somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হজ্বঃ (ভাগ-১)

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমজান বিগত হয়েছে। এখন হজ্বের মওসুম। হজ্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা হচ্ছে আর্থিক ও শারীরিক এবাদতও বটে। হজ্বের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে-ইচ্ছা করা, সংকল্প করা। শরীয়তের ভাষায়, হজ্বের মাস সমূহে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু স্থানের যিয়ারত করাকে হজ্ব বলে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ২নম্বর সূরা আল বাকারা এর ১৯৬নং আয়াতে এভাবে বলছেন- এবং তোমরা পূর্ণ কর হজ্ব ও ওমরাহ আল্লাহর জন্য। এছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের দিকে নজর দিলেও এ বিষয়ে বেশকিছু সহীহ হাদিস দেখতে পাই। বুখারী শরীফ এর ঈমান অধ্যাইয়ে আমরা দেখি যে, ইব্‌ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। ১. আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দান, ২. সালাত কায়েম করা, ৩. যাকাত দেওয়া, ৪ হজ্ব করা এবং ৫. রমজান এর সিয়াম পালন করা। এছাড়া সহীহ মুসলিম হাদিস গ্রন্থের কিতাবুল হজ্ব অধ্যাইয়ের আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসটিতে তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন- “হে মানবমন্ডলী! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। কাজেই তোমরা হজ্ব করবে।” তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- “আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছরের জন্যই) ফরয হয়ে যেত। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হত না।” তিনি আরও বললেন- “যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে বিষয় সেরূপ থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বেশী প্রশ্ন করা ও তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই আমি যখন তোমাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে, আর যখন কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করবে।”
আমাদের মধ্যে অনেকেই হ্জ্ব করিনি। হজ্ব করার ইচ্ছাও অনেকের নেই। কারণ হজ্ব কখন কার উপর ফরয হয় তা আমরা অনেকেই ভালভাবে জানি না। নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত যাওয়ার-আসার খরচ বহনের ক্ষমতা হলেই হজ্ব ফরয হয়ে যায়। কেননা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ৩ নম্বর সূরা আলে-ইমরান এর ৯৭ নম্বর আয়াতাংশে মহান আল্লাহ তা’য়ালা এভাবে বলছেন- লোকদের উপর আল্লাহর এ অধিকার রয়েছে যে, যার এ ঘর (বায়তুল্লাহ) পর্যন্ত পৌছাবার সামর্থ আছে সে যেন হজ্ব সম্পন্ন করে। কারো যদি নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি থাকে, যে জমির ফসল না হলেও তার পরিবারের খরচ নির্বাহ হয়, অথবা কারো অতিরিক্ত বাড়ি থাকে যে বাড়ি তার ব্যবহার করতে হয় না, বরং ভাড়া দেওয়া, অথচ সে বাড়ির ভাড়া না হলেও তার বছর চলে যায় তবে সেই জমি বা বাড়ি বিক্রয় করে হলেও তার হজ্বে যাওয়া ফরয হবে বলে অনেক ফকীহ সুস্পষ্টত উল্লেখ করেছেন। তাহলে চিন্তা করুন! আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা প্রতি বৎসর প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি কিনছেন, বাড়ি বানাচ্ছেন বা বিনিয়োগ করছেন অথচ হজ্ব করছেন না। আমাদের সমাজে অনেক লোকই রয়েছেন যারা হজ্ব সম্পন্ন হওয়ার খরচের চেয়ে অনেক বেশী অর্থ ঘুষ প্রদান করে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন কিন্তু হজ্ব করছেন না। যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শরিয়তে সম্পদের পরিমান উল্লেখ আছে কিন্তু হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য কোন সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ নাই। আর হজ্ব ফরয হওয়ার পরেও হজ্ব না করে মৃত্যুবরণ করাকে কোন কোন হাদীসে ইয়াহূদী--খৃস্টান হয়ে মরা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ২ নম্বর সুরা আল-বাক্বারাহ এর ১৯৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা হজ্বের জন্য এভাবে ঘোষণা করছেন - হজ্বের মাসগুলি নির্দিষ্ট, অতএব যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ্বের নিয়ত করলো তখন হজ্বের মধ্যে না সে যৌন সম্ভোগ করবে, না সে অন্যায় আচরণ করবে এবং না কলহ বিবাদ করবে, আর তোমরা যে ভাল কাজ কর আল্লাহ তা জানেন, তোমরা পাথেয় সাথে নাও তবে নিশ্চয় উত্তম পাথেয় আল্লাহভীতি, ওহে জ্ঞনীগণ তোমরা আমাকে ভয় কর। হজ্বের নির্দিষ্ট সময় হলো শাওয়াল, যিলক্বাদ ও যিলহাজ্ব মাস।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ কুরআন ও হাদিসে অগণিত স্থানে বারংবার হজ্বের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। বুখারী শরীফ এর হ্জ্ব অধ্যাইয়ে হজ্বের ফযীলত সংক্রান্ত যে হাদীসটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এমুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। চলবে----------
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×