৭২)। তখন এদেশের ইংরাজ শাসন অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে এবং ক্রমেই অর্জন করেছে দুর্বার শক্তি। ঠিক এই সময়ে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কয়েকজন বিশিষ্ট কর্মী বিভিন্ন উপলক্ষে বাঙালী চরিত্র সম্পর্কে সরকারের কাছে বা কোম্পানীর সদরে যেসব গোপন রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন বা বিবরণী পেশ করেছিলেন সেগুলোতে তৎকালীন সমাজের এক রৌদ্রদীপ্ত চিত্র প্রতিভাত। এতে তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর বিচারশক্তি ও নির্ভীক মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। আর বাঙালী চরিত্রের এমন নগ্ন বিচারও সচরাচর চোখে পড়ে না।

জন শোরের বিবরণ

আজ থেকে ঠিক দুইশত বছর আগে ১৭৮৪ খৃষ্টাব্দে স্যার জন শোর (তিনি লর্ড কর্ণওয়ালিসের সহকর্মী ছিলেন এবং কর্ণওয়ালিসের পর ২৮ অক্টোবর ১৭৯৩ খৃ: গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রথম কর্মজীবনে তিনি মুর্শিদাবাদে রাজস্ব বোর্ডের ও পরে রাজশাহীতে রেসিডেন্টের সহকারী হিসেবে কয়েক বঝর কাজ করেছিলেন) এক বিবরণীতে লিখেছিলেন,’ বাঙালীরা ভীরু ও দাসসুলভ। নিজেরা কিন্তু অধস্তনের কাছে উদ্ধত। অথচ উপরওয়ালার কাছে এরা সাধারণত বাধ্য থাকে। তবে যেখানে শাস্তির ভয় নেই সেখানে মনিবের কাছেও দুর্বিনীত হয়ে উঠতে পারে। ব্যক্তি হিসেবে এদের মানসম্মানবোধ খুব কম। জাতি হিসেবে এদের জনকল্যাণমূলক মনোভাব একেবারে নেই। যেখানে মিথ্যা কথা বললে কিছু সুবিধা হতে পারে সেখানে মিথ্যা কথা বলতে এদের একটুও বাধে না। এদিকে কিন্তু হিন্দু মুসলমান উভয়েই সর্বদা নিজেদের গুনগরিমার কথা বড়াই করে বলে। বাইরের লোকের কাছে বলতে হয় তাই বলে। এর বেশি কোন মূল্য নেই।

এরা মনে করে চালাকি ও কূটকৌশল জ্ঞানের পরিচায়ক। লোকঠকানো ও ফাঁকি দেয়া জ্ঞানী লোকের গুন। এদের কাছে সবচেয়ে অপমানকর হলো জাতিচ্যুত হওয়া। ধর্মের বিধার অমান্য করলে ধর্মগুরু এই শাস্তি দিয়ে থাকেন।

এদের সমাজে মিথ্যা কথা বলা,চুরি করা, ধর্ষণ বা নরহত্যা করা জাতিচ্যুত হওয়ার মতো গুরুতর অপরাধ নয়।

হিন্দুর সবকিছুই আত্মকেন্দ্রিক। আত্মস্বার্থই এদের চালিত করে, উচ্চাকাঙ্খা অনেক পরের কথা। অর্থ লালসা এদের প্রেরণার উৎস। এরা যে ডাহা মিথ্যা কথা বলতে পারে, চাকরের মতো তোষামোদ করতে পারে,ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকি দিতে পারে এবং তা করেও থাকে সে-কথা বিশ্বাস করতে হলে এদের মধ্যে বেশ কিছু কাল কাটাতে হবে। আমরা অযথা এদের মধ্যে সংস্কারমুক্ত মন, গভীর চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী মানুষ খুঁজে মরি। হিন্দুদের শিক্ষা তাদের নিজ ভাষা পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা উন্নত। তাদের কিছু নীতিকথা, রাজকার্যের কিছু মূলসূত্র শিখতে হয়, যদিও কার্যকালে সেগুলো মেনে চলে না। তাদের রাষ্ট্র শাসনের জ্ঞান ঐ পর্যন্তই। এর ব্যতিক্রম অতি বিরল। অত্যাচার ও বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে নেটিভরা যে পর্যায়ে নেমে যেতে পারে একজন ইংরেজের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সে কথা ভাবলেও তার মন বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। এ কথা যদি মেনেও নিই যে কোন ইংরেজ স্বভাবদোষে বা প্রয়োজনের তাগিদে ভ্রষ্টাচারী হয়, তৎসত্ত্বেও তাদের মনে যে সামান্য নীতি ও সম্মানবোধ থাকে তাতে করে বাংলার একজন নেটিভ যে পর্যায়ে নেমে যেতে পারে তারা তা পারে না। সাধারণত রায়ত থেকে আরম্ভ করে দেওয়ান পর্যন্ত সকলেরই কাজ হলো কথা গোপন করা, অন্যকে ফাঁকি দেয়া। একটা শাদা কথার ওপরে এরা এমন একটা আবরণ জুড়ে দেয় যা মানুষী বুদ্ধির দ্বারা ভেদ করা কঠিন।

