somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবিশঙ্কর মৈত্রীকে ফিরিয়ে নাও, ফিরতে দাও

০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবিশঙ্কর মৈত্রিকে ফিরতে দাও, ফিরিয়ে নাও

কয়েছ আহমদ বকুল
----------------------------------------------------------


পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো সরল ও সৎ মানুষগুলোকে আপাতঃদৃষ্টিতে বোকা মনে হয়। রবিশঙ্কর মৈত্রি, কবিতার মানুষ, কবিতা আবৃত্তির মানুষ, মন ও মগজে আদিঅন্ত বাঙালি এই মানুষটি তাদেরই একজন।
দূর্ভাগ্যের নির্মম শোষনপিষ্ট এই মানুষটি আমাদের অনেকের মতোই আজ দেশ ছাড়া, স্বপরিবারে গৃহত্যাগী, ফরাসী রাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থী। কিন্তু মন তাঁর বাঁধা পড়ে আছে পলাশ শিমুলের বনে, সেই দূর উজানে।
রবিশঙ্কর মৈত্রি কেন এমন? আমি মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই। এতো কিছুর পর, তার বিরুদ্ধে সংঘঠিত হয়ে যাওয়া এতোগুলো অন্যায়ের পরও দৃপ্ত সরল সহজ উচ্চারণে কিভাবে মানুষটি বলতে পারেন 'আমি দেশে ফিরবই'। আমার দেশ, আমাদের প্রাণের স্বদেশ বাংলাদেশ আজকের এই ক্লীষ্টকরুণ সময়ে রবিশঙ্কর মৈত্রির মতো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কত বেশী অনুপযোগী হয়ে উঠেছে রবিদা তা বুঝেননা কেন? কেউ কি নেই এই মানুষটিকে এই সত্যটি উপলব্ধি করতে শেখায় হাতের মুঠো ফসকে আমাদের লাল সবুজ এখন পরাগত নীলের দিকে ছুটে চলা এক অশুদ্ধ অন্যায়ের নাম।

রবিদা আমার প্রিয় মানুষ, শ্রদ্ধার মানুষ। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির এই সময়ের প্রবল সম্ভাবনাময় ও প্রতিভাবান এই মানুষটি কেবল কিছু বেঈমান স্বার্থান্বেষি ব্যবসায়ীর অশুভ আক্রোশ ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় আক্রান্ত হয়ে এক সময় নানা রকম হত্যার হুমকিতে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়েন। দাদার এই দেশ ছাড়া নিয়ে অনেকে অনেক ভাবে মন্তব্য করতে পারেন বা করেছেন কিন্তু আমার বিবেচনায় সেটা ছিলো নিজেকে নিজের পরিবার ও নিজের সাহিত্য সাংস্কৃতিক মানষিকতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। অন্তত ঠিক সেই সময়টাতে সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের জেলে যাওয়া ও নাঠকিয় মুক্তি লাভ অতঃপর তাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলাগুলো বহাল তবিয়তে থেকে যাওয়াকে যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা মেনে নিতে বাধ্য বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক আবৃত্তিকার হয়েও প্রাণ ও পরিবার বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সেই সময়ে রবিদার দেশ ছাড়া কোন ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো না। দেশ ছেড়েও খুব শান্তিতে থাকতে পারেননি মানুষটি। প্রিয় স্বদেশ প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে এসে একটা মানষিক ক্লেশের মধ্যে তো ছিলেনই, হুট করে তাঁর স্ত্রী সুস্থ মানুষ নীলু মৈত্রীর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়া একটা শক্ত ঝাঁকুনি দেয় তাঁকে। এতো খারাপ সময়েও নিজের ভেতরকার রবিশঙ্কর মৈত্রীকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি, বইমেলা ২০১৬ তে এসেছে তাঁর বেশ কয়টি বই। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'মনভাসির টান' নিয়ে শিল্প সাহিত্যের নগরী প্যারিসে একটি অনুষ্টানে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয় প্রিয় মানুষটিকে। লেখা পড়ে অবৃত্তি শুনে চেনা এই মানুষটির ভেতরের আগুন দেখে আসলেই কেবল চোখ মুছে দূরে সরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা।

রবিদার সাথে আসলে কি হয়েছিলো, ঠিক কি কারণে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন এখানে খুব ভালো করে হয়তো আমি লিখতে পারবোনা। শুধু এটুকু বলতে পারি 'গানবাংলা' টি ভি চ্যানেলের মালিকানা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সহ বেশি কিছু প্রভাবশালীদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় উনার। তথ্যমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন ক্ষমতার ব্যবহারে 'গানবাংলা' হাতছাড়া হয় রবিদার। বিষয়টা এখানে থেমে থাকলে হয়তো উদ্বাস্তু হয়ে নিজের দেশে ফিরে যাবার আকুল প্রার্থনায় আজ এভাবে চিৎকার করে করে কাঁদতে হতোনা উনাকে। 'গানবাংলা' কেড়ে নিয়ে একের পর এক মিথ্যা ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় জর্জরিত করা হয় তাঁকে। মিথ্যা মামলার পাশাপাশি চলে নিশ্চীহ্ন করে দেবার পায়তারা। সর্বশ্রান্ত রবিদা দেশ ছাড়েন, বাধ্য হোন এক সময়ে একমাত্র মেয়েটির কথা ভাবতে, পরিবারের প্রতি দ্বায়িত্বশীলতা তাঁকে যাযাবর বানিয়ে দেয়।

