এ দেয়ালটাতেই ছিলো
আমাদের ফটোখানি।
লাইব্রেরীর সামনে কৃষ্ণচচূড়া গাছটার নিচে-
তুমি হলুদ শাড়ী, আর আমি হলুদ পান্জাবি গায়ে দাঁড়িয়ে,
যেনো হিমু রূপায় মাখামাখি।
ভার্সিটির শেষ দিন মৈনাক'দা অনেক সাধ করে তুলে দিয়েছিলো ছবিটা।
মনে পড়ে তনু সে দিনগুলোর কথা?
গ্রীষ্মের কাক মরা রোদে আমরা বসে থাকতাম-
কখনো রমনা, কখনো বা কার্জন হলের পিছনে।
তুমি লেবুপাতা ঘ্রাণের একটা তেল দিয়ে আসতে
আর আমি তোমার এলোকেশে বিলি কেটে দিতাম।
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তো তোমার চুলের খুশবু,
লেবুপাতার খুশবু।
সন্ধ্যা পেরিয়ে যখন আঁধার নামতো শহরের বুকে
পূণির্মার আলোয় ডুবে যেতো শহর
নগরী থেকে খানিকটা দূরে-
আমরা হাঁটতে বেরোতাম মাতুয়াইলের পথ ধরে।
দু'ধারে টলমলে পানি, মাঝখানে একখানা সরু মাটির রাস্তা
তার এক প্রান্তে গুটিয়ে বসে পড়তাম আমরা।
বসে বসে তোমার কন্ঠে জোছনার গান শুনতাম
আর চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ভিজতাম।
জানো তনু এখনও গ্রীষ্মের দুপুর হয়,
তপ্ত রাজপথে পা ফেলে কোন প্রেমিকযুগল।
আমার আর রমনা, কার্জন যাওয়া হয়না;
ক্লান্ত দিনগুলো কোনমতে কেটে যায় অফিসের এসির নিচে।
এখনও পূর্ণিমার রাতে
রহস্যাবৃত গোল চাঁদ ভেসে থাকে দীঘির জলে।
সে আলোয় আমি বুঁদ হয়ে রই অন্য কোন নারীর শরীরে।
এখনও ফটো ফ্রেমটা আঁটা আছে সাদা দেয়াল জুড়ে
আমিও আছি কালো রংয়ের একখানা শ্যুট পড়ে।
নেই শুধু তুমি।
আর তোমার অপরূপ হাসি।
বিশ্বাস করো তনু
অনেককাল ঐ দেয়ালে জীবন্ত ছিলে তুমি।
পূর্ণিমার রাতে যখন জানালার ফাঁক গলে স্নিগ্ধ আলো এসে পড়তো ফটো ফ্রেমটাতে-
আমি রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম তোমার দিকে।
এতো সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে!
তোমার নির্মল হাসির দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিতাম পুরোটা রাত।
কখন যেনো সব বদলে গেলো সবকিছু,
মিশে গেলাম নতুন জীবনের সাথে;
আর তুমিও খসে পড়লে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোফ্রেম থেকে।।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