চার্লস গ্রান্টের প্রতিবেদন

প্রায় এক দশক পরে চার্লস গ্রান্ট এশিয়াবাসী বৃটিশ প্রজাকুলের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করেন। রচনাকাল প্রধানত ১৭৯২ সাল। তবে ১৭৯৭ সালের ১৬ই আগস্ট তিনি ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কোর্ট অব ডাইরেক্টরের কাছে সভার আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য এটি প্রেরণ করেন। গ্রান্ট এ দেশে কোম্পানীর বিভিন্ন পদে অধিষ্টিত থেকে প্রায় ২০ বছর কাজ করেন। ১৭৯০ সালে যখন দেশে ফিরে যান তখন তিনি ছিলেন লর্ড কর্ণওয়ালিসের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা। তিনি নিজেই বলেছেন এ দেশে কাজ করবার সময় তাঁর অধিকাংশ কাল কেটেছে প্রদেশের অভ্যন্তরভাগে দেশীয় লোকদের মধ্যে। লন্ডনে ফিরে যাবার চার বছর পর তিনি কোম্পানীর ডিরেক্টর নির্বাচিত হন এবং ১৭৯৭ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত (১৮২৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়) যে ছ’বার বোর্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার প্রত্যেকবারই তিনি জয়ী হন। তিনি তিন বার কোম্পানীর চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তৎকালে তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী পুরুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সর্ববিষয়ে ঈশ্বরপ্রেরিত প্রতিনিধি হিশেবেই তিনি কাজ করছেন।

গ্রান্ট তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন,
’নেটিভদের স্বভাব-চরিত্র অত্যন্ত শোচনীয়, অশ্রদ্ধা ও করুণার উদ্রেক করে। তবে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিশাল সমাজে যে ভালোমন্দ থাকবে না এমন নয়, নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা প্রায় একই। ঐ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলার অধিবাসীদের স্থান সর্বনিম্নে। সমাজের নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য যে সমস্ত গুণাবলি প্রয়োজন বাঙালীদের মধ্যে সেগুলো প্রায়শই বিস্ময়কররূপে অনুপস্থিত।

তাদের মধ্যে সততা, সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার বড়ই অভাব। ইউরোপীয় সমাজে এর নজির মেলা ভার। সেখানে এইসব নীতিবোধকে চরিত্রবল ও সুনামের ভিত্তি বল গণ্য করা হয়; যাদের এসব গুণ নেই তারাও অন্তত থাকার ভান করে। যারা এসব গুণে একেবারে বঞ্চিত তাদেরকে সবাই ঘৃণা করে। বাংলায় কিন্তু এমনটি ঘটে না। এইসব গুণাবলী এখানে এমনভাবে লোপ পেয়ে গিয়েছে যে, সমাজে তার একটা ছদ্মাবরণ রাখারও প্রয়োজন বোধ হয় না। এই গুণ অর্জনের বা রক্ষার চেষ্টাও নেই। আবার এইসব গুণ সামাজিক সম্পর্কও নিয়ন্ত্রিত করে না। যাদের এসব গুণ নেই, তা যতোই প্রকট ও ঘৃণ্য হোক না কেন, সাধারণের চক্ষে তারা হেয় বলে গণ্য হয় না, অথবা এই কারণে পরিচিতদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কচ্ছেদও ঘটে না। মিথ্যাচারিতা এদের এমন স্বভাব যে কোনো সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে এদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যা কথা বলা এমন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে এতে কেউ উত্তেজিত বোধ করে না। মনে করে এসব মেনে নিতে হয়। এই আচরণ মেনে চলার ফলে এটা যে দোষের সেই বোধটাই চলে গিয়েছে। সাধারণ কাজেও লোক ঠকানো, ফাঁকি দেয়া, ধোঁকা দেয়া, চুরি করা এমন একটা সাধারণ ঘটনা যে হিন্দুরা একে স্বাভাবিক অনাচার বলে মনে করে। নিজেকে এসবের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে, কিন্তু এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে না। সত্য ও সততার লজ্জাকর অপলাপ ঘটলেও সমাজে তার কোনো স্থায়ী বা গভীর প্রভাব পড়ে না।

