somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

90দিনের মধ্যে নির্বাচন না করলেও ক্ষতি নেই!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী বছর আগস্ট মাসের মধ্যে যে কোনো সময়ে নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার (27 অক্টোবর 2006) 90 দিনের মধ্যে নতুন সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন না হলে দেশ কিংবা সরকার কোনো আইনগত সংকটে পড়বে না। এমনকি নির্বাচন কমিশনকেও কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে না, তাদের কাজকর্মেরও কোনো তি হবে না। তবে আগামী 30 আগস্টের আগে নির্বাচন সম্পন্ন করে নবম সংসদের অধিবেশন শুরু না করতে পারলে সরকারের আর্থিক কাজকর্ম চালাতে জটিল আইনি সমস্যা দেখা দেবে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থি্থতিতে 90 দিনের সাংবিধানিক বিধানানুযায়ী গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রায় অসম্ভ্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও সরকারি মহল এবং মতা থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া চারদলীয় জোট নেতারা সংবিধানে উল্লেখিত 90 দিনের সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন শেষ করার জন্য অব্যাহত তাগিদ দিচ্ছেন। এ পরিস্থি্থতিতে চারবার নির্বাচনী তফসিল বদল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলগুলো মহাঐক্যজোট গঠন করে ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংবিধানের নির্বাচন সংক্রান্ত সপ্তম ভাগে 123(3) অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের যে সময়সীমা দেওয়া আছে তা সংবিধানের কোনো মৌলিক বিধান নয়। সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রণালী সম্পর্কিত এবং একটি নির্দেশনামূলক বিধান। সংবিধানের বাধ্যতামূলক ও নির্দেশনামূলক বিধানগুলোর তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাষ্ট্র্রপরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কিত নির্দেশগুলোর েেত্র সংবিধানেই বলা আছে, এগুলো আদালতের মাধ্যমে প্রযুক্ত হবে না। অর্থাৎ রাষ্ট্র এর আলোকে পরিচালিত হবে, কিন্তু এগুলোর বিপরীতমুখী পথে অগ্রসর হতে পারবে না। সাধারণ ভাবে এগুলোকেই নির্দেশনা মূলক বিধান বলা হয়। এর বাইরেও কিছু নির্দেশনামূলক বিধান রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিধিমালা তৈরি, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা, কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সংসদ সচিবালয়, স্থানীয় সরকার বিষয়ক নির্দেশনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলো। এত বছরেও এসব সাংবিধানিক বিধান অনুসরণ না করায় দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কিত নির্দেশনাটিকেও অনেকেই এই দৃষ্টিতে দেখেন। তাদের মতে, এই নির্দেশনাটি পালিত না হলে প্রজাতন্ত্রের অপর কোনো অঙ্গ বা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে আইনগত সমস্যা বা জটিলতা দেখা দেবে না। কারো কর্তৃত্ব কিংবা কৃতকর্ম সম্পর্কে বৈধতার প্রশ্ন উঠবে না। এ সম্পর্কে আইন বিশেষজ্ঞদের কারো কারো মত হচ্ছে, নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কিত নির্দেশনাটি শুধু নির্বাচন কমিশনের জন্য। রাষ্ট্রের অপর কোনো অঙ্গ বা বিভাগের প্রতি নয়। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশনকে সহায়তা দেওয়া। নির্ধারিত 90 দিনের সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না হলে কী হবে_ এ ব্যাপারে সংবিধানে কিছু বলা নেই। তারপরও যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন না হলে সরকার কিংবা দেশের অপর কোনো কাজকর্ম বিঘি্নত হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানে বলা আছে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাষ্ট্র্রের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকায় কোনো বাধা নেই। এই সরকার সাংবিধানিক সরকার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবে এবং এর কোনো কাজকর্মই কোনো আদালত অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারবেন না।

সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য 'আদেশ' দিয়ে টাকা তোলার এখতিয়ার সংবিধানের 92(3) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র্রপতিকে দেওয়া আছে। সে হিসেবে আগামী বছর 30 আগস্ট পর্যন্ত দেশ চালাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। তার আগে যে কোনো সময় নির্বাচন সম্পন্ন করে সংসদের অধিবেশন বসানোর ব্যবস্থ্থা করতে পারলে দেশে কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না।
তবে 90 দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর নির্বাচন সম্পন্ন করতে গেলে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমনকি সে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এখতিয়ারবহিভর্ূত কাজ হিসেবে ফলাফল বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে আইনজীবীদের অনেকেই সংবিধানের 125(খ) অনুচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই অনুচ্ছেদটিতে নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত পদ্ধতির দরখাস্ত ছাড়া রাষ্ট্রপতি বা সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য একাধিক দফা তফসিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু সংবিধানসম্মত নির্বাচন অনুষ্ঠান অর্থাৎ সংবিধানের 7(2) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না_ এমন কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে দায়িত্ব পালন করতে না পারার দায়ে তাদের আর শপথ লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যাবে না। এেেত্র সংবিধানের 106 অনুচ্ছেদের আওতায় সুপ্রিম কোর্টের মতামতের জন্য নির্বাচন কমিশন বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারবেন। বর্তমান পরিস্থিতি মনুষ্যসৃষ্ট হলেও এটাকে দুর্বিপাক এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অতিক্রমের অযোগ্য বলে তুলে ধরতে পারলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ 90 দিনের পরের কোনো তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মত দিতে পারেন। সংবিধানের অবিভাবক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের এই এখতিয়ার রয়েছে। এরূপ েেত্র 'ডকট্রিন অব নেসেসিটি'র নীতি অনুসরণ করে আদালত নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন আইনের উদ্বৃতি দিতে গিয়ে বলেন, ফৌজদারি আইনে 90 দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার বিধান সংবলিত ধারায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে বলা নেই। এর সুযোগ নিয়ে অনেকেই মামলা খারিজ করিয়ে নিতে চাওয়ায় আপিল বিভাগ থেকে রায় দিয়ে বলা হয়, নির্দেশনামূলক বিধান পালিত না হলেও মামলার কাজ চলবে। তার মতে, ফৌজদারি আইন অপোকৃত সুনির্দিষ্ট এবং সেখানে যখন বলা হচ্ছে, যেসব েেত্র সময় বেঁধে দেওয়া আছে সেখানে তা বাধ্যতামূলক নয়। এই আলোকে বিবেচনা করলে, নির্বাচনের মতো বিষয়ে জাতির ভালো-মন্দটাই বড় কথা। তিনি বলেন, এেেত্র সাংবিধানিক ব্যাখ্যা করতে হলে সংবিধানের 7 অনুচ্ছেদকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান সর্বোচ্চ আইন, তবে তা 'জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি রূপে' হতে হবে। নির্বাচনে দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশের মত প্রতিফলিত না হয়ে মাত্র কয়েক শতাংশের মতের প্রতিফলন ঘটার সম্ভ্ভাবনা থাকলে সময়সীমার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার অবকাশ থাকে না। সে েেত্র গ্রহণযোগ্য ও অধিকসংখ্যক লোককে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন করার ব্যবস্থ্থা হতেই পারে। তিনি আরো বলেন, 90 দিনের সময়সীমা বিবেচনার আগে নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে সংবিধানের 119(ঘ) অনুযায়ী তারা সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছেন কি-না। এই ভোটার তালিকা যথাযথভাবে প্রণয়নের জন্য তাদের প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। অতএব ভোটার তালিকা যথাযথভাবে প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী তফসিল নিয়ে তারা অগ্রসর হতে না পারলে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে প্রয়োজনে সময় চাইতে পারেন। এরপরও সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা রার প্রশ্নে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: সমকাল
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবুল আলীই আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭



আপনাদের কি এই ছবিটার কথা মনে আছে? এই বছরের শুরুতে চলতি বছরের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×