আজ আমরা দেখে নিবো সৌরজগতের সম্পর্কে কিছু তথ্য। সৌরজগত সম্পর্কে আমরা ছোটবেলা থেকে ৯টি গ্রহ পড়ে এসেছি। কিন্তু বর্তমানে এখন সৌরজগতের সংখ্যা ৮(আট)টি, এবং ৪৯টি উপগ্রহ রয়েছে। কেনোনা সৌরজগতের সবশেষ গ্রহ ছিলো প্লুটো, কিন্তু না, বিজ্ঞানীরা প্লুটোকে কোন গ্রহ হিসেবে ধরেননি, এখন এটাকে একটি বামন গ্রহ হিসেবে বলা হয়। তাই আজ আমরা জানবো আট গ্রহ সম্পর্কে, সৌরজগতের ৮টি গ্রহের সংখ্যা হলো-(১) পৃথিবী (২) বুধ (৩) শুক্র (৪) মঙ্গল (৫) বৃহস্পতি (৬) শনি (৭) উইরেনাস (৮) নেপচুন।
(১) পৃথিবীঃ পৃথিবীর বায়ুমন্ডল অন্যান্য গ্রহ থেকে একেবারেই ভিন্ন। পৃথিবীতে শতকরা ২১ ভাগ অক্সিজেন আছে বলে এখানে জীবনের বিকাশ ঘটে। পৃথিবীর বয়স আনুমানিক প্রায় ৫০০ কোটি বছর। এই গ্রহের ১০০% জল এর মধ্যে ৩% জল পান করার মতো যোগ্য বাকি ৯৭% সবই লবনাক্ত। পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার তিনটিই আছে যেমন কঠিন, তরল এবং বায়বীয়। পৃথিবীতে সূর্য্য থেকে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিটিন ২০ সেকেন্ড। পৃথিবী সূর্য্যকে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় ধরে প্রদক্ষিণ করে। সূর্য্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় ১৪ কোটি ৮৮ লক্ষ বর্গ কি.মি.। এবং পৃথিবীর ব্যাস হলো ১২,৬৬৭ কি. মি.। পৃথিবীতে একটি মাত্র উপগ্রহ যার নাম চাঁদ। চাঁদ হতে পৃথিবীর দূরত্ব ৩,৮৪,০০০কি. মি.। পৃথিবীর চারদিক থেকে চাঁদের একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে সাড়ে ২৯ দিন। চাঁদ এবং সূর্য্যের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার আবিরভাব হয়।
(২) বুধঃ সৌরজগতের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বা ছোট গ্রহটি হলো বুধ। কিন্তু বুধ গ্রহ ছোট হলেও অন্যান্য গ্রহ থেকে এর দ্রুত সবচেয়ে বেশি। এবং সূর্যের সব থেকে নিকটতম গ্রহ হলো বুধ। বুধ গ্রহ সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৮৮ দিন। এই গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই। এর ব্যাস হলো ৪,৮৫০ কি. মি.। এই গ্রহের উপরে পৃথিবীর তুলনায় ১০ গুণ বেশি সূর্যের আলো পড়ে। বুধ গ্রহে একদিন পৃথিবীর ১৭৬ দিনের সমান হয়। বুধ গ্রহে দিনের তাপমাত্রা ৪৩০ ডিগ্রী সেলমিয়াম এবং রাতের তাপমাত্রা ১৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াম। এই গ্রহে প্রচুর পরিমাণে খাত রয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে যে, এই গ্রহে গ্রহাণূ ও ধূমকেতুর সংঘর্ষে অনেক খাতের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সব খাত ২৫০ কি. মি. বা এর চেয়ে বেশি ব্যাস রয়েছে প্রতিটি খাতের।
(৩) শুক্রঃ শুক্র পৃথিবীর মতো পাথুরে একটি গ্রহ। এই গ্রহে ১দিন সমান পৃথিবীর ২৪৫ দিনের সমান হয়। শুক্র গ্রহের একটি সুন্দর নাম রয়েছে, একে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা নামে অভিহিত করা হয়েছে। রাতের আকাশে একে দেখতে একেবারেই চাঁদের মতো। রাত আকাশে চাঁদকে বাদ দিয়ে এই গ্রহটিই হলো সব থেকে উজ্জল একটি গ্রহ। পৃথিবীর সব থেকে নিকটতম গ্রহ হলো শুক্র। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪.০৩ কোটি কি. মি.। শুক্র সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২২৫ দিন। এই গ্রহের ব্যাস হলো ১২,১০৪ কি. মি.। শুক্রের আকাশে সূর্য্য দু’বার অস্ত যায়। শুক্র গ্রহেরও কোন উপগ্রহ নেই।
(৪) মঙ্গলঃ শীলত, প্রাণহীন, ধুধু মরু হিসেবে আঙ্খিত করা হয়েছে মঙ্গল গ্রহকে। এই গ্রহকে লাল গ্রহ বলা হয়। মঙ্গল গ্রহ নিজের কক্ষপথে আসতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মি.। এর ব্যাস ৬,৭৮৮ কি. মি., সূর্য্য থেকে এর দূরত্ব ২২.৮ কোটি কি. মি.। মঙ্গল গ্রহের বায়ু চাপ ৭.৭ মিলিমিটার। এর দুটো উপগ্রহ রয়েছে (১) ডিমোস (২) ফোবোস। মঙ্গলগ্রহে রয়েছে অনেক পর্বতমালা এখানে সবচেয়ে উচু বা সর্বোচ্চ পর্বতের নাম হলো “আলম্পাসমনস”। ১৯৯৬ সালে ৪ ই ডিসেম্বর মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপিত হয়। পার্থ ফাইন্ডর ৪ জুলাই ১৯৯৭ সালে অবতরণ করে। বিজ্ঞানীরা ২০১৫ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানো জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। “মে ফ্লাওার” নামক পরমাণু শক্তি চালিত রকেটে করে নভোযানে করে মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাবে।