ইউরোপের খুব খারাপ অঞ্চলেও কিছু মানুষ পাওয়া যাবে যারা বিবেকবান, সত্যনিষ্ঠ ও অকপট। বাংলায় কিন্তু যথার্থ সৎ ও সত্যবাদী মানুষের অস্তিত্ব একটা বিরল ঘটনা। আচার আচরণে সর্বদা বিবেকবান এমন চরিত্র এখানে অজানা। বিশ্বের এই খণ্ডে বিশ্বাস, আস্থা এখনও অনেক পরিমানে বিদ্যমান এবং ঠকলে মানুষ বিস্ময়বোধ করে। বাংলায় কিন্তু লেনদেনের সর্বত্র জুড়ে আছে অবিশ্বাস। উভয়পই বিশ্বাসভঙ্গ করতে পারে এই আশঙ্কা নিয়েই চুক্তি বা দলিলপত্র রচনা করা হয়। তাই অসংখ্য শর্ত ও রক্ষাব্যবস্থা জুড়ে দেয়া হয়। তৎসত্ত্বেও যদি বিশ্বাসভঙ্গ ঘটে তাহলেও কেউ বিস্ময়বোধ করে না।

কোন নেটিভকে যদি কাজকর্মে সত্য ও ন্যায়নীতি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয় তবে সে তাকে দুর্বল ও অবাস্তব প্রস্তাব বলে মনে করবে। সে বলবে, যে সব লোকের সঙ্গে আমাকে কাজ করতে হয় তাদের কি রকম চরিত্র সে সম্বন্ধে আপনার কোনো ধারণা আছে ? সকলেই যখন আমার ওপর সুযোগ নেয়ার চেষ্টায় আছে তখন আমি যদি সুযোগ না নিই তাহলে আমি বাঁচবো কী করে ? জীবনের সর্বক্ষেত্রেই চলছে প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, ফাঁকিবাজি সেই সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। জাল-জুয়াচুরিও প্রায়শই চলে নির্দ্বিধায়।

কেউ যদি প্রয়োজনের তাগিদে বা যথার্থ বিশ্বাস করেই কারও ওপর আস্থা স্থাপন করে তবে অপর পক্ষ একে লুটেপুটে নেবার একটা মওকা বলে মনে করবে। এই সুযোগে কিছুটা দাঁও মেরে দেবে না এমন লোক খুব কম। জমিদার অথবা ব্যবসায়ীর প্রধান কর্মচারী মালিকের বিষয়-সম্পত্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি নিজের ভাগে টেনে নেবার চেষ্টা করবে। অপরদিকে ঠিক তেমনিভাবে সেই প্রধান কর্মচারীর অধস্তন কর্মীরা তাঁর বিষয়-সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে তিনি যদি একটু কম মনোযোগী হন। এদের কেউ যদি এমনিভাবে অত্যন্ত ধীরে নি:শব্দে বিশাল সম্পত্তি গড়ে তুলে মারা যান এবং তার অলস পুত্র মালিক হয়ে বসে তবে বাড়ির লোকেরাই তার অজান্তে সম্পত্তি লুটেপুটে নেবে।

যে ভৃত্য বাড়িতে দীর্ঘকাল কাজ করে মালিকের সঙ্গে তার যথার্থই একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু তাই বলে মালিকের টাকা পয়সা চুরি করার অভ্যাস সে ছাড়ে না। পিতৃব্য যদি তার ভ্রাতুষ্পুত্রের ওপর, এমন কি পিতা যদি পুত্রের ওপর তার বিষয় দেখাশোনার ভার দেন তবে সে যে তার থেকে সরিয়ে নিজস্ব বিষয় গড়ে তুলবে না একথা নিশ্চয় করে বলা যায় না। কেউ শিশু সন্তান রেখে মারা গেলে তার বন্ধু-বান্ধব অছি হিসাবে নাবালকের বিষয়-সম্পত্তি রক্ষা করবে এটা একটা পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার অপব্যবহার ঘটে থাকে। তবে যে ব্যাপারে বাঙালীদের পারষ্পরিক আস্থা অটুট থাকে তা হলো অবৈধকর্ম। এক্ষেত্রে তারা কথার মর্যাদা রক্ষা করে চলে।