রবিদা, রবিশঙ্কর মৈত্রী ফ্রান্স আছেন। জীবন ধারণের শতভাগ নিশ্চয়তার মধ্যে আছেন তিনিও তাঁর পরিবার, তাঁকে এখানে একটি ভাল বাড়ি দেয়া হয়েছে, একটি উন্নত অত্যাধুনিক হাসপাতালে চলছে বৌদির চিকিৎসা, মেয়ে পড়ছে একটি ভালো স্কুলে। অন্য অনেকের জন্য এই ভালো থাকাটাকে রবিদা ভালো থাকা বলেননা, মানেননা। একটি পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশ ছাড়া এই মানুষটির অন্তর মনে কেবল লাল সবুজ, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল ব্যপ্ত আকাশটার বাহিরের পৃথিবীতে তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে। তিনি দেশে ফিরতে চান। না, 'গান বাংলা' নিয়ে আর কোন আগ্রহ নেই তাঁর। এমন কি আমার সাথের ৫/৬ মাস আগের এক আলাপ চারিতায় দ্বিধাহীন বলেছেন মানুষটি তাঁর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির সবটুক সরকার সংশ্লিষ্ট ঐ লোভী চক্রকে দিয়ে হলেও তিনি দেশে ফিরতে চান। নির্ভেজাল নির্বিগ্ন একটি সুন্দর জীবন পেতে চান তিনি বাংলাদেশে।
রবিদা যখন দেশে ফিরে যাবার আকুল কান্নায় মেতে ঠিক তখনই তাঁর প্রিয় স্বদেশের একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। কোথায় ফিরবেন রবিদা, কার জন্যে ফিরবেন! জেলে যাবার জন্য ফিরবেন নাকি ক্রস ফায়ারে নিহত হবার জন্য! নাকি ঐ দুষ্টচক্রের প্ররোচিত চাপাতির নীচে গলা ঢেলে দেবার জন্য তাঁর এই ফিরে যাবার বাসনা?
রবিশঙ্কর মৈত্রীর বর্ণাঢ্য সাহিত্যিক জীবনে তিনি কিছু গুনগ্রাহী ভক্ত সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, তাঁর গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীতে তাদের কেউ কেউ একটি অনলাইন প্যাজ অপেন করে,'রবিশঙ্করকে দেশে চাই, গণশত্রুর মুখে ছাই' শিরোনামে একটি মটিবেশন সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন তারা। আজ ৩ রা মে, আজই শাহবাগে একটি মানব বন্দনের মাধ্যমে রবিশঙ্কর মৈত্রীর উপর জারী করা গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহারের পাশাপাশি সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দেবার দাবী উঠানোর কথা ছিলো। কিন্তু ক্ষমতার কালো থাবাতে হারিয়ে গেছে সেই আয়োজন। আয়োজকদের কাউকে কাউকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, কেউ কেউ মামলায় পড়ার হুমকি পেয়েছেন। জলের মতো পরিস্কার হয়েছে রবিশঙ্কর মৈত্রীকে যারা দেশ ছাড়া করেছে, যারা তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছে তারা কত শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান।

রবিদাকে এক সময় পরামর্শ দিয়েছিলাম দেশে ফিরতে হলে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করুন, আমাদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল তো উনিই। আজ আর সে রকম বলতেও সাহস হয়না। আমি আজ আর বিশ্বাস করতে চাইনা প্রধানমন্ত্রী এসবের কিছুই জানেন না। আসলে আজ খুবই দুঃখাক্রান্ত মন নিয়ে লিখতে বসে রবিদাকে কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই। শুধু এইটুকু বলতে পারি রবিদার মতো একজন আগাগুড়া ভালো মানুষ, সাহিত্যের মানুষ, স্বাধীনতার পক্ষের একটি বলিষ্ট কন্ঠ, আজন্ম নৌকা মার্কার ভোটার অসহায় এই মানুষটি যে প্রধানমন্ত্রীর কিছু কাছের মানুষের দৌরাত্মে দেশ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে সেই কথাটি জানানোর কি সত্যি কেউ নেই?

রবিশঙ্কর মৈত্রীর স্ত্রী অসুস্থ, নিশ্চীত ভাবে ফ্রান্সের চেয়ে ভালো চিকিৎসা বাংলাদেশে হবার কথা নয়, মেয়ে ফরাসী ভাষা শিখে ভালই স্কুল করছে এখানে, তার পড়াশুনায় ব্যত্যয় গঠবে, নিজে দেশে গেলেই জেলে যাবেন, মারা পড়তে পারেন আঁততায়ির হাতে। তবু মানুষটি দেশে ফিরতে চান। কারো প্রতি কোন প্রতিহিংসা নেই, সহজ ভাবে সহজ মানুষটি তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বদেশে গিয়েই মরতে চান, মরার আগে তাঁর জীবনকে আস্তাঁকুড়ে নিক্ষেপকারী মানুষগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চান সুন্দর ও সত্যের পথে। আমি প্রার্থনা করি একজন কেউ এমন মানুষ উদ্যোগী হোক যে প্রধানমন্ত্রীকে আসল সত্যগুলো জানিয়ে সকল অনিশ্চয়তা দূর করে রবিশঙ্কর মৈত্রীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে পারে। ভাল থাকুন রবিদা, ভালো থাকুক বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১২:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×