একজন লেখক মূলত লিখেন সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা থেকে। সমাজের গলি উপগলিতে লুকিয়ে থাকা নোংরা ময়লা বাস্তবতা তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেখে এসেছেন এবং সেই সাথে মানব মনের গতি-প্রকৃতি, দোষ-গুন সম্পর্কে তিনি সচেতন।এ সচেতনতা তাকে অন্য দশজন সাধারন মানুষ থেকে আলাদা করে চিন্তা করতে শেখায় এবং সমাজের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। সমাজের প্রতি লেখকের এ দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রত্যাশা তাকে সবসময় সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আর এ পরিবর্তন সাধিত হয় মুলত পাঠকের মাধ্যমে। পাঠকের মাধ্যমেই একজন লেখক তার দৃষ্টিভঙ্গি আদর্শ ইত্যাদি প্রচার করেন এবং মানুষকে ক্রমান্বয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করেন। সেই হিশেবে একজন লেখকের কাজ পাঠক নিয়ে এবং তিনি বেঁচে থাকেন পাঠকের মাঝে। সমাজের প্রতি লেখকের যেরুপ দায়বদ্ধতা আছে একইরকমভাবে পাঠকেরও দায়বদ্ধতা আছে লেখকের প্রতি আমাদের দেশে লেখকেরা সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে সচেতন থাকলেও (তারা তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছে সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে) পাঠকরা তাদের দায় নিয়ে কতটুকু সচেতন বা আদৌ সচেতন কিনা সেই প্রশ্ন এসে যায়।
এক আধটু লেখালেখি যারা করেন কিংবা সাহিত্য অঙ্গনের খোঁজ খবর যারা রাখেন তারা ব্যতীত যে বিশাল পাঠক শ্রেনী আছে তারা সাহিত্য বলতে ক্লাসিক্যাল সাহিত্যকেই বুঝে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ, শরত্চন্দ্র, নজরুল, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষন বড়জোর মীর মশাররফ হোসেনকে তারা সাহিত্যিক হিসেবে জানেন। হালের বইমেলা কেন্দ্রিক পাঠক সমাজ হুমায়ুন আহমেদের নাম জানেন কিন্তু তারা কেউ হুমায়ুন আহমেদকে আবিষ্কার করেননি। তারা অন্যদের কাছে তার লেখা সম্পর্কে শুনে তার বই কিনেছেন। এটাও বাঙ্গালী পাঠক সমাজের জন্য চির আক্ষেপের যে তারা অন্যের কাছে প্রশংসা কিংবা নিন্দা শুনে সবসময় সাহিত্যের মান বিচার করেন, অপরিচিত কোন লেখকের বই কিনে তার লেখা পড়ে সাহিত্যমান বিচার করেন না।
সাহিত্য সবসময় লেখকের সময়কে উপস্থাপন করে আর এ দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে এসব পাঠকেরা সাহিত্যের মাপকাঠিতে আদি সমাজ ব্যবস্থায় আটকে আছেন। ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের পাশাপাশি পাঠককে তার সময়ের লেখকদের লেখা পড়ে তারা সমাজকে কোন চোখে দেখছেন এবং সমাজের কোন ধরনের পরিবর্তন চান তা জানতে হয়। এ জায়গায় বাঙ্গালী পাঠক সমাজ যোজন যোজন পিছিয়ে। পাঠকের কালের সাহিত্য সম্পৃক্ততা ছাড়া কেউ পরিপূর্নভাবে পাঠক হতে পারেন না।
একজন লেখক যত বড় প্রতিভাবানই হোন না কেন, আমাদের দেশের বাস্তবতায় তাকে প্রথম দিকে নিজের টাকায় বই ছাপতে হয় এবং অন্য প্রতিষ্ঠিত লেখকদের ভরা বাজারে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নেমে হিমশিম খেতে হয় বেশির ভাগ প্রতিভাবান লেখকই বিপরীত স্রোত সামলাতে না পেরে হারিয়ে যান। পাঠক সমাজ যদি তাদের দায়বদ্ধতা ঠিকভাবে পালন করেন এবং প্রবীন লেখকদের সাথে সাথে নবীন লেখকদের বই কিনে তাদের মান যাচাই করেন তাহলে নবীন লেখকরা যেমন লিখতে উৎসাহ পেতেন তেমনি বাংলা সাহিত্যে যে অনেকদিন ধরে কিংবদন্তী লেখকের সংকট চলছে সেই সংকট কেটে গিয়ে হয়তো আজকের নবীনদের মধ্যেই কেউ অদূর ভবিষ্যতে দীপ্তি ছড়াবেন স্ব-মহিমায়।
এখানে কয়েকজন নতুন লেখকের প্রকাশিত কিছু বইয়ের নাম দেয়া হলো।
১. সিন্দাবাদের গালিচা (ছোট গল্প) আহমদ জসিম
অগ্রদূত, স্টল নং ১১২, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান
২. অপরাজিত (উপন্যাস)– নাঈমা আফরোজ সম্পা
ভাষাচিত্র, স্টল নং ২৮৭, ২৮৮
৩. উপনিবেশ (ছোট গল্প) শাহনেওয়াজ বিপ্লব
গ্রন্থ প্রকাশ, স্টল নং ৩৭, ৩৮, ৩৯
এছাড়াও দেশ পাবলিকেশনস্ থেকে তার কবিতার বই বের হচ্ছে
৪. ছায়াশরীরের গল্প – জয়ন্ত জিল্লু
তৃতীয় চোখ, লিটল ম্যাগ কর্ণার, স্টল নং ১৬