যখনই বিচারের ভার নেটিভদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে, তা সে হিন্দুই হোক আর মুসলমানই হোক, তখনই তা নেহাৎ কেনা বেচার পর্যায়ে নেমে গিয়েছে। আদালতে সাফল্য লাভ করতে হলে তার দাম দিতে হয়; আর সাফল্য ক্রয়ের জন্য চাই উপযুক্ত সুযোগ। টাকা দিয়ে নরহত্যার অপরাধ থেকেও মুক্তি লাভ করেছে। টাকার এমনই শক্তি যে হলফনামা পাঠ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া অতি সাধারণ অপরাধ। দু’পক্ষের সাক্ষী সত্য কথা বলার শপথ নিয়ে পরষ্পরের ঠিক বিপরীত কথা বলে যাচ্ছে- এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। একটু তদন্ত করলেই দেখা যাবে যে উভয়পক্ষের সাক্ষীরই প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান নেই। আদালত থেকে এই সব দুর্নীতির উদ্ভব ঘটেনি, এর উৎস সাধারনের চরিত্রে। লর্ড কর্ণওয়ালিস যে সংস্কার প্রবর্তন করেছেন তার ফলে বিচার ব্যবস্থা হয়তো ত্রুটিমুক্ত হবে, কিন্তু আইন প্রয়োগের আয়োজন সম্পূর্ণ হলেও চরিত্রগত দুর্নীতি নির্মূল হবে না।

এদের কাছে স্বার্থপরতা সকল নিয়মনীতির উর্দ্ধে, সর্বব্যাপক। আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার শ্রেষ্ঠ উপায় অর্থ। তাই অর্থকেই হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ দেবতা বলা চলে। এরা দীর্ঘকাল রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত, মনোবলও হারিয়েছে। ধৈর্য, কৃচ্ছ্রতা ও কলাকৌশল অবলম্বন করে এদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে হয়। তাই অর্থ লালসা মেটানোর জন্য সর্বদা ফন্দিফিকির খুঁজে বেড়ায়।

সেই লাগামহীন স্বার্থপরতার দরুন এদের স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো কাজেকর্মে বা প্রকাশ্যে বলপ্রয়োগে একজনকে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া। তবে নিজেরা কিন্তু সংঘর্ষ থেকে দূরে থাকে। সামরিক গোষ্ঠীর কথা বাদ দিলে বলা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসীরা যেমন কাপুরুষ, তেমনি নীতিহীন। তারা কৌশল করে, ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে, মিথ্যা কথা বলে বা দাসত্বের ভান করে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে। উচচপদস্থদের কাছে খুব সম্মান দেখায়, যেনো তারা বিনয়ী বশংবদ এবং প্রয়োজন হলে তারা তার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। যতোক্ষণ তাকে ভয় করার কারণ থাকে বা তার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা থাকে ততোক্ষণ মুখ বুঁজে অপমান, অবহেলা বা আঘাত সহ্য করে যায়। ওপরে এই সহনশীলতার আবরণ থাকলেও ভিতরে ভিতরে তারা ঠিক তাদের গোপন অভিসন্ধি অনুযায়ী কাজ করে চলে। ওপরওয়ালার কাছে তারা যে মনোভাব চেপে রাখে অধস্তনদের কাছে তারা যে তা পূর্ণমাত্রায় প্রয়োগ করে সে অভাব পূরণ করে নেয়। পদমর্যাদা বলে যাদের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে পারে তাদের কাছে তারা অতি হীন মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়ে থাকে। দেশের অভ্যন্তরভাগে যেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের একত্র বসবাস এবং সকলেই প্রায় সমপর্যায়ের সেখানে নেটিভদের আচার-আচরণের আর আবরণ প্রায় থাকে না। সমাজ প্রবৃত্তির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সমাজ রক্ষার মৌলিক গুণাবলী না থাকলে যা ঘটবার তাই ঘটে। নীতিহীন স্বার্থপরতার পরিণামে সমাজে ঘৃণা,বিবাদ, নিন্দাবাদ, মামলাবাজি বিস্ময়কর মাত্রায় বিদ্যমান। এক অপরের প্রতি, এমন কি অনেক ক্ষেত্রে পিতা-পুত্রের প্রতি যেরূপ বিদ্বেষ পোষণ করে এবং মিথ্যাচার ও নিন্দাবাদের আশ্রয় নেয় তাতে মানব চরিত্রের এক অতি করুণ চিত্র ফুটে ওঠে। কোন আগন্তুক এদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলেই বুঝতে পারবেন যে, শত্রুতাচরণ ও অন্যের ক্ষতি করার প্রবৃত্তি এদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি গ্রামে মানুষ পরষ্পরের বিরূপতার মধ্যে বাস করে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক পরিবারেও সেই একই অবস্থা। এমন পরিবার খুব কম আছে যেখানে বিষয়সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নেই, স্থায়ী শত্রুতা নেই। এই বিরোধ বাড়ীর মেয়েদের মধ্যেও গড়ায়। পুরুষের পদতলে দাসীর মতো থাকে বলে মেয়েরা একে অপরের বিরুদ্ধে সহজেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, উচ্চকণ্ঠে অকথ্য অশ্রাব্য গালিগালাজ করে মনের ঝাল মেটায়। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমনটি বড়ো একটা দেখা যায় না।