(৫) বৃহস্পতিঃ সবচেয়ে বৃহত্তম বা বড় গ্রহ হলো বৃহস্পতি। বৃহস্পতি সূর্য্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৪,৩৩৩ দিন। এর উপগ্রহের সংখ্যা মোট ১৬টি। বৃহস্পতি একবার নিজ কক্ষপথে ঘুরে আসতে সময় লাগে ৯ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট। বৃহস্পতি গ্রহে ৫ ঘণ্টা দিন এবং ৫ ঘণ্টা রাত। সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীতে জ্যোতিবিজ্ঞান ব্যাবিলনীয়ান সর্বপ্রথম এই গ্রহের নিদির্ষ্ট করেন। এটি একটি গ্যাসীয় গ্রহ। এর বায়ূমন্ডল শতাংশ ভাগ, হাইড্রোজেন ৮১ ভাগ, হিলিয়াম ১৭ ভাগ এবং পানি আছে ০.১ ভাগ। এই গ্রহটি বলতে গেলে পুরোটাই গ্যাস দিয়ে তৈরি। বৃহস্পতির ৬৭টি চাঁদ আছে এদের মধ্যে চারটি হলো প্রধান যেমন-(১) ইও, (২) ক্যালিস্টো, (৩) ইউরোপা এবং (৪) গ্যানিমিড।
(৬) শনিঃ ১৯১০ সালে গ্যালিলিও শনি গ্রহ অবলোকন করেন। সৌরজগতের অন্য প্রত্যেক গ্রহ থেকে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ হলো শনি গ্রহতে। এই গ্রহের হাজার হাজার বলয় রয়েছে। শনি গ্রহ খালি চোখে দেখা যায় না, এই গ্রহের কেন্দ্রে পাথুরের বস্তু দ্বারা গঠিত। শনি সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৯ বছর। এই গ্রহ খুবই হালকা, কিন্তু এখানে প্রবল পরিমাণে ঝড়-বাতাস হয় ঝড়ের গতিবেগ সাধারণত ৮০০ কি. মি.। শনি গ্রহের নিক্ষিপ্ত মহাকাশ যানের নাম ক্যাসিনি। ক্যাসিনি ২০০৪ সালে শনি গ্রহে যেয়ে পৌয়েছেন। শনিগ্রহ প্রচুর শক্তিশালী চুম্বকক্ষেত রয়েছে, যা শক্তিকণাকে আকৃষ্ট করে আটক করে দেয়। এই জন্যই এটি উচ্চশক্তির তেজস্ক্রিয়তা উৎপন্ন করে।
(৭) ইউরেনাসঃ ১৭৮১ সালে ইউরেনাস গ্রহটি উইলিয়াম হার্শেস আবিস্কার করেন। ইউরেনাস প্রধানত মিথেন গ্যাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই গ্রহের ব্যস ৪৯,০০০ কি. মি.. প্রায়। ইউরেনাস সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৮৪ বছর। সূর্য্য থেকে ইউরেনাসের গড় দূরত্ব ২৮৭ কোটি কি. মি.। ইউরেনাসের উপগ্রহ রয়েছে ৫টি। এই গ্রহকে ‘সবুজ’ গ্রহ বলা হয়। বিজ্ঞানীদের ভাষ্য অনুযায়ী ইউরেনাস গ্রহের নাকি এক ধরণের ভটকা গন্ধ বের হয়, আর সেটা নাকি পচা ডিমের মতো।
(৮) নেপচুনঃ গ্যালিলিও ১৬১৩ সালে সর্বপ্রথম নেপচুন গ্রহটি দেখতে পান। যদিও সেই সময় তিনি নিদিষ্ট করতে পারেননি এটি গ্রহ নাকি নক্ষত্র। পরবর্তীতে অনেক বিজ্ঞানীরা এটিকে ব্ল স্টার বলে ভুল করেছিলেন। এরপর ১৮৪৬ সালে জ্যোতিবিজ্ঞানী ‘লা ভেরিওর’ নেপচুন আবিষ্কার করেন। পৃথিবী থেকে বিভিন্ন গ্রহে মহাকাশযানরা একাধিকবার গিয়েছেন কিন্তু নেপচুন গ্রহে মহাকাশযানরা একবারই গিয়েছে। সূর্য্য থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্তিত হলো নেপচুন, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন কি. মি.। সূর্য্য থেকে দূরত্ব হওয়ার কারণে এর তাপমাত্রা খুবই কম। নেপচুন সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে ১৬৫ বছরে। নেপচুনের মোট উপগ্রহ ২টি। সৌজগতের চতুর্থ বৃহত্তম গ্রহ বলে এটি একটি বিশাল গ্যাসের দৈত। সবথেকে আচর্য্য কথা হলো- আমরা চাঁদ বলতে শুধু আমাদের পৃথিবীর একটি চাঁদকেই জানি। কিন্তু আমরা কি এটা জানি যে পৃথিবী ছাড়ারা আরো অন্যান্য গ্রহে চাঁদ রয়েছে। নেপচুনও কিন্তু রয়েছে সেখানে একটি দুটো নয় ১৪টি চাঁদ রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় চাঁদের নাম হলো ট্রাইটন। প্লুটোর কারনে নেপচুন এখন সর্বশেষ গ্রহ।