দশ মিনিট হলো বাসে উঠেছি। গন্তব্য রামপুরা ব্রীজ। ঘন্টাখানেকের রাস্তা হলেও রাত একটা দুইটার আগে পৌঁছাবো কি না সে নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে।
যেখান থেকে উঠেছি গাড়ী এখনও সেখানেই আটকে আছে। সামনে বিস্তর জ্যাম, অসংখ্য গাড়ীর সমাহার। বাস, ট্রাক, জীপ, সিএনজি, বাইক, সাইকেল কি নেই এখানে। জ্যামঠেলে পথচারীররা নির্বিঘ্নে রাস্তা পাড় হচ্ছে। কেউ হাত তুলে সিগন্যালও দিচ্ছে না। সবাই ভেবে নিয়েছে এই জ্যাম সহসা ছাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই অযথা হাত উচিয়ে ব্যয়াম করার কোন প্রয়োজনীয়তাই বোধ করছে না তারা।
অবশ্য ঈদ-উল-আযহা মৌসুমে এমন পরিস্থিতি দেখেই অভ্যাস্ত ঢাকা ময়মনসিংহ রুটের যাত্রীরা। তাই কাউকেই তেমন একটা বিচলিত মনে হচ্ছে না। যে যার মতো করে সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
হকারীরা যেনো বছরের এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে। বুড়িগঙ্গার পানি, প্যাকেট মোড়ানে কেক, আচার, বারগার, পিজ্জা সব কিছুই দেদারসে বিকোচ্ছে তারা। ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে চরম লেভেলের স্বাস্থ্যসচেতন ভদ্রলোকেরাও বরফ শীতল পানিতে দু এক চুমুক দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে হকারীদের বেচাকেনা ঢাকা শেয়ার বাজারের চেয়েও বেশী স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী চাইলে ঈদের সময়টাতে এই ব্যবসার উপরও বড় আকারের কর আরোপ করতে পারেন।
আপাতত আমার সমস্ত কৌতূহল পাশের সিটে বসা একজোড়া কপোত কপোতীকে নিয়ে। নতুন প্রেম হয়েছে বোধহয়। অথবা এখনও ইম্প্রেস পর্ব চলছে। এখন কোনদিকে তাকাবার দরকার নেই। জগতের সমস্ত খেজুরে আলাপ এই নব্য প্রেমিক প্রেমিকার মুখে এসে গতিশীল হয়েছে। কুটুর কুটুর ফুসুর ফুসুর চলছেই । যেনো ঢাকা টু চাঁটগায়ের মেট্রো ট্রেন। থামবার কোন জো নেই।
আমার অবশ্য এসবে তেমন কিছু যায় আসে না। জ্যামে আটকে, তীক্ষ্ণ রোদে, ট্র্যাফিকের শোরগোলে, হকারের চিৎকারে, গাড়ির পোঁ পোঁ আওয়াজে কত ঘুমিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।
সেসবের কাছে এখানে ঘুমানো ত মামুলি ব্যাপার। জানালার গ্লাসটা ভালোমতো খুলে দিলাম। জ্যামে আটকানো গাড়ীগুলোর গা ঠেলে মাঝে মাঝে একটু আধটু বাতাস যে এই জানালা দিয়ে ঢুকবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। পা দুটো হালকা উঁচু করে সামনের সিটে ঠেক দিয় হাতগুলো সেখানে রাখলাম।
এখন শুধু চোখ বন্ধ করার পালা। ওহ্, কানে এয়ারফোনটা গুজতে বেমালুম ভুলে গেছিলাম। এখনই লাগিয়ে নিচ্ছি।
মনে পড়ে রুবি রায়
কবিতায় তোমাকে, একদিন কত করে ডেকেছি
আজ হায় রুবি রায়,ডেকে বল আমাকে
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি
শচীন বাবুর কন্ঠ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। নুপূর পায়ে রুবি রায় এই বুঝি নামলো বাস থেকে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৫