সরাসরি লড়াই করে ক্ষোভ মেটানোর মতো যথেষ্ট মনোবল বাঙালীর নেই। তৎসত্ত্বেও চুরি, সিঁদকাটা, ডাকাতি, নদীবক্ষে ডাকাতি বস্তুত আঁধারে, গোপনে ও আকস্মিকতার সুযোগে যে সব অপকর্ম করা যায় সে সবই অত্যন্ত ব্যাপক। অতীতেও সর্বযুগে এটা ঘটেছে। চোর ও ডাকাতদের স্বতন্ত্র জাতি গড়ে উঠেছে। এদের বিশ্বাস এরা নিজ-নিজ বৃত্তি অনুসরণ করে চলেছে মাত্র। এরা সন্তানদেরও এই বৃত্তি শিক্ষা দেয়। পৃথিবীর কোথাও দুর্বৃত্তরা এতোটা নির্মম ও ধূর্ত হয় না। জেলার জমিদারেরা এদের পোষণ করে বা আশ্রয় দেয় এবং ডাকাতির ভাগ নেয়--একথা সকলেই জানে। এরা দলবেঁধে ডাকাতি এবং প্রায়ই মানুষ খুন করে। ডাকাতদের বাঁধা দল ছাড়াও পৃথক-পৃথক ডাকাতও আছে। এরা প্রতিবেশীদের ধনসম্পদ লুঠ করে। শুধু যে বড়ো বড়ো শহরে, ঘনবসতি অঞ্চলে বা তার আশেপাশে ডাকাতি হয় তা নয়, দেশের কোন অঞ্চল, এমনকি কোন গ্রামও তাদের হাত থেকে নিরাপদ নয়। প্রত্যেক অঞ্চল, রাজপথ ও নদীপথ থেকে ডাকাতি রাহাজানির অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। এই সব অপরাধের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা আছে এবং বহু অপরাধীকে দণ্ডদানও করা হয়। তবু অপরাধ ঘটেই চলেছে। নবাবী আমলে বাংলায় বহুকাল ধরে ফৌজদারী বিচারে যে দুর্নীতি চলে আসছে তার ফলে এই উৎপাত বেড়ে গিয়েছে। তবে এর কারণ আরো গভীরে নিহিত। হিন্দু ডাকাতদের, বিশেষকরে চোরদের ছোটবেলা থেকেই বোঝানো হয় যে, তাদের বৃত্তি অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু এটা যে অপরাধ এ কথা বুঝিয়ে দেয়ার মতো কেউ থাকে না। প্রথম প্রথম বিবেকের যে দংশন অনুভূত হয় ক্রমে অভ্যাসে ও অন্যের দৃষ্টান্ত দেখে তা লোপ পেয়ে যায়। তাছাড়া অন্যান্য হিন্দুর মতো তারা ভাগ্যে বিশ্বাসী। এক্ষেত্রে অবশ্য তার ফল দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ। তারা মনে করে ভাগ্যের ভাগ্যের ফলেই এ পথে আসতে হয়েছে। কাজেই যা ঘটবে তা মেনে নিতে হবে। তাই তারা তাদের কাজ চালিয়ে যায়, বিবেকের কোন দংশন বোধ করে না। যখন সময় আসবে তখন মৃত্যুকেও সহজভাবে মেনে নেবে। যে আইন তাদের দণ্ড দেয় তাকে তারা ন্যায় বিচারের বিধান বলে মনে করে না। অধিকতর ক্ষমতাবানের শক্তি বলেই মেনে নেয়। সুতরাং স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে, তাদের দুরাচারী মনোভাব দূর করতে হলে নীতিবোধের মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

