গতকাল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কাল দিন। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে হঠাৎ করে সাঈদীর আপিলের রায় গতকালই কেন দেওয়া হল ! এখানেই লুকিয়ে আছে আসল মাজেজা। মুলত সাঈদীর আপিলের রায় দেয়া হল এমন একদিন যেদিন সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা তুলে দেয়া হল সাংসদদের হাতে।
এই দেশে যে গোষ্ঠিটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা সাংসদদের হাতে তুলে দেয়ার বিরোধিতা করত সেই গোষ্ঠিটিকে সম্পূর্ন তিনভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে একই দিন সংবিধান সংশোধন এবং সাঈদীর আপিলের রায় দেয়ার মাধ্যমে। এখন একদল দাবি করছে সাঈদীর ফাঁসি, একদল মুক্তি আর একদল বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ। সম্পূর্ন আন্দোলনটা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় কোনটাই আর মিডিয়ার প্রত্যাশিত মনযোগ আকর্ষন করতে পারছেনা। মাঝখান থেকে সরকার ঠিকই নিজেদের কাজ হাসিল করে নিল। সাপও মারল লাঠিও ভাঙল না।
সরকারী দলের অনেক সমর্থকই এই বলে প্রচার করছেন যে, একমাত্র এই সরকারই জামায়াত নেতাদেরকে জেলে ঢোকাতে পেরেছে, অন্য সময় তাদের গাড়িতে ছিল মন্ত্রিত্বের ফ্ল্যাগ। ভাইরে, মুলা যার হাতে থাকে সেই তো মুলা দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে পারবে, তাইনা ! এই সরকারই যেহেতু যুদ্ধপরাধীদের বিচার করবে বলে ক্ষমতায় এসেছে সুতরাং যুদ্ধপরাধীদের বিচারের মুলা জনগনের সামনে ঝুলিয়ে রাজনৈতিক ফায়দাও তো তারাই হাসিল করতে পারবে। আমরা আমজনতা বোকা হতে পারি তাই বলে এটাও বুঝতে না পারার মত বোকা আমরা নই।
এদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনদিনই ছিলনা। যা ছিল তা স্বাধীনতার নামে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। প্রতিটা সরকারই বিচারপতি নিয়োগের বেলায় কার কাছ থেকে নিজের দলের লোকেরা বেশি সুবিধা পাবে সেই জিনিসটা বিবেচনায় রাখতেন। তারপরও বিচারপতিরা সাহসি সিদ্ধান্ত দিতে পিছপা হতেন না। কিন্তু এখন বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা সাংসদদের হাতে চলে যাওয়ায় সে সুযোগও আর থাকল না। সাংসদরা চাইলেই যেকোন সময় যেকোন বিচারপতিকে অপসারন করতে পারবেন। বিচারপতিদের ভাগ্য যখন সাংসদদের হাতে বন্দি তখন তারা কি করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দেবেন ?
আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন এদেশের বিচার ব্যবস্থাকে স্বার্থক ভাবে ধর্ষন করতে পারায়।