দয়া হিন্দু মানসের প্রধান গুণ। যাঁরা একথা বলেন তাঁরা এইসব চরিত্রের বিষয় কিছুই জানেন না। আমরা যেখানে করুণার দীপ্ত প্রকাশ দেখবো বলে আশা করি সেখানে সত্য, ন্যায়বিচার ও আস্থাশীলতার এমন বিরাট অভাব ল্ক্ষ্য করি কেন ? হিন্দুধর্মে দরিদ্রকে ভিক্ষাদানের বিশেষ বিধান আছে এবং কোনো-কোনো পশু মাংস গ্রহণ সম্পর্কে কড়া বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু দানকার্যে আত্ম-গরিমা প্রকাশই বেশী দেখা যায় এবং অলস ও হৃষ্টপুষ্ট পুরোহিতেরাই পায় বেশি। হিন্দুদের কাছে গরু পবিত্রজীব। গো-হত্যার কথা মনে উঠলেও ভয়ে আঁতকে উঠবে। কিন্তু যে গরুটিকে গাড়ীতে যুতে দিয়েছে, জোয়ালের ঘর্ষণে যার ঘাড়ের চামড়া উঠে ঘা হয়ে গিয়েছে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা নির্মমভাবে প্রহার করবে, মনে একটুও লাগবে না বা এর পরিণাম ভেবে দেখবে না। বাঙালীদের শরীরের গঠন দেখে নরম মানুষ মনে হলেও এদের মনে প্রকৃত কোমলতা খুব কম। কয়েকটি বিষয় থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রথমত শাস্তিদানের ব্যাপারে এরা ভয়ঙ্কর রকমের বর্বর। এরা অনায়াসে হাত,পা, কান বা নাক কেটে দিতে পারে অথবা চোখ উপড়ে নিতে পারে। তাছাড়া আরো নানা বিকট রকমে মানুষকে কষ্ট দিতে পারে।

পরাজিত শত্রুর প্রতি এদের আচরণেও এই ক্রুরতার পরিচয় পাওয়া যায়। এরা অন্যের কথা ভাবে না। এটাই এদের চরিত্রের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য। হিন্দুরা অন্যের প্রতি বা যে বিষয়ে নিজের স্বার্থ জড়িত নেই সে বিষয়ের প্রতি এমন নির্বিকার ভাব দেখায় যে ইউরোপীয়দের ক্রোধের উদ্রেক করে। সে যাই হোক এদের স্বার্থের সীমা খুব সংকীর্ণ। হিন্দুস্থানে স্বদেশপ্রেম একেবারে নেই।

এই সব ঘটনা থেকে হিন্দু হৃদয়ের দয়ামায়ার অভাবের আর একটি নজির মনে পড়ে। সেটি হলো স্বাভাবিক মমত্ববোধের অভাব। পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি, বিশেষ করে শিশুকালে, যথেষ্ট স্নেহমমতা দেখান তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর বিপরীত ঘটনাও খুব সাধারণ যা থেকে মানুষের চরিত্র স্পষ্ট বোঝা যায়। এখানে একটিমাত্র ঘটনার উল্লেখ করছি। ১৭৮৮ সালে কলকাতার আশেপাশে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিলো। জনৈক ভদ্রলোক, যিনি তখন উচ্চপদে এখন অধিকতর উচ্চপদে অধিষ্টিত, তাঁর ভৃত্যদের আদেশ দেন যে কেউ ছেলেমেয়ে বেচতে এলে তারা যেন কিনে রাখে (দুর্ভিক্ষের সময় হিন্দুরা ছেলেমেয়ে বিক্রি করে থাকে) এবং তাদেরকে বলে দেয় যে খাদ্যভাব কেটে গেলে সন্তানদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ২০টি শিশুর প্রাণ রক্ষা করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে মেয়েই বেশি । পরে মাত্র তিন জনের মা এসে সন্তানের খোঁজ করেছিলো। এখানে উল্লেখ প্রয়োজন যে খাদ্যাভাব তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এদের পিতা-মাতা অভাবে মারা গিয়েছে এমন মনে করবার কোন কারণ নেই। প্রত্যেকেই তার সন্তানের জন্য টাকা পেয়েছিলো। তখন কলকাতাবাসীরা, বিশেষত: ইউরোপীয়রা, মুক্তহস্তে দান করেছে। কলকাতার অনেক স্থান থেকে প্রতিদিন বহুসংখ্যক লোককে চাল বিতরণ করা হয়েছে। খাদ্য লাভের এই সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও একটি মেয়েকে প্রকাশ্য দিবালোকে তার শিশু সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিতে দেখা গেছে। হিন্দুস্থানের অধিকাংশ ক্রীতদাসই (এরা শুধু ঘরের কাজই করে থাকে) স্বাধীনতা হারিয়েছে তাদের পিতামাতার জন্যই। দু:সময়ে, প্রয়োজনের তাগিদে যখন সন্তানদের বিক্রয় করে দেয়া হয়, ঠিক তখনই কি সন্তানদের পক্ষে পিতা-মাতার স্নেহের পরশ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নয় ? বস্তুত: সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার এবং পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের টান এদের মধ্যে কম। এদের চরিত্রে যে উদাসীনতার ভাব বিদ্যমান তা নিম্ন শ্রেণীর লোকের-যারা ইউরোপীয়দের নজরে বেশি পড়ে-দাম্পত্য সম্পর্কেও বেশ লক্ষ্য করা যায়।

উচ্চশ্রেণীর অন্দরমহলকে সাধারণের দৃষ্টিপথ থেকে গোপন রাখা হয়। তবু যেটুকু জানা যায় এবং হিন্দুদের বিবাহ যেসব বিচিত্র নিয়ম-কানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাতে মনে করবার কোন কারণ নেই যে নিবিড় আকর্ষণ বা সুস্থ উপভোগের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রায়শই মধুর হয়ে ওঠে। পিতা-মাতা শিশুকালেই সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দেন। যখন মন তৈরি হয়ে ওঠেনি, কোনো অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়নি ঠিক তখনই একেবারে মায়েদের মহল থেকে উত্তরণ ঘটে সম্পূর্ণ নিজস্ব জগতে। বিচার শক্তি গড়ে ওঠার মুখে মিলন ঘটে। তাই নতুন পরিস্থিতিতে তারা নিম্ন পর্যায়ের পশুর মতো আচরণ করে। পারষ্পরিক সম্পর্কে মমত্ববোধ বা পছন্দের কোন স্থান নেই অথবা মমত্ববোধকে সযত্নে লালন করে সংবর্ধিত করার চেষ্টাও বড়ো একট দেখা যায় না। যে বিধানবলে তারা প্রথমে মিলিত হয়েছিলো তারই কাছে আত্মসমর্পন করে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনুযায়ী সংসারে স্বামীই প্রভু, স্ত্রী দাসী। স্বামী তার স্ত্রীকে সংগী বা বন্ধু করে নেয়ার কথা চিন্তাও করে না। হিন্দু সমাজে বহুবিবাহ প্রচলিত। এই প্রথাই সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে। হিন্দুদের কাছে সব চেয়ে দু:শ্চিন্তার কারণ হলো পরিবারে মান ও জাত-কূল রক্ষা করা এবং তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে পত্নীর সুনামের ওপরে। তাই স্ত্রীকে অত্যন্ত কাছের আত্মীয় ছাড়া সকলের দৃষ্টির আড়ালে রাখা হয়। একটু পদস্খলন ঘটলেই তার ভাগ্যে আছে ভয়ঙ্কর ও অপমানকর শাস্তি। মেয়েদের যে রকম অল্প বয়সে বিবাহ হয় এবং পরবর্তীকালে যেভাবে সতর্কতার সঙ্গে রাখা হয় তাতে ইউরোপীয়রা মনে করতে পারেন যে, হিন্দু জেনানা মহলে শান্তি ও সুশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। কিন্তু তা কল্পনা মাত্র। পুরুষেরা নিজ পরিবার সম্পর্কে কথাবার্তায় আচার-আচরণে অত্যন্ত সতর্কতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করে বিদেশীদের দূরে সরিয়ে রাখে। ইংরেজরাও আত্মসম্মানবোধে তাদের পারিবারিক গণ্ডী ভাঙ্গার চেষ্টা কখনও করেনি। কিন্তু পল্লী অঞ্চলে নেটিভদের মধ্যে যাদের বাস করার সুযোগ ঘটেছে তারাই বুঝতে পারবেন যে এদের নারীচরিত্র যতোটা নিষ্কলুষ মনে করা হয় বাস্তবে হয়তো ততোটা নয়।

বর্তমান লেখক নেটিভদের মধ্যে দীর্ঘকাল কাটিয়ে নিম্ন শ্রেণীর লোকদের কাছ থেকে নীতিভঙ্গের এতো বেশি নালিশ শুনেছেন এবং উচ্ছৃঙ্খলতার ঘটনা এতো প্রত্যক্ষ করেছেন যে এই সব অনৈতিকতার অন্তত কিছুটাও যে উচ্চশ্রেণীর মধ্যে নেই একথা সে মেনে নিতে রাজী নয়। পত্নীর চরিত্রহানির খবর জানাজানি হলে পরিবারকে যে নিদারুন লজ্জা ও অসম্মানের সম্মুখীন হতে হয় তাতে এ ধরনের ঘটনা সর্বদাই চাপা দেবার চেষ্টা চলে। তবে এরা গোপনে এর প্রতিশোধ নেবার উপায় খুঁজবে, কিন্তু প্রকাশে একটা ফয়সালা করে নেবে না। ঘটনাটি যদি একেবারে জানাজানি হয়েই যায় তবে অবশ্য অন্য কথা। পরিবারের বিরুদ্ধে কলঙ্কের অভিযোগ নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে অতি সাধারণ ঘটনা; উচ্চ মহলেও যথেষ্ট চালু। শত্রুতা থেকে এ ধরণের অপবাদ রটনা হতে পারে, বেশ রং ফলিয়ে প্রচারও হতে পারে। তবে রটনা সর্বক্ষেত্রেই শত্রুতাপ্রসূত এবং মিথ্যা এরকম মনে করার কোন কারণ নেই। প্রকৃত সত্য এই যে, হিন্দু লেখকদের ও হিন্দু আইনের চক্ষে মেয়েদের স্থান অতি নিচুতে। কোনো নীতিবোধের দ্বারা নয়, নজরবন্দী করে রাখাই মেয়েদের চরিত্র রক্ষা করার একমাত্র উপায় মনে করা হয়। শিক্ষার দ্বারা যে মনের উৎকর্ষ ঘটেনি, বিচারবুদ্ধি জাগ্রত হয়নি সেখানে কি নীতিবোধই বা থাকতে পারে ? আর অকালে অনিচ্ছায় আরোপিত দাম্পত্য সম্পর্ক গঠনেই বা সে কতটুকু সাহায্য করতে পারে ? পিতা-মাতা শিশুকালেই সন্তানদের আচরণ সম্বন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাদের অকালে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন। পরবর্তীকালে প্রভুসুলভ আধিপত্য বিস্তার করে, ভয় দেখিয়ে, পৃথক করে রেখে মেয়েদের সতীত্ব রার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুষ্কর্মে সুযোগের অভাব ঘটে না। কাজের সময় পুরুষেরা মেয়ে মহল থেকে দূরে থাকে এবং অনেক সময় দীর্ঘকাল ঘরের বাইরে থাকতে হয়। জেনানা মহলে অন্য মেয়েদের অবাধ প্রবেশাধিকার। এই মেয়েরাই কিন্তু মেয়েদের সব চেয়ে বেশি নষ্ট করে থাকে। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী ঘরের মেয়েদের সন্ন্যাসীদের সাথে আলাপ করতে বাধা নেই। সন্ন্যাসীরা ভণ্ড, ভবঘুরে এবং অনেকের চেহারা অতি কদর্য। এদের সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের ফল কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

এই ভ্রষ্টচারিতা সমগ্র নারী সমাজেই ব্যাপ্ত একথা বলি না বা বিশ্বাসও করি না। তবে মেয়েদের অনেককেই চিরকাল নিরানন্দময় বন্দীর জীবন যাপন করতে হয়, আর না হয় অকালে ভয়ঙ্কর মৃত্যুবরণ করতে হয়। হিন্দু সমাজে এরাই সবচেয়ে নিরীহ, এরাই কষ্ট ভোগ করে সবচেয়ে বেশি।

অপরদিকে পুরুষের ওপরে নৈতিক বাধা-নিষেধ বিশেষ কিছু নেই। জাতিভেদ প্রথা অনুযায়ী বাধা-নিষেধ অনেক এবং সেগুলো লংঘনে শাস্তির ব্যবস্থাও আছে। তৎসত্ত্বেও নতুন সম্পর্ক, এমনকি অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ থেকে যায়। পুরুষদের এব্যাপারে আপত্তি করার বা চোখ রাখার প্রয়োজন অনুভূত হয় না। প্রত্যেক স্থানেই পতিতাদের নির্দিষ্ট পল্লী রয়েছে বিধিসম্মতভাবেই। সমাজেও তাদের একটা স্থান আছে। ধনীদের আনন্দ উৎসবে ঐ পতিতা সমাজের নর্তকীরা হলো অন্যতম আকর্ষণ। অশ্লীলতা তাদের নৃত্যভঙ্গিমার প্রধান ভিত্তি। তবু ঘরের ছেলেমেয়েদের বা তরুণ-তরুণীদের সে নাচ দেখার কোনো বাধা নেই। এমন কি খাস জেনানা মহলেও সে নাচের আসর বসে। এই সব কারণে যথেচ্ছ যৌন সম্পর্কের ঘটনা অতি সাধারণ। তবে এতে কামনার সেই উন্মাদনা নেই যা সব কিছুকে ডুবিয়ে দিতে পারে, বরং আছে বোধহীন পাশব প্রবৃত্তির তাড়না। গোপনীয়তা রক্ষারও বিশেষ বালাই নেই। প্রচলিত আইনের বিধি-নিষেধ ছাড়া এর প্রতিরোধে হিন্দুদের নিজস্ব কোন বিধান নেই। সমাজের সর্বস্তরে এর বিরুদ্ধে এমন কোনো মনোভাব গড়ে ওঠেনি, যাতে এই অপরাধ ঘৃণ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

শেষ পর্ব-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১২ রাত ১২:১৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×